দশকের পর দশক ধরে ইরান সরকার বাক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান করে আসছে, কিন্তু রোববার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গুগল এবং জিমেইলকে ফিল্টার করার ঘোষণা দিয়ে তারা অনেককে বিস্মিত করে।
ইরানের একজন কর্মকর্তা আব্দোলসামাদ খোরমাবাদি বলেন, এই কাজটি করা হয়েছে [ফার্সী ভাষায়], ইউটিউবে (ইউটিউবের মালিক গুগল) ইসলাম বিরোধী একটি ছবি থাকার কারণে জনতার দাবীর প্রেক্ষাপটে, যাকে অনেকে ব্লাসফেমি হিসেবে দেখছে। খোরমাবাদি,'তৎক্ষনাৎ অপরাধমুক্ত উপাদান’ নির্ধারণ কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
তবে, অনেকে ধারনা করছেন ইরানের তথাকথিত নিজস্ব ‘জাতীয় ইন্টারনেট‘-এর প্রচারণার উদ্দেশ্য গুগল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, ২২ সেপ্টেম্বরে যা চালু হবার কথা ছিল, তবে এখন পর্যন্ত তা কাজ শুরু করতে পারেনি।

কার্টুন, মানা নেইয়াস্তানির। সূত্রঃ ফেসবুকের ইন্টারনেট ফ্রিডম পাতা।
গ্লোবাল ভয়েসেস, তেহরান, শিরাজ এবং কোম সহ ইরনের বেশ কয়েকটি শহরের নাগরিকদের সাথে যোগাযোগ করেছে। তাদের প্রায় সকলে বলেছে যে, তারা জিমেইলে প্রবেশ করতে পারছে না। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নাগরিক বলছে, তারা এমনকি গুগল সার্চেও প্রবেশ করতে পারছে না।
আরাশ আবাদপোর, কানাডায় বাস করা ইরানের এক ব্লগার এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানী। তিনি গ্লোবাল ভয়েসেস-এর কাছে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন যা নীচে তুলে ধরা হল:
উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নাগরিকের গুগল সার্চে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেওয়ার মানে সরকারের ফিল্টার করা উপাদান ব্যবহারের দিকে তাদের ঠেলে দেওয়া। এর মানে এই নয় যে, এর ফলে ‘উন্নত’ এবং আরো ‘উন্মুক্ত’ এক ইন্টারনেট সহজলভ্য হবে, বরঞ্চ বর্তমান কর্মকাণ্ড ইরানের সরকারেরও কোন কাজে আসবে না। এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে তারা নাগরিকদের আরো সতর্ক হয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করব। ইরান সরকারে কর্মকাণ্ড যেন নাগরিকদের বলছে; যাও, জেনে নাও, কি ভাবে ভিপিএন ব্যবহার করতে হয়’। আর আমি দিব্য চোখে দেখতে পাচ্ছি আগামীতে ঠিক এই ঘটনাটি ঘটতে যাচ্ছে।
ইন্টারনেটের স্বাধীনতা এবং গুগলে প্রবেশাধিকারের দাবীতে ফেসবুকে এক প্রচারণা শুরু হয়েছে। গুগল ফিল্টার করার বিষয়ে নিজের ফেসবুকের পাতায় মানা নেইয়াস্তানির কার্টুন (যা উপরে ডানে প্রদর্শন করা হয়েছে) সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
ফিল্টারিং বিষয়ে ইরানের বেশ কয়েকজন নাগরিক পরিহাসের সাথে টুইট করেছে। বেহরান তাজদিন টুইট করেছে[ফার্সী ভাষায়]:
@বেহরান: যে সমস্ত জনতা গুগল ফিল্টার করার অনুরোধ জানিয়েছে, তাদের কি জিমেইল একাউন্ট নেই? যদি তা থেকে থাকে, তাহলে তারা কি কাজে সেটি ব্যবহার করে।?
সাইয়ে রোশন টুইট করেছে [ ফার্সী ভাষায়]:
@সাইয়েহ: আমরা জিমেইল এবং গুগল বন্ধ করে রেখেছি। আমরা ডলারের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছি। আমার সন্দেহ আছে এই সমস্ত কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডকে কঠিন করতে পরি কিনা।
বাস্তবে গুগল নয়, বরঞ্চ ইরানের স্বাধীনতা এই ঘটনার প্রাথমিক শিকার। এর মনে হচ্ছে ইরান সরকারের জন্য এমনকি ভার্চুয়াল স্বাধীনতাও অনেক পীড়াদায়ক।