সবচেয়ে দূর্নীতিগ্রস্থ রাষ্ট্রের পুরস্কার অর্জন আফগানিস্তানের

আফগানিস্তানকে বিশ্বের সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রের মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, ৫ ডিসেম্বর তারিখে ট্রান্সপ্যারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক প্রকাশিত ১৭৬ টি দেশের উপর প্রকাশিত এক বার্ষিক প্রতিবেদনে দেশটি উত্তর কোরিয়া এবং সোমালিয়ার খানিকটা উপরে অবস্থান করছে। টিআই (ট্রান্সপ্যারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল হচ্ছে বার্লিন ভিত্তিক এক প্রতিষ্ঠান, যা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সংঘঠিত দূর্নীতি উপর নজর রাখে, বার্ষিক দূর্নীতির এক তালিকা তৈরি করে। গত বছরের জরিপে, উত্তর কোরিয়া এবং সোমালিয়ার চেয়ে আফগানিস্তান সামান্য উপরে এবং মায়ানমারের সাথে যৌথ ভাবে ১৮০ নম্বরে অবস্থান করছে।

অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রের পুরস্কার জয়

এই জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হবার পর আফগান সুশিল সমাজ দেশটিতে একটি দূর্নীতি বিরোধী র‍্যালির আয়োজনের সুযোগ ছাড়েনি। দেশটির ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে আটটি প্রদেশে এই রকম র‍্যালির আয়োজন করা হয়। এই কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতীয় ঐক্য তুলে ধরা, দূর্নীতি দূর করা, এবং দেশটিতে শান্তি এবং স্থায়িত্ব আনা [এসবের জন্য এক প্রচেষ্টা]।

৮ ডিসেম্বর তারিখে, বামাইয়ান (ওরফে বামিয়ান) প্রদেশের সুশীল সমাজের একটিভিস্টরা আফগান রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাইয়ের প্রতীক হিসেব একজনকে “ সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত্র রাষ্ট্রের পুরস্কার/কাপ প্রদান করে

আফগান রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই-এর এক প্রতীক একজনকে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রের কাপ প্রদান করা হচ্ছে, ছবি প্রদান করেছেন মাহদি মেহারিন

কারজাই-এর প্রতীক-এর হাতে একজন বয়স্ক শ্রমিক কাপ তুলে দিচ্ছে। ছবি প্রদান করেছেন মাহদি মেহারিন

দাউদ ওয়াসাল, এই কর্মসূচির অন্যতম এক আয়োজক, তিনি এক সাক্ষাৎকারে [ফার্সী ভাষায়] বিবিসিকে বলেন [ফার্সী ভাষায়] :

شما شاهد این واقعیت تلخ هستید که در۲۰۰ متری من، مردمی هستند که درقرن ۲۱ درمغاره هایی زندگی می کنند که ۲۰۰۰ سال قبل ساخته شده اند و وزیران کابینه سفرهای میلیون دلاری می‌کنند و خرج یک شب شان برابر با اعمار سرپناه برای مغاره نشینان می شود

[আমার] কাছ থেকে ঠিক ২০০ গজ সামনে আপনারা এক কঠিন বাস্তবতাকে দেখতে পাচ্ছেন, কিছু মানুষ ২,০০০ বছর আগে খনন করা গুহায় বাস করছে, এদিকে মন্ত্রীরা বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন, জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে। [বিদেশের একটি বিলাসবহুল হোটেলে] এক রাত থাকার জন্য যে পরিমাণ অর্থ খরচ করা হয় সেই পরিমাণ টাকা দিয়ে যারা এখনো গুহায় বাস করে তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা যায়।

গত কয়েক দশক ধরে চলতে থাকে দূর্নীতি হচ্ছে আফগানিস্তানের দূর্নীতি বিরোধী কর্তৃপক্ষের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ, যে দূর্নীতি দেশটির দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর উপর আঘাত হেনেছে,

বিদেশী রাষ্ট্রসমূহ আফগানিস্তানে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সাহায্য প্রদান করেছে। তারপরেও অনেক আফগান নাগরিক বিশ্বাস করে যে [ফার্সী ভাষায়, পিডিএফ] এই সমস্ত সাহায্যের অর্থের বেশীর ভাগই সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের পকেটে চলে গেছে। ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এর সভাপতি ধারণা প্রদান করেন যে “ বিগত আট বছরে আফগানিস্তানে সাহায্য হিসেবে আসা প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে মোটামুটি ১ বিলিয়ন ডলার দূর্নীতির কারণে হিসেবের খাতা থেকে উধাও হয়ে গেছে।

একটি ব্যানারে একটি হারিকেন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, এই প্রতীক চিহ্ন জানাচ্ছে যে বামিয়ান প্রদেশের বাসিন্দাদের ঘরে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। ছবি প্রদান করেছেন মাহদি মাহেরিন

নেট নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া

বিশ্বের দূর্নীতি গ্রস্থ রাষ্ট্রের তালিকা আফগানিস্তানের অবস্থান দেশটির নেট নাগরিকদের ক্ষুদ্ধ করেছে।

হুমায়ূন বেহজাদ টুইট করেছে:

@বেহজাদি: ২০১২ দূর্নীতি সূচক-এর তালিকা—দারুণ করেছ আফগানিস্তান, তুমি সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জন করেছ!!

কাউন খামোশ লিখেছে:

@কয়ানএমকে: হতাশঃ দূর্নীতি তালিকায় ১৭৪টি দেশের মধ্যে আফগানিস্তান সবচেয়ে দূর্নীতিগ্রস্ত। 🙁

এবং রুহুল্লাহ ইয়াকোবি টুইট করেছে:

@কোহানদাহেঃ: এটা আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হল, আফগানিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে দূর্নীতিগ্রস্থ রাষ্ট্র। জনাব কারজাই এবং তাকে যারা সমর্থন করেছে, তাদের সবাই বেশ ভালোমত কাজ করেছে।

ডেইলি আউটলুক আফগানিস্তান ব্যাখ্যা করেছে কেন দেশটিতে দূর্নীতি টিকে আছে:

দূর্নীতি আফগানিস্তানকে ভেতর থেকে খেয়ে ফেলছে। এর কারণ হচ্ছে বিগত ১১ বছরে দূর্নীতির পরিমাণ কমিয়ে আনার জন্য ধারাবাহিক কোন প্রচেষ্টা ছিল না। যারা বিলিয়ন ডলার অর্থ আত্মসাতের সাথে জড়িত, তারা বিনা শাস্তিতে আফগানিস্তানের ভেতরে এবং দেশের বাইরে ঘুরে বেড়ায়, কারণ বিশেষ শক্তিশালী রাজনৈতিক চরিত্রের সাথে যুক্ত থাকা আফগান আইনের চেয়ে কার্যকর বলে আবিস্কার হয়েছে।

যখন আফগানিস্তান জাতীয় পুনরেকত্রীকরণ দল ফেসবুকে এক আমূল পরিবর্তন মূলক সমাধান প্রদান করেছেন:

কোন সন্দেহ নেই আফগানিস্তান তালিকায় তলানিতে পরে আছে, কিন্তু আফগানিস্তানের দূর্নীতি প্রতিরোধে করা কি সম্ভব? এর উত্তর হচ্ছে আফগানিস্তানে একজন দুর্নীতিমুক্ত নেতা থাকতে হবে যে কিনা দুর্নীতিবাজ কয়েকজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেবে এবং আর এভাবে আফগানিস্তানের দূর্নীতির ইতি ঘটবে।

আফগান রাষ্ট্রপতির প্রতীক হিসেবে এক ব্যাক্তি, যার শরীরে রাষ্ট্রপতির ছবি সহ তার বিরুদ্ধে আসা দূর্নীতির সব অভিযোগ। ছবি প্রদান করেছে মাহদি মাহেরিন

সম্পাদকীয় ভাষ্য: মঙ্গোলিয়া, যে কিনা অন্য সাতটি রাষ্ট্রের সাথে যৌথভাবে তালিকার ৯৪ তম স্থানে অবস্থান করছে, সেটি বাদে মধ্য এশিয়ার বাকী সকল রাষ্ট্র টিআই-এর দূর্নীতি সূচক তালিকায় সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ৫০টি রাষ্ট্রের মধ্যে অবস্থান করছে। ১৭৬ টি রাষ্ট্রের মধ্যে কাজাখস্তানের অবস্থান ১৩৩ নম্বরে, যে কিনা রাশিয়া এবং অন্য চারটি রাষ্ট্রের সাথে যৌথভাবে এই অবস্থানে রয়েছে। অন্য দুটি রাষ্ট্রের সাথে যৌথভাবে তাজিকস্থান তালিকায় ১৫৭ নম্বরে অবস্থান করছে। তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তান যৌথভাবে তালিকার ১৭০ নম্বরে অবস্থান করছে, যাদের অবস্থান আফগানিস্তানের সামান্য উপরে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .