গৃহীত হলে তাজিকিস্তানের খসড়া আইনটি ব্লগারদের ভালোর চেয়ে বেশি ক্ষতি করবে

বিখ্যাত তাজিক ব্লগার দালের ইমোমালি (মাঝখানে) তার ইউটিউব ভিডিওতে দেশের একটি ব্যাঙ্কে গ্রাহকদের সমস্যা সম্পর্কে বলেছেন। দালের ইমোমালির ইউটিউব চ্যানেল থেকে নেওয়া পর্দাছবি। ন্যায্য ব্যবহার।

তাজিকিস্তানের সংসদ সদস্য মানুচেহর হামিদজোদ ১০ আগস্ট তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পৃষ্ঠায় ব্লগারদের কার্যকলাপের উপর একটি খসড়া আইন প্রকাশ করেছেন। উল্লিখিত আইনটির ঘোষিত লক্ষ্য হলো ব্লগ কার্যক্রমের জনসংযোগ নিয়ন্ত্রণ এবং সংগঠণ ও প্রচারের আইনি ভিত্তি ও পদ্ধতি নির্ধারণ করার পাশাপাশি ব্লগারদের অধিকার ও বাধ্যবাধকতা। পোস্টটির মন্তব্য অংশে হামিদজোদ আগামী ১০ দিনের মধ্যে সহযোগী নাগরিকদের খসড়া আইনের উন্নতি ও চূড়ান্তকরণে তাদের চিন্তাভাবনা ও প্রস্তাবনা জমা দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

এখানে ব্লগারদের তৎপরতা নিয়ে খসড়া আইনসহ ফেসবুক পোস্টটি।

আইনটি প্রকাশের দিনে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া আসে সাংবাদিক মাখরোপা কিরোমোভার কাছ থেকে, যিনি খসড়া আইনের বেশ কয়েকটি বিধানকে “খুবই অযৌক্তিক” ও “খুবই ধ্বংসাত্মক” অভিহিত করেছেন। কিরোমোভা আইনটিতে পোস্টের মন্তব্যের জন্যে মন্তব্যকারীদের পরিবর্তে ব্লগারদের দায়ী করার বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। অনুচ্ছেদ ৯ ব্লগারদের তাদের প্রকাশনা পর্যবেক্ষণ করতে বাধ্য করে যাতে মন্তব্যগুলিতে কোনো অশ্লীল শব্দ, অবমাননাকর প্রস্তাব, বা বেআইনি কর্মের আহ্বান না থাকে। তিনি এর সম্ভাব্য ক্ষতিকারক প্রভাব নিয়ে চিন্তা করে উল্লেখ করেন: ” কয়েকশ বা হাজার হাজার মন্তব্য থাকা ব্লগারদের পোস্টের ক্ষেত্রে কী ঘটতে পারে তা কল্পনা করা আমার পক্ষে কঠিন।”

এখানে খসড়া আইনটি নিয়ে কিরোমোভার প্রতিক্রিয়াসহ একটি ফেসবুক পোস্ট রয়েছে।

কিরোমোভা উল্লেখ করে যে আইনটির ধ্বংসাত্মক দিকটি ব্লগ কার্যক্রম বন্ধ করার পদ্ধতি সম্পর্কিত ১৩ অনুচ্ছেদে রয়েছে। শর্তানুসারে ব্লগার ও তাদের বিষয়বস্তু খসড়া আইনটিতে উল্লেখিত প্রয়োজনীয়তা পূরণ না করলে পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা ছাড়াই ২৪ ঘন্টার মধ্যে ব্লগারের অ্যাকাউন্ট জোরপূর্বক সরানো যেতে পারে। তার মতে, এই প্রয়োজনীয়তাগুলি “বেশিরভাগই বিমূর্ত” ও সরকারের সমালোচনাকারী, বিশেষ করে বর্তমানে কারাবন্দী সাংবাদিক ও ব্লগারদের চ্যানেল ও পৃষ্ঠাগুলি মুছে ফেলার দরজা  খুলে দেয়।

কিরোমোভা একাই খসড়া আইনটির সমালোচক নন। খসড়া আইন নিয়ে হামিদজোদের ফেসবুক পোস্টের অধীনে মন্তব্য বিভাগটি সরাসরি বাতিলের আহ্বান থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট অনুচ্ছেদ ও ধারাগুলিকে প্রশ্নবিদ্ধ মন্তব্য পর্যন্ত নানা সমালোচনামূলক বিবৃতিতে পরিপূর্ণ। এটি গ্রহণের বিরোধিতাকারীদের যুক্তি, ব্লগারদের উপর বিধিনিষেধ ও নিয়ন্ত্রণ চাপানো এটি তাজিকিস্তানের নতুন ব্লগিং শিল্পকে ধ্বংস করবে। তারা আরো জানায় বর্তমান আইনি কাঠামো ব্লগ শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে যথেষ্ট।

নাগরিকদের আরেকটি দল খসড়া আইনটিতে উপভাষা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা ও ব্লগারদের শুধুমাত্র তাজিক ভাষার সাহিত্য ও সরকারি সংস্করণ ব্যবহারের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাজিকিস্তানের রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, শিক্ষা ও পর্যটন সম্পর্কিত বিষয়বস্তু তৈরিকারী ব্লগারদের ট্যাক্স-বিরতি প্রদানের প্রস্তাবের ধারাটিও প্রশ্নবিদ্ধ। তাজিকিস্তানের সমস্ত ব্লগাররা ২০২১ থেকে কর কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধন্ধিত ও কর দিতে বাধ্য

খসড়া আইনটির ভাগ্য নিয়ে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি। জনগণের প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে কী পরিবর্তন করা হয়েছে তারও কোনো তথ্য নেই। হামিদজোদের মতে, এটি নিয়ে “আইন নির্ধারিত পদ্ধতিতে একটি আইনি মূল্যায়ন করা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলিতে পরীক্ষা চলছে।” তবে তাজিকিস্তানের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আশাবাদীর চেয়ে হতাশ হওয়ার কারণই বেশি।

বিগত কয়েক বছরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পাশাপাশি সামগ্রিক রাজনৈতিক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে দেশটি উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়েছে। মানবাধিকার পর্যবেক্ষক ২০২১ সালে গণমাধ্যমের সরকারি সেন্সরের ঘটনা ও সাংবাদিকদের উপর শারীরিক সহিংসতা ও কারাদণ্ডের হুমকি বিষয়ে প্রতিবেদন করেছে। অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমালোচনাকারী সাতজন সাংবাদিক ও ব্লগার ২০২২ সালে সন্দেহজনক বিচারিক প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলেন ১,৪৬,০০০ গ্রাহক সমর্থিত ইউটিউব ব্লগার দালের ইমোমালিসাংবাদিকদের সুরক্ষা কমিটি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তাজিকিস্তানকে শীর্ষ কারাবন্দী সাংবাদিকের ১২টি দেশের তালিকায় যুক্ত করেছে।

জনসাধারণ অন্য কোনো দেশ ব্লগারদের বিষয়ে আইন পাশ করেছে কিনা প্রশ্ন করলে হামিদজোদ উত্তর দেন তাজিকিস্তানই হবে এধরনের আইন গ্রহণকারী প্রথম দেশ। দেশের বর্তমান ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রেক্ষিতে অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে ব্লগারদের জন্যে খসড়া আইনটি বেশি সমস্যা তৈরি করবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .