নতুন তথ্যচিত্রে উজবেকিস্তানের দমন-পীড়ন থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের যন্ত্রণাদায়ক গল্পগুলো উঠে এসেছে

নিপীড়নের শিকার ২১ বছর কারাগারে কাটানোর পর বেঁচে থাকা  হাবিবুল্লোর একটি ছবি। মধ্য এশীয় অক্সাস সমিতির ইউটিউব চ্যানেল থেকে নেওয়া পর্দাছবি। ন্যায্য ব্যবহার।

মধ্য এশীয় অক্সাস সমিতি ২৬ জানুয়ারি ইউটিউবে উজবেকিস্তানের দমন-পীড়ন থেকে বেঁচে যাওয়াদের গল্পের উপর আলোকপাত করা একটি তথ্যচিত্র “ওকলানমাগান – দায়মুক্ত নয় যারা“পোস্ট করেছে। এই ২৭ মিনিটের তথ্যচিত্রটি ১৯৯১ থেকে ২০১৬ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত শাসনকারী উজবেকিস্তানের প্রথম রাষ্ট্রপতি ইসলাম করিমভের শাসনামলে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার লোকদের গল্প বলেছে। গল্প বলার প্রথম প্রচেষ্টার একটি এটি। বানোয়াট  অভিযোগে ১৮,০০০ জনেরও বেশি কারাবন্দীকে করিমভ সরকার “চরমপন্থী” হিসেবে চিহ্নিত করে।

এখানে তথ্যচিত্র “ওকলানমাগান – দায়মুক্ত নয় যারা।”

প্রায় ৭০ বছরের নাস্তিক শাসনে থাকা দেশটি ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পর জাতীয় ও ধর্মীয় পরিচয় পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে উজবেকিস্তানে বিভিন্ন স্থানীয় আন্দোলন দেখা দিলে দমন-পীড়ন শুরু হয়। করিমভ এই গণতন্ত্রপন্থী ও ধর্মীয় দলগুলিকে তার শাসনের জন্যে হুমকি হিসেবে দেখেন। ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে দুই বিরোধী রাজনৈতিক দল এর্ক (ইচ্ছা)বির্লিক (একতা) নিষিদ্ধ করে হাজার হাজার সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন শুরু হয়।

চলচ্চিত্রটিতে প্রদর্শিত আজমজন  ফার্মানভ নামের এক মানবাধিকার কর্মী তার কাজের জন্যে সাড়ে ১১ বছর কারাগারে কাটান। তিনি উজবেকিস্তান মানবাধিকার সমিতির সদস্য ও কেন্দ্রীয় সিরদারিও অঞ্চলের শাখা প্রধান ছিলেন। বাকি রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বন্দীদের মতো ফার্মানভ জাসলিক কারাগারে তার সাজা ভোগ করেন, যেটিকে তিনি নির্যাতনের ব্যাপক ব্যবহার ও নানা ধরনের অমানবিক আচরণের কারণে “সব কারাগারের মধ্যে সবচেয়ে নিষ্ঠুর ও হিংস্র” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

এখানে জাসলিক কারাগার সম্পর্কে একটি ইউটিউব ভিডিও রয়েছে।

পূর্বাঞ্চলীয় শহর নামানগানে ১৯৯১ সালে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির সাথে করিমভের কুখ্যাত বৈঠকের পর থেকে ধর্মীয় দমন-পীড়ন শুরু হয়। এই সময় জনতা কমিউনিস্ট পার্টির স্থানীয় ভবনটিকে একটি মসজিদ এবং উজবেকিস্তানকে একটি ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত করার দাবিতে ধাক্কাধাক্কি করার সময় তিনি অপদস্থ হন। বৈঠকটির পরপরই ৭০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়

নামানগান এবং পূর্ব উজবেকিস্তানের ফারঘানা উপত্যকার অন্যান্য বড় শহরগুলি ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে ধর্মীয় পুনরুজ্জীবনের কেন্দ্রে পরিণত হলে স্থানীয় ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলি দৈনন্দিন জীবনে ধর্মের বৃহত্তর ভূমিকার পক্ষে কথা বলে। আদোলাত (বিচার) নামক এরকম একটি দল অবশেষে উজবেকিস্তান ইসলামী আন্দোলন (আইএমইউ) নামের একটি স্থানীয় সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হয়।

ধর্মীয় দমনপীড়ন ১৯৯৮ সাল ও তার পরে চরমে ওঠে। সেই বছর, আইএমইউ তার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে উজবেকিস্তানে করিমভ শাসনের পতনের লক্ষ্য ঘোষণা করে। প্রতিক্রিয়ায় উজবেকিস্তান দুটি আইনি হাতিয়ার বিবেক ও ধর্মীয় সংগঠনের স্বাধীনতা আইন প্রণয়ন ও ফৌজদারি বিধিতে ১৫৯ ধারা (সাংবিধানিক আদেশ লঙ্ঘনের চেষ্টা) প্রবর্তন করে, যা হাজার হাজার নাগরিকের বিরুদ্ধে তাদের বিচারে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

উজবেকিস্তানে নিষিদ্ধ একটি অহিংস ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠন হিজবুত তাহরীরের সদস্য হওয়ার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর চলচ্চিত্রে প্রদর্শিত হাবিবুল্লো ২১ বছরেরও বেশি সময় কারাগারে কাটান। তিনি জানিয়েছেন স্বীকা্রোক্তি আদায়ে বাধ্য করতে পুলিশ ছয় দিন ধরে তাকে নির্যাতন করে। করিমভের দমনাভিযানের সময় শুধু স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে উজবেকিস্তানের দোষী সাব্যস্ত হয়ে বিচারের হার বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। হাবিবুল্লো জীবনে একবার প্রার্থনা না করেও নির্যাতনের মুখে স্বীকার করা উগ্রবাদের দায়ে দোষী সাব্যস্ত বন্দীদের সাথে দেখা করার কথা উল্লেখ করেছেন।

উজবেকিস্তানের বর্তমান রাষ্ট্রপতি শাভকাত মিরজিওয়েভ ২০১৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর দমন-পীড়নের মাত্রা আংশিকভাবে প্রকাশ পায়। ২০১৭ সাল থেকে, চরমপন্থার জন্যে দোষী সাব্যস্ত ১৮,০০০ জনেরও বেশি মুসলমানের সাজা কমিয়ে তথাকথিত চরমপন্থায় দোষী সাব্যস্ত কালো তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া হলেও কারোরই অব্যাহতি না পাওয়া কর্তৃপক্ষের ক্রমাগত অন্যায়কে কথা তুলে ধরে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .