ইন্দোনেশিয়ায় একটি কমিউনিটি ভিত্তিক উদ্যোগ বালিনিজ ভাষা রক্ষায় ডিজিটাল টুলস নিয়ে কাজ করছে যার উদ্দেশ্য এ ভাষাটিকে সংরক্ষণ করা এবং সবার মাঝে তুলে ধরা।
ইন্দোনেশিয়ার প্রায় ৭০৭ টি ভাষার মধ্যে বালিনিজ একটি। ২০১১ সালের এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির বালি প্রদেশে থাকা ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ২০ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। এছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার সাউথ সুলাওশি এবং ওয়েস্ট নুসা টেনাগরা প্রদেশেও রয়েছে বালিনিজ ভাষাভাষি মানুষ। সবমিলিয়ে ইন্দোনেশিয়ার বর্তমান জনসংখ্যা ২৬ কোটি এক লাখ।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বালিনিজ ভাষার অনুষ্ঠান বালিতে প্রতিদিন মাত্র আধা ঘন্টা চলার অনুমতি পেয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়গুলোতেও বালিনিজ ভাষায় সপ্তাহে দুই ঘন্টা পড়ানোর অনুমতি আছে। মূলত ইন্দোনেশিয়ার মূল জাতীয় ভাষাকে সবার জন্য করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে বালিনিজ ভাষার মতো আরো বেশ কিছু ভাষাকে তুলে ধরাসহ অন্যান্য কার্যক্রম কঠিন করে রাখা হয়েছে।
এমন অবস্থায় ২০১১ সালে বালি দ্বীপের বাইরে থেকে বালিনিজ ভাষাকে আরো শক্তিশালী করাসহ সংরক্ষণের ব্যাপারে একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করে শুরু করে একদল মানুষ। এ দলে আছে বালিনিজ ভাষার তরুন, একদল ভাষাবিদ, নৃতত্ত্ববিজ্ঞানী এবং শিক্ষার্থী।
এ প্রকল্পটির নাম ভাষা বালি। যা বালিনিজ-ইংরেজি-ইন্দোনেশিয়ান একটি উইকি ভিত্তিক অভিধান এবং বিশ্বকোষ। এর অন্যতম একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে বালিনিজ ভাষাকে আধুনিক ডিজিটাল দুনিয়ায় সক্রিয় রাখা এবং এ ভাষায় নানা ধরনের ডিজিটাল তথ্য-উপাত্ত তৈরি করা।
ভাষা বালি’র প্রতিষ্ঠাতা অ্যালিসা স্ট্রেন প্ল্যানেট ওয়ার্ল্ডকে প্রকল্পটি চালুর বিষয়ে বলেন:
বালিনিজ ভাষায় কথা বলে লাখো মানুষ; অন্যদিকে বালি’র মোট জনসংখ্যার বড় একটি অংশ এখনও এ ভাষায় কথা বলে। যদিও রাষ্ট্রিয় ভাবে বিষয়টিকে হয়তো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না, তবে বিষয়টি যেহেতু সত্য তাই আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি।
এ উইকি পাঠকদের একটি অভিধান, নানা ধরনের তথ্যসমৃদ্ধ একটি লাইব্রেরি, শব্দ ভিত্তিক গেমস, অনুবাদের নানা টুলস এবং বালিনিজ ভাষায় গুগলের মূলপাতার সংস্করণটি পাওয়া যাবে। এ উইকি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপে রয়েছে।
স্ট্রেন প্রকল্পটি সম্পর্কে বলেন, “গবেষক এবং কমিউনিটি সদস্যদের সাথে মেলবন্ধন তৈরির কাজটি কঠিন তবে গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি প্রতিটি নতুন অধ্যায় বা কোন নতুন বিষয় যুক্ত করার বিষয়ে ব্যাখ্যা করে বলেন:
আমাদের কাছে শব্দের অর্থটা আছে। প্রায় ১৫ জনের একটি দল এ শব্দের অর্থগুলো যুক্ত করার কাজটি করে। অন্য একটি দলে আছে ৭-৮ জন স্নাতকোত্তর অথবা পিএইচডি শিক্ষার্থী এবং ভাষাবিদ যারা এ কাজগুলো পরীক্ষা করে। পরবর্তীতে আমরা শব্দের অর্থগুলো এক করে একটি বাক্য তৈরি করি এবং কমিউনিটির মতামত নেই। পরবর্তীতে আমাদের একদল অনুবাদ সে বাক্যটিকে ইংরেজি এবং ইন্দোনেশিয়ার ভাষায় অনুবাদ করে দেয়। ব্যবহারাকারীরা অনেকেই আমাদের কাছে সংশ্লিষ্ট ছবি এবং ভিডিও পাঠিয়ে থাকে যেখান থেকে আমরা প্রয়োজন মতো বালিনিজ ভাষা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকি।
উদাহরণ স্বরূপ, যদি কেউ বালিনিজ ভাষা ইংরেজি শব্দ ভূমিকম্প খুঁজতে চায় তাহলে তিনি “লিনুহ” শব্দটি পাবেন এবং এর ফলাফল পাবেন।
ভাষা বালি অভিধানের স্ক্রিণশট। এ ফলাফলটি একটি ছোট ভিডিও’র মাধ্যমে বালিজিন শব্দ “লিনুহ”র ব্যাখ্যাটি এমন হয়:
যা বলা হয়েছে এ ভিডিওটিতে:
Dugas ada rapat unduk penggalian dana menahin banjare, I Made Rai ngusulang apang ngae bazar. Liu anake setuju dugase ento, sakewala ane magae ajak abedik. Buka linuhe ngidupang ibane. Makejang gaene jemaka, uli ngae kartu, kanti nyemak bazzar didiane.
অর্থ সংগ্রহ প্রক্রিয়ার একটি মিটিংয়ে ‘বানজার’ পূর্ননির্মানের বিষয়টি উঠে এসেছে। এ বিষয়টিতে আমি একটি খাবারের দোকান তৈরির প্রস্তাব দেই। অনেকেই বিষয়টি সমর্থন দেয় এবং কয়েকজন সহায়তাও করে। বিষয়টি অনেকটা প্রাকৃতিক কারণে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পে সহায়তা বিষয়ক আলোচনার মতো যেখানে খাবার দেয়ার ক্ষেত্রে কুপনের ব্যবহার করা হয়।
ভাষা বালি নিয়ে কাজ করা দলটি বিভিন্ন বিদ্যালয়, কমিউনিটি, এবং সরকারি অফিসে বালিনিজ ভাষা তুলে ধরার বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের এ ধরনের অনলাইন এবং অফলাইন কার্যক্রমের ফলে ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক লিঙ্গুয়াপেক্স পুরস্কারও পেয়েছে দলটি। ভাষা বালি’র কাজের বিষয়ে সম্মানার্থে পুরস্কার প্রদানে বলা হয়:
…তারা আধুনিক ডিজিটাল সময়ের জন্য একটি মাল্টিমিডিয়া ভিত্তিক সফটওয়্যার তৈরি করেছে বালিনিজ ভাষা শেখার জন্য। সরকারের বাইরে তারা তৃনমূল পর্যায়েও যেমন এ টুলসটিকে নিয়ে গিয়েছে তেমনি তাদের সংশ্লিষ্টতাও রেখেছে। শুধু তাই নয়, তারা এ কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকেও যুক্ত করেছে।
স্ট্যানফোর্ড সোশ্যাল ইনোভেশনের রিভিউতে, স্ট্রেন স্থানীয় ভাষার বিষয়টি সম্পর্কে উল্লেখ করেন “ইন্টারনেট দুনিয়ার এ সময়ে এ ধরনের কাজটি সহজ মনে হলেও বিষয়টি তা নয়।” কিন্তু ভাষা বালি কিভাবে বিষয়টি করছে সেটি উল্লেখ করে তিনি বলেন:
ডিজিটাল টুলস এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্থানীয় ভাষা তথ্য সমৃদ্ধ ভাষাভিত্তিক বিষয়গুলোকে সহজে তুলে ধরা সম্ভব এবং এতে সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে ভাষার ব্যাপ্তি অনেক বাড়তে পারে।