
“কুয়েত টাওয়ার,” ঘালা আলরেফাই, উইকিমিডিয়া সাধারণের মাধ্যমে। সৃজনী সাধারণ একইরকম ভাগাভাগি ৩.০ অনুমতি।
প্রথম ৩ আগস্ট, ২০২৩ তারিখে রাসিফ২২ প্রকাশিত এই লেখাটির একটি সম্পাদিত সংস্করণ একটি বিষয়বস্তু ভাগাভাগির চুক্তির আওতায় এখানে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে।
সাধারণ নির্বাচন কমিশন আইনের ১৬ অনুচ্ছেদ পাসের সময় নারী সদস্যরা কুয়েত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ত্যাগ করে। সংশোধিত সংস্করণটিতে “ভোট প্রদান ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার অধিকার প্রয়োগের জন্যে সংবিধান, আইন ও ইসলামী শরিয়ার বিধানগুলি মেনে চলা” বাধ্যতামূলক করে। এই পদক্ষেপটিকে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ থেকে নারীদের বাদ দেওয়ার এবং ধর্মের নামে তাদের উপর আরো অভিভাবকত্ব আরোপের একটি প্রচেষ্টা বিবেচিত হয়।
জাতীয় পরিষদ সদস্যদের নির্বাচনের জন্যে খসড়া আইন সংক্রান্ত দ্বিতীয় দফা আলোচনার সাক্ষী ছিল ১ আগস্ট, ২০২৩ তারিখে আহ্বান করা বিশেষ অধিবেশনটি। পর্ষদ এর আগে ২৭ জুলাই তার প্রাথমিক আলোচনার সময় এটি অনুমোদন করে।
সাংদদের ৬২ জনের উপস্থিতিতে ৫৩ জনের অনুমোদনসহ পর্ষদ নির্বাচন কমিশন আইনের ১৬ ধারা অনুমোদন করে। ধারাটির দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ সংবিধান, আইন ও শরিয়া মেনে ভোট দেওয়ার অধিকার ও প্রার্থীতাকে যুক্ত করেছে। বর্তমান কুয়েত সংসদের একমাত্র নারী সদস্য ড. জেনান বুশেহরিসহ মাত্র নয়জন সদস্য এই অনুচ্ছেদটি প্রত্যাখ্যান করে।
পর্ষদ “নির্বাচন আইনে একটি ব্যাপক ও উন্মুক্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত করার বিপদ” সম্পর্কে সতর্ক করে সংশোধনীটিকে “রাজনৈতিক কারসাজি” এবং “শরিয়ার নিয়ম ও ফতোয়া নিয়ে রাজনৈতিক খেলা” হিসেবে ব্যাখ্যা করা সাংসদ জেনান বুশেহরি উত্থাপিত অপসারণের অনুরোধটি খারিজ করে দেয়।
এই সংশোধনীটির মূল উদ্দেশ্য সাংসদ মাজেদ আল-মুতাইরি ও অন্যদের প্রস্তাবিত হিজাব ও “নম্র” পোশাক পরার মতো “শরিয়া প্রবিধান” এর প্রতি নারীদের সম্মতি কার্যকর করা হলেও সংসদের অভ্যন্তরীণ ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক কমিটি এবং আইন ও আইনি কমিটির সমন্বয়ে গঠিত যৌথ কমিটি উভয় লিঙ্গকে “শরিয়া মেনে চলার” বাধ্যবাধকতার পরিধি প্রসারিত করেছে।
ফলে অধিবেশনটির আগে বর্ণিত “অন্ধকারের পাখিদের” বিরুদ্ধে তাদের সাংবিধানিক অধিকার ও প্রাপ্তি সুরক্ষায় এগিয়ে আসার জন্যে কুয়েতি নারীদের আহ্বান জানানো হয়েছে।
‘ধর্মীয় কট্টরপন্থীরা গোটা দেশ ছিনতাই করেছে’
অসংখ্য কুয়েতি সক্রিয় কর্মী ও নাগরিকরা “ধর্মের ছদ্মবেশে নারীদের রাজনৈতিকভাবে বাদ দেওয়ার” প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা অনুচ্ছেদটির অনুমোদন নিয়ে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে সামাজিক গণমাধ্যমের আশ্রয় নেয়। তারা “নারীদের উপর অভিভাবকত্ব আরোপ করাকে ন্যায্যতা দিতে ধর্ম ও শরীয়া ব্যবহার করা”র ধারণাকে শক্তিশালী করা পদক্ষেপটিকে একটি “ঐতিহাসিক পশ্চাদপসরণ” বিবেচনা করেছে।
কুয়েতি অধ্যাপক নাওয়াল আল-রশিদ একটি ভিডিও বার্তায় নতুন আইনটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলেছেন:
আমরা বছরের পর বছর ভোট দিয়ে আসছি, তাহলে এখন কেন? তাদের সমর্থিত ধারা অগ্রগতি নাকি পশ্চাদপদতা চিহ্নিত করে? এটা ১০০০% পশ্চাদপদ। এটাকে অগ্রগতি হিসেবে দেখা যাবে না। অবিশ্বাস্য। কুয়েত কখনো ৭০ ও ৬০ এর দশকে এমন ছিল না, ধর্মীয় কট্টর ও চরমপন্থীরা পুরো দেশটাই চিন্তাই করে ফেলেছে।
নারীবাদী কর্মী মরিয়ম আল-আজমি ইঙ্গিত দিয়েছেন সিদ্ধান্তটি “রাজনৈতিক ভণ্ডামি”র নামান্তর:
الهدف من حجاب المرأة ونقابها وعبايتها فرض
الوصاية والسيطرة سياسياً على المجتمع، عبالكم
مهتمين في حجابها؟ بعضهم بناتهم وزوجاتهم
مو متحجبات ومصوتين مع الحجاب لقمع المرأة
اللي ساكنة في آخر الكويت وبعيدة عن محيطهم.— مريم العازمي (@marim_07) August 1, 2023
নারীদের হিজাব, নেকাব ও আবায়ার পিছনের উদ্দেশ্য পুরুষদের অভিভাবকত্ব ও সমাজের উপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ। আপনি কি মনে করেন তারা সত্যিই ঘোমটা সম্পর্কে যত্নশীল? তাদের মধ্যে অনেকের কন্যা ও স্ত্রীরা হিজাব না পরলেও তারা তাদের প্রভাব থেকে দূরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী নারীদেরকে দমন করতে হিজাবের পক্ষে ভোট দেয়।
কুয়েতের গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব লায়লা আহমেদ সংশোধনী পাসের বিষয়ে মন্তব্য করেছেন:
لا يملكون الإيمان بقضايا #الكويت الملحة لا يريدون مناقشة اسباب شلل البلاد وتذمر العباد، يشغلون الشعب بقضايا غير مؤثرة ليحمو الفاسدين وليستمر الركود والشلل العام بالادارة الحكومية ونواب المصالح تتصالح 💔 https://t.co/itZBusmTA0
— 🇰🇼Laila Ahmad ليلى احمد (@lailaaahmad) August 1, 2023
কুয়েতের জরুরি বিষয়ে বিশ্বাস নেই। দেশ পঙ্গু হওয়ার পেছনের কারণ ও জনগণের অসন্তোষ নিয়ে তারা আলোচনা করতে চান না। তারা সরকারী প্রশাসনে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং চিরস্থায়ী স্থবিরতা এবং সাধারণ পক্ষাঘাত রক্ষার জন্যে গুরুত্বহীন বিষয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে, সাংসদরা তাদের স্বার্থের পেছনে ধাবিত।
কুয়েতি শিক্ষাবিদ শাইখা বিন জসিম হাস্যকরভাবে সংশোধনীর উদ্দেশ্যমূলক অর্থ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন:
نريد الآن أحد العباقرة الذين وافقوا على شرط الالتزام بالشريعة ان يحدد لنا بالضبط المعنى من ذلك.
الدشداشة إلى كعب القدم؟
حف الشوارب ؟
إطلاق اللحية؟
عباة راس للمرأة؟
يجوز العطور بالمجلس؟هذا القانون لن يمر و إن مر المحكمة الدستورية ستحيد هذه الفقرة كما حدث في ٢٠٠٩
— شيخة الجاسم (@ShaikhaBinjasim) August 1, 2023
এখন আমাদের শরীয়া সম্মতির শর্তে সম্মত এমন একজন উজ্জ্বল মনের প্রয়োজন – সুনির্দিষ্টভাবে বোঝা দরকার এর মানে কী। এটা কি গোড়ালি পর্যন্ত প্রসারিত ‘দিশদশা’ (ঐতিহ্যবাহী কুয়েতি পুরুষ পোষাক) পরিধানের বাধ্যবাধকতা? পুরুষদের কি দাড়ি রাখতে হবে? তাদের গোঁফ কামাতে হবে? নারীদের মাথায় আবায়া পরা আশা করা যায়? সংসদের ভেতর কি সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে?
তিনি আরো অনুমান করেন “এই আইনটি সম্ভবত পাস হবে না, আর এমনকি হলেও সাংবিধানিক আদালত এই ধারাটিকে বাতিল করে দেবে, যেমনটি ২০০৯ সালে হয়েছিল।
কুয়েতি লেখক শাইখা আল-বাহওয়েদ একমত হয়ে বলেছেন:
على أرض الواقع هالمادة ما راح تأثر بشي، مثلها مثل الواردة في قانون الانتخاب واللي حُكم بعدم دستوريتها، لكن ع المستوى السياسي فهذا نفاق وتلميع للصورة على حسابنا وإصرار على وضعنا في خانة الموصى عليه وعدم احترام خيارات النساء واللي يستدعي مواجهة لهذي العقلية https://t.co/HEfB9inmxq
— شيخة البهاويد (@shaikha_bahawed) August 1, 2023
বাস্তবে এই ধারাটি সম্ভবত অসাংবিধানিক বিবেচিত নির্বাচনী আইনের মতো সামান্যই প্রভাব ফেলবে। তবে রাজনৈতিক স্তরে আমাদের খরচে তাদের ভাবমূর্তি বাড়ানোর জন্যে এটি ভণ্ডামির দুর্গন্ধ ছাড়ে, আমাদের শ্রেণীবদ্ধ করাতে জোর দেয় এবং নারীদের পছন্দ ক্ষুন্ন করে – এসব মানসিকতা চ্যালেঞ্জ করার মতো।
সংশোধনীটি প্রয়োগের মাধ্যমে পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্যেই “সমতা” এগিয়ে নেয় সমর্থকদের এমন দাবির জবাবে কুয়েতি লেখক ও রাজনীতিবিদ সালওয়া আল-সাইদ স্পষ্ট করেছেন এই দৃষ্টিভঙ্গিটি ত্রুটিপূর্ণ। পরিবর্তে তিনি যুক্তি দেন সংশোধনী সমস্যাটিকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
উভয় লিঙ্গের শরিয়া সম্মতির প্রয়োজনীয়তা প্রার্থীদের শরিয়া নীতির প্রতি তাদের অস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি সম্ভাব্যভাবে অযোগ্য ঘোষণা করতে পারে। এই সিদ্ধান্তের ক্ষমতা বিচার মন্ত্রীর কর্তৃত্বাধীন কমিশনের অধিকারে, যা নির্বাচনকে অনিশ্চয়তার দিকে পরিচালিত করে।
আল-সাইদ জোর দিয়ে বলেছেন “আমি আগেও বলেছি আইনের অভাব খারাপ আইনের চেয়ে ভালো। এটি আইনসভার মানের একটি দুঃখজনক পতনের প্রতিনিধিত্ব করে!”
কুয়েতি নারী সক্রিয় কর্মীরা ভবিষ্যতের সংসদীয় নির্বাচনে তাদের প্রতিনিধি বাছাই করার সময় অধিবেশনের ইভেন্টগুলিকে কাজে লাগানোর তাৎপর্যের ওপর জোর দেন। একজন জনবিষয়ক কর্মী ড. আরুব আল-রিফাই অনুরোধ করেছেন:
علينا كنساء ألا ننسى من صوَّت مع رفع التمييز ضد المرأة ومن يقف معه. وعلينا أن نجعل مواقف النواب من قضايا المرأة معيارا أساسيا (ضمن مجموعة معايير) حين نصوت لأي نائب في الانتخابات القادمة، فنحرم المسئ لنا من صوتنا. وعلينا أن ندرك كذلك أن وجود امرأة نائبة في… pic.twitter.com/t9e6YPVJio
— د. عروب الرفاعي (@AroubAlRifai) August 1, 2023
নারী হিসেবে আমরা অবশ্যই নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক কর্মকাণ্ড সমর্থনকারী এবং নারীদের সমর্থনকারীদের ভুলে যাবো না।
আসন্ন নির্বাচনে আমাদের ভোট দেওয়ার সময় নারীদের বিষয়ে প্রার্থীদের অবস্থান বিবেচনা করা উচিত। এটা আমাদের ক্ষতিকারদের সমর্থন বন্ধ করতে পথ দেখাবে।
উপরন্তু আমাদের সংসদে নারী সাংসদদের অমূল্য ভূমিকা স্বীকার করা উচিত – অপরিহার্য এই অর্জনটি প্রতিস্থাপনযোগ্য নয়। সংসদে নারীরা আমাদের সমর্থক এবং আমাদের প্রভাবিত করার মতো বিষয়ের কণ্ঠস্বর।
কুয়েত ১৯৬২ সালে সংসদীয় ব্যবস্থা গ্রহণকারী প্রথম উপসাগরীয় দেশ হলেও ২০০৫ সাল পর্যন্ত কুয়েতি নারীদের ভোট দেওয়ার এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়নি।
প্রথমবারের মতো ২০০৯ সালে চার কুয়েতি নারী জাতীয় পরিষদে আসন জিতে ইতিহাস তৈরি করলেও তারপর থেকে বিধানসভায় নারী সাংসদের সংখ্যা কমেছে।
কুয়েত উপসাগরীয় অঞ্চলে বিগত কয়েক দশক ধরে নারীদের রাজনৈতিক অধিকার প্রদানে সবচেয়ে এগিয়ে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ম ও রাজনীতির মিশ্রণের সমর্থকদের উত্থানের সাথে সাথে স্বাধীনতা ও অর্জনের ক্ষেত্রে এটি দুঃখজনক একটি পশ্চাদপসরণ অনুভব করেছে।