নেট-নাগরিক প্রতিবেদন: আর্মেনিয়া ও ইকুয়েডরের নির্বাচনে অনলাইন যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে

উইসকনসিনের স্টেনসিল শিল্প, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। উইকিমিডিয়া সাধারণের মাধ্যমে ডেভিড ড্রেক্সেলের ছবি (সিসি বাই ২.০)

গ্লোবাল ভয়েসেস এডভোকেসির নেট-নাগরিক প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটের অধিকারের চ্যালেঞ্জ, বিজয় এবং উঠতি প্রবণতাগুলো নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আন্তর্জাতিক আলোকপাত করা হয়েছে।

নির্বাচন এমন একটি সময় যখন ইন্টারনেট সেন্সর, অনলাইন হয়রানি এবং ইচ্ছাকৃত ভুল তথ্যের বিস্তার বেড়ে যায়। গত বছর উগান্ডা এবং মন্টেনিগ্রোতে জাতীয় নির্বাচনের সময় সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যমের নেটওয়ার্কে অবরুদ্ধ ছিল। আর গাম্বিয়া এবং গ্যাবোনে ইন্টারনেট একেবারে বন্ধ হয়ে ছিল।

একইরকম রাজনৈতিক প্রার্থী এবং অ্যাক্টিভিস্টদের হয়রানি মেসিডোনিয়ার নির্বাচন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং গত সপ্তাহে হংকং-এর প্রধান নির্বাহী নির্বাচনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ইরানে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কট্টরপন্থীরা টেলিগ্রাম বার্তা পাঠানোর অ্যাপ্লিকেশন অবরোধ করার জন্যে রুহানির প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করতে শুরু করেছে। আর পরবর্তী নেতা নির্বাচন করতে প্রস্তুত রাশিয়া এবং ফ্রান্স উভয় দেশেই হয়রানির জোয়ার বাড়তে শুরু করেছে।

গত সপ্তাহে আর্মেনিয়া ও ইকুয়েডরে নির্বাচন এর ব্যতিক্রম প্রমাণিত হয়নি। নকল সংবাদের অন্তত: একটি ঘটনা এবং সাংবাদিকদের অনলাইন কার্যক্রম ব্যর্থ করে দেয়ার আপাত প্রচেষ্টায় নষ্ট হয়ে গেছে আর্মেনিয়ার সাধারণ নির্বাচনের হালনাগাদ সংবাদগুলো। ভোটের ঠিক আগে নাগরিক সমাজের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি সরকার সমর্থিত হ্যাকারদের তার ইমেল অ্যাকাউন্টে ঢোকার চেষ্টা এবং বেশ কিছু আর্মেনীয় সাংবাদিক তাদের টুইটার অ্যাকাউন্ট স্থগিত হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন। তারপর থেকে আবার তাদের অ্যাকাউন্টগুলো পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।

ইউরোপে নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থার (ওএসসিই) নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা  বলেছে আর্মেনিয়ার বর্তমান ক্ষমতাসীন প্রজাতন্ত্রী দলের বিজয় অর্জন করা নির্বাচনগুলো সাধারণভাবে সুপরিচালিত হলেও ভোট ক্রয় এবং প্রজাতন্ত্র ও বেসরকারী কোম্পানীগুলোর কর্মচারীদের অযৌক্তিক প্রভাব বিস্তারের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ দ্বারা কলুষিত।

এদিকে ইকুয়েডরের সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যমের অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারী সংস্থাগুলোর মতো বিরোধী দলীয় প্রার্থী ও সমর্থকরা সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যমের একাউন্ট স্থগিত হয়ে যাওয়ার ঢেউয়ের সম্মুখীন। বিরোধীপন্থী ওয়েবসাইট এবং ভোটার শিক্ষা তথ্য প্রকাশ করা হাতেগোনা কতগুলো বেসরকারী সংস্থা নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় স্থানীয় আইএসপি (ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী) গুলোতে সাংঘাতিকভাবে ওয়েব ট্রাফিক কমে যেতে দেখায় হস্তক্ষেপের সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী প্রার্থী গুইলারমো লাসোর ওয়েবসাইটের মতো ইন্টারনেট প্রবেশাধিকার গোষ্ঠীর উজুয়ারিওস দিজিতালেসের ওয়েবসাইটটিও একটি ডিডিওএস (বন্টিত পরিষেবা অস্বীকার) আক্রমণের শিকার হয়।

লাইভজার্নাল রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করে ‘রাজনৈতিক তদবির’ নিষিদ্ধ করেছে

২০০৭ সালে রুশ কোম্পানী এসইউপি (স্যুপ) মিডিয়া ব্লগ করার মঞ্চ লাইভজার্নাল কিনে নেয়ার পর এটি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে তার উপাত্ত (ডেটা) রাশিয়ার সার্ভারে সরিয়ে এনেছে। এর মানে হল সম্প্রতি রাশিয়ায় প্রণীত একটি “সন্ত্রাসীবিরোধী” আইন অনুসারে রুশ পুলিশ এখন থেকে এই ওয়েবসাইটের উপাত্ত সম্পূর্ণভাবে নজরদারী করতে পারবে। অন্যান্য নিষেধাজ্ঞাসহ হালনাগাদ করা একটি লাইভজার্নাল ব্যবহারকারী চুক্তি অনুসারে “রাজনৈতিক তদবির” নিষিদ্ধ হলেও শব্দটির অর্থ নির্দিষ্ট করে দেয় নি।

গুগল কি চীনের স্কুলে ফিরে যাবে?

জ্যেষ্ঠ চীনা আইনপ্রণেতা লিউ বিঞ্জি’র একটি বিবৃতি অনুসারে গুগল পণ্ডিত সম্ভবত: চীনে ফিরে যাওয়া প্রথম গুগল পরিষেবা হতে পারে। “বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে চীন গুগলের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে,” গুগলের ব্যবসার একটি অংশ (বিঞ্জি যাকে “[রাজনৈতিকভাবে] সংবেদনশীল তথ্যের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকা পরিষেবা কার্যক্রম” বর্ণনা করেছেন) চীনে প্রথমে এবং ধীরে ধীরে অন্যগুলোও ফিরে আসবে এমন আশার সংকেত দিয়ে বিঞ্জি বলেছেন। গুগল চীনের কঠোর নজরদারীর নিয়ম নিয়ে একটি বিবাদের কারণে ২০১০ সালে চীনা বাজার থেকে তার পরিষেবাগুলি প্রত্যাহার করে নিলেও বাজারে ফিরে আসার ব্যাপারে উত্সাহ প্রকাশ করেছে। গুগলের পরিষেবাগুলোর ক্ষেত্রে নজরদারী প্রয়োগ করা হবে কিনা বিঞ্জির মন্তব্যের স্পষ্ট নয়।

বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক ঘুমানোর সময়ে ফেসবুক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করেছে

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) “তরুণদের কাজের ক্ষমতা হ্রাস করছে” বলে ঘুমানোর সময় ফেসবুকে ঢুকতে না পারা উচিৎ এই যুক্তি তুলে ধরে আইন প্রণেতাদের প্রস্তাবিত পদক্ষেপ – মধ্যরাত থেকে ৬:০০ টার মধ্যবর্তী সময়ে ফেসবুক অবরোধ করার প্রস্তাব – প্রত্যাখ্যান করেছে। পরিবর্তে, বিটিআরসি অভিভাবকীয় নিয়ন্ত্রণ, গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা পদক্ষেপ এই উদ্দেশ্য অর্জনের ক্ষেত্রে আরো ভাল পদ্ধতি হবে বলে সুপারিশ করেছে। সুপারিশটির মাধ্যমে বিটিআরসি এখন সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্যে ছেড়ে দিয়েছে।

আরব আমিরাতের বুদ্ধিজীবী ও অ্যাক্টিভিস্টরা আদালত এবং অনলাইনে হুমকির মুখোমুখি

বিশিষ্ট পণ্ডিত ড. নাসের বিন ঘাইথকে “রাষ্ট্রের সুনাম এবং মর্যাদা ক্ষুন্ন করার উদ্দেশ্যে” টুইটারে আরব আমিরাতের নেতাদের সম্বন্ধে “মিথ্যা তথ্য পোস্ট” করার দায়ে ১০ বছরের কারাদণ্ডে  দণ্ডিত করেছে আরব আমিরাতের একটি আদালত। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অনুসারে বিন ঘাইথ আগের একটি মামলায় তাকে ন্যায্য বিচার দেওয়া হয়নি বলে টুইটারে মন্তব্য করেছিলেন। “আরব আমিরাতের পাঁচ” মামলা হিসেবে পরিচিত সেই মামলায় অনলাইন মন্তব্যে দেশের নেতাদের “প্রকাশ্যে অপমান করার জন্যে” তিনিসহ আরো চারজনের বিচার করা হয়েছিল। তিনি ৩০ দিনের মধ্যে দণ্ডাদেশটির বিরুদ্ধে আবেদন জানাতে পারবেন। আগের সপ্তাহে আরব আমিরাতের পাঁচ মামলার আরেক সদস্য আহমেদ মনসুর গ্রেপ্তার হওয়ার পরেই ড. ঘাইথের মামলাটি চালু হয়েছে।

মনসুরের গ্রেপ্তার সম্পর্কে টুইট করার পর “মরে যাওয়া উচিৎ এমন বিশ্বাসঘাতক”কে সমর্থন করার জন্যে তার সমর্থকদের আক্রমণ করা হয়েছে। গ্লোবাল ভয়েসেসের স্বেচ্ছাসেবকরা মনসুরের সমর্থক এবং তাকে আক্রমণকারীদের মধ্যেকার বার্তা-বিনিময়গুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছে যে মনসুরের সমালোচনা করা সবচেয়ে প্রভাবশালী টুইটগুলোর কিছু কিছু মনসুরের বিরুদ্ধে অনলাইনে কট্টরপন্থী সরকার সমর্থকদের আক্রমণে নেতৃত্ব দেয়া একাউন্টগুলো থেকে এসেছে।

কানাডায় গুপ্তচর স্টিংরে চিহ্নিত

কানাডীয় সম্প্রচার কর্পোরেশনের (সিবিসি) একটি তদন্তে একটি ভৌগলিক এলাকার মধ্যে মুঠোফোনের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করা আইএমএসআই (আন্তর্জাতিক মোবাইল গ্রাহক পরিচয়) খূঁজে বের করার যন্ত্রপাতি অটোয়ার সংসদীয় পার্বত্য এলাকার চারপাশে ব্যবহৃত হতে দেখা গিয়েছে। স্টিংরে নামে পরিচিত এই আইএমএসআই খূঁজে বের করার যন্ত্রপাতি দেখতে মুঠোফোনের স্তম্ভের মতো এবং সাধারণভাবে আধা কিলোমিটার ব্যাসার্ধের একটি এলাকা থেকে ডেটা তুলে নিতে পারে। সিবিসি সাংবাদিকরা সংসদ এলাকার চারপাশে নিরবচ্ছিন্নভাবে আইএমএসআই খূঁজে বের করার যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিশ্চিত করলেও কারা এসব ব্যবহার করছে সেটা নিশ্চিত করতে পারে নি।

ভারতীয় ডেভেলপারদের হোয়াটসঅ্যাপ-ফেসবুকে “নকল সংবাদ” মোকাবেলা

ভারতীয় দুইজন প্রযুক্তিবিদ বাল কৃষ্ণ বিড়লা এবং শাম্মাস ওলিয়াথ একটি ওয়েবসাইট চেকফোরস্প্যাম.কম তৈরি করার জন্যে কাজ করছেন যা হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফেসবুকে ছড়িয়ে যাওয়া নকল বার্তা সনাক্ত করতে সাহায্য করবে। এই উদ্যোগটির উদ্দেশ্য মিথ্যা এবং বিদ্বেষমূলক তথ্যের বিস্তার রোধ এবং “সাধারণ মানুষের জীবন সহজ এবং স্প্যাম প্রস্তুতকারীদের জীবন কষ্টকর করা।”

নতুন গবেষণা

 

ইমেলের মাধ্যমে নেটিজেন প্রতিবেদন পাওয়ার জন্যে গ্রাহক হোন

 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .