
পূর্ব তিমুরের দিলিতে যুব ডিজিটাল শিক্ষা প্রশিক্ষণ। সূত্র: জেপিএফ পডকাস্টের ফেসবুক পৃষ্ঠা
ইন্টারনেট স্বাধীনতার জন্যে যুব সমর্থন ও যোগাযোগ প্রকল্পের অংশ হিসেবে জুভিতা পেরেইরা ফারিয়ার লেখা অলাভজনক গণমাধ্যম, প্রযুক্তি ও সংস্কৃতি সংস্থা এনগেজমিডিয়াতে প্রকাশিত এই নিবন্ধটির একটি সম্পাদিত সংস্করণ একটি বিষয়বস্তু ভাগাভাগি চুক্তির অংশ হিসেবে এখানে গ্লোবাল ভয়েসেসে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে৷
পূর্ব তিমুরের জনসংখ্যার অর্ধেকের বয়স ১৫-২৫ বছর হলেও দেশটি অনুন্নত ডিজিটাল অবকাঠামোতে ভুগছে এবং জনসাধারণ তাদের ডিজিটাল নিরাপত্তার হুমকি, অনলাইন হয়রানি এবং মিথ্যা ও অপ তথ্যের মতো মানব ও ডিজিটাল অধিকার বিরোধী আক্রমণের জন্যে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামোও তার আঞ্চলিক প্রতিপক্ষের পিছনে; জাতীয় ইন্টারনেটের গতি গড়ে হিসেবের তুলনায় যথেষ্ট কম এবং অনলাইন সংযোগের খরচ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাকি অংশের তুলনায় অনেক বেশি। সাধারণভাবে দেশের অনেক সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারকারী একটি কার্যকর, ইতিবাচক ও শিক্ষামূলক পদ্ধতিতে ইন্টারনেট বিচরণে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। অনেকের জন্যে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা অনিরাপদ।
এইভাবে পূর্ব তিমুরের যুবকরা উদীয়মান ডিজিটাল যুগে বিশেষ করে সামাজিক গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই নিবন্ধটি সকল প্রজন্মের জন্যে ডিজিটাল অধিকার সমর্থক হিসেবে তরুণদের ভূমিকা পরীক্ষা করে। তরুণরা ডিজিটাল সাক্ষরতা ও শিক্ষায় বিজয়ী হয়ে পূর্ব তিমুরের জাতীয় সংবিধানের ৪০ অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, নির্ভরযোগ্য তথ্যে প্রবেশ এবং সংবাদপত্রের সুরক্ষা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার গুরুত্ব সম্পর্কে আরো সচেতনতা তৈরি করতে পারে। অনলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্যে হুমকি।
অনলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্যে হুমকি
পূর্ব তিমুরে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকলেও, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এখনো ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে লড়াই করে এবং দেশের মধ্যে ডিজিটাল অধিকার রক্ষা ও প্রচারে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। দণ্ডবিধিতে ২০২০ সালে ফৌজদারি মানহানি পুনঃস্থাপন ও ২০২১ সালের খসড়া সাইবার অপরাধ আইন ছাড়াও সাম্প্রতিক আইনি প্রক্রিয়াগুলি অনলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক আলোকে হুমকি প্রদান করে।
আজকে তরুণ তিমুরীয় যুবকরা সামাজিক গণমাধ্যমে প্রায়শই সমালোচনামূলকভাবে তাদের মতামত ভাগাভাগি করা এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, যুব বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মতো নির্দিষ্ট বিষয়ে যুক্তি দেওয়ার ফলে তৎক্ষণাৎ হুমকির শিকার ও কোনো আইনি ভিত্তি ছাড়াই বন্দী হয়।
দেশের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে অনলাইনে সমালোচনামূলক মন্তব্য পোস্টের জন্যে ২০২৩ সালে ভারিয়ানা নামে একজন তরুণ নারী কর্মীকে জাতীয় পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে তদন্ত প্রক্রিয়া চলাকালে কোনো জরিমানা ছাড়াই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সামাজিক গণমাধ্যমে একটি সাধারণ সমালোচনামূলক যুক্তি বিবেচনায় সংবিধানের মত প্রকাশের স্বাধীনতার ধারা দিয়ে ভারিয়ানার পোস্টকে সুরক্ষিত করা উচিত ছিল।
ভারিয়ানার মতো ঘটনা একেবারে কম নয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্ষদ ২০২২ সালের সার্বজনীন পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনাতে দেশটিতে মত প্রকাশ ও সমাবেশের স্বাধীনতা্র জন্যে হুমকিসহ একই ধরনের মানব ও ডিজিটাল অধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যা গণনা করেছে। এতে সকল নাগরিকের গণমাধ্যমের অধিকারের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হলেও, বিশেষ করে সোচ্চার যুবকদের এই অধিকার প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে।

জেপিএফ পডকাস্ট উদ্যোগের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের একটি ডিজিটাল সাক্ষরতা কর্মশালার নেতৃত্ব দেন লেখিকা। সূত্র: এনগেজমিডিয়া, অনুমতিসহ ব্যবহৃত
তরুণদের ডিজিটাল সাক্ষরতা ও সচেতনতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সাইবার নিরাপত্তা রক্ষা এবং ডিজিটাল অন্তর্ভূক্তি বাড়ানোর জন্যে তরুণদের বুঝে ইন্টারনেটের সুবিধা নিতে সাহায্য করাটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল অধিকারের তথ্য ও সম্পদে প্রবেশাধিকার প্রদান ডিজিটাল বিবর্তনে নারী, শিশু ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পিছিয়ে না থাকা নিশ্চিত করে।
এরকমই একটি তরুণ-নেতৃত্বাধীন প্রকল্প জেপিএফ পডকাস্টের সাথে এই নিবন্ধের লেখিকা জড়িত। ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সালে শুরু পডকাস্ট ও এসম্পর্কিত কার্যক্রমের লক্ষ্য ডিজিটাল প্রশিক্ষণ, একটি প্রকাশ্য কথোপকথন এবং একটি অনলাইন পডকাস্ট টক শোর মাধ্যমে এই অঞ্চলে উদীয়মান প্রযুক্তি সম্পর্কে পূর্ব তিমুরের যুবকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। উদ্যোগের ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে প্রথম অনুষ্ঠানের উপজীব্য ছিল “ডিজিটাল অধিকার: পূর্ব তিমুর সামাজিক গণমাধ্যম বিচরণে তরুণদের সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ।” অনুষ্ঠানটির লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তসহ আত্মবিশ্বাস ও সহনশীলতার সাথে ডিজিটাল দৃশ্যপট বিচরণে সহায়তা ও সক্ষম করার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতার সাথে তরুণদের সজ্জিত করা।
আরেকটি উদ্যোগ ইউএনডিপি অর্থায়িত যুব ত্বরণ গবেষণাগারের লক্ষ্য ডিজিটাল ও প্রযুক্তিগত স্থানে তরুণদের বিচরণের সক্ষমতাকে উন্নীত করার লক্ষ্য (ইউএনডিপি, ২২২।) শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে তরুণদের অনলাইন বিশ্ব পরিচালনা করতে সক্ষম করার জন্যে একটি দক্ষতা-ভিত্তিক পদ্ধতির সন্ধান করে এই ডিজিটাল উদ্যোগটি।
পূর্ব তিমুরে ব্যক্তিদের নিজেদের গোপনীয়তা রক্ষা, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে উন্নীত, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিকে উৎসাহিত করতে এবং আরো অনেক কিছুর ক্ষমতায়নের জন্যে ডিজিটাল অধিকার শিক্ষা অপরিহার্য। এধরনের আরো যুব উদ্যোগ ফলপ্রসূ হোক এবং সমৃদ্ধি অব্যাহত থাকুক।
*জুভিতা নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ সমতায় উৎসাহী একজন যুব সক্রিয় কর্মী। তিনি যুব পুরুষ ও নারী উভয়কেই বিনামূল্যে নেতৃত্বের প্রশিক্ষণ প্রদানকারী যুব গোষ্ঠী পূর্ব তিমুর যুব নেতৃত্ব কর্মসূচি গঠন করেছেন। তিনি বর্তমানে একটি পডকাস্টের পৃষ্ঠপোষকতা করে পূর্ব তিমুর যুবাদের মধ্যে ডিজিটাল সাক্ষরতা শিক্ষার বিষয়ে অন্যান্য প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।