মঙ্গোলিয়ায় অবনতিশীল প্রাকৃতিক দুর্যোগে হুমকির মুখে যাযাবর জীবনযাত্রার ভবিষ্যৎ

মঙ্গোলিয়ায় একজন পশুপালক পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সাইমন মুন্ডির ইউটিউব চ্যানেলেআগামীর জন্যে দৌড় | পর্ব ৭ | মঙ্গোলিয়ার খুনে শীত জাদ” ভিডিওর পর্দাছবি। ন্যায্য ব্যবহার।

মঙ্গোলিয়ার রাষ্ট্রীয় জরুরি কমিশন (এসইসি) ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করেছে দেশে চলমান জাদের (প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা প্রাণীর খাদ্য ও চারণক্ষেত্র নষ্ট করে) ফলে ২৯ লক্ষ গবাদি পশু মারা গেছে। সাধারণত শীতকালে প্রবল তুষারপাত, ঠান্ডা বাতাস ও প্রচন্ড ঠান্ডা তাপমাত্রার কারণে সংঘটিত  প্রাকৃতিক দুর্যোগ জাদ ব্যাপক পরিমাণ গবাদি পশুকে মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করে। ছড়িয়ে পড়া বিপর্যয়ের প্রতিক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠিত এসইসির জরুরি কর্মীবাহিনীর প্রধান জানিয়েছেন দেশের ৮০ শতাংশ জাদ আক্রান্ত।

কর্তৃপক্ষের মতে, আক্রান্ত এলাকার ২১.৮ শতাংশ মঙ্গোলীয়দের ভাষায় তুমুর (লৌহ) জাদের প্রভাবাধীন। এই বিশেষ ধরনের জাদ ঘটে প্রচণ্ড ঠান্ডা পরে একটি অস্বাভাবিক সময় ধরে উষ্ণতার ফলে হঠাৎ তুষার গলে গিয়ে মাটির উপরে বরফের দুর্ভেদ্য আস্তরণ সৃষ্টি করার ফলে পশুদের ভূমিতে চারণ অসম্ভব করে তোলে। অবশিষ্ট ৭৮.২ শতাংশ ভারী তুষারপাত চিহ্নিত সাগান (সাদা) জাদে আক্রান্ত, যা পশুদের চারণ ও চলাফেরাকে সীমিত করে ফেলে।

এখানে মঙ্গোলিয়ায় চলমান জাদ সম্পর্কিত একটি  ইউটিউব ভিডিও রয়েছে৷

https://www.youtube.com/watch?v=i07Bk4dtSwU

জাদ মঙ্গোলিয়ায় একটি সাধারণ ঘটনা এবং বিভিন্ন ধরনের জাদ রয়েছে। সাগান ও তুমুর জাদ ছাড়াও খার (কালো), খুইতেন (ঠান্ডা) এবং খাভসারকান (সম্মিলিত) জাদ রয়েছে। দীর্ঘ প্রলম্বিত প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থেকে খার জাদ ঘটে। খুইতেন জাদ হলো জোর বাতাস ও গভীর তুষারপাতের সংমিশ্রণ। খাভসারকান জাদের সময় গভীর তুষারপাতের সাথে হঠাৎ করে তাপমাত্রা কমে যায়, যা পশুপালক ও পশুপ্রাণীকে অরক্ষিত করে ফেলে।

এখনো অব্যাহত বর্তমান জাদটি পশুমৃত্যু বাড়াতে পারে। কর্তৃপক্ষ বসন্তে পচন ধরে রোগ সৃষ্টি করার আগে এদের মৃতদেহ সংগ্রহ করে নিষ্পত্তি করার পরিকল্পনা করেছে। জাদের ক্ষতি কমাতে সকল সংস্থান এখন পশুপালকদের অবশিষ্ট গবাদিপশুকে বাঁচিয়ে রাখতে জ্বালানী, খড় ও পশুখাদ্য সরবরাহসহ রাস্তা পরিষ্কারে নিয়োজিত করা হয়েছে যাতে পশুপালকরা তাদের পশুদের চারণভূমিতে নিয়ে যেতে পারে। মঙ্গোলিয়ার সবাই এই উদ্ধার অভিযানে সাহায্য করছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুদানের পরিমাণ ১৬০ কোটি তুগরুগে (প্রায় ৫.১৯ কোটি টাকা) পৌঁছেছে।

এসব চেষ্টা এই শীতে মঙ্গোলীয় পশুপালকদের ক্ষতি কমাতে সাহায্য করলেও আগামী বছরগুলিতে তাদের সামনে আরো বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। গত দুই দশকে জাদের তীব্রতা ও সংখ্যা উভয়ই বেড়েছে, যা খাদ্য ও আয়ের জন্যে গবাদি পশুর উপর নির্ভরশীল জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ যাযাবর পশুপালকদের ব্যাপক ক্ষতি করেছে।

ঐতিহাসিক নথি অনুসারে ১৮ শতকে ১৫টি, ১৯ শতকে ৩১টি এবং ২০ শতকে ৪৩টি জাদ দেখা যায়। এভাবে অতীতে প্রতি আট থেকে ১২ বছরে জাদের পূর্বাভাস দেওয়া হলেও তারা প্রতি বছর ঘটবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন সৃষ্ট এই বিরক্তিকর পরিবর্তনটির ফলে মঙ্গোলিয়ায় উষ্ণ ও শুষ্ক গ্রীষ্মকাল এবং কঠোর শীত হয় এবং ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে অভূতপূর্ব গবাদি পশুর সংখ্যাবৃদ্ধির কারণে চারণভূমিগুলি অতি ব্যবহৃত।

এখানে জাদের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিভিন্ন কারণ নিয়ে একটি ইউটিউব ভিডিও রয়েছে।

জাদের সময় পশু-প্রাণী মারা গেলেও এই দুর্যোগে সমগ্র জাতি প্রভাবিত। জাদের নানা প্রভাবের মধ্যে ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্যের মাত্রা ও অভ্যন্তরীণ অভিবাসন রয়েছে। জাদের সময় পশুপালকদের পুরো গবাদি পশু হারিয়ে, গ্রামাঞ্চলের জীবন ছেড়ে দিয়ে  কাজের জন্যে প্রধান শহরে চলে যেতে বাধ্য হওয়া সাধারণ ব্যাপার। সর্বোপরি, আরো ঘন ঘন ও মারত্মক জাদ হাজার বছরের পুরানো অনন্য যাযাবর জীবনধারার জন্যে একটি গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .