সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যম সেন্সরের পক্ষে তুরস্কের এক আলেম

জেরেমি ভ্যান্ডেলের “তুরস্কের পতাকা” সিসি বাই এনসি-এনডি ২.০ এর অধীনে অনুমোদনপ্রাপ্ত।

তুরস্কের ধর্ম বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রধান আলী এরবাসের নাগরিকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকে ইসলামি মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত এমন পরামর্শের পর তুরস্কের ডিজিটাল স্বাধীনতা হুমকির মুখে। তুরস্কের বিরোধী দল এবং আইনজীবি সমিতি ধর্ম ও আইন মিশিয়ে ফেলার জন্যে সরকারের নেতৃস্থানীয়দের সমালোচনা করার পর, ইরবাস রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সামাজিক গণযোগাযোগের উপর আরো কঠোর সরকারি নিয়ন্ত্রণের পূর্ববর্তী নীতিগত অবস্থানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়ে এই আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছেন।

১ সেপ্টেম্বর বিচারিক বছরের শুরু উপলক্ষে প্রার্থনা অনুষ্ঠানে তিনি তার মন্তব্য ভাগাভাগি করেন। তখন থেকেই তার নাম সংবাদগুলিতে চাউর হতে শুরু করে।

সামাজিক গণযোগাযোগ নিয়ে এরবাসের চিন্তা নতুন কিছু নয়। এই বছরের শুরুর দিকে ধর্ম বিষয়ক অধিদপ্তর, “সামাজিক গণযোগাযোগ নৈতিকতা” (“সোস্যাল মিডিয়া আহলাকি”) নামে একটি বই প্রকাশ করে। বইটির উপক্রমণিকায় এই ধর্মীয় আলেম লিখেছেন:

একটি শক্তিশালী সচেতনতার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের জন্যে আইনি কাঠামো নির্ধারণকারী আইনি প্রক্রিয়া গড়ে তোলা অপরিহার্য। বিশেষ করে, ঈশ্বর যে সর্বত্র এবং সবসময় আমাদের উপর নজর রাখছেন এমন ধরনের সচেতনতার মাধ্যমে তৈরি একটি আত্ম-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বিকাশ করা দরকার।

উপক্রমনিকাটিতে এরবাস আরো বলেন, সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের জন্যে কখনো কখনো আইনও যথেষ্ট নয়, তাই এই আলেম “ফিকাহ” বা ইসলামি আইনশাস্ত্রের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেন। এরবাস লিখেছেন, “ব্যক্তির আচার -আচরণের জন্যে তাদের উপর ইহলৌকিক ও পরলৌকিক উভয় দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়ার পাশাপাশি তাদের বিবেকের কাছে আবেদনের দিকনির্দেশনা প্রদানকারী ফিকহ (আসলেই) কার্যকর।”

এই আলেম ৫ সেপ্টেম্বর তারিখে একটি অনলাইন সভায় ধর্মীয়ভাবে কেন্দ্রীভূত নিয়ন্ত্রনের প্রয়োজনীয়তার পুনরাবৃত্তি করেন।

সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যম ভার্চুয়াল এবং ডিজিটাল জগতকে উপচে গিয়ে বাস্তব জীবনকে প্রভাবিত করে ধর্ম ব্যক্তি ও সামাজিক স্তরে যে নৈতিকতা, মূল্যবোধ এবং গুণাবলী তৈরি করতে চায় সেখান থেকে বিচ্যুত করতে পারে। আর তাই এমন একটি আইনি প্রক্রিয়া তৈরি করা দরকার যা সামাজিক গণযোগাযোগ ব্যবহারের পাশাপাশি আইনি কাঠামো নির্ধারণ এবং মূল্যবোধের দুর্নীতি মোকাবেলায় একটি শক্তিশালী চেতনা নির্মাণ করবে।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে ধর্মীয় আলেমদের সামাজিক গণযোগাযোগ মঞ্চগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে আহ্বান সরকারকে তুর্কি দণ্ডবিধির ২১৬ ধারা ব্যবহার করে ইসলামি মূল্যবোধের সমালোচকদের বিচারের জন্যে প্ররোচিত করতে পারে। ২১৬ ধারা “জনসাধারণের একটি অংশের ধর্মীয় মূল্যবোধকে প্রকাশ্যে অবমাননা করা” অপরাধীকরণ যা ইতোমধ্যে তুরস্কে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পেন ইন্টারন্যাশনালের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে লেখক সেভান নিশানিয়ান আলোচনা করেছেন কীভাবে এই আইনটি তাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার পর রাষ্ট্রের মধ্যে তার ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করেছে:

বিভিন্ন ধর্ম বা বিশ্বাসকে বিশেষ করে অপ্রচলিত, ধর্মহীন বা ধর্মবিরোধী বিশ্বাসের প্রতি বৈষম্যমূলক পদ্ধতিতে ভিন্ন ভিন্ন মানের সুরক্ষা প্রদানের জন্যে এই নিবন্ধটি সমালোচিত হয়েছে। বিখ্যাত কনসার্ট পিয়ানোবাদক এবং সুরকার ফাজিল সে এবং সাংবাদিক জেইদা কারান এবং হিকমেত জেদিনকায়ার ক্ষেত্রে এই উদ্বেগগুলি তুলে ধরা হয়েছে।

গত বছরের জুলাই মাসে তুরস্ক একটি নিয়ন্ত্রিত সামাজিক গণযোগাযোগ আইন (ইন্টারনেটে প্রকাশনার নিয়ন্ত্রণ আইন এবং এই ধরনের প্রকাশনার মাধ্যমে করা অপরাধের দমন সংক্রান্ত আইন) পাশ করেছে যা ডিজিটাল অধিকার এবং তুরস্কে মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে।

এক বছর পর ক্ষমতাসীন বিচার ও উন্নয়ন পার্টি (একেপি) সামাজিক গণযোগাযোগ মঞ্চে ভাগাভাগি করা ভুয়া খবর – এরদোয়ান যাকে “মিথ্যার সন্ত্রাস” বলে বর্ণনা উল্লেখ করেছেন- মোকাবেলা করার জন্যে আরো বিধি-বিধান প্রণয়ন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। খসড়া আইনটিতে “অপপ্রচার” ছড়ানোকে অপরাধমূলক কার্যকলাপ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং এতে দোষী সাব্যস্ত হলে সামাজিক যোগাযোগের মঞ্চে মিথ্যা সংবাদ ভাগাভাগি করার জন্যে অপরাধীর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

একেপি নতুন খসড়া আইন ঘোষণার অব্যবহিত পরেই গ্যাজেট ডুভার পত্রিকার সাথে কথা বলার সময় বিশিষ্ট তুর্কি শিক্ষাবিদ ও সাইবার-অধিকার বিশেষজ্ঞ ইয়ামান আকদেনিজ বলেছেন যে আসন্ন খসড়া আইনটি  গণমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা অভূতপূর্ব পর্যায়ে পৌঁছানো একটি দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে আরো সীমাবদ্ধ করবে। আকদেনিজ আরো বলেন, “আসন্ন প্রবিধানটি সম্ভবত ২০২২ সালের তথ্য স্বাধীনতার চিত্রটিকে আরো ভয়ঙ্কর করে তুলবে।”

এরবাস ক্ষমতাসীন দলের রাষ্ট্রপতি এবং সদস্যদের সমর্থন পেলেও ক্ষমতাসীন দল তার সাম্প্রতিক পরামর্শগুলো মেনে নেবে কিনা তা স্পষ্ট নয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .