সিরিয়ার নারীবাদী আন্দোলনের সুবিশাল ইতিহাস

ঐতিহাসিক এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বিংশ শতাব্দীর সিরিয়ার নারীরা বিভিন্ন জনসমাবেশে অংশ গ্রহণ করছে। ছবি স্বত্ব এসএফজিএন ২০১৮। অনুমতিক্রমে প্রকাশিত। পুরো ছবি দেখতে ছবির উপর ক্লিক করুন।

এই প্রবন্ধটি গ্লোবাল ভয়েসেস (জিভি) এবং সিরিয়ান ফিমেল জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক (এসযেএফএন) এর পারস্পারিক চুক্তির মাধ্যমে প্রকাশিত। এটি লিখেছেন গ্লোবাল ভয়েসেস মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের বার্তাকক্ষ সম্পাদক জোয়ি আইউব এবং তাকে সহযোগিতা করেছেন গ্লোবাল ভয়েসেস ইটালিয়ান অনুবাদক এলিস বোনফাত্তি ও লেখক এলিয়াস আবু যাউদেহ

সিরিয়ান নারীবাদী আন্দোলন শুরু হয় ১৮০০ শতাব্দীর শেষের দিকে যখন সিরিয়া এবং লেবানন দুটো ভুখন্ডই অটোম্যান সম্রাজ্যের অধীনে ছিল।

আমরা, অত্যন্ত সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক এই বিষয়টির উপর আলোকপাত করার সুযোগ পাই এসএফযেএন এবং মায়া আলরাহাবির মধ্যকার একটি আলোচনার (আরবি ভাষায়) মাধ্যমে, যিনি সিরিয়ান উইমেন্স পলিটিকাল মুভমেন্ট এর সহ প্রতিষ্ঠাতা। এসএফযেএন এর সাউন্ডক্লাউড অ্যাকাউন্টে এটি যুক্ত করা হয়।

উনিশ শতকে আরবে নাহদা বা গণজাগরণ আর নারীবাদী আন্দোলন একই সাথে শুরু হওয়া কোন আকস্মিক ঘটনা ছিলনা। সময়টা ছিল সাংস্কৃতিক নব যুগের সুচনার, যা ইজিপ্টে শুরু হয় আর খুব দ্রুত লেবানন, সিরিয়া সহ অন্যান্য আরবীয় দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

যদিও সকলের মনোযোগ মিশরের রিফায়া এল-তাহতাওই বা লেবাননের বুটরাস আল-বুস্তানির মত বিদ্যান ব্যক্তিদের দিকেই ছিল কিন্তু আলরাহাবি জোর দিয়ে বলেন যে সে সময় আন্দোলনকারী নারীরাই পরবর্তিতে মিশরের নারীবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ।

আন্দোলনের শুরু থেকেই সিরিয়ার নারীবাদীরা একত্র হয়ে নারীদের মৌলিক অধিকার যেমন ভোটাধিকার ও শিক্ষার জন্য লড়াই করতে থাকে।

مثل ما منعرف النسوية, الموجة تانسوية العالمية الاولى كانت تحي فقط عن بعض حقوق النساء, مثل التعليم او المشاركة بالانتخابات. فهذا طالبوا فيه النسويات الرائدات بسورية بنهاية القرن التاسع عشر وبداية القرن العشرين

আমারা জানি, প্রথম বৈশ্বিক নারীবাদী আন্দোলনে শুধু নারীদের শিক্ষা, ভোটাধিকার ইত্যাদির দাবী করা হয়। কিন্তু সিরিয়ান নারীবাদীরা এই দাবী সেই উনবিংশ শতক থেকেই করে আসছে।

সিরিয়ান নারীরা ১৯৫৩ সালে ভোটাধিকার লাভ করে।

আলরাহাবি স্মরণ করেন মারিয়ানা মারাখের কথা, যিনি ১৮৭০ সাল থেকেই সংবাদপত্রে লেখালেখি করতেন এবং নারী স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন (তিনিই সম্ভবত প্রথম আরব নারী যিনি এমন পদক্ষেপ নেন)। আলেপ্পোতেই তার জন্ম এবং সেখানেই তিনি মৃত্যু বরণ করেন, তার জীবদ্দশায় তিনি দেখে যান যে কিভাবে তার শহর অটোম্যানদের কাছ থেকে ফ্রেঞ্চদের হাতে গিয়ে পড়ে। তিনি আলেপ্পোতে তার বাসায় মুজতামাত ওয়া মাজালেস আল-আদাবিয়া আল-নিসাইয়া বা “ওমেন্স লিটারারি সার্কলস” (নারীদের দ্বারা পরিচালিত শিল্প, সাহিত্য ও রাজনৈতিক আলোচনা) আয়োজন করতেন এবং ইউরোপের কিছু ধ্যান ধারণার সাথে তার নিজের সিরিয়ান মতামতের সাদৃশ্য নিয়ে আলোচনা করতেন।

আলরাহাবি উদাহরণ হিসেবে মেরি আজামিআদিলা বেহাম আল জাজায়রির কথা উল্লেখ করেনঃ

بتذكر مثلا ماريا عجمي اللي اسست السنة 1910 مجلة العروس وعادلة بيهم الجزائري اللي عملت في جمعيات نسائية، هدفها ثفافية واجتماعية والمنادة بحقوق المرأة مما يتناسب مع الموجة النسوية الاولى اللي كانت موجودة بالعالم.

আমার মারিয়া আজামির কথা মনে পড়ে, যিনি ১৯১০ সালে আল-আরৌস (দ্য ব্রাইড) নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন এবং আদিলা বেহাম আল জাজায়রি, যিনি নারী শিক্ষা এবং সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা সহ আরো বিভিন্ন ভাবে নারী অধিকার আদায়ের জন্যে বহু নারীবাদী সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এসবই প্রথম বৈশ্বিক নারীবাদী আন্দোলনের সময় থেকেই শুরু হয়েছিল।

এই তৎপরতা কম বেশী চলতেই থাকে ১৯৬৩ সালে সিরিয়ান অভ্যুত্থান এর আগে পর্যন্ত। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বাধীনতা পরবর্তি গণতন্ত্র (১৯৪৬-১৯৬৩) নির্মুল করে বাথ পার্টির উত্থান হয়।

১৯৬৬ সালে দ্বিতীয় একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পুরনো নেতাদের সরিয়ে সালাহ জাদিদ ক্ষমতা দখল নেয়। এরপর ১৯৭০ সালে আরো একটি অভ্যুত্থান হয় এবং হাফেজ আসাদ নিজেকে সিরিয়ার প্রধান নেতা হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০০ সালে হাফেজের মৃত্যুর পর তার ছেলে বাসার ক্ষমতার দ্বায়িত্ব নেয় এবং এভাবেই সিরিয়ায় আজো আসাদের শাসনকাল চলছে।

এই সময়ের শাসনকালে নারীবাদী আন্দোলনকে নিষিদ্ধ করা, বন্ধ করা বা বিনাশ করার মনোভাব দেখা যায়। আলরাহাবি বলেন, “এর কারনে এই আন্দোলনের অগ্রগতি থেমে যায়”, কোন রকমে জেনারেল ইউনিয়ন অব সিরিয়ান উইমেন (জিইউএসডব্লিউ) টিকে থাকে। তিনি আরো জানান, জিইউএসডব্লিউ ছাড়া”

لم يعد يرخص لاي جمعية نسائية جديدة وهذا استمر من 1963 لليوم

১৯৬৩ সালের পর থেকে আর কোন নারীবাদী সংস্থাকে লাইসেন্স দেয়া হয়নি।

বলাই বাহুল্য যে জিইউএসডব্লিউ কি করতে পারবে আর পারবেনা তার আওতা খুবই সামান্য ছিলঃ

الاتحاد النسائي كان منظمة شبه حكومية لانه كان اولا عاملها شكلي ووظيفتها الاولي هي فقط التسفيق والتهليل انجازات السلطة في سورية او النظام السوري. لم تقدم على الارض للحقيقة مساعدة حقيقية للنساء.

জিইউএসডব্লিউ ছিল কোয়াসি সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান যার কাজ কর্ম ছিল তেমনই আনুষ্ঠানিক। সিরিয়ার ক্ষমতাসীন দলের প্রশংসা করা আর হাততালি দেয়াই ছিল এর মুল কাজ। বাস্তবে নারীদের এটি কোন কাজেই আসেনি।

আলরাহাবির মতে, এই ধরণের মনভাবের কারণ ছিল যাতে সিরিয়ান নারীবাদী এমনকি আরবের নারীবাদীরাও যেন ১৯৬০ এর দিকে শুরু হওয়া নারী আন্দোলনের দ্বিতীয় তরঙ্গে যোগ দিতে না পারে।

 لما صارت الموجة النسوية الثانية بالعالم واللي هي بدأت بالستينات تقريبا وبدأت تحكي عن مفهوم الجندر, مفهوم توريع الادوار الاجتماعية  بين الرجل والمرأة بالمجتمع, هون كان متوقف تطور الحراك النسوي بكا الدول العربية نتيجة سيطرة الانظمة الاستبدادية عليها

১৯৬০ সালে সারা বিশ্বে যখন নারীবাদের দ্বিতীয় তরঙ্গ শুরু হয়, আমরা দেখলাম যে সমাজ লিঙ্গ এবং তাদের ভুমিকা বুঝতে শুরু করেছে। কিন্তু স্বৈরাচারী শাসক গোষ্ঠি পুরো আরব জুড়ে নারীবাদের এই অগ্রগতি রহিত করে দেয়।

তারপরও কিছু নারীবাদী ছিলের যারা নারী অধিকারের কথা বলে গেছেন। আলরাহাবি উদাহরণ হিসেবে হানান নিজমির কথা বলেন, যিনি ১৯৮০ সালে দামাস্কাসে নিজেই আলোচনার জন্য একটি বৈঠকখানা চালু করেন। নিজমি খুবই যান্ত্রিক উপায়ে নারী এবং শিশুদের অবস্থা উন্নয়নের জন্য কাজ করে যান এবং বেশ কিছু অধিকার আদায়ে সক্ষমও হন। নিচে ছোট আকারে নিজমির জীবনি দেয়া হল (আরবি ভাষায়):

২০১১ সালের সিরিয়ান গণঅভ্যুত্থানকে আলরাহাবি পেছনের এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করেনঃ

 الثورة كانت ثورة على كل شيء ولذلك الناشطين الثوريين للحقيقة كان الهم دور بان تكون النساء ضمن مسيج الثورة وهذا تمدي لتنصيقيات اللي كان فيها تواجد للنساء مهم. وتطورت بعدين المنظمات النسوية السورية في الخارج اللي دعت لحقوق المرأة أو ادماج مطالب بمطالب الثورة. على صعيد اخر, كان في حركات متطرفة هي للحقيقة تعاملت مع النساء بوحشية وقمع وحاولت اعادة النساء الى ما قبل كذا قرن. فكان للحقيقة طرفين للمعادلة بعد الثورة

২০১১ সালের অভ্যুত্থান ছিল সব কিছুর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান, নারী এখানে সম্পুর্ন স্বাধীনভাবে অংশগ্রহণ করেছে, এতে আন্দোলনে নারীর গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর বিভিন্ন নারীবাদী সংস্থা এই অভ্যুত্থানের সাথে নারী অধিকারের বিষয়গুলোও যোগ করে আন্দোলনকে আরো বেগবান করে। অন্যদিকে ছিল উগ্রবাদীরা, যারা যেকোন উপায়ে নারী কে অবদমিত করে শত বছর পেছনে ঠেলে দিতে চায়। তার মানে সে সময় নারীদের দুটো যুদ্ধ করতে হচ্ছিল।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .