মালয়েশিয়াতে ‘মেন্তেগা তেরবাং’ চলচ্চিত্রে নিষেধাজ্ঞা ও ব্লাসফেমির অভিযোগ, শিল্পীদের নিন্দা

Mentega Terbang

মেন্তেগা তেরবাং ছবির একটি দৃশ্য। চলচ্চিত্রটির ইউটিউব ট্রেলারের পর্দাছবি। অ্যানোমালিস্ট প্রোডাকশন। ন্যায্য ব্যবহার।

মালয়েশিয়ার ইন্ডি চলচ্চিত্র “মেন্তেগা তেরবাং” প্রথম ২০২১ সালে প্রদর্শিত হলেও “জনস্বার্থের পরিপন্থী” হওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এটি নিষিদ্ধ করে। চলচ্চিত্রটির পরিচালক ও প্রযোজককে “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত” করার জন্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দণ্ডবিধির ২৯৮ ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে তাদের এক বছরের জেল, জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। শিল্পী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো নিষেধাজ্ঞা ও ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগের নিন্দা করেছে।

প্রায় ১০৪ মিনিটের চলচ্চিত্রটি আয়েশা নামে এক মুসলমান কিশোরীর গল্প বলে। তার মা মারাত্মক অসুস্থতায় আক্রান্ত হলে সে তখন অন্য ধর্মের অন্বেষণ শুরু করে। সীমিতভাবে চলচ্চিত্রটি ২০২১ সালে প্রদর্শিত হলেও ২০২৩ সালে হংকং-ভিত্তিক স্ট্রিমিং পরিষেবা ভিউ-তে দেখানো হলে এটি আরো বেশি লোকের নজরে আসে।

রক্ষণশীলরা চলচ্চিত্রটির ইসলামি বিশ্বাস লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে। মালয়েশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ ৬৩ শতাংশেরও বেশি নাগরিক মুসলমান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু কট্টরপন্থী শাসন ব্যবস্থায় ইসলামি শিক্ষার আরো আক্রমণাত্মক প্রয়োগের জন্যে চাপ দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, কর্তৃপক্ষ এলিজিবিটিকিউ+ থিম ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে ধর্মীয় শিক্ষাকে ক্ষুন্নের অভিযোগ এনে একটি নারী মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের হয়রানি ও ২০২৩ সালে এলিজিবিটিকিউ+ থিমযুক্ত ঘড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে৷ এমনকিতরুণদের মন্দির ও গির্জা পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানানো একটি সরকারপুষ্ট আন্তঃধর্মীয় কর্মসূচিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের মুসলমান কট্টরপন্থীরা লক্ষ্যবস্তু করেছে। তারা সামাজিক গণমাধ্যমে সমর্থকদের জড়ো করে সরকারের বিরুদ্ধে তরুণ মুসলমানদের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের চেষ্টা করার অভিযোগ তুলেছে। অনলাইন প্রতিক্রিয়াটি সরকারকে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে কর্মসূচিটি স্থগিত করতে বাধ্য করে।

স্বাধীনতা চলচ্চিত্র নেটওয়ার্ক বলেছে “সরকারের চলচ্চিত্র নিষিদ্ধ করার ধরনের প্রাচীন রূপটি এখন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অপরাধীকরণ বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণ করছে।” এটি আরো বলেছে:

ধর্মীয় সম্প্রীতি গড়ে তোলার জন্যে আমাদের উন্মুক্ত যোগাযোগ, সংলাপ ও পরস্পরকে বোঝার জন্যে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করে নিতে নিরাপদ স্থানের দরকার। আমাদের অভিজ্ঞতায় মেন্তেগা তেরবাং এধরনের আলোচনার একটি চমৎকার হাতিয়ার। আমাদের সাথে কথা বলা শ্রোতারা বলেছে তারা সিনেমাটি দেখার পরে অন্যান্য বিশ্বাসগুলিকে আরো ভালভাবে বুঝতে, প্রশংসা করত্‌ এবং এর মূল চরিত্রের অভিজ্ঞতার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। তবে কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় চলচ্চিত্রটি নিয়ে এমন ইতিবাচক অভিজ্ঞতা নেই।

চলচ্চিত্র পরিচালক বদরুল হিশাম ইসমাইল “মেন্তেগা তেরবাং”-এর পরিচালক ও প্রযোজকের সমর্থনে একটি বিবৃতি খসড়া করেছেন। নীচে ২০০-রও বেশি শিল্পীর অনুমোদিত বিবৃতিটির একটি উদ্ধৃতি দেওয়া হলো:

সৃজনশীল ও শৈল্পিক স্বাধীনতাপ্রেমী একটি সম্প্রদায় হিসেবে আমাদের অবশ্যই চলচ্চিত্র নির্মাতা বা যেকোনো শিল্পীর উপর অযাচিত বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেওয়ার যেকোনো চেষ্টার নিন্দা করতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আসুন আমরা দর্শক-শ্রোতাদের নিজ বিচক্ষণতা দিয়ে সৃজনশীল অভিব্যক্তির জটিল দৃশ্যপট বিচরণের ক্ষমতার উপর আস্থা রেখে শিল্পের চিন্তাশীল প্রতিফলনকে চ্যালেঞ্জ, অনুপ্রাণিত ও জাগ্রত করার শক্তি উদযাপন করি।

স্বাধীন সাংবাদিকতার সুশীল সমাজ গোষ্ঠী কেন্দ্র (সিআইজে) উল্লেখ করেছে চলচ্চিত্রের বিধিনিষেধ “মালয়েশিয়ার সৃজনশীল অর্থনীতিকে খর্ব করছে।” সিআইজে’র নির্বাহী পরিচালক ওয়াথশলাহ জি. নাইডু সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন

সরকার মালয়েশিয়ায় শিল্পীদের ভয়ের সংস্কৃতিতে থাকতে বাধ্য করেছে। আমরা ধর্মীয় সংবেদনশীলতাকে সম্মানের গুরুত্ব স্বীকার করলেও এই সংবেদনশীলতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার রক্ষার মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য।

যৌথ বিবৃতিতে নয়টি মানবাধিকার গোষ্ঠী “মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও শৈল্পিক স্বাধীনতাকে খর্ব করতে ধর্মীয় আঘাতের অপরাধীকরণ ও আইনের অন্যান্য অস্পষ্ট বিধানের ব্যবহার বন্ধ করার জন্যে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।”  তারা আইনে নিপীড়নমূলক ব্লাসফেমি বিধান বাতিলের আহ্বান ও জানিয়েছে।

এই বিধানগুলির প্রয়োগ প্রায়শই শুধু সরেজমিন বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে, বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া হিসেবে মত প্রকাশের জন্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী, নাস্তিক, কৌতুক অভিনেতা, শিল্পী, ধর্মীয় পণ্ডিত ও অন্যদের উপর একটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

উচ্চ আদালত ২৯ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগের বিষয়ে চলচ্চিত্র প্রযোজককে মন্তব্য করতে বাধা প্রদানকারী গ্যাগ আদেশ বাতিল করে ব্লাসফেমি মামলার পরবর্তী শুনানি ১৪ মার্চ ধার্য করেছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .