এই পোস্টটি আমাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কভারেজের অংশ।
এই বছরের এপ্রিল মাসে মিশরের সিনাই উপদ্বীপ থেকে পর্যটন শহর এলিয়াতকে লক্ষ্য করে রকেট ছোঁড়া হয় বলে একে “এক ধরনের বুনো পশ্চিম” বলে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু খেতাব দিয়েছেন। নেতানিয়াহুর মতে, ইরানের মদদে ইসলামী জঙ্গিরা অস্ত্র পাচারের জন্যে উপদ্বীপটিকে ব্যবহার করছে ইজরায়েলের উপর পরিচালনা করার জন্যে। আগষ্ট মাসে ইসলামী জঙ্গিদের আক্রমণে ১৬জন মিশরীয় সীমান্ত রক্ষী নিহত হয়েছে। এটি জুন মাসে মুসলিম ব্রাদারহুড প্রার্থী মোহাম্মদ মোর্সি মিশরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে হিংসাত্মক ঘটনার অন্যতম একটি ধারাবাহিকতা।
মুবারকের শাসনের পতনের পর থেকে মিশরকে ইজরায়েল এবং ফিলিস্তিনের সঙ্গে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নতুন করে ঠিক করে নিতে হয়েছে। আগস্ট মাসের আক্রমণটি মিশরের নিরাপত্তা নীতির একগুচ্ছ নির্দিষ্ট ধরনের ঝুঁকি উন্মুক্ত করেছে। ইতোমধ্যে দাঙ্গা এবং উপদলীয় সহিংসতা বিধ্বস্ত দেশটি মোর্সির রাস্ট্রপতিত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে এবং সীমান্তের ঘটনাটি দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা নীতি আসলে কে নিয়ন্ত্রণ করে সেই বিভ্রান্তিকর প্রশ্নটি্র প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে রাস্ট্রপতি, নাকি গোয়েন্দা অথবা সামরিক বাহিনী… অথবা উপরোক্ত সবাই (জড়িত)? আগে, সশস্ত্র বাহিনী (এসসিএএফ) এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর যৌথ কার্যক্রমের সঙ্গে রাস্ট্রপতির দপ্তর সক্রিয়ভাবে জড়িত থেকে শাসন করতো।
সিনাই আগ্রাসনের জবাবে মিশর অনির্দিষ্টকালের জন্যে রাফাহ পারাপার বন্ধ করে দিয়েছে। “সমস্ত ফিলিস্তিনিদের জন্যে একটি সমষ্টিগত শাস্তি হিসেবে…” নেওয়া পদক্ষেপটির নিন্দা জানিয়েছে হামাস গাজাতে। মুবারক-যুগের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আমর মুসা ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি পুনর্বিবেচনার আহবান জানিয়েছেন, অন্যদিকে বেদুইন গোত্রগুলোর উন্নত ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার বা এমনকি সিনাই অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর পুন:মোতায়েনের পক্ষে অনেক পর্যবেক্ষক যুক্তি করেছে। মিশর-ইজরায়েল শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে সিনাইতে মিশরীয় নিরাপত্তা বাহিনী পাঠানোর ধারণাটি খুব একটা কষ্টকল্পিত নয়।
পুরো প্রক্রিয়া সিনাইয়ের পুণঃসামরিকীকরণের আরো প্রশ্নবিদ্ধ করে গুরুত্বপূর্ণভাবে – এবং আরো বিশেষভাবে – এই অঞ্চলের গতিশীলতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে।
মিশরীয় বিশ্লেষক এজ্জেদাইন ফিশেরে একটি টুইটের ধারাবাহিকে [আরবী ভাষায়] ইজরায়েল এবং ফিলিস্তিনের উভয়ের প্রতি আরো পরিষ্কার একটি অবস্থান গ্রহণ করার উপর গুরুত্ব দিয়ে একটি স্বচ্ছ নীতির প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেছেন।
আগস্টের সিনাই আক্রমণের পিছনের জটিল পরিস্থিতি এবং অস্পষ্ট যৌক্তিকতা সত্ত্বেও “সব ধরণের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব চালু আছে” যুক্তি করে মিশরীয় ব্লগার দি অ্যারাবিস্ট আরো বলেছেন:
… মিশরের নিজেকে এই এলাকায় নতুন করে আরো জোরালোভাবে চাপানোর জন্যে কাজ করা দরকার: বেদুইন বা বিদেশী অপরাধীদের বিভিন্ন দল ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি শূন্য সহনশীলতা প্রদর্শণ এবং একটি সত্যিকারের উন্নয়ন নীতি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সিনাইকে জাতীয় অর্থনীতির মধ্যে একীকরণের মাধ্যমে। এটা সহজ নয়, এটা অনেকদিন আগেই করা দরকার ছিল, এবং দেরী না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটা শুরু করা দরকার, এমনকি স্বল্পমেয়াদে আরো ঝামেলা বাড়ানোর সম্ভাবনা থাকলেও কঠোর সশস্ত্র কৌশল অবলম্বন করে হলেও।
সম্প্রতি প্রকাশিত মোস’আব এলশামির ছবির নিবন্ধের উপর গুরুত্ব দিয়ে ‘এই চলমান যুদ্ধ’ ব্লগ উল্লেখ করেছে:
একথা বলাই বাহুল্য যে ইজরায়েলের সঙ্গে এর ভৌগলিক নৈকট্য স্বত্ত্বেও সিনাই শুধু মিশরের জন্যে একটি চ্যালেঞ্জ নয়। (তাছাড়া) এর প্রতি মিডিয়ার এতো নিম্ন মাত্রার মনোযোগও একটি ধাঁধা।
মোর্সির কার্যকাল সূচিত হয়েছে একটি ব্যাপকভাবে ডিক্রি জারি করা মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর দমন অভিযান এবং তৎকালীন সর্বশক্তিমান সামরিক কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করার কারণে রাষ্ট্রপতিকে অনেকের ‘নতুন স্বৈরশাসক’ মনে করার মধ্য দিয়ে। মিডিয়ার নীরবতা কী “নিরাপত্তা ও নাগরিক স্বাধীনতার ভারসাম্য” বজায় রাখার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত? যখন সিনাইয়ের ঘটনাবলী স্বল্প প্রতিবেদিত এবং মিশরের ক্ষমতার কাঠামো অস্থিতিশীল তখন এই ‘পশ্চিম’ কতটা ‘বুনো’ তা হিসেব করা কঠিন?
মিশরীয় আলোকচিত্রশিল্পী মোস’আব এলশামির মাত্র কয়েকটি সিনাইয়ের উপর ছবির ধারাবাহিক রয়েছে যেগুলোতে সিনাই জঙ্গিদের ছাড়াও ঐ অঞ্চলটির প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ প্রদর্শন করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং নিরাপত্তা বিষয়ে নাগরিক কণ্ঠস্বর অন্বেষণের অংশ হিসাবে এই পোস্ট এবং এর স্প্যানিশ, আরবি এবং ফরাসি অনুবাদের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (আইএসএন) এর। আইএসএন ব্লগে এই পোস্টটি প্রথমে প্রকাশিত, একই ধরনের আরো গল্পের জন্যে এখানে দেখুন।