আর এক সপ্তাহ পরে আফগানিস্তানে নির্বাচন। এবারই প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতার পালাবদল ঘটছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও বোমা বিস্ফোরণ এবং বন্দুকযুদ্ধ হচ্ছে। এসব ঘটনায় ইতোমধ্যে অনেকের প্রাণহানি ঘটেছে। এদিকে তালিবান জঙ্গিরা ৫ এপ্রিলে অনুষ্ঠিতব্য রাষ্ট্রপতি এবং প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন বানচাল করতে বোমা হামলা এবং গুপ্ত হত্যা চালাচ্ছে।
গত ২৯ মার্চ চার তালিবান জঙ্গি কাবুলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয় আক্রমণ করলে তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়। যদিও এর আগের দিন ২৮ মার্চে তালিবানরা একটি গেস্ট হাউজ আক্রমণ করে। এতে এক শিশু মারা নিহত হয়। ২১ মার্চে তালিবান জঙ্গিরা কাবুলের সারেনা হোটেল আক্রমণ করে। এই হামলায় নয়জনের প্রাণহানি ঘটে। নিহতদের মধ্যে এএফপি'র সাংবাদিক সদর আহমাদ এবং একজন নির্বাচন পর্যবেক্ষক রয়েছেন।
জঙ্গি হামলার মধ্যে আফগানদের দৈনন্দিনের জীবনযাপন স্বাভাবিক আছে। নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয় আক্রমণের পরে সৈয়দ আনোয়ার টুইট করেন:
Despite 5 hours fighting, attack on #IEC still #Kabul is shining, life is normal. pic.twitter.com/iSOR62FH1v
— Syed Anwar (@Sayed_Anwer) March 29, 2014
৫ ঘণ্টা ধরে বন্দুক যুদ্ধ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কার্যালয় আক্রমণ সত্ত্বেও কাবুলের অবস্থা স্বাভাবিক আছে। মানুষ যার যার কাছে ব্যস্ত রয়েছে।
মাসুদ সানজার টুইট করেছেন:
Two attacks at the same time. Kabul and Kunar. Kabul bank branch in Kanur and IEC office in Kabul. Firing continues. — Massood Sanjer (@MassoodSanjer) March 25, 2014
একই সময়ে দুটি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। কাবুল এবং কুনারে। একটি কুনারের কাবুল ব্যাংকের শাখা অফিস, অন্যটি কাবুলে নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়। এখনো আগুন জ্বলছে।
মুস্তাফা কাজেমি সরদার আহমাদের ভাতিজার টুইটের উদ্ধৃতি দিয়েছেন:
Sardar Ahmad's nephew: “I have no message for the Taliban. One can communicate with humans but not with animals.” — LT. Mustafa Kazemi (@combatjourno) March 22, 2014
সরদার আহমাদের ভাতিজা: তালিবানদের কাছে আমার কোনো বার্তা নেই। মানুষের সাথেই শুধু কথা বলা যায়, পশুদের সাথে নয়।
শুক্রবারে গেস্টহাউজ আক্রমণের ঘটনায় ক্ষেপে গেছেন আফগান সাংবাদিক লিনা রোজবিহ-হায়দারি। তিনি তার অফিসিয়াল ফেসবুকে লিখেছেন:
When claiming responsibility for terrorist attacks, Taliban reason that they are targeting foreigners. While looking at pictures of today's incident, I saw these foreigners, including unarmed women and children, who mostly work for humanitarian organizations and live with their families in these guesthouses.
This is Taliban's jihad: targeting unarmed Afghan and foreign women and children in hotels, polling stations, bazars, schools, mosques, during praying, during work……..
Can wars be fought more cowardly than this? Indeed Afghanistan has fallen into the hands of a hypocrite, weak, immoral and irrational enemy. They call it Islam. Be brave enough and fight bravely! Not cowardly by killing innocent and defenseless women, men and children.
সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের পিছনে তালিবানরা যুক্তি দেখায়, তারা শুধু বিদেশীদের আক্রমণ করে। আজকেও তাদের আক্রমণের ছবি দেখতে পেলাম। হ্যাঁ, তারা বিদেশী। কিন্তু এর মধ্যে নিরস্ত্র নারী এবং শিশুও রয়েছে। তারা বেশিরভাই মানব কল্যাণে ব্রত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। তারা পরিবার নিয়ে এই গেস্টহাউজেই বসবাস করতেন।
এটাই তালিবান জিহাদ: হোটেলে, নির্বাচন কার্যালয়ে, বাজারে, স্কুলে, মসজিদে, নামাজের সময়ে, কাজের সময়ে নিরস্ত্র আফগান এবং বিদেশী নারী-শিশুদের ওপর আক্রমণ করা…
এর চেয়ে কাপুরুষিক যুদ্ধ আর কী হতে পারে? আসলে আফগানিস্তান একটি ভণ্ড, দুর্বল, অনৈতিক এবং যুক্তিহীন শত্রুর হাতে পড়েছে। তারা একে ইসলাম বলে অভিহিত করছে। যথেষ্ট সাহসী হতে হবে এবং সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করতে হবে! কাপুরুষের মতো নিষ্পাপ ও নিরস্ত্র নারী, পুরুষ ও শিশুদের হত্যা করে নয়।
গার্ডিয়ানের আফগানিস্তান প্রতিনিধি ইমা গ্রাহাম-হ্যারিসন নির্বাচন কমিশন কার্যালয় আক্রান্ত হওয়ার পর টুইট করেন:
Afghan election commission headquarters under attack, their spokesman says from inside safe room. Fourth Kabul attack in 10 days
— Emma Graham-Harrison (@_EmmaGH) March 29, 2014
আফগানিস্তানের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় আক্রান্ত হয়েছে। তবে তাদের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভিতরের রুমগুলো নিরাপদ। ১০ দিনে চতুর্থবারের মতো কাবুল আক্রান্ত হলো।
সামনের দিনগুলোতে তালিবানরা কোথায়, কাকে আক্রমণ করবে, তা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। মারজিয়া ফারাজ টুইট করেছেন:
First int'l observers in #HotelSerena, then #IEC regional office, foreigners at the guesthouse now #IEC HQ, what could be the next target?
— Marzia Faraz (@Marzofaraz) March 29, 2014
প্রথমে হোটেল সেরেনার আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকগণ, তারপর আঞ্চলিক নির্বািচনী কার্যালয়, এরপরে গেস্টহাইজে অবস্থানরত বিদেশীরা এবং নির্বাচন কমিশনে প্রধান কার্যালয়ে আক্রমণ হলো। এর পরে কোনটি আক্রমণের লক্ষ্য হচ্ছে?
সেরেনা হোটেল আক্রান্ত হওয়ার পর আরেকটি ক্ষুব্ধ টুইট:
Karzai, NDS, and Kabul Serena security must answer for the killing of #SardarAhmad … The screams of his family still in my head.
— Gharghasht (@Gharghasht) March 22, 2014
কারজাই, এনডিএস এবং সেরেনা হোটেলের নিরাপত্তা রক্ষীদেরকে সরদার আহমাদ হত্যার জবাব দিতে হবে। তার পরিবারের দু:সহ বেদনা এখনো আমার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
অতীতে আফগানিস্তানে যতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেসময়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সচেতনতা দেখা যায়নি। তবে ২০১৪ সালের পরিস্থিতি ভিন্ন। প্রার্থীরা জানপ্রাণ দিয়ে খেটে সাধারণ জনতার কাছে পৌঁছাতে চেষ্টা করছেন। এক প্রদেশ থেকে আরেক প্রদেশ চষে বেড়াচ্ছেন। সারাদেশ নির্বাচনী পোস্টারে ছেয়ে গেছে। হাজার হাজার আফগান নাগরিক টেলিভিশনে প্রার্থীদের বিতর্ক উপভোগ করছেন। নিরাপত্তাহীনরা আর নির্বাচনী কারচুপির আশংকা সত্ত্বেও আফগান নাগরিকরা আশা করছেন, প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আহমেদ শুজা টুইটারে একটি ছবি শেয়ার করেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, আফগানরা ভোটার কার্ড পেতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে।
সম্প্রতি ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন ফাউন্ডেশন অব আফগানিস্তান নির্বাচন নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। সেটা নিয়ে ফারজাদ লামি নামের এক আফগান সাংবাদিক টুইট করেছেন:
Despite of security concerns 75% of Afghans want to participate in presidential elections scheduled for April 5. A new survey indicates.
— Farzad Lami (@FarzadLameh) March 26, 2014
নিরাপত্তা নিয়ে শংকা থাকলেও ৫ এপ্রিলে অনুষ্ঠিতব্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ৭৫% মানুষ ভোট দিতে যাবেন। নতুন একটি জরিপে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
লুত্ফুল্লাহ নাজাফিজাদা একজন নতুন ভোটারের বক্তব্য টুইট করেছেন:
“My best weapon to fight the Taliban is my voter card,” said first-time-voter Ahmad, calling on Afghans to get armed with voter cards now.
— Lotfullah Najafizada (@LNajafizada) March 29, 2014
“তালিবানদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে রক্ষাস্ত্র হলো আমার ভোটার কার্ড”- বলেছেন প্রথমবারের মতো ভোটার হওয়া আহমাদ। তিনি ভোটার কার্ডকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য আফগানদের প্রতি আহবান জানান।
মার্শাল ওলজাইতু টুইট করেছেন: :
#Kabul: 5 attacks in 8 days. Desperate Taliban. High turnout in the Afghan election will be the public's verdict against Taliban.
— Marshal Öljaitü (@aushpaz) March 30, 2014
কাবুল: ৮ দিনে ৫ বার আক্রমণ হয়েছে। তালিবানরা মরিয়া। আফগান নির্বাচনে সাধারণ জনতা ব্যাপক হারে তালিবানদের বিরুদ্ধে রায় দিবে।
আসন্ন নির্বাচনে জঙ্গি আক্রমণ নিয়ে কিছু প্রার্থী তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি প্রার্থী আশরাফ গণি আহমাদজাই টুইট করেছেন:
We condemn the terrorist attacks on civilians. It gives us more reasons to work harder for ensuring a better and peaceful future for Afghans
— Ashraf Ghani (@ashrafghani) March 29, 2014
আমরা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সন্ত্রাসবাদী হামলার নিন্দা জানাই। এই হামলার ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শান্তিপূর্ণ এবং সুন্দর আফগানিস্তানের জন্য আমাদের কঠোরভাবে পরিশ্রম করতে হবে।
উপ রাষ্ট্রপতি প্রার্থী আবদুল রশীদ দোস্তম একটি টুইটে বলেছেন, আসন্ন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে। কারণ, আফগানরা এই নির্বাচনের উপরে গভীর বিশ্বাস স্থাপন করেছে।
Enemies of Afghan people won't succeed in their inauspicious deeds. People are committed for elections.
— Abdul Rashid Dostum (@ARashidDostum) March 25, 2014
আফগানিস্তানের শত্রুদের অশুভ উদ্যোগ সফল হবে না। জনগণ নির্বাচন নিয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
হামলার নিন্দা জানিয়ে ক্যাম্পেইন টিমের জালমাই রসুল টুইটারে পোস্ট করেছেন:
We strongly condemn yesterday’s #Insurgent attack on Kabul Serena Hotel and today’s explosion in Khakrez district of Kandahar province.
— Dr. Zalmai Rassoul (@Zalmai_Rassoul) March 21, 2014
গতকালের কাবুল সেরেনা হোটেল হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আজকে কান্দাহার প্রদেশের খাকরেজ শহরেও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
আফগানিস্তানের ব্যর্থ রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করতে অসম্মতি জানিয়েছেন। এদিকে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভোটের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়কে প্রতিকুল করে তুলেছে। তালিবান আক্রমণের শিকারদের মধ্যে প্রাদেশিক পরিষদের প্রার্থী, বিদেশী এনজিও কর্মী, নির্বাচন কমিশনের কর্মীও রয়েছেন।