এশিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে নারীদের সৌন্দর্য বলতে ফর্সা ত্বককে বুঝিয়ে থাকে। এসব দেশে রং ফর্সা করা ক্রিমের রমরমা ব্যবসা রয়েছে। কোম্পানিগুলো ‘কালো চামড়া ফর্সার করার মাধ্যমে নারীরা আরো বেশি আকর্ষণীয় এবং প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে’ এই বার্তা দিয়ে পণ্য বিক্রি করে।
আনফেয়ার অ্যান্ড লাভলি প্রচারাভিযান রং ফর্সা করার কোম্পানিগুলোর এই বার্তাকেই চ্যালেঞ্জ করেছে। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, টাম্বলারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিষয়টি বেশ আলোচিত হচ্ছে। প্রচারাভিযানে উদ্বুদ্ধ হয়ে শ্যামবর্ণের নারীরা তাদের সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। এই প্রচারাভিযানের শুরু আমেরিকাতে। একটি ফটোশ্যুটের সময়ে। ক্যামেরার পিছনে ছিলেন প্যাক্স জোনস। আর মডেল ছিলেন শ্রীলঙ্কান বংশদ্ভূত মিরুশা এবং ইয়ানুশা। তারা তিনজনই টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
তারা সৌন্দর্য বলতে গায়ের ফর্সা রংয়ের ধারনাকে চ্যালেঞ্জ করে অনলাইনে একটি ছবি পোস্ট দেন। ছবিতে তারা #আনফেয়ারঅ্যান্ডলাভলি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেন।
এ ঘটনার পরেই এই প্রচারাভিযান শুরু হয়ে যায়। শ্যামবর্ণের অধিকারী জোনস এক সাক্ষাৎকারে জানান, “গাত্রবর্ণের এই মাত্রাতিরিক্ত ব্যাপারটি কীভাবে বৈশ্বিক প্রপঞ্চে পরিণত হলো এবং আমার চেয়ে যারা আলাদা তাদের ওপর কতটা প্রভাব ফেলে সেটা আমি খুঁজে দেখতে চেয়েছিলাম।“
My friend's mom used to do this and it made me so sad. There's beauty in all shades #unfairandlovely⚡️https://t.co/UYCSI8p40U
— Count VanDerMattson (@VanDerMattson) February 28, 2016
আমার বন্ধুর মা এটা প্রায়ই করতো। আর এটা আমাকে খুব আহত করতো। যদিও সবকিছুর মধ্যেই সৌন্দর্য লুকিয়ে রয়েছে।
গাত্রবর্ণ নিয়ে এর আগেও নানা ধরনের আন্দোলন হয়েছে। ভারতে প্রসাধনী কোম্পানি ইমামীর ফেয়ার অ্যান্ড হ্যান্ডসাম ক্রিমের একটি বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে পিটিশন করা হয়েছিল। ওই বিজ্ঞাপনটিতে শ্যামবর্ণের অধিকারীরা হ্যান্ডসাম নয়, সেজন্য তাদের ফর্সা হওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এছাড়া ২০১৩ সালে ডার্ক ইজ বিউটিফুল নামের আরেকটি ক্যাম্পেইন পরিচালিত হয়েছিল (গ্লোবাল ভয়েসেস প্রতিবেদন দেখুন)। সে ক্যাম্পেইনেরও মূল উপজীব্য বিষয় ছিল, শ্যামবর্ণ নিয়ে যে বাজে ধারনা, সেটার বিরোধীতা করা। ওই বছরই অ্যাডভারটাইজিং স্ট্যান্ডার্ড কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া রং ফর্সাকারী ক্রিমের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করে।
এদিকে আফ্রিকান দেশ আইভরি কোস্ট দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে ত্বকে ক্ষতি হওয়ার কারণে রং ফর্সাকারী ক্রিম নিষিদ্ধ করেছে।
#আনফেয়ারঅ্যান্ডলাভলি হ্যাশট্যাগ দিয়ে অনেক নারী তাদের সেলফি টুইটারে শেয়ার করেছেন:
when people pick on girls w/darker skin but fail to realize our glo provides light for this society #UNFAIRANDLOVELY pic.twitter.com/5U6qgUwu56
— Tina Elaine (@sipstina) February 28, 2016
মানুষজন গায়ের চামড়ার রং অনুযায়ী নারীদের বাছাই করে। তবে আমাদের সৌন্দর্যের দ্যুতি সমাজকে আলোকিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
I'm #brown or bust. Love ur skin, ur hair, all of it. #brownandunbothered #unfairandlovely #stayunfair pic.twitter.com/UTqNbyw4mO
— Sangeetha (@fallenvirgo) February 29, 2016
আমি শ্যামবর্ণ অথবা বুকসর্বস্ব। আপনার ত্বক, চুল সবকিছুই ভালো বাসুন।
be comfortable in your skin, dont let the media tell u the definition of beauty #unfairandlovely pic.twitter.com/pTOW0qMrLt
— rosie (@myboyjimin) February 28, 2016
আপনার ত্বক যাই হোক না কেন, সন্তুষ্ট থাকুন। নিজের সৌন্দর্য নিয়ে মিডিয়াকে গৎবাঁধা গল্প করার সুযোগ দিয়েন না।
No matter what shade of brown you are, you're beautiful. S/O to the #UNFAIRANDLOVELY! I love myself. 👍🏾🙌🏾 pic.twitter.com/7oppsjjJFl
— Davika (@DavikaStaar) February 28, 2016
গায়ের রং যাই হোক না কেন আপনি সুন্দর। আনফেয়ারঅ্যান্ডলাভলি থাকুন। আমি নিজেকে ভালোবাসি।
#unfairandlovely: lankans, bangladeshis, s. indians who never fit hegemonic n.indian + colonized concepts of beauty pic.twitter.com/8KkYf008wL
— Ushka (Thanu) (@ty_ushka) March 9, 2016
#আনফেয়ারঅ্যান্ডলাভলি: লংকান, বাংলাদেশি, দক্ষিণ ভারতের মানুষজন উত্তর ভারতের আধিপত্যবাদী ও ঔপনিবেশিক সৌন্দর্যের সংজ্ঞায় খাপ খাবে না।
Hashtag humour: #UnfairAndLovely
A sarcastic reaction to the colourism experienced by S.E. Asian women. pic.twitter.com/SFfIDdiQJi
— Femi Oke (@FemiOke) February 28, 2016
হ্যাশট্যাগ কৌতুক: #আনফেয়ারঅ্যান্ডলাভলি
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নারীর গাত্রবর্ণের অভিজ্ঞতার একটি কৌতুককর প্রতিক্রিয়া।
কিছু পুরুষও প্রচারাভিযানে যোগ দিয়েছিলেন:
I was always told it was better to be lighter, but no this is my skin and I love it #unfairandlovely pic.twitter.com/R3Cr8c3TAD
— S. Casanova (@LuchadorChris) February 27, 2016
আমি সবসময় বলে এসেছি, ফর্সা হওয়া ভালো। তবে এটা ঠিক নয়। আমার গায়ের রং এমন। আমি এটিকেই ভালোবাসি।
I learnt to love myself too☺ #UNFAIRANDLOVELY #BROWNANDUNBOTHERED pic.twitter.com/tZ1wuv4WZ5
— Aqib (@Tumharaabbu) February 27, 2016
আমি নিজেকে ভালোবাসতে শিখেছি।
প্রচারাভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ভারতীয় ইউটিউব তারকা দ্য টেকি তানক্রিকা একটি ভিডিও আপলোড করেছেন। সেখানে তিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন।
ভিডিওতে তিনি সৌন্দর্যের ইউরোপিয়ান ধারনার সমালোচনা করেছেন: “ইউরোপিয়ান দৃষ্টিতে ভিন্ন জাতিকে কেন দেখতে চায়, আমি সেটাই বুঝি না। আমার কাছে এর কোনো মানে নেই।“
প্যাক্স জোনস হাফিংটোন পোস্টকে জানিয়েছেন, এই প্রচারাভিযানের মাধ্যমে ব্যাপক পরিসরে সবাইকে জায়গা করে দিতে চেয়েছেন:
It is for the dark-skinned queer, trans, genderqueer, non-binary, poor, fat, differently abled people of colour.
কালো চামড়ার কুইয়ার, ট্রান্সজেন্ডার, জেন্ডারকুইয়ার, নন-বাইনারি, দরিদ্র, মোটা সব গাত্রবর্ণের মানুষের জন্যই এই প্রচারাভিযান।
গাত্রবর্ণের ধারনা নিয়ে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করতে এবং দক্ষিণ এশিয়ার মানুষদের যে গর্ব করার মতো সংস্কৃতি রয়েছে, সেটা নিয়ে উৎসাহী করতে আনফেয়ারঅ্যান্ডলাভলি প্রচারাভিযানের পক্ষ থেকে রিক্লেইম দ্য বিন্দি নামের একটি ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়। মার্চের ৮-১৪ তারিখে রিক্লেইম দ্য বিন্দি সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হয়।