সমালোচকদের কণ্ঠরোধ এবং ক্ষমতা সংহতকরণে সৌদি নেতৃবৃন্দের হাতিয়ার ধর্ম

ইসলাম ধর্মমতে পবিত্রতম শহর মক্কায় অবস্থিত বিখ্যাত মসজিদ। ছবি উইকিমিডিয়া থেকে বাসিল ডি সুফির সৌজন্যে। ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স এর আওতায় প্রকাশিত।

গত বছরের অক্টোবরে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসের ভেতর সৌদিয়ান সাংবাদিক ও ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাশোগি খুন হওয়ার পর সৌদি আরব এবং সমগ্র আরব অঞ্চলে সাংবাদিকদের বাক-স্বাধীনতা চর্চার ক্ষেত্রে এক দীর্ঘ কালো ছায়া নেমে এসেছে।

এই ঘটনার পরবর্তী রাজনৈতিক বিপর্যয়ের ফলে কিছু শক্তিশালী ইসলামী প্রতিষ্ঠান এবং প্রভাবশালী অনেক কণ্ঠস্বর বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

খাশোগির অন্তর্ধান, অতঃপর খুন হওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর একাধিক বিশ্বনেতা প্রকাশ্যেই সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে সাংবাদিক হত্যার আদেশদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন। দৃশ্যতঃ এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই হয়ত মক্কার বড় মসজিদের ইমাম গত ১৯ অক্টোবর শুক্রবার জুমার খুৎবায় বিন সালমানের প্রশংসা করে তাকে রাজ্যের প্রকৃত শাসক হিসেবে অভিহিত করেন।

সৌদি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক পূর্ব-অনুমোদিত সেই (লিখিত) খুদবায় শেইখ আব্দুর রহমান আল সুদাইস যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের “আধুনিকায়নমূলক সংস্কার” এর প্রশংসা করেন, একই সাথে বিরুদ্ধাচারনকারীদের তীব্র সমালোচনা করে দেশটিকে “আশীর্বাদপ্রাপ্ত ভূমি” হিসেবে অভিহিত করেন। “ইসলাম এবং পবিত্র স্থানসমূহের রক্ষক ও অভিভাবক রাজা এবং নিষ্ঠাবান যুবরাজের প্রতি সমর্থন ও আনুগত্য প্রকাশ করা প্রতিটি মুসলিমের পবিত্র দায়িত্ব”, বলেও তিনি তাগিদ দেন।

এই খুৎবা দ্বারা নবীর বক্তৃতার পোডিয়ামকে “অপবিত্র ও অপমানিত” করা হয়েছে, দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে এক উপসংবাদকীয়তে এমনটাই অভিযোগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার আইন বিভাগের অধ্যাপক খালেদ এম আবু এল ফাদেল।

“স্বেচ্ছাচারী এবং নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডগুলোকে বৈধতা দিতে এই মহান মসজিদকে ব্যবহার করা হচ্ছে” উল্লেখ করে তিনি লিখেন, “মক্কা ও মদিনার দুই তীর্থস্থানের নিয়ন্ত্রক ও রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসেবে সৌদি বাদশাহর নৈতিক অবস্থান প্রশ্নের সম্মুখীন।”

সৌদি আরবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির দীর্ঘ ইতিহাস

চরম রক্ষণশীল রাজতন্ত্রে ধর্মভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বস্তত, রাজতন্ত্রের সূচনালগ্ন থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ সৌদি নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিক শক্তির হাতিয়ার হিসেবে ধর্মকে ব্যবহার করে আসছে।

সৌদি আরবে অবস্থিত ইসলাম ধর্মের দুই পুণ্যভূমি মক্কা ও মদিনা

প্রতিবছর সমগ্র বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মুসলমান হজ্জ পালনে মক্কা ভ্রমণ করে; হজ্জ বা এই তীর্থযাত্রা ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম একটি স্তম্ভ। ফলে এটি সৌদি সরকার ইসলাম ধর্মের উপর এক ধরনের বিশেষ কর্তৃত্ব করার অধিকার দেয়। তবে সৌদি রাজারা এই ক্ষমতাকে ব্যবহার করে তাদের বৈধতা বজায় রাখছে এবং রাজনৈতিক কর্তৃত্ব চালিয়ে যাচ্ছে।

১৭৪৪ সালে যখন প্রথম সৌদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, ছোট্ট মরূদ্যান শহর দিরিয়ার আমির মুহাম্মদ ইবনে সৌদ ধর্মীয় নেতা ও তাত্ত্বিক মুহাম্মদ ইবনে আব্দ আল-ওয়াহাবের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। আব্দ আল-ওয়াহাব একটি অতিরক্ষনশীল ধর্মীয় আন্দোলনের সূচনা করেন (যা ওয়াহাবী ইসলাম নামে পরিচিত)। এই মতবাদে তিনি কোরান আর হাদিসের উগ্র বা চরমপন্থী ব্যখা করেছেন।

মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল কেন্দ্রিক একটি স্বাধীন মিডিয়া ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান “ফানাক” এর ভাষ্যমতে, “ইসলামের কট্টর ব্যাখ্যা ও বিধানাবলী অনুসারে শাসিত একটি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা” করার অভিপ্রায়েই সেই ঐক্য গড়ে উঠেছিল।

এই মতবাদ প্রবর্তনের কয়েক দশক পরেই প্রথম সৌদি রাষ্ট্রের পতন ঘটে। ১৮২৪ সালে দ্বিতীয়বারের মত সৌদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে ১৮৯১ সালে রাষ্ট্রটি আবারও ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। পরবর্তীতে ওয়াহাবি চরমপন্থীদের সহযোগীতায় ইবনে সউদের পরিবার ১৯২৪-১৯২৫ সালে যথাক্রমে মক্কা ও মদিনা (ইসলাম ধর্মের দুই তীর্থস্থান) আক্রমণ করে। ১৯৩২ সালে সৌদি রাজত্ব পুনর্গঠিত হয়। তারপর থেকে সৌদির শাসকগোষ্ঠী নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতা সংহত করতে ধর্মকে ব্যবহার করে যাচ্ছে।

রাষ্ট্রীয়ভাবে যে ধর্ম ব্যবহার করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধবাদীদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে

বর্তমানে মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে ক্রমবর্ধমান নিপীড়নের মুখে দেশটির অনেকেরই রাজত্বের পুরোন ইতিহাস মনে পরছে। যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমালোচনা করছেন কিংবা পুনর্গঠনের ডাক দিচ্ছেন, তাদের “ইসলামের শত্রু” হিসেবে চিহ্নিত করতে ধর্মগুরুদের বলে দেয়া হচ্ছে এবং দেশটির শাসকগোষ্ঠী নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় ধর্মীয় বিধি-বিধানকে বা বক্তব্যকে ব্যবহার করছে।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে সৌদির ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রী শেখ আব্দুল লতিফ বিন আবদুল আজিজ আল-শেখ ২০১১ ও ২০১২ সালে সংগঠিত আরব বসন্তের সমালোচনা করে আন্দোলনকারীদের “আরব অঞ্চল এবং মুসলিম জাতির জন্য বিষাক্ত এবং হুমকি” হিসেবে অভিহিত করেন।

খাশোগি হত্যার পর সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে যত সমালোচনা হয়েছে সেসবকে উক্ত মন্ত্রী অভিহিত করেছেন “ইসলামের শত্রুদের দ্বারা অযাচিত আক্রমণ বলে”। এবং যেসব মুসলমান সৌদি রাজত্ব আর এর নীতির সমালোচনা করেছেন তাদের অভিযুক্ত করেছেন “রাষ্ট্রদ্রোহ ছড়ানো, মতভেদ আনয়ন, এবং দেশের নেতা অ শাসকদের বিরুদ্ধে লোকজনকে লেলিয়ে দেয়ার অভিযোগে”।

লন্ডনে নির্বাসিত সৌদি মানবাধিকার কর্মী ইয়াহয়া আসিরি রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং ওহাবিজমের মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়টি প্রতিফলিত করে গত ১৩ জানুয়ারি এক টুইট-বার্তায় লিখেনঃ

নিপীড়ন একটি সর্বগ্রাসী পন্থা এবং [আমাদের দেশে] ধর্মের নামে তাই ঘটছে। যখন থেকে ইবনে সৌদ এবং ইবনে আব্দ আল-ওয়াহাব জোটবদ্ধ হয়েছে, তখন থেকে সৌদি আরব এবং ওয়াহাবিজম এমনভাবে বেড়ে উঠছে যেন তারা ক্ষতিকর জমজ। এই ওয়াহাবি দুঃশাসন থেকে যদি আমরা মুক্তি না পাই, আমাদের দেশ আর বেশিদিন টিকবে না। আর আমরা যখন শুভ উদ্দেশ্যে এই কথাগুলো বলছি, অপরপক্ষ বলে বেরাচ্ছে, ওয়াহাবিজম একটি ধর্মীয় আন্দোলন, যদিও এটি সম্পূর্ণই রাজনৈতিক।

তবে সৌদি আরবে আসিরির মত লোকদের চুপসে দেয়া হচ্ছে।

বর্তমানে জেলে বন্ধী আব্দুল্লাহ আল হামিদ এমনি আরেকজন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। তিনি বর্তমানে বন্ধ হয়ে যাওয়া এ্যারাবিয়ান সিভিল এন্ড পলিটিক্যাল রাইটস এ্যাসোসিয়েশন (এসিপিআরএ) এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

মানবাধিকার কার্যক্রমের আড়ালে শাসকের আদেশ অমান্য ও অবাধ্য হওয়া এবং বিক্ষোভের ডাক দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করা সহ বিভিন্ন অভিযোগে আল হামিদকে এগারো বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ২০১৩ সালে বিশেষায়িত ফৌজদারি আদালত কর্তৃক তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। কুখ্যাত এই আদালত সন্ত্রাস-সংক্রান্ত মামলাগুলো পরিচালনার জন্য গঠিত হলেও প্রায়ই মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আল-হামিদ অনশন ধর্মঘট করছে। এক বিবৃতিতে আল-হামিদ জানিয়েছেন, তিনি গ্রেফতারকৃত মানবাধিকার কর্মী এবং রাজনৈতিক বন্ধীদের মুক্তি চান। এমবিএস মি-টু মানবাধিকার সংগঠন কর্তৃক বিবৃতিটি প্রকাশিত হয়েছে। 

আব্দুল্লাহ আল-হামিদ। ছবিটি তার গুড রিডস অ্যাকাউন্ট থেকে সংগৃহীত।

মানবাধিকার কর্মকাণ্ড ছাড়াও আল-হামিদ একজন কবি এবং বুদ্ধিজীবী। তার লেখায় তিনি ইসলামী ঐতিহ্য এবং রচনাবলী থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে গনতন্ত্র প্রবর্তন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ‘কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলারস’ এর মত বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেগুলো সৌদি আরবে দমন-পীড়নকে সমর্থন দিয়েছে, তাদের সমালোচনা করেছেন। বয়েজ্যোষ্ঠ ধর্মীয় চিন্তাবিদদের নিয়ে গঠিত ‘কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলারস’ হলো রাজার ধর্ম-বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদ, যা রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় সংস্থা।

তিনি একবার এই পরিষদ এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন যে তারা “নাগরিকদের অর্থ, মর্যাদা এবং স্বাধীনতা হরণ” করেছে এবং ” নাগরিকত্ব, বহুত্ব ও সহনশীলতা” বিপর্যস্ত করতে ভূমিকা রেখেছে এবং “সহিংসতা ও চরমপন্থা সৃষ্টিকারীদের” পৃষ্ঠপোষকতা করছে।

তিনি আরও আশা করেছেন যে সৌদি সমাজ একটি “আধুনিক ধর্মীয় বক্তৃতা প্রাপ্য যা একটি পরামর্শমূলক শাসনকে সমর্থন করে” এবং তিনি চান না যে রাজ্যের “ধর্মীয় বক্তৃতাগুলো” যা অন্যায়কারী কোন ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করার আহ্বান জানাচ্ছে … যদি তিনি [কারো] স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার এবং সমতা লঙ্ঘন করেন। “

স্বাধীনচেতা ধর্মগুরুদের নির্যাতন

সরকারের রাষ্ট্রনীতি নিয়ে আপত্তিকারীদের দমনের পাশাপাশি যেসকল ধর্মগুরু যুবরাজের নীতি ও কর্মকাণ্ডের প্রতি যথাযথ সমর্থন দিচ্ছে না, সৌদি আরব তাদের বিরুদ্ধেও কঠোরপন্থা অবলম্বন করছে।

২০১৭ সালের অক্টোবরে মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে তথাকথিত সম্পৃক্ততা সহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে সৌদি ধর্মবেত্তা শেইখ সালমান আল-ওদাহ, আলী আল-ওমারি ও শেইখ আওয়াদ আল-কারনিকে গ্রেফতার করা হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সৌদি এবং তার মিত্রদের দ্বারা কাতারের উপর আরোপিত কূটনৈতিক ও অর্থনীতিক অবরোধকে মৌখিক সমর্থন না দেয়াতেই তাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এবং তারা মৃত্যুদণ্ডের সম্মুখীন হতে পারে (সম্প্রতি তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘোষণা দেয়া হয়েছে)।

জনপ্রিয় ধর্মীয় নেতা শেইখ সালমান আল-ওদাহ (৬২) কেবল সৌদি আরবে নয়, সমগ্র আরব অঞ্চলেই সুপরিচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও তার ব্যাপক অনুসারী আছে। ইন্সট্রাগাম, ফেইসবুক, টুইটার এবং ইউটিউব মিলিয়ে তার অনুসারীর সংখ্যা ২২ মিলিয়নের বেশি। ইতঃপূর্বে ২০১১ সালে আরব বসন্তের পক্ষে নিজের সমর্থন ব্যক্ত করেছিলেন এবং রাজতন্ত্র ও অত্র অঞ্চলে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, তাকে গ্রেফতারের পিছনে কারণ হচ্ছে ৮ সেপ্টেম্বর টুইটারে দেয়া একটি পোস্ট, যেখানে তিনি সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কাতারের সম্ভাব্য পুনর্মিলন সম্পর্কে একটি প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন। টুইটের দ্বিতীয় অংশে তিনি লিখেছেন, “স্রষ্টা তাদের পুনর্মিলিত করুক, যা তাদের জনগণের জন্য মঙ্গলকর।”

আলী আল-ওমারি একজন ধর্মতাত্ত্বিক এবং যুব-বিষয়ক ইসলামি টিভি চ্যানেল “ফোর শা'বাব” এর চেয়ারম্যান। তিনি অন্যদের মত রাজতন্ত্রের রাজনৈতিক সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করতেন না। এমনকি রাজতন্ত্রের নেতৃবৃন্দের পক্ষে একবার টুইটও করেছিলেন। জুন, ২০১৭-তে যুবরাজের সাথে সাক্ষাতের আগে বিন সালমানের সাফল্য কামনা করে টুইট করেছিলেন

শেইখ আওয়াদ আল-কারনিকে সৌদি আরবে নিষিদ্ধ সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন দেয়া এবং রাজতন্ত্র ও এর নিয়ম-নীতিকে অবজ্ঞা করা সহ বিভিন্ন অভিযোগের মুখোমুখি করা হয়েছে।

বর্তমানে সৌদি আরবে আরও অনেক ধর্মীয় নেতা জেলে বন্ধী আছেন। তাদের অনেকেই আল-ওদাহর মত রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধাচারন করে গণতান্ত্রিক সংস্কারের আহবান জানিয়েছিলেন আর বাকিরা বিন সালমানের সমাজ সংস্কার কিংবা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছিলেন। অনেকে আবার আল-ওমারির মত ইতঃপূর্বে সৌদি শাসক ও যুবরাজের প্রতিও সমর্থন প্রকাশ করেছিলেন।

এসব ঘটনার পর এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, বিন সালমানের স্বেচ্ছাচারীতার ব্যাপারে চুপ থাকাও এখন নিরাপদ নয়। এইসব স্বাধীন বক্তাদের থামিয়ে দেবার পাশাপাশি যারা রাজ্যের নেতাদের বা তাদের রাজনীতিকে সমর্থন করে না তাদের জন্যেও রয়েছে হুশিয়ারি – ধর্মগুরুরা অবশ্যই আগ বাড়িয়ে সৌদি ক্রাউনপ্রিন্স এবং সৌদি নেতাদের সমর্থন করবেন ও গুণগান গাইবেন।

সৌদি আরবে বন্ধীদশায় থাকা এসকল ব্যক্তিদের মাঝে মত ও আদর্শগত ভিন্নতা রয়েছে; তাদের কেউ হয়তো দেশটিতে নারীদের অধিকার আদায়ে কিংবা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছিলেন, আবার কেউ শিয়া আন্দোলনকারী কিংবা ধর্মবেত্তা। কিন্তু বিন সালমানের স্বেচ্ছাচারীতায় প্রতিটি ব্যক্তিই সৌদি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক বিনা বিচারে আটক, নির্জন কারাবাস, নির্যাতন এবং জোরপূর্বক গুম সহ বিভিন্নভাবে অবিচারের শিকার হচ্ছেন। এসব নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডকে আইনত বৈধতা দানে ধর্মকে বর্ম হিসেবে ব্যবহারে সৌদির শাসকগোষ্ঠী কখনোই কুণ্ঠাবোধ করে না।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .