ইরান এবং বিশ্বের অন্য বেশ কিছু স্থানে কোবানে শহরের জনগণকে প্রকাশ্য সমর্থন জানাতে প্রতিবাদকারীরা রাজপথে নেমে এসেছেন। এটি তুর্কি সীমান্তে অবস্থিত একটি প্রসিদ্ধ কুর্দিশ সিরিয়ান শহর। যেহেতু এ শহরের লোকেরা মরিয়া হয়ে আত্মরক্ষার্থে আইএসআইএস এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন তাই বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিবাদকারীরা তাদের সমর্থন জানিয়েছেন।
আইএসআইএস গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে কোবানে শহরে আক্রমণ চালাচ্ছে। এটি আল কায়েদার একটি বিচ্ছিন্ন শাখা যা ইরাক এবং সিরিয়ার একটি বড় অংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে তারা অত্যন্ত নৃশংস এবং সহিংস কিছু কৌশল অবলম্বন করছে। এ অঞ্চলের প্রায় ২০০,০০০ অধিবাসীকে তারা পার্শ্ববর্তী দেশ তুরস্কে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। যদিও আইএসআইএস বাহিনীর সেনারা কুর্দিশ বাহিনীর সদস্যদের হাতে ধরাশায়ী হয়েছে, এরপরেও খবর শোনা যাচ্ছে যে আইএসআইএস কোবানে শহরের কেন্দ্রবিন্দু অবৈধ পথে দখল করে নিয়েছে।
কোবানেতে আইএসআইএস বাহিনীর সীমালঙ্ঘন আরও তীব্রতর হওয়ার কারণে পাঠানো সাহায্যকারী বাহিনী ভৌগোলিক-রাজনৈতিক কারণে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে প্রধান প্রধান আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারকারী দেশঃ তুরস্ক, ইরান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একত্রিত হতে পারছে না।
মঙ্গলবার থেকে কোবানের আশেপাশের এলাকাগুলোতে আইএসআইএস’এর বিরুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর নেতৃত্বে মিত্র বাহিনী বিমান হামলা চালানো শুরু করেছে। তবে কুর্দিশ বাহিনীর পাশাপাশি তুর্কি সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে স্থলপথে আক্রমণ শুরুর আবেদন জানিয়েছে। তাদের এ আবেদনের উদ্দেশ্য, শহরটিকে পুরোপুরি আইএসআইএস বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন হওয়া থেকে বাঁচানো।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যেপ এরদোগানের উদ্ধৃতি দিয়ে গতকাল আলজাজিরা প্রতিবেদন প্রচার করে বলেছে,
“…যতক্ষণ না আমরা একে অপরের সহযোগীতায় স্থলপথে হামলা না করবো, ততোক্ষণ এই সন্ত্রাসীদের অবসান হবে না।” তারা প্রেসিডেন্টের উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বলেছে, “আমি পশ্চিমা দেশগুলোকে বলছি – আকাশ পথে বোমা হামলা চালিয়ে কোন সমাধান পাওয়া যাবে না।”
তবে ইরানি সরকার শহরটিতে পশ্চীমা বাহিনীর হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে কথা বলছে। তারা কোবানে শহরে আইএসআইএস বাহিনীকে রুখতে সিরিয়ান সরকারকে সমর্থন জানাতে অন্যান্য দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। মঙ্গলবারে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র মারজিয়া আফখাম সিরিয়াকে সমর্থন দেয়ার প্রতি বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাঁর সাথে সাথে তিনি এই পরিস্থিতিতে ইরানের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রতিবেদকদের তিনি বলেছেন, “ইসলামপন্থী ইরান প্রজাতন্ত্র খুব শীঘ্রই এ অঞ্চলের অধিবাসী এবং শরনার্থীদের জন্য সিরিয়ান সরকারের মাধ্যমে মানবিক সাহায্য পাঠাবে”।
যুদ্ধরত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মিত্রশক্তি ইরান। আল আসাদের বিশ্বস্ত বাহিনী এবং তাঁর শাসনতন্ত্রের বিরোধী চক্রান্তকারী গোষ্ঠীর মাঝে সিরিয়ার নিয়ন্ত্রন দখল করতে তিন বছর ধরে রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ চলছে। এ গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত ১ লক্ষ ৯১ হাজারেরও বেশি লোক মারা গেছেন। সারা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল জুড়ে আরব বসন্তের ঢেউ এসে লাগার সময়ে এই বিরোধী চক্রান্তকারী গোষ্ঠী প্রতিবাদ মুখর হয়ে ওঠে। অরাজক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আইএসআইএস সিরিয়ার ভূমি দখল করে নিচ্ছে। এ কারণে আল-আসাদের বিরুদ্ধে জঙ্গী গোষ্ঠীটিকে সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
কোবানে শহরের মানবিক পরিস্থিতির সমর্থনে প্রতিবাদ ফুঁসে উঠেছে। ইরানিরা গত সপ্তাহে তাদের সাথে প্রতিবাদ করে সংহতি প্রকাশ করেছেন। তারা মাঝে মাঝেই তুরস্কের পাঠানো অপ্রতুল মানবিক সাহায্য এবং এই পরিস্থিতিতে তাদের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করে থাকেন। কুর্দিরাও তুরস্কের কাছে আরও বেশি সামরিক সমর্থন দাবি করেছে; উল্লেখ্য তুর্কি পুলিশের সাথে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১২ জন কুর্দি প্রতিবাদকারী নিহত হয়েছেন।
#টুইটারকুর্দস, #কোবানি এবং # کوبانی শিরোনামের হ্যাশট্যাগগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে।
Ordogan, stop supporting terrorism. Peaceful protesters gathered for #Kobane in #Tehran#كوبانىpic.twitter.com/p3N5bQ194u
— Nasim (@NasimMohammadi_) octubre 7, 2014
অর্দোগান, সন্ত্রাসকে সমর্থন করা বন্ধ করুন। #তেহরানে প্রতিবাদকারীরা #কোবানের জন্য প্রতিবাদ জানাতে একত্রিত হয়েছেন।
কোবানের জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে সানদাজ শহরে ইরানিরা পদযাত্রা কর্মসূচী পালন করেছেন। কর্মসূচীটি রেডিও ফারদার শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছেঃ
বার্লিনে যেমন বিক্ষোভ পালন করা হয়েছিল তেমনভাবে অন্যান্য কয়েক স্থানেও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করা হয়েছেঃ
Kurds in Berlin protest in front of American embassy and brandenburger tor for #kobane#TwitterKurdspic.twitter.com/j6KEPIQ5PV
— Serio Sito (@SerioSito) October 6, 2014
#কোবানের জন্য কুর্দিরা বার্লিনে অবস্থিত আমেরিকান দূতাবাস এবং ব্র্যান্ডেনবার্গের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করেছেন।