সামাজিক প্রতিরোধের ধরন হিসেবে সঙ্গীত সক্রিয়তা

চিৎকার – ছাদ থেকে সঙ্গীত হোমপেজ লোগোর একটি পর্দাছবি। অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

সঙ্গীত একটি মাধ্যম যা প্রায়শই নিষেধাজ্ঞা, ভাষার পার্থক্য ও সামাজিক স্তরবিন্যাস ছাড়িয়ে যেতে পারে।

গ্লোবাল ভয়েসেস সক্রিয়তা ও সঙ্গীত সাংবাদিকতা প্রকল্প চিৎকার – ছাদ থেকে সঙ্গীতের প্রতিষ্ঠাতা হলদর ক্রিস্টিনার্সনের কাজ, অর্থপূর্ণ পরিবর্তনে সঙ্গীতের ভূমিকা ও কথোপকথন শুরু সম্পর্কে সাক্ষাৎকার নিয়েছে!

চিৎকারে হলদর নিয়মিতভাবে আদিবাসী সঙ্গীত সংরক্ষণ ও সঙ্গীত শিল্পে যৌনবাদসহ সঙ্গীতের মাধ্যমে নাগরিক অবাধ্যতার মতো বিষয়গুলি কভার করেন।

দৈর্ঘ্য ও স্পষ্টতার জন্যে এই সাক্ষাৎকারটি সম্পাদনা করা হয়েছে। নীচে সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি খুঁজুন।

হলদর ক্রিস্টিনার্সনের ছবি। অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

গ্লোবাল ভয়েসেস (জিভি): আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন চিৎকার কী?

হলদর ক্রিস্টিনার্সন (এইচকে): চিৎকার – ছাদ থেকে সঙ্গীত! একটি সক্রিয়তা এবং সঙ্গীত সাংবাদিকতা প্রকল্প। আমি প্রায়শই সারাবিশ্বের কম প্রতিনিধিত্বশীল শিল্পীদের খুঁজে বের করে তাদের শিল্প ও সক্রিয়তার উপর আলোকপাত করতে চিৎকার মঞ্চ ব্যবহার করি। এই শিল্পীদের মধ্যে সাধারণ হলো তারা সচেতনভাবে তাদের কণ্ঠস্বর ও প্রতিভা ব্যবহার করে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন তৈরি করে। তারা তাদের সঙ্গীতের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায় এবং সেই জগতে আমার সক্রিয়তার অংশ একটি মঞ্চ প্রদান করে তাদের বার্তাকে আরো এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। শিল্পীরা প্রায়শই যে বিষয়গুলি নিয়ে গান করে তা খুব কাছাকাছি।

জাতিগত বৈষম্যের শিকার অনেক আদিবাসী শিল্পী, নারী শিল্পী, শিল্পী রয়েছেন , তাদের তালিকাভুক্তি চলছে। এই পৃথিবীতে প্রাণী ও প্রকৃতি-মাতার মতো দুই ধরনের প্রাণী রয়েছে যারা কেবল তাদের অন্যায়ের কথা বিশ্বকে জানানোর জন্যে নিজেরাই গান তৈরি করে না। প্রাণীকূল ও প্রকৃতি মানুষের ভাষায় কথা বলে না বলে সৌভাগ্যবশত এই শিল্পীদের মধ্যে কেউ কেউ অন্যায় থেকে তাদের রক্ষার দায়িত্ব নিজেদের উপর নিয়ে নেয় যা জনগণ কথায় বুঝতে পারে

জিভি: একটি সক্রিয়তা-কেন্দ্রিক সঙ্গীত ব্লগ তৈরি করতে আপনাকে কী অনুপ্রাণিত করেছে?  

এইচকে: আমি কণ্ঠহীনদের বিশেষ করে প্রাণীদের সাহায্য করার আগ্রহের কথা মনে করতে পারি। অল্প বয়সে আমি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাহায্য করতে শুরু করার সময় আমি কিছু সংগ্রামের বিষয়েও সচেতন হয়েছিলাম। তবে প্রকৃতি সংরক্ষণ প্রকল্পে আমি সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত হওয়ার পরেই আমি সত্যিকারভাবে বৈষম্যের বিস্তার ও গভীরতা উপলব্ধি করতে শুরু করি। পরে আমি আশ্রয়প্রার্থী, উদ্বাস্তু ও পশু উদ্ধার নিয়ে কাজ করার সময় আমি নারীর প্রতি বৈষম্যের আরেকটি স্তর বুঝতে শুরু করি যা আমার বিশ্ববীক্ষা ও এটা দিয়ে আমি কী করতে চাই তা পুনর্বিবেচনা করতে সাহায্য করে। আর অন্যদিকে ছিল গান ও সঙ্গীতের জন্যে আমার নিজের ভালবাসা ও প্রয়োজন।

মূলত আমি একজন শব্দ প্রকৌশলী এবং বাঁচার জন্যে অল্প বয়স থেকেই আমি গান লিখি (হাস্যকরভাবে, আমি বেশিরভাগই সেই সঙ্গীতটি কুকুরের সাথে ভাগাভাগি করি)। তাই আমার মাস্টার্সের জন্যে সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ থিসিসে আমার বিষয় নির্ধারণ করার সময় আমার আবেগকে মিশ্রণের কথা কথা গিয়ে যা বেরিয়ে আসে তা হলো চিৎকার।

হলদর ক্রিস্টিনার্সনের ছবি। অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

জিভি: প্রেক্ষাপটের কারণে কিছু শিল্পীর জন্যে সক্রিয়তার এই রূপটি বেশ বিপজ্জনক হতে পারে। তাদের আপনার অভিজ্ঞতা অনুসরণের ব্যাপারে আপনি কি মনে করেন?

এইচকে: আমি মনে করি সক্রিয়তার প্রতি আপনার আবেগ থাকলে কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা আপনার জন্যে খুবই কঠিন। আমার সামনে কেউ কষ্ট পেলে আমি সবকিছু ঠিক থাকার ভান করতে পারি না এবং আমার অন্যদের এটি জানানো দরকার যাতে তারাও সাহায্যের চেষ্টা করতে পারে। কিছু খুব সাহসী সঙ্গীত ও অন্যান্য শিল্পী পরিণতি যাই হোক না কেন পরিবর্তনে সাহায্য করার জন্যে দরকারী সব কিছু করতে প্রস্তুত।

এছাড়াও আমি সৃজনশীলদের জন্যে প্রতিকূল পরিবেশে থাকা বা ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে খোলামেলা কথা বলা শিল্পীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে জেনেছি তাদের কাছে অন্য কোনো উপায় নেই।

তাদের শিল্পের ধরন তাদের সত্তার একটি অংশ – অন্যভাবে তাদের কণ্ঠস্বর ব্যবহার করাকে তাদের অস্বাভাবিক বলে মনে হয়। আমার অভিজ্ঞতায় সৃজনশীল লোকেরা প্রায়শই আমাদের সকলের ভিতরের জায়গার সাথে গভীরভাবে যুক্ত থাকে যেখানে সহানুভূতি বাস করে। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী মানুষ, প্রাণী ও প্রকৃতির প্রতি তাদের ভালবাসা এতোটাই শক্তিশালী যে তারা তাদের মতামত প্রকাশ করতে কখনো পিছপা হয় না, এমনকি তাদের জীবনকে বিপদাপন্ন করলেও।

যেমন ভারতীয় র‌্যাপার মাদারাকে শিল্পের জন্যে তার পাওয়া প্রতিক্রিয়া ও মৃত্যুর হুমকি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আমাকে বলেছিলেন: “সবাই মরে, কিন্তু সবাই বাঁচে না।”

জিভি: সঙ্গীত কেন প্রতিবাদের একটি কার্যকর রূপ?

এইচকে: সঙ্গীত শ্রোতার একটি বার্তা পাওয়ার শক্তিশালী অথচ শান্তিপূর্ণ মাধ্যম। এটি বিশ্বের সাথে যোগাযোগের একটি শক্তিশালী ও অনাক্রমণাত্মক উপায়। সঙ্গীতশিল্পীরা সুন্দর কিছু তৈরি করার পর এখান থেকে কিছু নেওয়ার জন্যে কখন ও কীভাবে নেবে তা  শ্রোতার উপর ছেড়ে দেয়। সরাসরি সংঘর্ষ ছাড়া কেউ রক্ষণাত্মক হতে পারে  না।

আমার জীবনসঙ্গী লিলিয়ান একবার আমাকে বলেছিল গানের মাধ্যমে প্রতিবাদ করাটা বোধগম্য। তিনি বলেছিলেন, “পার্টিগুলি মজাদার হওয়ায় কোনো পার্টিতে সকলেই বক্তৃতা শুনতে ইচ্ছুক না হলেও সবাই গান শুনতে প্রস্তুত। কথোপকথনের ছদ্মবেশে এটি আমাদের নিজেদের মধ্যে একটি নীরব সংঘাত। এছাড়াও একটি গান গেয়ে নিজের শরীরে নিজের কণ্ঠের কম্পন অনুভব করে অন্যদের সাথে সেই সংযোগের মাধ্যমে নিজের আশা বা হতাশার আবেগকে একটি শারীরিক রূপ দেওয়ার মতো আর কিছুই নেই।”

জিভি: কোন সঙ্গীতশিল্পী বা গান কি আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে?

এইচকে: শিল্পীরা যখন আমাকে শিল্পের কারণে তাদের নিপীড়ণ, গ্রেপ্তার, কারাগারে বা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন ও তাদের আসন্ন প্রকল্প সম্পর্কে বলে তখন মনে হয় এসব আক্রমণের কোনটিই তাদেরকে শিল্প সৃষ্টি থেকে বিরত রাখতে পারবে না- যা আমাকে অনুপ্রাণিত করে। এটি অন্যান্য ধরনের সক্রিয়তার ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য। আমি সারাবিশ্বে প্রাণীদের উদ্ধার করা অনেক লোকের সাথে দেখা করেছি। তাদের সবার মধ্যে যা মিল রয়েছে তা হলো তাদের উদ্ধার কাজ বন্ধ করার জন্যে আপনাকে আক্ষরিক অর্থে তাদের একটি অন্ধকার ঘরে আটকে রাখতে বা তাদের জীবন নিতে হবে। তারা আমাকে অনুপ্রাণিত করে।

আমি চিৎকার প্রকল্পের জন্যে যে সব সাক্ষাৎকার বা সঙ্গীত সাংবাদিকতার কাজ করেছি তার মধ্যে কিছু গান আমাকে অন্যগুলি থেকে বেশি আন্দোলিত করে। আমি সেসব গানের কয়েকটির একটি ছোট বাছাই তালিকা তৈরি করে নীচে ভাগাভাগি করেছি] অন্যভাবে, আমি চিৎকারের জন্যে প্রতিবাদী সঙ্গীতের জন্যে বার্ষিক তালিকা তৈরি করি।

জিভি: চিৎকার বা আপনার কাজ ছাড়া অন্য যা কিছু সম্পর্কে আপনি বলতে চান?

এইচকে: সবকিছু, সব জায়গায় সবকিছু হয় আমাদের সবার মাধ্যমে একসাথে তৈরি বা ধ্বংস হয়। সীমানা একটি রাজনৈতিক ধারণা যা কিছু মানুষের তৈরি, এবং তা সবসময় পরিবর্তিত হয়। এটা সত্যিকারের কোনো অর্থ নেই। প্রাণীরা দুঃখ পায়, তাদের ভাষা আছে এবং তারা বেঁচে থাকতে ভালবাসে। গ্রহটি আমাদের চেয়ে বেশি বেঁচে থাকবে। নিজেকে ছাড়া ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বিপথগামী কুকুর এবং আপনার থেকে ভিন্ন পোশাক পরা বা আলাদা কোনো ঈশ্বরে বিশ্বাসী লোক বিপজ্জনক নয়। প্রতিটি নারীর নিজের শরীরের উপর সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা উচিত। আমি ১০টি দেশে বসবাস এবং আরো অনেক দেশে ভ্রমণ করে সেখানে আমি দেখেছি, আমরা সবাই মূলত একই। সঙ্গীত, খাদ্য ও রঙের মধ্যে ছোটখাটো পার্থক্য রয়েছে। এবং এটা এসব কিছুকে আরো আশ্চর্যজনক করে তোলে।

আমার এই এক-ব্যক্তির প্রকল্প বৃহৎ ও অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। আমি এটা ভালোবাসি ও বিশ্বাস করি। আপনার কাছে চিৎকার প্রকল্প মূল্যবান মনে হলে আমি প্রস্তুত – তা নিবন্ধ, পর্যালোচনা বা মতামতের টুকরো লেখা হোক বা ছোট মাসিক সহায়তার আকারে হোক – সকল হাতকে স্বাগত জানাই। এভাবেই প্রকল্পটি চালু থাকলে আমি সারাবিশ্বের সৃজনশীল মানুষের কণ্ঠের উপর আলোকপাত চালিয়ে যেতে পারি। আপনি এটি সমর্থন করতে প্রকল্পের প্যাট্রিয়ন পৃষ্ঠাটি দেখুন!

সবশেষে, আমি অনেক শিল্পী ও তাদের গানের কথা উদ্ধৃত করতে পারলেও আমি আমার প্রিয় একটি ব্যান্ড – ফেরো লাক্সের শব্দগুলি বেছে নেবো।

কি লজ্জা

তোমার যা দরকার

শুধু একটু বিশ্বাস

আর চোখ না খোলা

যদি তুমি না কাঁপো

তুমি হাল ছেড়ে দিয়ে

যেমন আছে তেমনভাবে জিনিসগুলি মেনে নাও

যে হাত সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করে

আমরা সবাই একসাথে ডুবে যাই

অথবা একেবারেই  না

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .