হেজবোল্লাহ কর্তৃক সড়কপার্শ্বে বোমা আক্রমণের পর লেবাননীয় শহরের উপর ইজরায়েলের আক্রমণ

el Faher, mine fields surrounding the former Syrian outpost, in the background part of the Shebaa farms. Photo by Chaver83 via Wikipedia.

পূর্বতন সিরীয় ঘাঁটির চারপাশে মাইনক্ষেত্র তেল ফাহার, পটভূমিতে শেবা খামারের অংশবিশেষ দেখা যাচ্ছে। ছবি উইকিপিডিয়ার মাধ্যমে চ্যাভের৮৩-এর সৌজন্যে।

রাজনৈতিক দল ও আধাসামরিক বাহিনী হেজবোল্লাহ-এর উপর প্রতিশোধমূলক আক্রমণে ইজরায়েলীয় বাহিনী দু‘দেশের সীমানার কাছে দক্ষিণ লেবাননীয় শহর আল-ওয়াজানীর উপর গোলাবর্ষণ করেছে।

শেবা খামার এলাকায় ইজরায়েলি গাড়ির উপর লক্ষ্য করে হেজবোল্লাহ-কর্তৃক হামলার দায়িত্ব স্বীকার করা সড়ক পার্শ্বের বোমাবর্ষণের প্রতিউত্তর হিসেবে এই গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। দলটি যখন দাবী করছে যে তাদের কর্মকাণ্ডের ফলে হামার গাড়ির মধ্যে থাকা সৈন্যরা আহত হয়েছে, তখন ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র পিটার লারনার হলফ করে বলেন যে এই ঘটনার ফলে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

ওহে @ব্রায়ান_রোহান @এপি এই ঘটনায় আমাদের কেউ হতাহত হয়নি।

২১শে ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে দূরদর্শনে সম্প্রচারকৃত একটি ভাষণে হেজবোল্লাহর মহাসচিব হাসান নাসরাল্লাহ্‌ শপথ করে বলেন যে তার দল দামাস্কাসে একটি বিমান আক্রমণে মারা যাওয়া সেনাপতি সামির কুন্তার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবে, যে ঘটনার জন্য দলটি ইজরায়েলকে দায়ী করেছে। “ইজরায়েলিয় শত্রু সম্ভবত ভুল ভেবেছে…এবং এই ইজরায়েলী ভেবেছে যে কুন্তার হেজবুল্লাহর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেউ ছিল না এবং ভাবেনি যে আমরা তার শহীদ হওয়া অনুসরণ করবো এবং তার প্রতিশোধ নেবো,” নাসরাল্লাহ বলে

সামির কুন্তার কে ছিলো?

২০০৮ সালে বন্দী বিনিময়ের অংশ হিসেবে ইজরায়েলীয় কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সিরিয়াতে উৎখাত করতে চাওয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষমতায় টিকে থাকা বাসার আল-আসাদকে সমর্থন করে লড়াই চালিয়ে যাওয়া হেজবোল্লাহর ভেতরে কুন্তার বেশ প্রথিতযশা হয়ে ওঠে। ১৯৭৯ সালে প্যালেস্টাইন লিবারেশন ফ্রন্টের সদস্য হিসেবে থাকাকালীন একজন ইজরায়েলি বাবা ও তার ৪ বছরের কন্যাকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। এদিকে দুর্বৃত্তদের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকার সময় বাচ্চাটি মা দুর্ঘটনা বশতঃ তাদের ২ বছর বয়সী অপর সন্তানটির মুখ চেপে ধরার ফলে তার মৃত্যু ঘটে। কুন্তারের বয়স তখন ছিল ১৬ বছর।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ঘটা পুলিশের সাথে গোলাগুলিতে গুলি লাগা কুন্তার প্রথম দিকে ঐ মৃত্যুগুলোর দায়িত্ব স্বীকার করলেও পরবর্তীতে এই ঘটনার সাথে তার কোন সংশ্লিষ্টতা ছিলো না বলে বক্তব্য বজায় রাখে। সে দাবী করে যে সে ও তার দলের লক্ষ্য ছিল তাদেরকে শুধু জিম্মি করা, কিন্তু ইজরায়েলিদের ছোড়া গুলিই আসলে ঐ পিতাটিকে হত্যা করে; সে বলে যে বাচ্চা মেয়েটিকে কিভাবে পিটিয়ে মারা হলো তা সে জানে না।

তাকে ইজরায়েলে বিশেষভাবে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখা হতো, কিন্তু লেবানন, সিরিয়া এবং ইরানের নেতাদের কাছ থেকে তার মুক্তির পর সে আনুষ্ঠানিক সম্মান পেল। ১৯৬৭ সালে সিরিয়ার কাছ থেকে দখল করা এবং ১৯৮১ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিন্দা সত্বেও অধিভূক্ত করা ইজরায়েলীয় দখলকৃত গোলান হাইটসকে মুক্ত করার জন্য এর আশপাশের এলাকায় সে কাজ করে যাচ্ছিল বলে খবর পাওয়া যায়

যে দলটি সড়ক পাশের বোমা ফাটানোর ঘটনা ঘটিয়েছে বলে হেজবোল্লাহ দাবী করেছে সে দলটির নাম কুন্তারের নামেই রাখা হয়েছিল।

ঐতিহাসিক শত্রুতা সম্পর্ক

সীমানার কাছে ইজরায়েলি এবং হেজবোল্লাহ বাহিনীর সংঘাত এটাই প্রথম ছিল না। ২০০৬ সালে ১হাজারেরও বেশী লেবানীয় এবং প্রায় ১৫০ ইজরায়েলি ৩৪-দিন স্থায়ী জুলাই যুদ্ধে মারা যায়। জাতিসংঘ সে সময় এই লড়াই বন্ধ করার জন্য একটি চুক্তি সম্পাদনে মধ্যস্ততা করে।

মানবতা কর্মী ও সাংবাদিক জো কার্টন নতুন করে পাল্টা-পাল্টি আক্রমণ সম্পর্কে প্রতিবেদন করেন ও ইজরায়েলি কার্যক্রমের নিন্দা জানান:

দামাস্কাসে ১৯শে ডিসেম্বর ইজরায়েল কর্তৃক সামির কুন্তারের হত্যার পর #হেজবোল্লাহ পাল্টা আঘাত করে

শুধুমাত্র ইজরায়েলিরাই পারে দু’টো দেশের অংশ বিশেষ দখল করতে, একটিকে বোমা মারে, অন্যটির উপর গোলাবর্ষণ করে, তারপর নিজেদেরকেই শিকার হিসেবে তুলে ধরে। শীঘ্রই কান্না শুরু হবে।

অনেক ব্যবহারকারীই শেবা ফার্মস হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে হেজবোল্লাহর নেয়া পাল্টা হামলাকে সমর্থন করে টুইট করেছে:

ইহুদিবাদী সত্তার কবরস্থান #সেবাফার্মস

পর্বতের উপর, পাহাড়ের পিছনে, তুমি পরাজিত হবেই, তুমি পরাজিত হবেই #সেবাফার্মস

ওহ ঈশ্বরের দিব্বি, ওহ ঈশ্বরের বিজয় #সেবাফার্মস

হেজবোল্লাহর প্রশংসা #সেবাফার্মস

আন্তর্জাতিক আইনজীবি এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্লেষণকারী আর্সেন ওত্রভস্কি লেবাননে অবস্থিত জাতিসংঘের অন্তরবর্তীকালীন বাহিনীর (ইউনিফিল) সমালোচনা করেছেন:

#ইউনিফিল কেন তাদের দায়িত্ব পালন করে না এবং #হেজবোল্লাহ #ইজরায়েলের দিকে শুরুতেই গুলিবর্ষণ করা বন্ধ করে না

১৯৮২ সালে ইরানের মদদপুষ্ট হয়ে দক্ষিণ লেবাননে ইজরায়েলিদের আক্রমণের পর গঠিত হওয়া হেজবোল্লাহ বর্তমানে লেবাননীয় সেনাবাহিনীর থেকে শক্তিশালী এবং তাদেরকে প্রায়ই ‘দেশের ভিতরে দেশ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .