শ্রীলঙ্কায় অভিবাসন, স্বত্ব ও বাড়ির মানে অনুসন্ধান

Photo of an art installation of Firi Rahman. Courtesy of Saskia Fernando Gallery via Groundviews. Used with permission.

ফিরি রহমানের একটি শিল্প স্থাপনার আলোকচিত্র। গ্রাউন্ডভিউজের মাধ্যমে সাসকিয়া ফার্নান্দো গ্যালারির সৌজন্যে। অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

গ্লোবাল ভয়েসেসের সাথে একটি বিষয়বস্তু ভাগাভাগির চুক্তির অংশ হিসেবে মূলত শ্রীলঙ্কার একটি পুরস্কার বিজয়ী নাগরিক গণমাধ্যম ওয়েবসাইট গ্রাউন্ডভিউজে প্রকাশিত এই নিবন্ধটির  একটি সম্পাদিত ও সংক্ষিপ্ত সংস্করণ এখানে প্রকাশিত হয়েছে।

বহুমুখী শিল্পী ও কলম্বোর স্থানীয় বাসিন্দা ফিরি রহমান, তোতাপাখির সাথে বড় হওয়ায় তিনি তাদের চেহারার সাথে পরিচিত এবং তাদের অভ্যাস বোঝেন। প্যারিসে বেড়াতে গিয়ে মনে হলো কলম্বো থেকে তোতাপাখিরা সেখানে তাকে অনুসরণ করেছে – একটি ভিন দেশে অভিবাসী দৃশ্যপট জুড়ে অন্য বাড়ির সন্ধান করতে গিয়ে অপরিচিত শব্দ করে। প্যারিসীয় তোতাপাখিরা তাদের নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিলেও সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে তারা আক্রমণাত্মক ও স্থানীয় প্রাণীজগতের প্রতি হুমকি হয়ে ওঠে। তোতাপাখিরা অনেকটা প্রতিকূলতার কারণে প্রিয় বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ দেশে উন্নত জীবনযাপন করতে বাধ্য হওয়া লোকদের মতো।

শ্রীলঙ্কার রাজধানীতে সাসকিয়া ফার্নান্দো গ্যালারিতে ফিরি তার সর্বশেষ পাতার মতো দূরে সরে যাওয়া প্রদর্শনীতে  ইচ্ছাকৃত রঙহীনভাবে ধূসর ছায়ায় আঁকা তোতা পাখিকে চিত্রিত করেছেন, যাদের কেউ কেউ খাঁচায় বন্দী থাকে আবার কেউ কেউ মুক্ত হয়ে একটি ধারাবাহিক চক্রাকারে উড়তে থাকে। কাঠের গরাদের আড়ালে আবদ্ধ পাখিদের কেউ কেউ অনুপস্থিত, আর অন্যরা ডানা বা অঙ্গবিহীনভাবে চিত্রিত হয়েছে।

Photo of an installation of Firi Rahman. Courtesy of Saskia Fernando Gallery via Groundviews. Used with permission.

ফিরি রহমানের একটি শিল্প-স্থাপনার আলোকচিত্র। গ্রাউন্ডভিউজের মাধ্যমে সাসকিয়া ফার্নান্দো গ্যালারির সৌজন্যে। অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

ফিরি পর্তুগিজ শাসনামলে আফ্রিকীয় ক্রীতদাসদের রাখার এলাকা হিসেবে ঐতিহাসিক ভূমিকার জন্যে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় দেওয়া দাস দ্বীপ নামে পরিচিত কলম্বোর একটি শহরতলীতে বসবাস করেন। তার বাড়িটি প্রায়শই বাড়ি দখলে নিয়ে মূল্যবান জমিটিতে কদাকার কর্পোরেট দালান তৈরির জন্যে ভেঙে দেওয়ার প্রক্রিয়া ও বাস্তুচুত হবার নানারূপ হুমকিতে রয়েছে। অবশিষ্ট কিছু বাসিন্দাদের পরিবেশ ও জীবনযাপন সংরক্ষণ ও নথিভুক্ত করার জন্যে, ফিরি ও একদল শিল্পী আমরা এখান থেকে এসেছি প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করেন। কেবল স্মৃতিতে বিরাজমান একটি স্থান হারানো এবং এর জন্যে আকাঙ্ক্ষার অনুভূতিকে প্রতিধ্বনিত করা আগা শহীদ আলির কবিতা ডাকঘর বিহীন একটি দেশ-এর একটি বাক্য থেকে এর নামটি নেওয়া হয়েছে। পাতার মতো দূরে সরে যাওয়া অস্তিত্ব ও নিজের সম্পর্কে ধারণাগুলি অন্বেষণ করে। এটি বাড়ির অর্থ বোঝার চেষ্টা করার সময় নিজস্বতা এবং অ-নিজস্বতার একটি অস্পষ্ট শেকড়হীন অঞ্চলে বসবাসকারী উদ্বাস্তু ও অভিবাসীদের অভিজ্ঞতার একটি ভাষ্য।

এখানে স্থাপনাটির একটি ভার্চুয়াল প্রদর্শনী রয়েছে:

গ্রাউন্ডভিউজ (জিভি): এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে আপনি কী বোঝাতে চাইছেন?

ফিরি রহমান (এফআর): আমি আমার ব্যক্তিগত গল্পগুলি আমার কাজের মাধ্যমে তুলে ধরছি। আমি একজন অস্থায়ী অভিবাসী ছিলাম। ভিসা পাওয়া কঠিন বলে বিমানবন্দর থেকে বের হওয়াটা হতাশাজনক। এখন দেশের পরিস্থিতির কারণে সবাই দেশান্তরী হতে বাধ্য হচ্ছে। প্যারিসের পাখিরা তাদের দেশ থেকে নির্বাসিত। তাদেরকে বহিরাগত বিবেচনা করা হলেও এখন অন্যান্য স্থান থেকে এখানে প্রবর্তিত ছড়িয়ে পড়া গাছগুলির মতো আগ্রাসী হিসেবে দেখা হয়।

ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা মালয় ও ভারতীয়দের বংশোদ্ভূত বলে আমি বলতে পারি না আমার শেকড় বা বাড়ি কোথায়। আমার পরিবারের সবাই বিদেশে থাকে, তারা আমাকে তাদের কাছে যেতে বা তাদের সাথে যোগ দিতে বলে। কিন্তু এখন এখানেই আমার বাড়ি  ও কর্মক্ষেত্র বলে তাই আমি এটা ছেড়ে যেতে চাই না। আমার ভালোবাসার সবকিছুই এখানে।  লেখক নই বলে আমি শব্দের মাধ্যমে আমার অনুভূতি প্রকাশ করতে না পারলেও আমার শিল্পের মাধ্যমে আমি তা করি।

Photo of an installation of Firi Rahman. Courtesy of Saskia Fernando Gallery via Groundviews. Used with permission.

Image via Groundviews. Used with permission.

জিভি: তোতাপাখিরা কিসের প্রতিনিধিত্ব করে?

এফআর: আমি তোতাপাখিদের সাথে বড় হয়েছি। প্যারিসে গিয়ে তোতাপাখি দেখেছি। খাঁচা বাড়ির প্রতিনিধিত্ব করে। চলে যাওয়ায় কিছু পাখি নিখোঁজ। কিছু নিখোঁজ পাখি প্রিয়জনদের চলে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। বন্ধুদের দল পরিবার-পরিজন ফেলে রেখে দেশ ছেড়ে যাচ্ছে।

প্রতিটি পাখি ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে, সম্পত্তি বিক্রি করে এবং তাদের শিকড় ও প্রিয়জনদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে, বাড়ির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করছে। তাদের জীবন স্যুটকেসে। যাত্রা দীর্ঘ; তোতাপাখি একসাথে উড়ছে কিন্তু কিছু তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। এরা এমন মানুষের মত যাদের স্বপ্ন থাকলেও সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে।

জিভি: দাস দ্বীপে প্রকল্পটি কীভাবে অগ্রসর হচ্ছে?

এফআর: আমি এখনো দাস দ্বীপে [সম্পাদকের নোট: বর্তমানে কোম্পাগ্না ভিদিয়া নামে পরিচিত] বসবাস করছি। প্রকল্পটি কিছুদিনের জন্যে বন্ধ থাকলেও অনুষ্ঠান ও উপস্থাপনা চলছে এবং শিগগিরই আবার শুরু হবে। তারা সম্প্রতি মহাসড়ক প্রকল্প আবার শুরু করায় সম্প্রদায়টি ভেঙে গেছে। অনেকে নির্মাণ শ্রমিকদের কাছে বাড়ি ভাড়া দিয়ে চলে গেছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .