পীমেন মজিদজাদেহ কর্তৃক আরেশ সেভম-এ পূর্বপ্রকাশিত

“ফার্স্ট এইড (প্রাথমিক চিকিৎসা)” © আলেসান্দ্রা বালসি, ২০১১ সালের অক্টোবরে তেল আবিবে তোলা। অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।
এটা কার যুদ্ধ?
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রামিন মেহমানপারাস্ত অনূসারে ফিলিস্তিনকে সমর্থন করা ইরানের পররাষ্ট্রনীতির একটি অগ্রাধিকার। তিনি বলেছেন গাজায় ফিলিস্তিনীদের সমর্থন এবং মানবিক সাহায্য প্রদান ইসলামী দেশগুলোর কর্তব্য।
হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ যুক্তিটির উপর জোর দিয়ে বলেছেন [ফার্সী ভাষায়]:
ইরান, সিরিয়া এবং হিজবুল্লাহ কখনো গাজা এবং এর জনগণকে পরিত্যাগ করবে না। গত কয়েক বছর যেমন আমরা তাদের সঙ্গে ছিলাম তেমনি আমরা তাদের পাশে দাঁড়ানো অব্যহত থাকবো। এটি আমাদের ধর্মীয় ও নৈতিক এবং মানবিক দায়বদ্ধতা।
অনেকেই চিন্তা করেন ইরানের নীতি কী আসলেই “জনগণ” এর সমর্থন নাকি সিরিয়ায় তাদের ব্যর্থ নীতির আখ্যানটিকে দূরে সরানোর একটি কৌশল মাত্র। হামাসকে অস্ত্র সরবরাহ যুদ্ধবিরতি নাকি দ্বন্দ্বের তীব্রতা বৃদ্ধি? বিষয়টির (অন্তর্নিহিত) সত্য হলো যে উভয় পক্ষের নিরপরাধ জনগণ মারা যাচ্ছে।
ইরানী ব্লগার কামাঙ্গীর লিখেছেন:
যিনি ক্ষেপণাস্ত্রটি ছূঁড়েন সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব তার। ক্ষেপণাস্ত্রের অপর প্রান্তে শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্করা রয়েছে। কেউ নিহত হোক বা না হোক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা একটি অপরাধ।
ফিলিস্তিনীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ১৯৭৯ সালের আগস্টে আয়াতুল্লাহ খোমেনী জেরুজালেমের স্বাধীনতা সব মুসলমানদের একটি ধর্মীয় দায়িত্ব ঘোষণা করার পর থেকে ইরানের অবস্থান ইহুদিরাষ্ট্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে। কুদস দিবস হিসেবে পরিচিত এই ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের দিনটি ইরান সরকার প্রতি বছর রমজান মাসের শেষ শুক্রবারে পৃষ্ঠপোষণ, পালন এবং আয়োজন করে থাকে। কুদস দিবসটি এখন আরো অনেক দেশে সম্প্রসারিত এবং দখলদারিত্বের শিকার ফিলিস্তিনীদের সঙ্গে সংহতির একটি প্রতীক হয়ে উঠেছে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ইরানী এই প্যারেডে অংশ গ্রহণ করলেও সেগুলোর যথার্থতা এবং স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রশ্নবিদ্ধ [ফার্সী ভাষায়]।
তিন বছর আগে বিতর্কিত রাস্ট্রপতি নির্বাচনের পর বিক্ষোভে দেশের অভ্যন্তরে অধিকারের অবদমন ছাড়াও বিদেশে ইরানের হস্তক্ষেপ সমালোচিত। বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিয়েছিল: “গাজা নয়, লেবানন নয়, শুধু ইরানের জন্যে আমার জীবন।” স্লোগানটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল এবং সেসময় ইরানী কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল বুঝেছিল। এটি সুশীল সমাজ থেকে সরকারের জবাবদিহিতার একটি দাবি এবং হিজবুল্লাহ বিষয়ে এর নাক গলানোর নীতির সমালোচনা প্রতিফলিত করে।
কেউ ইরানী সরকারের নীতির পক্ষাবলম্বন না করলে তাকে ইহুদিরাষ্ট্রপন্থী বিবেচনা করা হয়ে থাকে। প্রকাশ্যে হামাসের নন্দা করার মানে হলো একটি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া। পূর্ববর্তী গাজা যুদ্ধে হামাস এবং ইজরায়েল উভয়ের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানের কারণে একটি ইরানী ছাত্র সংগঠন ঐক্য সংহতি দপ্তর [দফতর-ই তাহকিম-ই ভাহদাত] এই নীতির শিকার হয় এবং ইরানের সবচেয়ে রক্ষণশীল এবং শীর্ষনেতার দপ্তরের সঙ্গে সম্পর্কিত সংবাদপত্র কেহান একে “রেডিও ইজরায়েল” বলে আখ্যায়িত করে।
জামানেহ ট্রিবিউনে ফিলিস্তিন আমাদের সমস্যা নয়! [ফার্সী ভাষায়] পোস্টের ফিলিস্তিনী লেখক লিখেছেন:
“জনগণের কণ্ঠস্বর বলে দাবি করা কিছু লোক রয়েছে যারা বিশ্বাস করে যে ফিলিস্তিনী সমস্যা আমাদের সমস্যা এবং বাকি বিশ্বের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সেই প্রিজমে দেখা হয়। তাদের সঙ্গে কেউ ভিন্নমত পোষণ করলে সে ফ্যাসিবাদী বা বর্ণবাদী হিসেবে [অভিযুক্ত] হয়।”
নির্যাতিত রাজনীতি সত্ত্বেও ইরানী সম্প্রদায়ে ফিলিস্তিনীদের প্রতি সমর্থন রয়েছে। এই ছবিটিতে নিউ ইয়র্কে ইজরায়েলের কন্সুলেটের সামনে একটি বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে যাতে যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা, এবং রাষ্ট্রীয় অবদমনের বিরোধিতাকারী হাভা’র গোষ্ঠীর সদস্যরা অংশগ্রহণ করেছিল।

ছবির সৌজন্যে হাভা’র: যুদ্ধ, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কথা, এবং রাষ্ট্র দমন বিরুদ্ধে ইরানী উদ্যোগ
ফিলিস্তিনের রক্তাক্ত ক্ষত নামের একটি পোস্টে মিখাক [ফার্সী ভাষায়] ফিলিস্তিনি জনগণকে সমর্থনের একটি যুক্তি করতে গিয়ে এই কথা বলেছেন:
“ফিলিস্তিন সমস্যা নিয়ে সঠিক অবস্থান নেয়াই নিঃসন্দেহে ফিলিস্তিনীদেরকে সমর্থন করা। গাজাবাসীকে সমর্থন না করা একারণে যে হামাস তাদের শাসন করছে, অথবা তাদের হামাসকে কোন একদিন নির্বাচিত করার মানে হলো ইসলামী প্রজাতন্ত্র [ইরান] এর নিষ্ঠুরতার কারণে আমরা কষ্টভোগ করার যোগ্য এ কথাটি মেনে নেয়ার মতো।”
লেখক ফিলিস্তিনীদের সমর্থন করে হামাসের মতাদর্শের নিন্দা করেছেন।