আমাদের এই পোস্ট আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশেষ কভারেজ এর অংশ।
বর্তমান সময়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পদছাপ রেখে গেলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কট্টর সমালোচক এবং লাতিন আমেরিকায় সমাজতন্ত্র পুনর্জাগরণের নেতা হুগো শাভেজ ফ্রিয়াস। কিন্তু তার উত্তরাধিকার হিসেবে তিনি কী রেখে গেলেন?
হুগো শাভেজের মৃত্যুতে ভেনিজুয়েলা এখন শোকগ্রস্ত। তবে এর মধ্যেই চলছে নতুন নির্বাচনের প্রস্তুতি ও প্রচারণা। তিনি লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে যে প্রভাবশালী নেতৃত্ব তৈরি করেছিলেন ভবিষ্যতে এই রাজনৈতিক সম্পর্ক কেমন হবে সেটা নিয়ে সবাই আলোচনা করছেন।
অ্যান্টোনিও জে ভ্যাজকুয়েজ প্যাসিম ব্লগে লিখেছেন:
প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাদুরো আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলো তেমন একটা হেরফের করবেন না। তাছাড়া আঞ্চলিক এবং আন্ত:মহাদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তেমন একটা পরিবর্তন আসবে না। যতোদিন তেল এবং অর্থ আছে, ততোদিন লাতিন আমেরিকার ওপর ভেনিজুয়েলার প্রভাব আগের মতো একই থাকবে। ভেনিজুয়েলা কিউবার কাছে উপহারের দামে তেল বিক্রি করেই যাবে। তাছাড়া এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের কাছে [রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে] প্রাধিকারমূলক দামে তেল বিক্রি করবে।
ভেনিজুয়েলার এইসব কাজের সাথে থেকে হাভানা স্বাগত জানাবে। বর্তমানে লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের ২২টি দেশ পেট্রোক্যারাইব প্রোগ্রামের আওতায় ভেনিজুয়েলা থেকে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি এবং কম দামে তেল পেয়ে বেশ উপকৃত হচ্ছে। দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে বিধ্বস্ত দেশ হাইতিও রয়েছে।
আমেরিকাবিরোধী অবস্থানের সাথে সাথে শাভেজ পুরো লাতিন আমেরিকাকে একত্রিত করার জন্য কাজও করেছেন। এ ধরনের কাজের মধ্যে রয়েছে দ্য কমিউনিটি অব লাতিন আমেরিকান অ্যান্ড ক্যারিবিয়ান স্টেটস (সিইএলএসি) এবং দ্য বলিভারিয়ান অ্যালায়েন্স ফর দ্য পিপলস অব আওয়ার আমেরিকা (এএলবিএ) গঠন। এই দুই সংস্থা গঠনের মধ্যে দিয়ে শাভেজ এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছেন। এখন প্রশ্ন হলো মাদুরো বা অন্য কোনো রাজনৈতিক নেতা কী পারবেন শাভেজের উত্তরাধিকারী হয়ে এই অঞ্চলকে যোগ্যভাবে নেতৃত্ব দিতে?
গত ১৪ বছর ধরে শাভেজের নেতৃত্বে বলিভারিয়ান প্রক্রিয়ার সমর্থক মানু গার্সিয়া শাভেজ সময়কালের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই পরিবর্তন চান:
যদিও এই পরিবর্তন প্রক্রিয়া অত্যাধিক ব্যক্তিকরণকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। বলিভারিয়ান প্রক্রিয়া যৌথ নেতৃত্বকে সংহত করবে যদি তা না মৃত উত্তরাধিকারের জন্য সংগ্রাম করে প্রাণ দেয়ার অভিপ্রায় কেউ প্রকাশ করেন। বলিভারিয়ানদের শুধুমাত্র মুখোশ ও শাভেজম এর চেয়ে বাস্তবমুখী চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।
আরো কিছু সংশয়ও রয়েছে, যা ঘটতে পারে। কার্লোস মালামুদ নামের দ্য রিয়েল ইনস্টিটিউটো অ্যালাকানোর একজন গবেষক সারসংক্ষেপ টেনেছেন:
চে গুয়েভারা অথবা সিমন বলিভারের মতো মৃত্যুর পর হুগো শাভেজকে নিয়েও মহাদেশীয় নতুন নতুন উপকথার জন্ম হবে। সেগুলো কোনো সমস্যা না। তবে, এই স্মৃতিকথার পিছনে এটা পরিষ্কার যে শাভেজের মহাদেশীয় নেতৃত্ব কারো কাছে হস্তান্তরযোগ্য নয়। বর্তমান সময়ে লাতিন আমেরিকায় হুগো শাভেজের মতো ক্যারিশমা আর কারো নেই। তার মতো ঐশ্বর্য এবং জনপ্রিয় এজেন্ডা নিয়ে কেউ তার স্থান নিতে পারবে না।