অ্যাডভক্স নেটনাগরিক প্রতিবেদন বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি এবং মানবাধিকারের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, জয়লাভ এবং উদীয়মান প্রবণতার একটি আন্তর্জাতিক আলোকপাত উপস্থাপন করে। এই প্রতিবেদনটিতে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের ২০ থেকে ২৬ তারিখের বিভিন্ন সংবাদ এবং ঘটনা কাভার করা হয়েছে।
২৩ এপ্রিল তারিখে সৌদি আরবে ৩৭ বন্দির শিরোচ্ছেদের মাধমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। নিহতদের বেশিরভাগই রাজ্যটির সংখ্যালঘু শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্তর্গত এবং তাদের সবাই পুরুষ ছিল।
মানবাধিকার পর্যবেক্ষক এবং এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর মতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা ১৪ জনকে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার পর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। দু’টো গোষ্ঠীই বলেছে যে নির্যাতন করে লোকগুলোকে “প্রতিবাদ সম্পর্কিত অপরাধ” স্বীকার করতে বাধ্য করা হলেও পরে তারা চাপের মুখে পড়ার কথা বলে আদালতে তাদের স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারের চেষ্টা করেছিল। তবুও তাদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মধ্যপ্রাচ্য গবেষণা পরিচালক হিসেবে কর্মরত লিন মালুফ মৃত্যুদণ্ডগুলোকে “দেশটির শিয়া সংখ্যালঘুদের মধ্যেকার ভিন্নমত গুঁড়িয়ে দেওয়ার রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে মৃত্যুদণ্ডকে কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তার আরেকটি জঘন্য প্রমাণ” হিসেব অভিহিত করেছেন।
মাত্র কিছুদিন আগে ২০১৮ সালের অক্টোবরে ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাসোগীর হত্যার ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক ও সক্রিয় কর্মীদের উপর চলমান দমনাভিযানের অংশ হিসেবে তিনজন সৌদি ব্লগারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
কর্তৃপক্ষ কেন বেশ কিছুদিন ধরে লেখক হিসাবে সক্রিয় না থাকা নাইফ আল হিন্দাস, আলী আল-সাফার ও রেহা আল-বুরিকে আটক করেছে সেটা তারা প্রকাশ্যে বলেনি। ২০১৫ সালে আল-সাফার ও আল-বুরি আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়ে এবং আল হিন্দাস ২০১৮ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত দর্শন, নারীবাদ এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে লিখেছিলেন।
২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সৌদি আরবে কমপক্ষে ১৬ জন সাংবাদিক কারাগারে ছিল। সবাই বলেছে যে এইসব আইনী মামলা ও মৃত্যুদণ্ড প্রদর্শন করে সৌদি সরকার রাজ্যটিতে সমালোচনা ও বৈধ গণমাধ্যমের কার্যকলাপ প্রতিরোধ করার জন্যে এসব চরম ব্যবস্থাকে কাজে লাগাতে চায়।
মারাত্মক হামলার পর শ্রীলংকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অবরুদ্ধ
ইস্টার সানডেতে শ্রীলংকার গির্জা ও হোটেলগুলিতে বোমা হামলা করে শত শত মানুষ হত্যার কয়েক ঘণ্টা মধ্যে কর্তৃপক্ষ ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, ভাইবার, স্ন্যাপচ্যাট এবং ফেসবুক মেসেঞ্জারসহ বেশিরভাগ ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবাদি অবরুদ্ধ করে। জনসাধারণের জরুরী সময়ে হিংসাত্মক বক্তৃতা এবং অপসংবাদের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ প্রমাণিত সরকারী ও সামাজিক মিডিয়া উভয় মঞ্চ সম্পর্কেই বেশিরভাগই হতাশা প্রকাশ করে গৃহীত ব্যবস্থাটির প্রতি প্রতিক্রিয়া ছিল মিশ্র।
উগান্ডার অধিকার নেতাকে তানজানিয়াতে আটকের পর দেশে ফেরৎ
২৫ এপ্রিল তারিখে শীর্ষ ডিজিটাল অধিকার প্রবক্তা ওয়াইরাগালা ওয়াকবি মানবাধিকার ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত কর্মশালায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তার নিজ দেশ উগান্ডা থেকে তানজানিয়ায় এলে দার এস সালামের জুলিয়াস নায়ারেরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে আটক করা হয়। ওয়াকবি আফ্রিকায় ডিজিটাল অধিকার নিয়ে কর্মরত অন্যতম শীর্ষ সংগঠনউগান্ডা-ভিত্তিক পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকার জন্যে তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা সহযোগিতা (সিআইপিইএসএ) এর নির্বাহী পরিচালক।
কয়েক ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর ওয়াকবিকে উগান্ডায় ফেরত পাঠানো হয়। এসময় তাকে কোন আইনজীবীর সাহায্য নিতে দেয়া হয়নি। প্রবেশাধিকার থেকে বিরত রাখা হয়েছিল। তানজানিয়া মানবাধিকার রক্ষাকর্মীদের জোটের এটর্নিরা তার পক্ষে ওকালতি করার চেষ্টা করলে তাদের শুধু বলা হয় যে “জাতীয় স্বার্থে” ওয়াকবিকে নির্বাসিত করা হচ্ছে।
সিআইপিইএসএ-এর একটি বিবৃতিতে তারা পূর্ব আফ্রিকার কমিউনিটি (ইএসি) সদস্যদেরকে “ইএসি নাগরিকদের এই উপ-অঞ্চলটিতে ভ্রমণে বিঘ্ন সৃষ্টি করার প্রবণতাটির নিন্দা জানানোর” আহ্বান জানিয়েছে।
হলুদ পোশাক বিক্ষোভ কাভার করার সময় ফরাসি সাংবাদিক গ্রেপ্তার
২০ এপ্রিল তারিখে প্যারিসের একটি হলুদ পোশাক প্রতিবাদ বিক্ষোভ কাভার করার সময় ফরাসি পুলিশ সাংবাদিক গ্রেফার্ড গ্লানজকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্লানজ প্রধানত প্রতিবাদ ও অনলাইনে সামাজিক আন্দোলন কাভার করা সংবাদ সংস্থা তারানিস নিউজ প্রতিষ্ঠা করেন। গ্লানজকে পুলিশ কর্মকর্তাকে মধ্যমা আঙ্গুল দেখানোর জন্যে “সরকারি কর্তৃত্বের অধিকারী ব্যক্তির অবমাননা”র অভিযোগে ৪৮ ঘণ্টা আটক রেখে ছেড়ে দেয়া হয়। ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত তার বিচার শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত তার বিক্ষোভ কাভার করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কেরিমে চড়লে সতর্ক থাকুন – পরে ড্রাইভার আপনাকে ডাকতে পারে
সম্প্রতি উবারের কিনে নেয়া সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক যাত্রী অ্যাপ কেরিম যাত্রীদের পূর্ণ নাম এবং আসল ফোন নম্বর ড্রাইভারদের সাথে ভাগাভাগি করছে। বৈরুত-ভিত্তিক ডিজিটাল অধিকার গ্রুপ এসএমইএক্স জানিয়েছে যে এর ফলে ড্রাইভাররা ফেসবুক এবং অন্যান্য উপায়ে যাত্রীদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে যা আরোহনণকারীদের নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার হুমকি সৃষ্টি করেছে। এসএমইএক্স ব্লগে আবিদ কাতায়া লিখেছেন:
কেরিম … নিশ্চিতভাবেই ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য ভাগাভাগি করার ইঙ্গিত ও ঝুঁকি প্রদর্শন করছে বলে মনে হচ্ছে, এমনকি একটি ফোন নম্বরে ব্যক্তিগতভাবে সনাক্তকরণের মতো তথ্য থাকতে পারার কথা পর্যন্ত অস্বীকার করছে।
সিম কার্ড জালিয়াতরা পাকিস্তানের বায়োমেট্রিক আইডি ব্যবস্থাকে ব্যবহার করছে
পাকিস্তানে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মতে এরা একটি পরিচয় চুরি প্রকল্প চালাচ্ছিল যার মধ্যে নিরাপরাধ বিভিন্ন ব্যক্তির আঙ্গুলের ছাপসহ পরিচয় তথ্য ধারণ করেছিল। তারপর তারা এই তথ্যগুলো দিয়ে মোবাইল সিম কার্ড সংগ্রহ করে সেসব লোকজনের কাছে বিক্রি করতো যারা অপরাধমূলক কার্যক্রম চালানোর জন্যে এগুলো ব্যবহার করতো।
২০০৮ সালে পাকিস্তান সিম কার্ড কেনার জন্যে জনগণণের বায়োমেট্রিক পরিচয় তথ্য (সাধারণত আঙ্গুলের ছাপ) উপস্থাপন বাধ্যতামূলক করে। কর্তৃপক্ষ বলছে এই পদক্ষেপের ফলে “নাম-পরিচয়হীন” সিম কার্ড দিয়ে চাঁদাবাজি, অপহরণ ও জালিয়াতি কমে গিয়েছে।
ইইউ ‘সন্ত্রাসবাদ বিরোধী’ নীতি সংশোধন করলেও সমস্যা থেকেই যাচ্ছে
১৬ এপ্রিল তারিখে ইউরোপীয় সংসদ একটি নীতি নির্দেশনা অনুমোদন করেছে যা অনুসারে অনলাইন মঞ্চগুলিকে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের আদেশ পাওয়ার এক ঘন্টার মধ্যে “সন্ত্রাসী বিষয়বস্তু” হিসাবে বিবেচিত অনলাইন পোস্টগুলি সরিয়ে নিতে হবে। আইন প্রণেতারা নির্দেশনাটিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে “প্রাক-সেন্সর” ফিল্টার ব্যবহার এবং সন্ত্রাসী সামগ্রী সনাক্ত এবং সরানোর জন্যে তাদের সম্প্রচারিত ও সংরক্ষিত তথ্যসমূহ পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয় বিধানগুলি মুছে ফেলতে ভোট দিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলি এই বিধানগুলি অপসারণকে স্বাগত জানালেও তারা এক ঘন্টা সময়সীমা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
ইউরোপীয় ডিজিটাল রাইটস (ইডিআরআই) এবং এখনি_প্রবেশাধিকার একটি বিবৃতিতে এই উন্নতিকে “স্বাগত” জানালেও প্রস্তাবের উদ্দেশ্য অর্জন নিয়ে তাদের সন্দেহ তীব্রতর করেছে। একটি বিবৃতিতে গোষ্ঠীগুলো বলেছে:
ইউরোপ জুড়ে সন্ত্রাসবিরোধী নীতিমালার স্ফীতির অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাবে সাংবাদিক, শিল্পী, মানবাধিকার রক্ষাকর্মী এবং বিভিন্ন নির্দোষ গোষ্ঠী বর্ণবাদের ঝুঁকিতে।
শাদে এখনো ইন্টারনেট বন্ধ
২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মধ্য আফ্রিকার দেশ শাদের জনগণ ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার ছাড়াই একটি বছর পূর্ণ করেছে। পরিষেবা সরবরাহকারীরা বিঘ্নটিকে প্রযুক্তিগত সমস্যা বলে উল্লেখ করলেও সীমান্তবিহীন ইন্টারনেটের মতো সংস্থাগুলো বলেছে যে সম্ভবতঃ ১৯৯০ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা শাদের রাষ্ট্রপতি ইদ্রিস দেবির দীর্ঘস্থায়ী রাজত্বের কারণে জনগণের অসন্তোষের কথা বিবেচনা করে সরকার মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার কেটে দেওয়ার আদেশ দিয়েছে। ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারার জন্যে দেবি ২০১৮ সালে শাদের সংবিধান পরিবর্তনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
নতুন গবেষণা
- Digital Identity in the Migration and Refugee Context (অভিবাসন এবং শরণার্থী প্রসঙ্গে ডিজিটাল পরিচয়) – উপাত্ত ও সমাজ
- Internet Health Report 2019 (ইন্টারনেট স্বাস্থ্য প্রতিবেদন ২০১৯) – মোজিলা ফাউন্ডেশন
- Annual Freedom of Expression Situation in Africa Report 2018 (আফ্রিকায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা পরিস্থিতির বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৮) – আফ্রিকীয় মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিনিময়
নেট-নাগরিক প্রতিবেদনের গ্রাহক হোন
আফেফ আব্রুজি, এলেরি রবার্টস বিডল, নোয়াচুক্বু এগবুনাইক, লরেল ফিঞ্চ, তালাল রাজা এবং তায়সা সাংজেরলা এই প্রতিবেদনে অবদান রেখেছেন।