ঐতিহাসিকভাবে, ভারত আদর্শগতভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ, প্রাণবন্ত এবং মিথস্ক্রিয়ামূলক রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সুশীল সমাজের গতিশীল ইতিহাসের জন্য পরিচিত। তবে, বর্তমানে, ভিন্নমত পোষণকারীদের উপর সরকারের দমননীতি এবং সুশীল সমাজের কণ্ঠরোধ একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা। সুশীল সমাজের প্রতিরোধবিহীন বর্তমান অবস্থা ভারতের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের পরিবেশ নষ্ট করছে।
ভারতের সুশীল সমাজ: তখন ও এখন
বিখ্যাত ভারতীয় রাজনৈতিক তাত্ত্বিক এবং দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাবেক অধ্যাপক নীরা চন্দোক ভারতীয় সুশীল সমাজের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন। তাঁর রচনা উপনিবেশবাদ এবং ঔপনিবেশিক যুগে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণকারী মতাদর্শের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও বহুত্ববাদের বহুত্ববাদের সমৃদ্ধ ধারণার উপর আলোকপাত করে। চন্দোক দেখান যে ভারতের নাগরিক সমাজ সর্বদা বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং মতাদর্শের একটি গতিশীল সমন্বয়ে গঠিত ছিল।
উনবিংশ শতাব্দী থেকেই ব্রাহ্ম সমাজ এবং আর্য সমাজের মতো সামাজিক ও ধার্মিক সংস্কার আন্দোলনগুলি ভারতীয় সামাজিক রীতিনীতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, ১৯৩২ সালে, হরিজন সেবক সংঘের মতো গান্ধীবাদী সংগঠনগুলির উত্থান ঘটে, যা সংখ্যালঘুদের অধিকার আন্দোলনেে নিবেদিত ছিল। এই আন্দোলনগুলি মহাত্মা গান্ধীর জীবনকর্মের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল এবং সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার উপর জোর দিয়েছিল, যার মধ্যে পানির কুয়া, বিদ্যালয় এবং মন্দিরের মতো সর্বজনীন স্থানগুলিতে সকলের সমান অধিকার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
শিল্পায়নের সাথে সাথে বোম্বে (বর্তমান মুম্বাই) এবং আহমেদাবাদের মতো শহরগুলিতে শ্রমিক ইউনিয়নের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন এর (এনজিওর) উত্থান ঘটে। অন্যদিকে, তামিলনাড়ুর স্ব-মর্যাদা আন্দোলনের মতো জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং সমস্ত নাগরিকের জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে।
অন্যান্য সুশীল সমাজ সংগঠনগুলির মধ্যে বোম্বে প্রেসিডেন্সি অ্যাসোসিয়েশনের মতো গোষ্ঠীগুলি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্য শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য ঔপনিবেশিক সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় নারী ও যুবকদের জন্য পার্টি অধিভুক্ত সামাজিক সংগঠন বানিয়েছিল। এই সময়েই হিন্দু মহাসভা এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) এর মতো সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলিও গড়ে উঠেছিল, যাদের একটি স্পষ্ট লক্ষ্য ছিল: একটি হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। বিশেষ করে আরএসএস এবং অন্যান্য হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীর উপস্থিতি ভারতের সুশীল সমাজের মধ্যে বিদ্যমান বৈচিত্রপূর্ণ ধর্মীয় ও আদর্শগত মতাদর্শের সহাবস্থানের দিকটি তুলে ধরে।
বর্তমানে ভারতে, হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। এর ফলে, সুশীল সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক একটি উদ্বেগজনক পরিবর্তনের সম্মুখীন হচ্ছে। বর্তমানে বিজেপির সাথে যুক্ত আরএসএসের মতো গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তাদের মতাদর্শের বিরোধীদের জন্য প্রতিবাদ করার সুযোগ কমে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
এটি ভারতীয় সুশীল সমাজের মধ্যে বহুত্ববাদ এবং বিরুদ্ধ মতবাদের চর্চার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে।
প্রতিবাদী সুশীল সমাজের বিরুদ্ধে আক্রমণ
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে, ভারতের আয়কর বিভাগ অক্সফাম ইন্ডিয়া, ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যান্ড পাবলিক স্পিরিটেড মিডিয়া ফাউন্ডেশন (আইপিএসএমএফ) এবং সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের মতো বিভিন্ন এনজিও ও থিংক ট্যাঙ্কে এর অফিসে “সার্ভে” পরিচালনা করে। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায়, এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক পরিচালক যামিনী মিশ্র অভিযোগ করেন যে সরকার তাদের আর্থিক ও তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে স্বাধীন সমালোচকদের হয়রানি, ভয় দেখানো, চুপ করানো এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদের লক্ষ্য হলো এই সমালোচক ও প্রতিবাদী সংগঠনগুলির কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করে সুশীল সমাজের কার্যক্রমকে ব্যাপকভাবে বন্ধ করে দেওয়া।
লিগ্যাল রাইটস প্রোটেকশন ফোরাম এক্স প্লাটফর্মে (টুইটারে) এ বিষয়ে পোস্ট করেছে:
Frequent visits by foreign representatives of Caritas India’s global partners such as Caritas Australia to India raises needle of suspicion that the real purpose of their visits is to fulfil the twin objectives: LRPF writes to the Union Home Ministry https://t.co/kHHPJdzkYZ
— Legal Rights Protection Forum (@lawinforce) March 29, 2024
ভারতের বৈশ্বিক অংশীদার যেমন কারিতাস অস্ট্রেলিয়ার বিদেশী প্রতিনিধিদের ঘন ঘন ভারতে আসা সন্দেহের উত্থাপন করে যে তাদের সফরের আসল উদ্দেশ্য দুটি উদ্দেশ্য পূরণ করা: লিগ্যাল রাইটস প্রোটেকশন ফোরাম কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে চিঠি দেয়
তাঁর দু'বছর পর, গত ২৯ শে মার্চ, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ক্রিমিনাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) নিউ দিল্লিতে সাবেক আমলা হারস মান্দারের বাসস্থান এবং তাঁর সাথে যুক্ত থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর ইকুইটি স্টাডিজ (সিইএস) এর অফিসে অভিযান চালায়। অভিযানের সময় ফরেন কন্ট্রিবিউশন (রেগুলেশন) অ্যাক্ট (FCRA) এর আওতায় তাদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আনা হয় – যা তারা অস্বীকার করে। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই হারস মান্দার মোদী সরকারের হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডার উগ্র সমালোচক ছিলেন।
সিইএস অফিসে অভিযানের কয়েকদিন আগে, অর্থনৈতিক অপরাধ দমনে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) পূর্ব ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগের কয়েক ঘণ্টা পরে বিরোধী রাজনীতিবিদ হেমন্ত সোরেনকে গ্রেফতার করে। তার এই গ্রেফতার জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। বিরোধী নেতারা ইডি, সিবিআই এবং আয়কর বিভাগকে সরকারের পক্ষে নির্বিচারে ব্যবহারের সমালোচনা করেন। তাদের অভিযোগ, এই সরকারি সংস্থাগুলিকে “গণতন্ত্র ধ্বংস” করতে, ফেডারেল ব্যবস্থাকে দুর্বল করতে এবং বিরোধীদের জেলে দিতে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এখানে লক্ষ্যণীয় যে, হেমন্ত সোরেনকে গ্রেফতারকারী একই ইডি কর্মকর্তা সম্প্রতি আরেক বিরোধী দলের নেতা ও দিল্লির বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকেও গ্রেফতারের তদারকী করেন। উল্লেখ্য, কেজরিওয়াল ভারতের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় গ্রেফতার হয়েছেন।
দিল্লিভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাংবাদিক আলিশান জাফরি এক্স প্লাটফর্মে (টুইটারে) পোস্ট করেছেন:
“This government is turning into an authoritarian regime.”
Watch: What Delhi People Think About Arvind Kejriwal's Arrest?https://t.co/pnVkbrayoN pic.twitter.com/3NXJDOQzQ8— Alishan Jafri (@alishan_jafri) March 26, 2024
“এই সরকার একটি কর্তৃত্ববাদী শাসকে পরিণত হচ্ছে।”
দেখুন: অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তার সম্পর্কে দিল্লির লোকেরা কী ভাবছে?
দমনের এক দীর্ঘ হাত
ভারতীয় রাষ্ট্রকর্তৃক বিরোধী কণ্ঠস্বর, বিশেষ করে সুশীল সমাজের সংগঠনগুলিকে দমিয়ে রাখার এই ধরনের প্রবণতা ভারতের জন্যে নতুন কিছু নয়, বা অপ্রত্যাশিতও নয়।
২০২০ সালের গত ২১শে সেপ্টেম্বর ভারতের লোকসভা ফরেন কন্ট্রিবিউশন (রেগুলেশন) সংশোধন (এফসিআরএ) ২০২০ বিলটি পাস করে। এই বিলটি এনজিওসমুহ কীভাবে বিদেশী অনুদান এবং সাহায্য গ্রহণ, অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর এবং ব্যবহার করতে পারে, সেই বিষয়গুলির পুনঃনির্ধারণ করে দেয়। উল্লেখ্য যে, এফসিআরএ ১৯৭৬ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে ভারতে বিদেশী প্রভাব নিরীক্ষণের জন্য আইন হিসাবে প্রথম জারি হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০১০ সালে ১৯৭৬ সালের আইনটি বাদ দিয়ে আরও কঠোর একটি আইন তৈরি করা হয়। এনজিওদের জন্যে আরও বেশী শর্ত জুড়ে দিয়ে এই আইনটি আবারও সংশোধন করা হয় ২০২০ সালে। শেষ সংশোধনীগুলিতে এমন বিধান রয়েছে যা এক সংগঠনের প্রাপ্ত বিদেশী তহবিল অন্যান্য সামাজিক সংগঠনগুলির মধ্যে স্থানান্তরকে নিষিদ্ধ করে, এফসিআরএ এর আওতায় প্রাপ্ত তহবিল প্রশাসনিক উদ্দেশ্যে খরচের সীমা ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নিয়ে আসা হয়, এবং এনজিওর সমস্ত কর্মচারি, পরিচালক বা মুখ্য কর্মকর্তাদের তাদের আধার (ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র) বিবরণী জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়, যা প্রশাসনিক জটিলতার সৃষ্টি করে।
আন্তর্জাতিক বিষয় বিশেষজ্ঞ সুপর্ণা চৌধুরী ব্যাখ্যা করেন যে, গত তিন দশকে বিশ্বব্যাপী ১৩০ টিরও বেশি দেশের সরকার এনজিওর কার্যক্রমকে দমাতে সচেষ্ট হয়েছে, এবং সেসব দেশে এনজিওগুলিকে একটি সম্ভাব্য বাহ্যিক হুমকি হিসাবে গণ্য করার ইঙ্গিত দেয়। যদিও সরকারী দমননীতি তাৎক্ষণিক অভ্যন্তরীণ হুমকির ক্ষেত্রে সাধারণত ব্যবহার করা হয় – যেমন সহিংস প্রতিবাদ ঠেকাতে। তবে সহিংস ও সরাসরি দমন নীতি রাষ্ট্রের জন্যে বিরূপ ফলাফল আনতে পারে যেমন রাষ্ট্রের ফৌজদারি দায় বাড়িয়ে দেয়, এর বৈধতা কমিয়ে দেয় এবং সার্বজনীন মানবাধিকার চুক্তির লঙ্ঘন হয়। তাই স্বৈরাচার মনভাবের রাষ্ট্রগুলি প্রশাসনিক দমননীতির আশ্রয় নেয় দীর্ঘমেয়াদি হুমকি মোকাবেলার জন্যে। যেমন নির্বাচনকে প্রভাবিত করে বা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করে, এমন এনজিওর কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় প্রশাসনিক দমন ব্যবহারের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ভারতীয় প্রেক্ষাপটে, সুশীল সমাজের গোষ্ঠীগুলিকে দমিয়ে রাখতে এবং বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চালানোর জন্য সরকারি সংস্থাগুলির ব্যবহার এই উদ্দেশ্যেই হয়ত করা হয়েছে বলে ব্যখ্যা করা যায়। ক্ষমতাসীনরা অবশ্য নিজেদের দলের লোকের দুর্নীতি নিরসনে এরকম প্রশাসনিক ক্ষমতা খুব কমই প্রয়োগ করে। এই অভিযান ও তদন্তগুলি তাই দুর্নীতির বিরোধী ব্যবস্থা এবং “বিদেশী প্রভাব” রোধের ছদ্মবেশে ক্ষমতা সুদৃঢ় করার হাতিয়ারে পরিণত হয়।
২০২৪: একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর
ভারত ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে এবং সুশীল সমাজের ব্যক্তি ও সংগঠন এবং এনজিওগুলি ক্ষমতাসীন দলকে তাদের কর্মকাণ্ড ও পদক্ষেপের জন্যে জবাবদিহি করার জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কথা। এরা জনগণের আলোচনার জন্য মতাদর্শগতভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ প্লাটফর্ম সরবরাহ করে, বিবিধ ইস্যুতে গঠনমূলক সংলাপ ও বিতর্ককে অনুপ্রাণিত করে।
দ্য ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিনের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে নরেন্দ্র মোদির সরকারের পদক্ষেপের কারণে হাজার হাজার এনজিও বন্ধ হয়ে গেছে এবং পদ্ধতিগত জটিলতা অনেক দাতব্য সংস্থার তহবিলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, যা এই সেক্টরে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। কী সংখ্যক সংগঠন প্রভাবিত হয়েছে তা নির্ধারণ করা কঠিন, কারণ তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আইনী পথ ব্যবহার করা হয়েছে। যাইহোক, এই প্রভাবগুলোকে খাটো করে দেখার উপায় নেই কারণ এগুলো কোন প্রতিরোধ ছাড়াই করা গেছে। বিভিন্ন অভিযোগে এনজিও কার্যক্রমের ব্যাঙ্ক একাউন্টে সীमिত সম্পদ আটকে রেখে এবং তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনী প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে একধরনের দমননীতি।
বেশ কয়েকজন পর্যবেক্ষক, যাদের অনেকেই ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপগুলিকে সরকারের হিন্দু-প্রথম মতাদর্শ এবং ভিন্ন বা বিরোধী মতাদর্শের প্রতি ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করেন। দেখা গেছে অ-হিন্দু ধর্মীয় এনজিওগুলি, বিশেষ করে খ্রিস্টান বা মুসলমানদের সাথে সম্পর্কযুক্ত সংগঠনগুলি তাদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু। এছাড়াও, সুশীল সমাজের যেসব ব্যক্তি ও সংগঠনকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী সহ মতাদর্শগত বিরোধী হিসাবে দেখা হয় তারাও এরকম দমননীতির মুখোমুখি হয়।
গবেষক এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের সভাপতি ইয়ামিনী আইয়ার, নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে ভারতের অর্থনীতির কি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সে নিয়ে গত ২৩শে মার্চ ইকোনমিস্ট এ একটি সমালোচনামূলক নিবন্ধ লিখেছেন। উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ জাস্টিন স্যান্ডেফার কয়েকদিন পরেই তার পদত্যাগের বিষয়ে এক্স প্লাটফর্মে পোস্ট করেছেন:
A few days aga, @AiyarYamini wrote in The Economist about the shrinking space for independent civil society in India.
Today the @CPR_India board accepted her resignation as CEO.
Case in point. pic.twitter.com/NdX46S6hIW
— Justin Sandefur (@JustinSandefur) March 26, 2024
কয়েকদিন আগে, @আইয়ারইয়ামিনি ভারতে স্বাধীন সুশীল সমাজের উপর দমননীতির সম্পর্কে দ্য ইকোনমিস্টে লিখেছেন।
আজ @সিপিআর_ইন্ডিয়া বোর্ড সিইও হিসেবে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে।
আর কিছু বলা লাগবে?
এই অবস্থার প্রতিফলন হিসেবে ইলেক্টরাল ডেমোক্রেসি ইনডেক্স (নির্বাচনী গণতন্ত্র সূচক) ২০২৩-এ ভারত ১০৮তম স্থানে নেমেছে, যেখানে তানজানিয়া, বলিভিয়া, মেক্সিকো, সিঙ্গাপুর এবং নাইজেরিয়ার মতো দেশগুলি ভারতের অনেক উপরে অবস্থান করে। আইনের প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করে এবং স্পষ্টভাবে অসাংবিধানিক এমন নির্বিচারে অভিযান ও গ্রেফতারের মতো প্রক্রিয়াগুলি বন্ধ করার জন্য এখন আগের চেয়ে বেশি জরুরী ভাবে আদালতের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে। এই ধরনের কর্মকাণ্ডগুলি ভারতের গণতান্ত্রিক নীতিমালা ও প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে এবং বিশ্ব মঞ্চে দেশের অবস্থানকে বিপদে ফেলে।
ব্যপারটি হচ্ছে যে সুশীল সমাজের গোষ্ঠীগুলো আক্রান্ত হচ্ছে, এবং তাদেরকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে যদি তারা এইসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চায়। নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দদের অবশ্যই বুঝতে হবে একজনের উপর আক্রমণ সবার উপর আক্রমণ। বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে জোট গড়ে তোলার জরুরী প্রয়োজন রয়েছে সুশীল সমাজের উপর এরূপ আক্রমণ রোধে। নাহলে, মোদীর দল যদি ২০২৪ সালের নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতায় আসে, তাহলে সুশীল সমাজ আরও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে, বর্তমান জরিপগুলি এমনটিই ইঙ্গিত করে।