
ইয়েমেনের রাজধানী সানায় ব্যাপক গোলাবর্ষণ চলছে। ফেসবুকে ছবিটি শেয়ার করেছেন আলা আল-ইরয়ানি। তিনি লিখেছেন, এটা আমাদের বাসার কাছেই। জায়গাটার নাম ফাজ আত্তান। চিন্তা-ই করতে পারছি না সন্ত্রাসবাদের মধ্যে আমার পরিবার ও বন্ধুরা কেমন করে দিন কাটাচ্ছে…।
ইয়েমেনের যুদ্ধে মিশর স্থল সেনা পাঠাচ্ছে। তবে দেশটির সাধারণ জনগণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের অসম্মতির কথা জানিয়েছেন।
গত মাসের ২৬ তারিখ থেকে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিয়ে মিশর ইয়েমেনে বিমান হামলায় অংশ নিচ্ছে। এখন দেশটি স্থল সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। আরব জোটে সৌদি আরব ছাড়াও মিশর, জর্দান, মরক্কো, সুদান এবং পাকিস্তান রয়েছে। জোটটি হুতি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিমান হামলা পরিচালনা করছে। উল্লেখ্য, গত জানুয়ারি থেকে হুতি বাহিনী ইয়েমেনের বিরাট অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে।
মিশরের অনেক নেটিজেন পাঠকদের একটি ফাঁস হওয়া কথোপকথনের কথা স্মরণ করে দিয়েছেন। ফাঁস হওয়া ওই কথোপকথনটি মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি’র। যেখানে তিনি অর্থের জন্য যুদ্ধে যাওয়ার কথা বলেছেন।
তারা তুলনা করে এমন কথাও বলছেন, সৌদি নেতৃত্বাধীন ইয়েমেন যুদ্ধে মিশরের সৈন্যরা চালের বিনিময়ে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করবেন।
মিশরীয় ব্লগার নাওয়ারা নাগম তার ৭৫৯০০ অনুসরণকারীদের জানিয়েছেন:
ولو انت ماعندكش مشكلة اخلاقية مع العدوان وقصف الاطفال ما عندكش مشكلة كمان مع موت جنودك قصاد الرز؟ #لا_لتدخل_مصر_البري_في_اليمن
— يا رب انت عارف بقى (@nawaranegm) April 5, 2015
যুদ্ধ নিয়ে আপনার যদি নৈতিক সমস্যা না থাকে, শিশু হত্যা নিয়ে কোনো বিকার না থাকে, তাহলে চালের বিনিময়ে সৈন্যদের মৃত্যু নিয়েও আপনার কিছু যায় আসে না।
তিনি আরো বলেন:
ونروح نموت، وفي الاخر نتعاير بالرز اللي ما دخلش جيب ولا عيل من العيال اللي حتنزل بري #لا_لتدخل_مصر_البري_في_اليمن
— يا رب انت عارف بقى (@nawaranegm) April 5, 2015
আমরা যুদ্ধে যাবো, শহীদ হবো। আর দিন শেষে তারা চাল নিয়ে আমাদের সাথে মজা করবে।যদিও এই চাল যারা যুদ্ধে গেছেন, তাদের কাছে পৌঁছাবে না।
অন্য একটি টুইটে নাগম বিস্ময় প্রকাশ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সংসদ কেন জড়িত নয় সেটা জানতে চেয়েছেন:
طالما التجنيد اجباري والمواطنين مشاركين فيه بعيالهم، يبقى لهم حق يشاركوا برأيهم عيالهم تموت ولا لا من خلال برلمان ولا حتى استفتاء
— يا رب انت عارف بقى (@nawaranegm) April 5, 2015
রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান যেমন বাধ্যতামূলক এবং সেখানে যারা যোগ দেন, তাদের সাথে সাধারণ মানুষও জড়িত। তাই তাদের অধিকার আছে এ বিষয়ে মতামত দেয়ার। তারা বাঁচবে না মরবে তা সংসদ কিংবা গণভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
তারপরে সরকারি মিডিয়া যুদ্ধ নিয়ে যে প্রচারণা চালাচ্ছে, সেটা তিনি তুলে ধরেছেন:
وخلاص احنا حفظنا الخطوات: تأهيل اعلامي، اللي يعترض يبقى خاين وعميل وجاسوس، حبس شوية ناس، يعمل اللي هو عايزه
— يا رب انت عارف بقى (@nawaranegm) April 5, 2015
আমরা মিডিয়ার কার্যক্রম সম্পর্কে জানি: মিডিয়া তাদেরকে বিশ্বাসঘাতক, বিদেশী এজেন্ট এবং গুপ্তচর লেবেল দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে কিছু লোককে গ্রেফতার করবে। তারপর তিনি যা চান, সেটাই করবেন।
নাগম সিসি’র নাম উল্লেখ না করলেও তার পরের টুইটগুলোতে তিনি যে সিসিকেই বলছেন, তা স্পষ্ট হয়েছে:
طلع قوانين، واخد قروض حنتبدس فيها حتى بعد ما هو يموت، ودخل حرب، من غير مشورة اي حد، وكمان يبعت الناس تموت بغير استشارتهم
— يا رب انت عارف بقى (@nawaranegm) April 5, 2015
তিনি আইনি বিধিনিষেধ জারি করেছেন, ঋণ নিয়েছেন। তার মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের সে ঋণ শোধ করে যেতে হবে। কারো পরামর্শ না নিয়েই আমাদের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হবে। এখন তিনি সৈন্যদের অনুমতি না নিয়েই তাদেরকে যুদ্ধের ময়দানে মরতে পাঠাচ্ছেন।
তিনি উপসংহার টেনে বলেন:
هو مش من حقه ياخد عيال الناس يرميهم في اليمن من غير موافقة مجلس شعب ولا حتى استفتاء
— يا رب انت عارف بقى (@nawaranegm) April 5, 2015
সংসদের অনুমোদন কিংবা গণভোট ছাড়া তার কোনো অধিকার নেই লোকজনদের ইয়েমেনে যুদ্ধ করতে পাঠানোর।
আদেল জিদানে ইয়েমেনে মিশরের হস্তক্ষেপকে “ওয়ার অব ওয়েল ইন রিটার্ন ফর ব্লাড” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি তার টুইটে লিখেন:
لا لحرب يحركها منظور النفط مقابل الدماء #لا_لتدخل_مصر_البري_في_اليمن
— عادل زيدان (@zidane200882) April 5, 2015
রক্তের বিনিময়ে তেলের জন্য এই যুদ্ধ চলতে পারে না।
ইয়েমেনের যুদ্ধে মিশরের অংশগ্রহণ পুরোনো স্মৃতিকে ফিরিয়ে এনেছে। আর সেটা উত্তর ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ (১৯৬২-১৯৭০)। সে যুদ্ধে ইয়েমেনের পক্ষে মিশর ও রাশিয়া ছিল। অন্যদিকে ব্রিটেন সমর্থিত জোটে ছিল সৌদি আরব ও জর্দান। তখন তাদের হয়ে লড়েছিলেন ইমাম মুহাম্মদ আল বদর। তিনি জোটের সমর্থনে সৌদি আরবে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সেবারের যুদ্ধে মিশরের কয়েক হাজার সৈন্য নিহত হয়েছিলেন।
ইয়েমেনের নাগরিক আম্মার আল আওলাকি আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন:
“Yemen is my Vietnam, I sent a company there and ended up reinforcing it with 70,000 troops.” Gamal Abdel Nasser 1967 pic.twitter.com/YopUEUAVX9
— Ammar Al-Aulaqi (@ammar82) April 5, 2015
“ইয়েমেন আমার ভিয়েতনাম। আমি সেখানে ৭০,০০০ সৈন্য পাঠিয়েছি, যারা শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে।” গামাল আবদেল নাসের ১৯৬৭
নাগমও তার অনুসরণকারীদের স্মরণ করে দিয়েছেন:
اليمن دي اسمها التاريخي "فييتنام مصر" احنا حنتخيط، احنا مش عارفين نتصرف في سينا حنتصرف في اليمن؟
— يا رب انت عارف بقى (@nawaranegm) April 5, 2015
ঐতিহাসিকভাবেই ইয়েমেন মিশরের ভিয়েতনাম হিসেবে পরিচিত। আমরা ইয়েমেনে যখন কিছু একটা করছি, তখন জানতে পারছি না সিনাইয়ে কী করতে হবে।
মিশরের সেনারা সিনাইয়ে সন্ত্রাসবাদীদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। এদের মধ্যে স্টেট অব সিনাই নামের একটি জিহাদি গোষ্ঠীও রয়েছে। আইএসআইএস-এর সাথে জোট গঠনের পূর্বে এরা আনসার বায়াত আল-মাকদিস (এবিএম) নামে পরিচিত ছিল।
এই অঞ্চলে আবার নতুন করে কেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লো সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মিশরের কারমেন ওয়ান্ডার্স:
#لا_لتدخل_مصر_البري_في_اليمن #لا_لتدخل_الجيش_المصرى_فى_اليمن سينا مليانه ارهاب وداعش فى فى ليبيا .. بتفتحوا علينا جبهات تانيه ليه مش حملها ؟
— كارمن (@Rihamzad) April 5, 2015
মিশর যে ইয়েমেনের কাছ থেকে ভুমি উদ্ধারের জন্য আক্রমণ করেছে, তা কিন্তু নয়। সিনাই এখন জঙ্গীদের আখড়া গেছে। লিবিয়ায় আইএসআইএস’রা পৌঁছে। এই পরিস্থিতিতে তারা কেন আরেকটা নতুন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে। এটা কি তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে?
তিনি আরো বলেন:
#لا_لتدخل_مصر_البري_في_اليمن #لا_لتدخل_الجيش_المصرى_فى_اليمن ماتزودوش فاتوره الدم الى البلد دى بتدفعها كل يوم ..من حقنا نخاف على جيشنا
— كارمن (@Rihamzad) April 5, 2015
যে দেশটিতে এমনিতেই প্রতিদিন রক্ত ঝরছে, সেখানে নতুন করে আর রক্ত ঝরানোর মানে নেই। সেনাবাহিনী নিয়ে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশের অধিকার আছে।
মিশরের নাগরিক হামদি মানসুর বলেন:
#لا_لتدخل_مصر_البري_في_اليمن بيقولك علشان الجنود الغلابة المصرين ..! طب جوي و الغابة المدنيين بتوع اليمن ..! دوال عادي شعب يموت يعيش مش قضية
— انا منصور حمدي شخصيا (@mansourhamdy2) April 5, 2015
তারা আপনাকে বলবে, তারা স্থলপথে ইয়েমেন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। আর তাই মিশরের সৈন্যরা মারা পড়বেন না। তাহলে আকাশ থেকে বোমা মেরে ইয়েমেনের সাধারণ মানুষকে হত্যার বিষয়টি কী হবে! অবশ্যই এটা সাধারণ একটি ব্যাপার। সেখানে কেউ মারা গেল, না বেঁচে থাকলো তাতে কিছু যায় আসে না।
লেবাননের রিয়েনা জালাল পুরো পরিস্থিতির একটি উপসংহার টেনে তার ১৩১০০ অনুসরণকারীর উদ্দেশ্যে লিখেছেন:
تدخلها الجوي عادي
والناس الي عم تموت جراء قصف طيرانها عادي؟
لكن التدخل البري يعني مقتل جنود مصريين.. يا للعار
#لا_لتدخل_مصر_البري_في_اليمن
— riena (@ro_jalal) April 5, 2015
আকাশ পথে আক্রমণ খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।
আকাশ থেকে ফেলা বোমায় সাধারণ মানুষের মৃত্যু স্বাভাবিক?
আর স্থলপথে মিশরের সৈন্যদের আক্রমণ মানে তাদের মৃত্যু। কী লজ্জার কথা!
বাহরাইন থেকে @আইবান্না৭৪ তার ২,০০০ অনুসরণকারীকে মনে করিয়ে দিয়েছেন:
#لا_لتدخل_مصر_البري_في_اليمن
لما ولاد مصر ترجع في توابيت اوعو تقولو عليهم شهدا دول بيحاربو علشان فلوس الخليج
— عاشقة البحرين (@lbanna74) April 5, 2015
কফিনে করে মিশরের সৈন্যরা যখন ফিরবে, তাদের তখন শহীদ হিসেবে ডাকবেন না। তারা মারা গেছেন উপসাগরীয় অঞ্চলের নগদ টাকার লোভে।
মিশরের স্থলপথে ইয়েমেন আক্রমণকে না বলুন হ্যাশট্যাগে আরো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে।
আরো জানতে দেখুন:
মিশরের ভিয়েতনাম: ইয়েমেনে কায়রো’র সর্বশেষ আক্রমণ থেকে শিক্ষা নেয়ার আছে