তাজিকিস্তানের সরকারের থলেতে আরেকটি বিশাল ভবন যুক্ত

রাজধানী দুশানবেতে নবনির্মিত তাজিকিস্তানের বৃহত্তম মসজিদ। ইউটিউব চ্যানেল আভেস্তা.টিজে থেকে নেওয়া পর্দাছবি।

কাতারের আমির (শাসক) শেখ তামিম ইবনে হামাদ আল থানি ৮ জুন তাজিকিস্তান সফর করে রাজধানী দুশানবেতে নির্মিত দেশের বৃহত্তম মসজিদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তাজিকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইমোমালি রাহমন তার সাথে যোগ দিয়ে তাকে চারপাশ ঘুরে দেখিয়েছেন এবং সুন্নি ইসলামের হানাফি আইন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আবু হানিফার নামে মসজিদটির নামকরণের পরামর্শ দেন। ১২ হেক্টর (প্রায় ৮৯.৭ বিঘা) জমি জুড়ে থাকা নতুন মসজিদটিতে একসাথে এক লক্ষ ৩৩ হাজার লোক বসতে পারে। নামাজের জায়গা ছাড়াও কমপ্লেক্সের মধ্যে পাঠাগার, হোটেল ও অফিস রয়েছে।

মসজিদটি নির্মাণে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দশ বছর লাগলেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি আরো চার বছর স্থগিত করা হয়, প্রথমে তাজিকিস্তানে আমিরের সফর বাতিল এবং তারপরে কোভিড -১৯ মহামারীর কারণে। কাতার ১০ কোটি মার্কিন ডলার আনুমানিক মোট ব্যয়ের ৭০ শতাংশ অর্থায়ন করায় আমিরের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাজিকিস্তান সরকার বাকি অর্থায়ন করেছে।

এখানে নতুন মসজিদের ছবিসহ একটি টুইট রয়েছে৷

আজ মধ্য এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম “ইমাম আবু হানিফা আল-নুমান বিন তাবিত মসজিদ”টি #তাজিকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ও #কাতারের আমির উদ্বোধন করেছেন। তাজিক-কাতার যৌথ পৃষ্ঠপোষকতায় নির্মিত, মসজিদটিতে ১,৩৩,০০০ লোক বসতে পারে। মিনারগুলি ৭৪ মিটার (প্রায় ২৪৩ ফুট), গম্বুজ ৪৩ মিটার (প্রায় ১৪১ ফুট) উঁচু।

দুশানবের নতুন কেন্দ্রীয় মসজিদটি ২০২২ সালে উন্মুক্ত কাজাখস্তানের আস্তানার কেন্দ্রীয় মসজিদের পর মধ্য এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম। মূল পরিকল্পনা অনুসারে ২০১৯ সালে উন্মুক্ত করা গেলে তাজিক কর্তৃপক্ষ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম হিসেবে উন্মোচন করতে পারতো। এটি যে সরকারের উদ্দেশ্য ছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই, কারণ তাজিকিস্তান এর আগে তাদের সামনে উচ্চতর বিশেষণসহ আরো কয়েকটি ভবন উন্মোচন করেছে।

দেশটি গিনেস বুক অফ রেকর্ডসে নিবন্ধিত বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা পতাকাদণ্ড নির্মাণ করে ২০১১ সালে। এটি দুশানবের কেন্দ্রে ১৬৫ মিটার (৫৪১ ফুটের বেশি) উচ্চতায় অবস্থিত। সরকার ২০১০ সালে পতাকাদণ্ড তৈরির জন্যে মার্কিন প্রতিষ্ঠান “ট্রাইডেন্ট সাপোর্ট”কে নিযুক্ত করে৷ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশটির রাষ্ট্রপতি রাহমন বলেছিলেন পতাকাটি প্রতিটি নাগরিকের কাছে একটি গর্ব হিসেবে কাজ করবে৷

তাজিকিস্তানের পতাকাদণ্ড নির্মাণ সম্পর্কে এখানে একটি ইউটিউব ভিডিও রয়েছে।

মধ্য এশিয়া, ইরান, আফগানিস্তান, তুরস্ক ও আজারবাইজানে পাওয়া এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী চা ঘর – বিশ্বের বৃহত্তম চায়খানাও দুশানবেতে অবস্থিত। কোহি নওরোজ প্রাসাদটি ৪৬ মিটার (প্রায় ১৫১ ফুট) উঁচু এবং ১২০ মিটার (প্রায় ৩৯৪ ফুট) প্রশস্ত। এটিতে ১২টি বড় কক্ষ রয়েছে, যেগুলি বিবাহ ও অন্যান্য উৎসবসহ সম্মেলন ও উচ্চ-স্তরের সভার জন্যে ব্যবহৃত হয়। ২০১০ সালে খোলা এটি নির্মাণে প্রায় ৬ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় ৬৪৯ কোটি টাকা) খরচ হয়েছে।

এখানে কোহি নওরোজ প্রাসাদের একটি ইউটিউব ভিডিও রয়েছে।

সর্বশেষ দুশানবে হলো মধ্য এশিয়ার বৃহত্তম গ্রন্থাগারের আবাসস্থল। ২০১২ সালে নির্মিত তাজিকিস্তানের জাতীয় গ্রন্থাগারটি ৪৫,০০০ বর্গ মিটার জুড়ে রয়েছে। কর্তৃপক্ষ ২০০৭ সালে এটি নির্মাণ শুরু করে এবং মোট খরচ ৪ কোটি ডলারেরও (প্রায় ৪৩৩ কোটি টাকা) বেশি। গ্রন্থাগারটিতে এক কোটি বই রাখা যেতে পারে।

এখানে তাজিকিস্তানের জাতীয় গ্রন্থাগারের ছবিসহ একটি টুইট রয়েছে৷

তাজিকিস্তানের জাতীয় গ্রন্থাগারে ৪০ লক্ষেরও বেশি বইয়ের শিরোনাম রয়েছে এবং এটি মধ্য এশিয়ার বৃহত্তম গ্রন্থাগারগুলির অন্যতম। #তাজিকিস্তান #গ্রন্থাগার

তাজিকিস্তান মধ্য এশিয়ার দরিদ্রতম দেশ হওয়ায় এই সব ভবন নির্মাণ আরো বেশি চোখে পড়ে। সরকারের এই ধরনের প্রকল্পে বড় তহবিল ব্যয় হয়তো তার কর্তৃত্ববাদী প্রকৃতির মধ্যে পড়ে। তাজিকিস্তান ১৯৯২ সাল থেকে একই রাষ্ট্রপতি শাসনাধীন এবং স্বাধীনতা_সদন এটিকে “একত্রীকৃত কর্তৃত্ববাদী শাসন” হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে গণতন্ত্রের মাপকাঠিতে যার মান সাতের মধ্যে এক।

গণতন্ত্রের বিপরীতে কর্তৃত্ববাদী শাসনগুলি প্রকৃত আর্থ-সামাজিক সমস্যা মোকাবেলা করার পরিবর্তে চরম অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলিতে বেশি তহবিল বিনিয়োগের জন্যে পরিচিত। প্রথমত এই ধরনের কৌশল তাদের মানুষের মধ্যে একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি অর্জন করতে দেয়। দ্বিতীয়ত অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলি বাস্তবে দৃশ্যমান সরকারের কাজের একটি বাস্তব ফলাফল হিসেবে উপস্থাপিত। তৃতীয়ত মসজিদ, গ্রন্থাগার বা চা-ঘর তৈরি করা জটিল সমস্যাগুলি সমাধানের চেয়ে অনেক সহজ ও দ্রুততর যার জন্যে একটি বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মতো সুশাসনের নীতিমালা গ্রহণ করা দরকার৷

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .