তুরস্কের বিরোধী অভিজাতরা কীভাবে এরদোয়ানকে সক্ষম করে তুলে ভোটারদের বিভ্রান্ত করেছে

ছবি: আরজু গেবুলায়েভা

রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের ক্ষমতার উৎস বিশাল। বিশ বছরেরও বেশি শাসনামলে তিনি নিজে একটি অনুগত আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা (সামরিক ও আইন প্রয়োগকারীসহ), একটি সঙ্গতিপূর্ণ মূলধারার গণমাধ্যম দৃশ্যপট ও তার নির্দেশকে তত্ত্বাবধানের যেকোনো ধারণার উপরে প্রাধান্য দেওয়া একটি সরকারি ব্যবস্থা গড়ে তুলে ক্ষমতাকে সংহত করেছেন। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ভোটারদের এরদোয়ানের একটি বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প দিতে পারার মতো বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক বিরোধী ক্ষেত্রের অভাব।

এটা অনেক পরিচিত ও ভালভাবে নথিভুক্ত বলে কৌতূহলী পর্যবেক্ষকরা যখন জিজ্ঞাসা করেন, “কেন এরদোয়ান ২০২৩ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ী হলেন?” উত্তরটি সাধারণত উপরে উদ্ধৃত কারণগুলির মিশ্রণে জানানো হয়। এদিকে ঘরের হাতিটি – অর্থাৎ দেশের বিরোধী বুদ্ধিজীবীরা – ধর্তব্যের বাইরেই থেকে যায়।

বুদ্ধিজীবীরা যা করতে পারেনি

তুরস্কের বুদ্ধিজীবীরা ব্যাপক ও বৈচিত্র্যময়। তবে সাম্প্রতিকতম সাধারণ নির্বাচনগুলিও জনমতের উপর এর হতাশাজনক প্রভাব দেখিয়েছে। তুরস্কে ২০২৩ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের আগে ও চলাকালে ভাষ্যকার ও সাংবাদিকসহ অনেক প্রভাবশালী বিরোধী গণমাধ্যম আউটলেট উচ্ছ্বসিত ছিল। এরদোয়ানের বিরুদ্ধে লড়াই করা প্রধান বিরোধী প্রার্থী কেমাল কিলিচদারোমাকে উৎসাহিত করতে গিয়ে অনেক সম্মানিত বিশ্লেষক তাদের উদ্দেশ্যমূলক বিশ্লেষণাত্মক সরঞ্জাম ও দৃষ্টি পরিত্যাগ করে। যার ফলে কিলিচদারোমা নিজেই তার প্রার্থীতা মূলত জনসাধারণের উপর চাপিয়ে দিলে তার সংকীর্ণ রাজনৈতিক পরিচালক গোষ্ঠী, সামান্য বিতর্ক ও জনমতামতের উপর নির্ভর করে অনেকের মতে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনটিতে তিনি আসলেই এরদোয়ানকে পরাজিত করার মতো দেশের শ্রেষ্ঠ প্রার্থী কিনা তা নির্ধারণের জন্যে বিশ্লেষণ করাই ছেড়ে দেয়।

পরিবর্তে বিরোধী বুদ্ধিজীবীরা কিলিচদারোমাকে এরদোয়ানকে পরাজিত করার মতো ব্যক্তি হিসেবে একটি বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে সাহায্য করে। এদিকে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারীদেরকে অচ্ছ্যুৎ হিসেবে বের করে দেওয়া হয়। লক্ষ্যযুক্ত প্রচারাভিযানে নিয়োজিত পাকা বিশ্লেষকরা ঘোষণা করে এরদোয়ানের যুগ শেষ হয়ে গেছে, আর পুনর্নির্বাচনে তার টিকে থাকার কোন সুযোগ নেই।

মিডিয়াস্কোপের সম্পাদক রুসেন কাকির এই নিশ্চয়তাকে এরদোয়ানের “শাসন সংকট” ভিত্তিক হিসেবে বারবার উল্লেখ করেছেন। এই “শাসন সংকট” এর ভিত্তি ছিল দেশ ও ভোটারদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যার অর্থপূর্ণ সমাধানে এরদোয়ানের ব্যর্থতার ধারণা। এই বার্তাটি কাকিরের একার ছিল না। তার সাপ্তাহিক সম্প্রচারে যোগ দেওয়া অন্যান্য প্রবীণ বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকরা ধরে নেয় সাধারণ ভোটারদের সাথে তাদের কথোপকথন এবং তার রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) প্রচার সমাবেশে উপস্থিতিতে এরদোয়ান যুগের অবসানের স্পষ্ট লক্ষণ ছিল।

প্রবীণ সাংবাদিক ও কিলিচদারোমা সমর্থক কাদরি গুরসা বলে বসেন যারা আসন্ন জলোচ্ছ্বাস দেখতে পাচ্ছে না তারা শুধু অসচেতনই নয় বরং বাস্তবে এরদোয়ানকে অফিস থেকে সরাতে চায় না! এরদোয়ানের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত হলেও তার ক্ষমতায় থাকা (প্রথম অনুচ্ছেদে বর্ণিত) থেকে উদ্ভূত উল্লেখযোগ্য কাঠামোগত সুবিধা তাকে ক্ষমতায় থাকতে সাহায্য করতে পারে এমন বিকল্প বিশ্লেষণগুলির প্রতি এই ভাষ্যগুলি খুব কমই মনোযোগ দেয়।

শেষ পর্যন্ত সংশয়বাদীরাই ঠিক ধরেছে। সাংবাদিক, জনমত যাচাইকারী ও বিশ্লেষকদের ভবিষ্যদ্বাণী ভুল হলেও সমস্যার বিষয় হলো প্রান্তিক কণ্ঠস্বর ও সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ গ্রহণে অস্বীকৃতি।

নির্বাচনের প্রায় তিন মাস পর তাদের জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার কথা স্বীকার করার পরিবর্তে এই পণ্ডিতরা শুধু তাদের ভুল স্বীকার করে বলেছে এখন এগিয়ে যাওয়ার ও আশাবাদী থাকার সময়

প্রভাব

প্রকাশ্য এসব বুদ্ধিজীবীদের বৃহত্তর ব্যর্থতা দ্বিগুণ: প্রথমত, তাদের বিশ্লেষণের দিকে তাকিয়ে থাকা জনগণের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে জনগণ নির্বাচনের ফলাফলে সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ত তাদের বিশ্লেষণের অদূরদর্শী মানতে না পেরে দায়বদ্ধতা এড়িয়ে প্রকাশিত দারুণ হতাশা।

বিশ্লেষকদের তুর্কি জনসাধারণকে তাদের প্রাপ্য সকল তথ্য দিয়ে প্রভাবিত করা একটি কর্তব্য। অবশ্যই তাদের বিশ্লেষণগুলি আংশিক বা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হতে পারে। এই নির্বাচনী চক্রে নামকরা জনপ্রিয় স্বাধীন আউটলেটগুলির বিভিন্ন নির্বাচনী ফলাফলের পরিস্থিতির উপর ফোকাস করা, কেন কিলিচদারোমা প্রচারাভিযান ও প্রার্থীতা দুর্বল ছিল তার একটি সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং এরদোয়ানের সত্যিকারের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন প্রতিরোধকারী বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় সরঞ্জামের উপর গভীর মনোযোগ প্রদান গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

পরিবর্তে আমরা একগাদা ভুল তথ্য পেয়েছি যেখানে আপাতদৃষ্টিতে ইচ্ছাকৃতভাবে সম্ভাব্য ফলাফলের পরিসরকে ভুলভাবে উপস্থাপনকারী বিরোধী গণমাধ্যম আউটলেটগুলির সহযোগিতায় তুরস্কের এরদোয়ানপন্থী গণমাধ্যমের অধিকাংশই ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। দুটিই এরদোয়ানের স্বার্থ পূরণে সহায়তা করলেও শুধু পরেরটিই তখন থেকে উদ্ভূত হতাশাবোধ, উদাসীনতা ও জনগণের ক্ষোভের জন্যে দায়ী। তুর্কি জনসাধারণ ক্ষমতার বিরুদ্ধে সত্য কথা বলার দাবিদারদের কাছ থেকে আরো ভালো কিছু প্রত্যাশিত।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .