কেন্দ্রীয় আনাতোলীয় প্রদেশের কনইয়ার একটি বদ্ধ বেসিন হ্রদ তুজ হ্রদ (লবণ হ্রদ) তুরস্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্রদ। এটিতে পাখি, পোকা-মাকড়, স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং উদ্ভিদের বিভিন্ন স্থানীয় প্রজাতি রয়েছে। ২০০০ সালে হ্রদটিকে একটি সংরক্ষিত জীববৈচিত্র্য অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এটি ফ্লেমিংগোসহ অনেক পরিযায়ী পাখির অস্থায়ী আবাসস্থল। ডিম পাড়া এবং খাওয়ানোর জন্যে উপযোগী হ্রদটি ফ্লেমিংগোদেরকে শিকারীদের হুমকিমুক্তভাবে তাদের বংশধরদের লালন-পালন করার সুযোগ দেয়। কাছাকাছি থাকা ছোট ছোট হ্রদগুলি এসব পাখিদের খাদ্য ও পুষ্টির উৎস।
এ কারণেই প্রতিবছর মার্চ মাসে হাজার হাজার ফ্লেমিংগো তুজ হ্রদের দক্ষিণে পাড়ি জমানোর ফলে এটি “ফ্লেমিংগোদের স্বর্গ” নাম অর্জন করে। পরিবেশ ও নগরায়ণ মন্ত্রণালয়ের মতে, ২০১৮ সালে মোট ১২,৭৪৬টি ফ্লেমিংগো এখানে ডিম পাড়ে এবং ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ২০,৩৮১তে পৌঁছায়। প্রতি বছর এখানে কমপক্ষে ১০,০০০টি ফ্ল্যামিংগো ছানা জন্মগ্রহণ করে। তবে এই বছরের মাইগ্রেশন মরসুমে একটি অপ্রত্যাশিত বাধার মুখোমুখি হয়ে প্রায় ৫০ হাজার ফ্লেমিংগো ছানা মৃত পাওয়া যায়।
কেউ কেউ বিশেষ করে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের চাপে কেন্দ্রীয় আনাতোলিয়া জর্জরিত করে রাখা শুষ্ক অঞ্চলকে এই মৃত্যুর কারণ হিসেবে দায়ী করছে। এই বছর তুজ হ্রদের পানি প্রায় ১০ কিলোমিটার নেমে গেছে। ডিম পাড়া অনেক ফ্লেমিংগো পানি পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারায় অপুষ্টিতে মারা যায়। বন্যজীবন আলোকচিত্রী মেহমেত এমিন ওজতাক (তুর্কি রেডিও ও টেলিভিশন) টিআরটিকে বলেছেন:
এই প্রদেশটা পাখিদের জন্যে একটি স্বর্গের মতো ছিল। এই বছর আমি এখানে আসার পর এটাকে জাহান্নাম দেখতে পাচ্ছি। হাজার হাজার না হলেও শত শত ফ্লেমিংগো মারা গিয়ে পাখিদের সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে গেছে। আগে আমি যখন এই অঞ্চলে এসেছি তখন এটা জলাভূমি ছিল। কিন্তু এখন এটা ধূলিকণায় পরিপূর্ণ। প্রায় ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত পানি কমে গেছে। এটা একটা সাংঘাতিক অশনি সংকেত।
অন্যান্যরা এবছরের দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দেশের চাষাবাদের চর্চাকে দায়ী করেছে। কাছাকাছি খালগুলিতে স্থাপন করা বাঁধগুলি হ্রদ থেকে পানি সরিয়ে নিয়ে গেছে। যার ফলে ভূগর্ভস্থ পানির উৎসগুলি থেকে প্রায়শই অতিরিক্ত পানি আহরণ করা হয়। ডেমিরেরেন হাবের আজানসির সাথে কথা বলার সময় আক্সারে আলোকচিত্রী সমিতির সহ-সভাপতি ফাহরি তুঞ্চ বলেছেন:
এলাকায় জলের খালগুলিতে কোন জল নেই বলা হয়ে থাকলেও, বাস্তবতা তেমনটি নয়। বরং উঁচু উঁচু বাঁধ দিয়ে অবরুদ্ধ করে সেগুলোর মাধ্যমে জল ফসলি জমিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফলে তুজ হ্রদে কোন জল এসে না পৌঁছানোর কারণে প্রাণীরা খাদ্য বা জল পায় না। আমি কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি: আমাদের এবিষয়ে সংবেদনশীল হওয়া উচিত।
তুঞ্চ পাখিদের এমন মৃত্যুকে শুধু ফ্লেমিংগো নয় অন্যান্য সকল প্রজাতির একটি গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
হুরিয়াত দৈনিক সংবাদকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তুরস্কের প্রকৃতি সমিতির সভাপতি ডিচলে কিলিচ একমত পোষণ করে এর জন্যে খরার পরিবর্তে “ভুল কৃষি ও সেচ নীতি”কে দোষারোপ করেন।
Gölü besleyen kanallarda su bittiği için diyorlarmış. ANLIK GÖRÜNTÜ. Kanallarda su var. Sadece önüne set çekilip göle gitmesi engellenmiş durumda. Videoda görünüyor. Yukarıdaki bütün görüntüler ve bu, arkadaşımız Fahri Tunç tarafından kaydedilmiş ve bizlere ulaştırılmıştır. pic.twitter.com/gPC49a944c
— Emin Yoğurtcuoğlu (@birddetectiveTR) July 13, 2021
হ্রদে পানি টেনে আনা খালগুলি শুকিয়ে যাওয়ার জন্যে এমন হয়নি। সরেজমিন দেখা গেছে, খালগুলিতে পানি আছে। কারণ, হ্রদে পানি পৌঁছতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আপনি ভিডিওতে এটা দেখতে পারেন। আমাদের বন্ধু ফাহরি তুঞ্চ আমাদের এই সমস্ত ফুটেজ পাঠিয়েছে।
কৃষি ও বন মন্ত্রী বেকির পাকদেমিরলি এর সাথে এলাকার বাঁধগুলির কোন সম্পর্ক প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইস্তাম্বুলের একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন:
সেলজুক বিশ্ববিদ্যালয়ের (কনইয়া) পশুচিকিৎসা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত বিশ্লেষণ অনুসারে এখানে বিষের কোন চিহ্ন নেই। পানি কম এবং বর্ধিত ঘনত্বের পানিতে আমরা উড়তে না পারা ফ্লেমিংগোগুলির মৃত্যু পর্যবেক্ষণ করেছি। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে এই ঘটনা এবং এলাকার কূপগুলি বা কৃষি সেচের মধ্যে কোন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগাযোগ নেই।
কনিয়ার আঞ্চলিক প্রশাসন তার ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে আঞ্চলিক প্রশাসন ফ্লেমিংগোদের গণমৃত্যু তদন্তের জন্যে একটি কমিশন গঠন করে এর সমাধান খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
Eski Yeni pic.twitter.com/OWBfCZV7ZU
— Gönenç Gürkaynak (@GurkaynakGonenc) July 16, 2021
পুরানো ও নতুন।