বাংলাদেশের বিয়েবাড়ির খাবারের মেনুতে কী থাকে, চলুন জেনে নিই

বিয়ের দিনে, বর-কনে। ছবি তুলেছেন সানিম হক। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

সবাই বিয়ে খেতে পছন্দ করে। আর আপনি যদি খাদ্যরসিক হন তাহলে বাংলাদেশী বিয়ের নিমন্ত্রণ নিশ্চয়ই পায়ে ঠেলবেন না। খাবারের প্রতি বাংলাদেশীদের ভালবাসা প্রকাশ পায় বিয়ের খাবারের ব্যপক আয়োজনে।

ডিসেম্বর, জানুয়ারি বাংলাদেশে বিয়ের মাস হিসেবে পরিচিত যখন আবহাওয়া একটু সহনশীল থাকে। এ সময়ে বেশি সংখ্যক বিয়ে মানুষ করে থাকেন। বিয়ের নানা আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি মূল আকর্ষণ থাকে নানা পদের খাবারের।

বিয়ের খাবারের মেনুতে সাধারণত পোলাও, বিরিয়ানি, মুরগির রোস্ট, কোরমা, কাবাব, রেজালা, বোরহানি থাকে। মূল খাবারের শেষে মিষ্টান্ন হিসেবে দই, পায়েস, জর্দা, মিষ্টি পরিবেশন করা হয়। কোথাও কোথাও খাওয়া শেষে পানেরও আয়োজন থাকে। আবার বর আগমণের সময় বরকে শরবত ও মিষ্টিমুখ করিয়ে বরণ করে নেয়া হয়।

কিছুদিন আগেও বিয়ের যাবতীয় আয়োজন নিজেদের বাড়িতেই করা হতো। কিন্তু এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। কমিউনিটি সেন্টার আর ক্যাটারিং সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতায় এই আয়োজন সম্পন্ন করা হয়। সাহিত্যিক ও সাংবাদিক ইরাজ আহমেদ আক্ষেপ করে তার ছেলেবেলার বিয়ের আয়োজন নিয়ে লিখেছেন:

গলির মুখে লাল, সাদা আর সবুজ মেশানো কাপড়ের গেট। চনমনে রোদের মধ্যে হয়তো বাড়ির ভেতরের উঠানে বিরিয়ানির হাঁড়ি চড়েছে ইটের চুলার ওপর, লাকড়ির ধোঁয়ায় চারদিক অন্ধকার। ছাদে টানানো ত্রিপল অথবা সামিয়ানার নিচে ভাঁজ খুলে বসানো হয়েছে হালকা খয়ের রঙের চেয়ার, টেবিল। অনেক মানুষের ব্যস্ত ছোটাছুটি, কিছু মানুষ দুপুরের রোদে উদোরপূর্তি শেষে কাপড়ে ঝোলের দাগ মেখে বের হয়ে গলির মোড়ের দোকানে গলায় ঢালছে সেভেন আপ অথবা চিবাচ্ছে পান। বাতাসে ভাসছে কেমন এক আনন্দের সুর। বলছি অনেক বছর আগে এই ঢাকা শহরে বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা।

একসময় ক্যাটারিং সার্ভিসের মাধ্যমে খাওয়ানোর আয়োজন আতিথেয়তা অভাব বলে মনে করা হতো। কিন্তু বিবর্তনে হাওয়া এখন মেনে নিয়েছে সবাই। সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন:

এখন অবশ্য নিজেদের ক্ষমতা মত গৃহকর্তা ক্যাটারারের হাতে এই সব দায়িত্ব সঁপে দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে চান৷ আসুন বসুন বলে খাওয়ানোর মানসিকতা বদলেছে ৷ আগে তো বাড়ি এসে নিমন্ত্রণ না করলে অনেকে আসতেনই না৷ কর্মব্যস্ততার কথা মাথায় রেখে এখন তো ফোন অথবা ফেসবুক- হোয়ার্টস অ্যাপ মারফতও নিমন্ত্রণ গ্রহণ করা হচ্ছে।

মেনুর রদবদল

পুরোনো আইটেমের পাশাপাশি বাঙালি বিয়ের মেনুতে নতুন নতুন আইটেম যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বিরিয়ানি। আগে সাদা পোলাওয়ের সাথে মুরগির রোস্ট, খাসির ঝাল রেজালা, গরুর মাংস, টিকিয়া, সালাদ, বোরহানি দেয়া হতো। আর শেষ পাতে থাকে জর্দা বা ফিরনি। তবে বরের জন্য থাকে আলাদা ব্যবস্থা। তার জন্য বরাদ্দ থাকে আস্ত খাসির রোস্ট।

জামাই বরণ

মিষ্টিমুখ করিয়ে বরকে বরণ করে নিচ্ছে। ছবি তুলেছেন সানিম হক। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

আস্ত খাসি

বরের জন্য স্পেশাল আস্ত খাসি। ছবি তুলেছেন সানিম হক। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

পোলাও

পোলাও যে কোন বাংলাদেশী বিয়েতে একসময় অবশ্যম্ভাবী ছিল। এটি সুগন্ধযুক্ত চাল (বাসমতী বা চিনিগুড়া), পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ঘি এবং অন্যান্য বস্তু দিয়ে রান্না হয়। রোস্ট বা রেজালার সাথে এটিকে পরিবেশন করা হয়।

পোলাও হচ্ছে চালে তৈরি একটি মশলাযুক্ত খাবার। ছবি তুলেছেন সানিম হক। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

বিরিয়ানি

বিয়ের খাবারের মেনুতে বিরিয়ানি নতুন যোগ হয়েছে। সুগন্ধযুক্ত চাল, মশলা, মাছ বা মাংস, ঘি এবং অন্যান্য জিনিসপত্র স্তরে স্তরে সাজিয়ে এটিকে রান্না করা হয়। পোলাও এর সাথে এর পার্থক্য হচ্ছে মাছ/মাংস এবং সবজি সহকারে এটি একটি সম্পূর্ণ খাবার (সাথে অন্য খাবার বা তরকারি না থাকলেও চলে)।

A post shared by PaThaN swrov (@imfoysalpathan) on

খাসির রেজালা

খাসির রেজালার চল বাংলা থেকেই শুরু হয়েছে যা খাসির মাংস এবং বিভিন্ন মশলা এবং অনেক ক্ষেত্রে সবজি সহকারে পরিবেশন করা হয়। এটি পোলাও বা সাদা ভাতের সাথে খাওয়া হয়।

রেজালা মানেই ঘন গ্রেভিতে মজানো তুলতুলে মাংস। আর সুস্বাদও মনে রাখার মতো। আর বিয়ে বাড়ির খাবারের মেনুর অন্যতম আকর্ষণ। ছবি তুলেছেন সানিম হক। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

মুরগির রোস্ট

বিয়ে বাড়ির খাবারে অন্যতম পদ হলো মুরগির রোস্ট। ছবি তুলেছেন সানিম হক। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

টিকিয়া
টিকিয়া সাধারণত পোলাও বা বিরিয়ানির সাথে খাওয়া হয়। তাই বিয়ের মেন্যুতে এর দেখা পাওয়া যায় প্রচুর।

পোলাও বা বিরিয়ানির সঙ্গে বিফ টিকিয়া খেতে দারুণ। তাই বিয়ে বাড়ির খাবারে এটি স্থান করে নিয়েছে অবধারিতভাবেই। ছবি তুলেছেন সানিম হক। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

বোরহানি

টক দই দিয়ে তৈরি করা হয় বোরহানি। বিয়ে বাড়িতে তেল-চর্বিযুক্ত খাবার হজমে সহায়ক ভূমিকা রাখে বোরহানি।

A post shared by Maisur (@abumaisur) on

জর্দা

বিয়ে বাড়ির সুস্বাদু ডেজার্ট হিসেবে পরিচিত জর্দা। এটি এক ধরনের মিষ্টি ভাত। চাল, ঘি, চিনি, জাফরান বা খাবার রঙ মিশিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। ছবি তুলেছেন সানিম হক। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

পান

বিয়ের দাওয়াতে পান পরিবেশন করা খুব পুরোনো রীতি। ছবি তুলেছেন সানিম হক। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

যদিও বাংলাদেশী বিয়েতে খাবারের মেন্যুর বিবর্তন হচ্ছে, একটা বিষয় সবসময় অপরিবর্তনশীল – তা হচ্ছে, সব খাবারই খুব মজার।

1 টি মন্তব্য

  • Aminul Islam

    বিয়েবাড়ির প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে বিয়েবাড়ির মজাদার সুস্বাদু খাবার। কারন মজাদার রান্না অতিথিদের সন্তুষ্ট করে এবং একটি ভাল মনোভাব ধারণ করে বিয়েবাড়ি ত্যাগ করতে অনুপ্রাণিত করে। আর তাই এই কাজে একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ বাবুর্চির কোন বিকল্প নেই । যিনি রান্না করবেন সঠিক পরিমাপে যাতে খাবার কমে না যায় এবং অতি সুস্বাদু ভাবে। আর বিয়ের রান্নার জন্য পুরান ঢাকার বাবুর্চিরা সবচেয়ে জনপ্রিয় । তাই ভাড়া করতে ভিজিট করুন আজি ভাড়া দিব ও নিব.কম ।

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .