স্বাধীন মত প্রকাশের সংগ্রামে কুর্দি সাংবাদিকদের দুর্দশা

“কুর্দিস্তান” মানে “কুর্দিদের দেশ”। এই মানচিত্রটি ইরান, ইরাক, সিরিয়া ও তুরস্কের উল্লেখযোগ্য কুর্দি জনসংখ্যার বৃহত্তর অঞ্চলগুলির কিছু অংশকে অন্তর্ভুক্ত করে ধারণাটিকে বিস্তৃত করে। ফারহেতের মানচিত্র – নিজস্ব কাজ। উইকিমিডিয়া সাধারণ, সৃজনী সাধারণ অনুমতি একইরকম ভাগাভাগি ৩.০

এই বছর কুর্দিস্তানের চারটি অংশ: তুরস্ক, ইরাক, সিরিয়া ও ইরান যেখানে বসবাসকারী দেশগুলির বৃহত্তর সমাজ থেকে কুর্দিরা প্রায়শই বিচ্ছিন্ন সেখানে রাষ্ট্রহীন কুর্দি সাংবাদিকরা ক্রমবর্ধমান নিপীড়ন ও কর্তৃপক্ষের সেন্সরের কারণে বিশেষভাবে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।

প্রায় ৩ কোটি জনসংখ্যার একটি রাষ্ট্রহীন জাতিগত গোষ্ঠী কুর্দিদের একটি অভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষা ও পরিচয় রয়েছে। তারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে স্বাধীনতার জন্যে লড়াই করা বিশ্বের রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠীর অন্যতম বৃহত্তম দল।

বিশ্বের অনেক সাংবাদিকের বিপরীতে কুর্দি সাংবাদিকরা তাদের কাজের জন্যে হুমকি ও ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। নিজস্ব একটি স্বীকৃত জাতি-রাষ্ট্র ও কোনো রাজনৈতিক স্বীকৃতির অভাবে কুর্দি সাংবাদিকরা পরিচয় মুছে ফেলামত প্রকাশের স্বাধীনতা দমনের মতো স্বাগতিক দেশগুলির বিরোধিতার সম্মুখীন হয়।

এছাড়াও কুর্দি সাংবাদিকরা ইরাকের মতো স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি কর্তৃপক্ষ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে মোকাবিলা করার সময় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। ২২ মার্চ, ২০২৩ তারিখের একটি বৈদেশিক নীতি নিবন্ধ অনুসারে:

[কুর্দিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলি] তাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমিত করে, জোরপূর্বক বিক্ষোভে বাধা দেয়। ইরাকি কুর্দি সাংবাদিকদের নিয়মিত গ্রেপ্তার করা অথবা স্থানীয় সংবাদ করতে বাঁধা দেওয়া হয়; একটি স্থানীয় পর্যবেক্ষক গত বছর কমপক্ষে ৪৩১টি লঙ্ঘন তালিকাভুক্ত করেছে।

তুরস্কে কুর্দি সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন

Infographic: Where the Most Journalists Are Imprisoned | Statista

এই তথ্যলেখচিত্রটি সৃজনী সাধারণ অপরিবর্তনযোগ্য ২.০ অনুমতির অধীনে স্ট্যাটিস্টিকা থেকে নেওয়া হয়েছে। ন্যায্য ব্যবহার

সীমান্তবিহীন প্রতিবেদকের ২০২২ সালের ডিসেম্বরের একটি প্রতিবেদন অনুসারে তুরস্কের বিশ্বের শীর্ষ দশ সবচেয়ে বেশি বন্দী সাংবাদিকের দেশের মধ্যে একটি হওয়ার বিশিষ্ট কুখ্যাতি রয়েছে। এরদোয়ান শাসকগোষ্ঠী স্থানীয় নির্বাচন এগিয়ে আসাকুর্দি সাংবাদিকদের উপর তার দমন-পীড়ন বাড়িয়েছে।

১৪ মে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে গত মাসে কমপক্ষে ১১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে যাদের মধ্যে কুর্দিপন্থী ব্যক্তিদের গণতান্ত্রিক দলের (এইচডিপি) সদস্যসহ এর উপ-সহ-সভাপতি ওজলাম গুন্ডুজ রয়েছে।

পরিস্থিতি তুলে ধরে এইচডিপি ২৫ এপ্রিল একটি বিবৃতি জারি করেছে: 

#এইচডিপি ও সুশীল সমাজ সংগঠনের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান

আমাদের পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্রদের বক্তব্য: #১৪মেনির্বাচন

তুরস্কের অন্যান্য অংশের তুলনায় পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বে কর্মরত মূলত কুর্দি সাংবাদিকদের নির্যাতন ও কারারুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তারা তাদের অন্য কোনো জায়গার সহকর্মীদের চেয়ে ভিন্ন নিয়মের অধীন বলে মনে হচ্ছে।

তার ওপর তুরস্কে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে খুব ঘন ঘন রাষ্ট্রপতিকে অপমান, অপপ্রচার ছড়ানো ও তুর্কি পরিচয় অবমাননার অভিযোগ আনা হচ্ছে। ফলে পশ্চিম তুরস্কে কুর্দি বিষয়ে প্রতিবেদন করা সাংবাদিকদের প্রায়শই অপপ্রচার ছড়ানোর জন্যে অভিযুক্ত করা হয় এবং তারা সন্ত্রাসবাদের অভিযোগের মুখোমুখি হতে পারে।

ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলে কুর্দি সাংবাদিকরা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি

সাদ্দাম হোসেনের মূর্তি ভেঙ্গে তার সরকারের পতন উদযাপনরত কুর্দিদের একটি দল। এপি আর্কাইভ ভিডিওর ২০০৩ সালের ১০ এপ্রিলে সংঘটিত ঘটনাবলী থেকে ২১ জুলাই, ২০১৫ তারিখে নেওয়া একটি পর্দাছবি। ন্যায্য ব্যবহার।

২০০৩ সালের এপ্রিলে সাদ্দাম হোসেনের শাসনের পতনের পর থেকে ইরাক প্রজাতন্ত্রের সীমানার মধ্যে কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকার (কেআরজি) উচ্চ মাত্রার স্বায়ত্তশাসন ভোগ করেছে।

নিজস্ব সংসদ, মন্ত্রণালয় এবং এমনকি আইন থাকা সত্ত্বেও এই অঞ্চলটি এখনো কুর্দিদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্যে অনিরাপদ রয়ে গেছে। কুর্দিস্তান অঞ্চলের কুর্দি কর্তৃপক্ষ বিরোধী মতামতকে অপরাধী করা অস্পষ্টভাবে লিখিত আইনের সুবিধা গ্রহণ করে চলেছে। ভয় দেখানোর জন্যে এবং কিছু কিছু পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার ও কেআরজি উভয়ের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে সাংবাদিক, সক্রিয় কর্মী ও অন্যান্য ভিন্নমতের কণ্ঠস্বরকে কর্তৃপক্ষের প্রতিশোধের ভয় ছাড়া তাদের মত প্রকাশ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রতিবেদন থেকে বিরত রাখার জন্যে এই আইনগুলি প্রায়শই ব্যবহার করা হয়

কুর্দিস্তানের আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক ও সমাবেশের অধিকারের মতো মৌলিক অধিকারগুলি ব্যবহার করা সক্রিয় কর্মীদের নীরব করার জন্যে প্রায়শই সংবাদমাধ্যম আইন এবং টেলিযোগাযোগ সরঞ্জামের অপব্যবহার রোধ আইন এর মতো আঞ্চলিক আইন প্রয়োগ করে।

ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলে ডিজিটাল গণমাধ্যমের নির্দিষ্ট কোন উল্লেখ ছাড়াই প্রাথমিকভাবে মুদ্রিত সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন নিয়ন্ত্রণের জন্যে ২০০৭ সালে সংবাদমাধ্যম আইনটি জারি করা হয়। ফলে অনলাইন গণমাধ্যম একটি আইনি ধূসর এলাকায় পড়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ জাতীয় নিরাপত্তা বা অন্যান্য আইন লঙ্ঘন করে এমন বিষয়বস্তু প্রকাশের শাস্তি দেওয়ার জন্যে টেলিযোগাযোগ সরঞ্জামের অপব্যবহার রোধ আইনের মতো অন্যান্য অস্পষ্ট শব্দযুক্ত আইন ব্যবহার করতে পারে।

সংবাদমাধ্যম আইনটি নমনীয় হলেও এটি কেআরজি অঞ্চলে খুব কমই ব্যবহৃত হয়। ফলে কেআরজি এর সাংবাদিকরা স্পর্শকাতর বিষয়ে প্রতিবেদন করার সময় তাদের সুরক্ষার জন্যে সংবাদমাধ্যম আইনের উপর নির্ভর করতে পারে না। পরিবর্তে তাদেরকে অবশ্যই তাদের কাজকে দমন করতে কর্তৃপক্ষের ব্যবহার করতে পারার মতো অনলাইন গণমাধ্যম ও অন্যান্য আইনের আশেপাশের ধূসর এলাকায় বিচরণ করতে হবে।

বিক্ষোভ-প্রতিবাদ সংগঠনের ক্ষেত্রেও কুর্দি সাংবাদিকরা বাধার সম্মুখীন হয়। ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলে বিক্ষোভ সংগঠিত করার জন্যে কুর্দি আইন অনুসারে সকল বিক্ষোভের জন্যে আঞ্চলিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা স্থানীয় প্রশাসনিক ইউনিটের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হয়। অনুমতি ছাড়া বিক্ষোভকারীরা ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হতে পারে।

কুর্দি সাংবাদিকরা প্রতিশোধ বা নিপীড়নের ভয় ছাড়াই স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার প্রয়োগ করার মতো আরো স্থিতিশীল ও নিরাপদ কাজের পরিবেশের জন্যে আশাবাদী।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .