আবারো আদিবাসী নারী ধর্ষিতঃ সাহায্য করতে এসে চাকমা রাণী আক্রমণের শিকার

মারমা সম্প্রদায়ের নববর্ষ হিসেবে পরিচিত সাংগ্রাইতে তরুণীরা জলকেলি করছেন। ছবি তুলেছেন আয়ি মাঙ্গ। উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া হয়েছে।

গত ২২ জানুয়ারি ২০১৮ বাংলাদেশের পার্বত্য শহর রাঙামাটির বিলাইছড়িতে ১৯ ও ১৪ বছর বয়সী দুই আদিবাসী মারমা নারী নিরাপত্তা বাহিনীতে কর্মরত সদস্য কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

রিপোর্ট অনুযায়ী বিলাইছড়ির ওড়াছড়িতে সেদিন সেনাবাহিনী ও আনসার বাহিনীর যৌথ তল্লাশি অভিযান চলাকালে গভীর রাতে আর্মির পোশাক পরা দুজন লোক একটি মারমা ঘরে ঢুকে পরে। তারা বাবা মা ও ছোট ভাইকে আটকে রেখে ১৯ বছর বয়সী কন্যাকে ধর্ষণ করে তার ১৪ বছর বয়সী বোনের সামনে এবং তাকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।

এই দুই বোনকে চিকিৎসার জন্যে ২৩ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি করে নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া নজরদারিতে রাখা হয়। তারা ধর্ষণের প্রমাণ ও অন্যান্য রিপোর্টের জন্যে কয়েক সপ্তাহ হাসপাতালে অবস্থান করে।

এর মধ্যে স্থানীয় চাকমা রাণী য়েন য়েন তাদের হাসপাতালে দেখতে যান এবং স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীদের নিয়ে তাদের সাহায্য করতে যান।

সেনাবাহিনী প্রথমে এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে তারা বলেন যে এক আনসার সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে এবং অভিযোগ নিয়ে একটি তদন্ত হচ্ছে।

দুই মারমা নারীর জন্যে লড়াই করছেন চাকমা রাণী

রাণী য়েন য়েন ডেইলি স্টারের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে দুই মারমা বোনকে তার পরিবার বাড়ি নিতে চেয়েছিল তবে তারা মেডিক্যাল রিপোর্টের জন্যে অপেক্ষা করছিল। রাণী আরও জানিয়েছেন যে মেয়ে দুটি বাসায় ফিরে যেতে চাচ্ছিল না কারণ সেনাবাহিনী তাদের পরিবারকে চাপ দিচ্ছিল কোন অভিযোগ না করে চুপ করে থাকার জন্যে।

তারা আরও কয়েক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকলে তার বাবা তাদেরকে নিজের জিম্মায় নেবার জন্যে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করে। গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট পুলিশ আর হাসপাতালকে নির্দেশ দেয় মেয়ে দুটিকে তাদের বাবার জিম্মায় নেবার জন্যে। তবে ইতোমধ্যে স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরা উক্ত আদেশ স্থগিত করে চাকমা রাজা দেবাশিশ রায়ের জিম্মায় মেয়ে দুটিকে নেবার জন্যে আবেদন করে আদালতে এই বলে যে তারা বাড়ি ফিরে গেলে তাদের জীবনের ঝুঁকি থাকবে।

গত ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখে, দুই মারমা তরুণীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে হাসপাতাল থেকে সরিয়ে তাদের পিতামাতার জিম্মায় দেয়া হয়।

বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক সেই দিনকার কথা বর্ণনা করেছে যখন তাদের জোরপূর্বক সরিয়ে নেয়া হয় এবং চাকমা রাণি য়েন য়েন শারীরিক নির্যাতনের শিকার হনঃ

Acting on a directive issued from the High Court on 15 February 2018 to take the Bilaichari victims of rape and sexual assault to the custody of their parents under police protection, police took the parents to Rangamati General Hospital. Considering their security, the victims refused to go along with their parents again. The parents even slapped the victims to make them agree. Despite that, they kept begging to go under the custody of the Chakma Circle. During that time Chakma Rani Yan Yan arrived in the hospital and the victims embraced her. The Rangamati General Hospital compound, all of a sudden, was crammed with members of the police and special branch, and plainclothes security men.

In the evening, at about 7:30 pm, members of the armed forces disconnected the electricity of the hospital. Then suddenly the members of state forces covered their faces with masks, encircled Chakma Rani Yan Yan and shoved her down on the floor. When the victims were being dragged out of the hospital, she tried to resist. Then forces men slapped and punched her and shoved her down on the floor again. Considering her security, she immediately fled the hospital compound, jumping over the hospital wall.

Meanwhile, the victim sisters were handed over to their parents under police custody and taken to an unknown place. Their whereabouts have not been revealed yet.

১৫ই ফেব্রুয়ারি পুলিশ হাইকোর্ট থেকে একটি অর্ডার নিয়ে আসে এবং বিলাইছড়ি ভিক্টিমদের পিতা-মাতাকে তাদের মেয়েদের নিয়ে যেতে বলে। মেয়ে দুইজনই নিরাপত্তার কথা বলে তাদের মা-বাবার সাথে যেতে আবার অস্বীকৃতি জানায়। এক পর্যায়ে পুলিশ কর্তৃক প্রণোদিত হয়ে বাবা ভিক্টিমের একজনকে এবং মা অন্যজনকে চড় মারে তাদের কথা শোনার জন্যে। তা সত্ত্বেও তারা চাকমা সার্কেলের হেফাজতে যেতে চান। এই সময়ে রাণী ও অন্য স্বেচ্ছাসেবকরা হাসপাতালে আসে এবং মেয়ে দুটো তাকে জড়িয়ে ধরে। রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে কম্পাউন্ডে হঠাৎ করে পুলিশ ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের লোক দিয়ে ভরে যায়।

সন্ধ্যা ৭.৩০টার দিকে নিচতলা ও দোতলার করিডোরের ও সাধারণ মানুষের বসার জায়গার বাতিগুলো নিভিয়ে দেয়া হয়। তখন হঠাৎ করেই সাদা পোশাকে মাস্ক ও কাপড় প্যাঁচানো নিরাপত্তা কর্মীদের দল রুমে প্রবেশ করে এবং রাণীকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। যখন সেই মেয়ে দুটিকে হাসপাতাল থেকে জোর করে বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন রাণী তাদের থামাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু মুখোশধারীরা তাকে কিল ঘুসি মেরে আবার মাটিতে শুইয়ে দেয়। নিজের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে রাণী হাসপাতালের দেয়াল টপকে পালিয়ে যান।

ইতিমধ্যে পুলিশ দুই মারমা তরুণীকে তাদের পিতামাতার কাছে হস্তান্তর করে এবং একটি অজ্ঞাতনামা স্থানে নিয়ে যায়। তাদের অবস্থান পুলিশ কাউকে জানায় নি।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাণী সেদিনের বিস্তারিত জানিয়েছেন এবং তার মারার হুমকি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেনঃ

শেষ করতে হলে এখানে করা যাবে না, করলে হাসপাতালের বাইরে করতে হবে

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ রাজবাড়িতে এক সমাবেশে আইন মেনে দুই আদিবাসী তরুণীর উপর যে নির্যাতন হয়েছে, তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে যে শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন, সেটার বর্ণনা দেন। পুরো ভাষণ শোনা যাবে নিচের ইউটিউবে লিংকে:

উক্ত সমাবেশে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে পিছু হটবেন না সেটা জানানোর পাশাপাশি ভাষণে তিনি আদিবাসীদের নিপীড়ন থেকে মুক্ত করার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

অনেক দিন ধরে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি

পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারত ও মিয়ানমারের বর্ডার ঘেঁষে একটি পাহাড় ও বনঘেরা অঞ্চল এবং এখানে অনেক আদিবাসী গোষ্ঠী যেমন চাকমা, মারমা, বম, চাক, ম্রো, মুরুং, পাঙ্খো এবং খুমির বাস। এই সব গোষ্ঠীর সাথে বাংলাদেশের বাঙ্গালিদের পার্থক্য রয়েছে ভাষা, সংস্কৃতি, দেহের বৈশিষ্ট্য এবং ধর্ম ইত্যাদি দিক দিয়ে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা। চিত্র উইকিমিডিয়ার সৌজন্যে। সিসি বাই ৪.০

১৯৭০ এবং ১৯৮০র দশক থেকে বাংলাদেশ সরকার দেশের অন্যান্য স্থান থেকে বাঙ্গালি সেটেলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসের অনুমতি দেয়। এতে বহু বছর ধরে সেখানে থাকা লোকদের বাসস্থান এবং জীবন জীবিকায় প্রভাব ফেলে।

স্থানীয় বাসিন্দারা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় বিভিন্ন সঙ্ঘবদ্ধ দলের মাধ্যমে। এদের মধ্যে সবচেয়ে সহিংস ছিল শান্তিবাহিনী, যারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপর আক্রমণ চালায় এবং সাধারণ মানুষকে অপহরণ ও চাঁদাবাজি চালায়। তারা এ অঞ্চলে বাঙ্গালিদের বসবাস ঠেকাতে অস্ত্র হাতে তুলে নেয় এবং এইসব সহিংসতা ও বিদ্রোহ দমন করতে এবং সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে সরকার অঞ্চলটিকে একটি সামরিক জোন বানিয়ে ফেলে।

বিগত দশকগুলোতে স্থানীয় আদিবাসী গোষ্ঠী এবং বাঙ্গালি সেটেলারদের মধ্যে সঙ্ঘটিত সহিংসতায় অনেক আদিবাসী মারা যান। শান্তিবাহিনী কর্তৃক সাধারণ সেটেলার জনগোষ্ঠীর উপর অনেক মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিদর্শন রয়েছে। এ ছাড়াও সেনাবাহিনীর প্রতি অভিযোগ রয়েছে বিদ্রোহ দমনের নামে স্থানীয় আদিবাসী গোষ্ঠীর উপর বিচারবহির্ভূত নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালানোর এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনা যায়নি।

আদিবাসী মানবাধিকারকর্মী জন ত্রিপুরা তার ব্লগে লিখেছেনঃ

The cases point to growing culture of impunity within the security services as it appears reluctant to take on their own.The blatant disregard for human rights by the Bangladeshi armed forces in CHT is evil.

নানা ঘটনায় দেখা গেছে সেনাবাহিনী তাদের সদস্যদের উপর অভিযোগ আনতে অনিচ্ছুক – তাই কতিপয় সদস্য অন্যায় করে পার পেয়ে যাচ্ছে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশী সেনাবাহিনীর এই নিষ্ক্রিয়তা অনেক ক্ষেত্রেই খারাপ পরিস্থিতির জন্ম দিচ্ছে।

১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি সাক্ষরিত হয় যেটা বিরোধীদল এবং বেশ কিছু বিদ্রোহী দল মানেনি। ফলে এখনো শান্তি আসেনি।

ধর্ষণ চলছেইঃ

পার্বত্য অঞ্চলে যৌন হয়রানির ঘটনা আগেও অনেক বার ঘটেছে। সেদিকে ইঙ্গিত করে স্থানীয় সায়েম চাকমা লিখেছেন:

Oh yeah lol on the topic of discrimination against indigenous people and women, a young indigenous girl was raped a while back. This is the sort of news I had to hear growing up. I always felt unsafe even in my own village because of the sort of stuff I saw whenever I followed my mother to wherever she went for work.

আদিবাসী মানুষদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের আরো একটি উপাদান। আরো একজন আদিবাসী তরুণী ধর্ষিত হয়েছে। এ ধরনের খবর শুনেই আমি বড় হয়েছি। আমার নিজের গ্রামেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছি। কারণ, আমার মা যখন বাইরে কাজ করতে যেত, তখন দেখতাম অনিরাপদ বোধ করার অনেক কিছুই চারপাশে রয়েছে।

বাংলাদেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানবাধিকার নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে কাজ করে আসছে কাপায়েং ফাউন্ডেশন। তাদের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বিগত কয়েক বছরের পার্বত্য অঞ্চলের নারী নির্যাতনের চিত্র উঠে এসেছে:

২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত ৩৬৪ জন আদিবাসী নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে৷ তার মধ্যে ১০৬ জন শারীরিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, ১০০ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ৬৬ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে৷ চলতি বছরের কেবল জানুয়ারি মাসের মধ্যেই ১০ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তার মধ্যে তিনজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে৷

সম্ভ্রমের মূল্য ৫০ টাকা!
বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার নারী ও তার পরিবারের সাথে টাকা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করার ঘটনা নতুন নয়। অনেক সময়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। বিলাইছড়িতে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার মারমা দুই বোনের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ঋতিক চাকমা:

ভোররাত আনুমানিক ৩.৩০ ঘটিকার সময় দলছুট দুজন সেনাসদস্য অস্ত্রের মুখে বাবা, মা আর ছোটভাইকে জিম্মি করে এবং বড় বোনকে ধষর্ণ এবং ছোটবোনকে ধষর্ণের চেষ্টা ও যৌন হয়রানী করে!…তাদের চিৎকারে আশেপাশের গ্রামবাসী ও বাকী সেনাসদস্যরা ছুটে আসে!

এসময় আপোষে দফা করার জন্যে সাধা হয় মাথাপিছু ৫০ টাকা করে সর্বমোট মাত্র ১০০ টাকা!

এদিকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার দুই আদিবাসী নারীর ছবি নিজের ফেইসবুকে প্রকাশ করেন রাঙামাটির পুলিশ সুপার। পরে সমালোচনার মুখে ছবি সরিয়ে নেন। বাংলাদেশে যৌন সহিংসতার শিকার নারীদের গায়ে দোষ চাপানো যেন সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিশ্চুপ মূলধারার সংবাদমাধ্যম, প্রতিবাদ চলছেই

আদিবাসী তরুণীর ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি দিয়েছে চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটস। সেখানে তারা তিনটি দাবি তুলেছে:

You are requested to ensure the followings:
1. Immediate punishment for Bangladesh military servicemen involved in raping two indigenous girls of Bilaichari Upazilla of Rangamati Hill District on 22 January 2018;
2. Justice for the victims; and
3. Uphold the people's trust and respect in Bangladesh and its constitution.

আমরা আপনার কাছে নিচের দাবিগুলো পূরণ করার জন্য আবেদন করছি:

১. গত ২২ জানুয়ারি ২০১৮ রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার দুই আদিবাসী তরুণী ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার করুন।
২. ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করুন
৩. বাংলাদেশ এবং এর সংবিধানের প্রতি জনগণের শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনুন।

অনলাইন পিটিশন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ চললেও এদিকে দেশটির মূলধারার সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে আদিবাসী তরুণী ধর্ষণের সংবাদ প্রকাশ না করার অভিয়োগ উঠেছে। অল্প দু’একটি পত্রিকা এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলেও বেশিরভাগই বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। আদিবাসী ব্লগার কুঙ্গ থাঙ্গ লিখেছেনঃ

ইশ্বর থাকেন অনেক দুরের মিডিয়াপল্লীতে, পাহাড়ের আর্তনাদ তাহার কর্ণকুহরে পৌঁছায় না৷

ধর্ষণ, সন্ত্রাস, গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক অপহরণ ইত্যাদি চলছেই, আর মিডিয়া নিশ্চুপ হয়ে আছে।

ব্লগার পাইচিংমং মারমা মিডিয়া ব্ল্যাকআউটের অভিযোগ তুলে লিখেছেন:

প্রায় প্রতি বছরই পাহাড়ি জনপদে সেটলারদের দ্বারা হামলা-অগ্নিসংযোগ-ভূমি বেদখলের ঘটনা ঘটে৷ ধর্ষণ, জাতিগত হামলা, সেমারিক-বেসামরিক বাহিনীর রেইড, আতংক ছড়ানো-হয়রানী পাহাড়ের নিত্য দিনের ঘটনা৷ মিডিয়া ব্ল্যাকআউট আর মিলিটারি সেন্সরশিপের কারণে অনেক খবর মূলধারার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায় না৷ ঘটনা যখন বড় আকারে দেখা দেয় তখন মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতে খবর প্রকাশ করা হয়৷ খুব সতর্ক শব্দ প্রয়োগে সংক্ষিপ্ত আকারে ছাপানো সেই নিউজ পড়ে তেমন কিছুই জানা যায় না, কেবল জানা যায় একটা কিছু ঘটেছে! কিন্তু কে ঘটিয়েছে, কেন ঘটিয়েছে, কী তার বৃত্তান্ত, কী তার ইতিহাস,সামনে কে, পেছনে কোন কুশীলব আছে, সামনের দিনে কী ঘটতে যাচ্ছে– এসবের কোনো ধারণা পাওয়া যায় না৷

মারমা তরুণী ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখান থেকে অভিযুক্ত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানানো হয়েছে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে মারমা নারীদের উপর যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ফেব্রুয়ারি মাসে যখন আমরা আমাদের মাতৃভাষা দিবস পালন করি তখন যারা অন্য ভাষায় কথা বলে তাদের বিরুদ্ধে চরম নিপীড়ন চলছে।

সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, দুই মারমা তরুণী আর তার পিতামাতাকে রাঙ্গামাটির পাথারঘাটা এলাকার স্থানীয় রাজনীতিবিদ অভিলাস তাঞ্চাংগার বাড়িতে রাখা হয়েছে পুলিশের তত্ত্বাবধানে। কাউকে তাদের সাথে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না।

আল জাজিরার তথ্য অনুযায়ী তরুণী দুটির পিতামাতাকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা হুমকি দিয়েছে তাদের কথা মেনে চলতে, নাহলে তাদের “অনেক বিপদ” হবে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্তে উদ্ঘাটিত হয়েছে যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মারমা তরুণীদের বাড়িতে প্রবেশ করেছিল।

গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট দুই মারমা তরুণী কার জিম্মায় থাকবে বিষয়ে এ বিষয়ে রুলিং দিতে হাইকোর্টকে ৬ সপ্তাহের সময় দিয়েছে। এ পর্যন্ত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয়নি

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .