এই প্রবন্ধটি ইয়েমেন গণজাগরণ ২০১১ সম্বন্ধে তৈরি আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ।
তিন বার স্বাক্ষর করা থেকে পিছিয়ে আসার পর অবশেষে ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতি সালেহ উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ বা জিসিসি (গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিল) সম্পাদিত চুক্তিতে স্বাক্ষর করল। এই চুক্তি অনুসারে তাকে তাঁর উপ রাষ্ট্রপতি আব্দে রাবু মানসুর হাদির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহর উপস্থিতি ২৩ নভেম্বর ২০১১ তারিখে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
এই চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে ইয়েমেনের নাগরিক এবং অন্যদের মিশ্র এক প্রতিক্রিয়া রয়েছে; এদের মধ্যে অনেকে নিরাশ এবং হতাশ, অন্যদিকে এই চুক্তি স্বাক্ষরের ঘটনায় অনেকে আবার আনন্দিত এবং তারা এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে।
মিশ্র প্রতিক্রিয়া
আল জাজিরা ইংলিশে প্রদান করা এক সাক্ষাৎকারে বিপ্লবী তরুণ ইব্রাহিম আল সাইদি দেশটির তরুণরা যে পরিষ্কার ভাবে এই চুক্তি প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি প্রকাশ করেন। (ইউটিউবে ভিডিও পোস্ট করেছে রেভেল্যুশনভয়েস)
টুইটার ব্যবহারকারী @সামওয়াদ্দাহ রয়টারের একটি প্রবন্ধ টুইট করেছে, যেখানে এই চুক্তি নিয়ে অনেক বিশ্লেষকের শঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়েছে:
বিশ্লেষক সালেহ: #সালেহ, সে ক্ষমতা ত্যাগ করতে যাচ্ছে অথবা সে সাপের মাথায় পা রেখে সে নাচতে যাচ্ছে reuters.com/article/2011/1… #ইয়েমেন
জিসিসি যে চুক্তিমালা তৈরি করেছে তার আনুষ্ঠানিক কপি এখনো প্রকাশ করা হয়নি এবং অনেকে জানে যে এই চুক্তিতে কি কি আছে। এখন পর্যন্ত এই চুক্তির বৈশিষ্ট্য কেবল উন্মোচন হয়েছে।
@সামওয়াদ্দাহ টুইট করেছে:
ঠিক এই চুক্তি স্বাক্ষর করার আগে পর্যন্ত ইয়েমেনের নাগরিকদের #জিসিসি চুক্তি নিয়ে এক অন্ধকারে রাখা হয়। কেবল মাত্র এর বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করা হয়েছে, ঠিক মূল চুক্তিটি নয়#ইয়েমেন
ওমার মাসহাজারি তাঁর নিজস্ব ব্লগে এই চুক্তি নিয়ে তাঁর আপত্তি তুলে ধরছে:
@ওমরমার্স: নতুন ব্লগপোস্ট! জিসিসি-এর উদ্যোগ ইয়েমেনের নাগরিকদের কাছে কি অর্থ বহন করে? @ওমারমার্শ এর দ্বারা পোস্ট করা#ইয়েমেন#সালেহ#জিসিস bit.ly/uRrE3j
@কোকোসাসা, আলরাই নামক এক আরবী সংবাদপত্রের ছবি টুইট করেছে, যেটিতে সালেহ-এর ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, আর ছবির নীচে শিরোনাম প্রদান করা হয়েছে “প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি”:

আরবী ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্র আলরাই-এর প্রথম পাতায় তুলে ধরা সালেহ-এর ছবি এবং এর শিরোনাম “প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি”। ছবি টুইটার ব্যবহারকারী @কোকসাসা-এর।
الرئيس السابق…. # ইয়েমেন #সালেহ। pic.twitter.com/0D5LoNxH
প্রাবন্ধিক নিক ক্রিস্তফ ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে তাঁর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার বিষয়টি প্রকাশ করেছে:
@নিকক্রিস্তফ: ৩৩ বছর ধরে ইয়েমেনকে ভুলভাবে শাসন করার পর রাষ্ট্রপতি সালেহ ক্ষমতা থেকে সরে যাচ্ছে। আশা করি এখন সব ভেঙ্গে যাওয়া অংশ আবার এক সাথে জোড়া লাগবে।
@নাদ্দা২১২৪, গার্ডিয়ান পত্রিকায় ব্রায়ান হুইটেকারের লেখা প্রবন্ধ টুইট করেছে, সে নির্দেশ করেছে যে এতে আসলে কোন ধরনের মৌলিক পরিবর্তন ঘটেনি:
ইয়েমেনর রাষ্ট্রপতি আলি আবদুল্লাহ #সালেহ পদত্যাগ করেছে- কিন্তু তাতে খুব সামান্যই পরিবর্তন ঘটেছে। ব্রায়ান হুইটেকার gu.com/p/33tjz/tw#ইয়েমেন#ওয়াইফ্রগ#জিসিসি
@নেফারমাত স্বীকার করেছেন যে তিনি এ ক্ষেত্রে কি অর্জন হয়েছে সে সম্বন্ধে তেমন কোন ধারণা নেই, তবে তিনি জনগণকে এ ক্ষেত্রে আগামীতে কি ঘটতে যাচ্ছে তাঁর উপর মনোযোগ প্রদান করতে বলেছেন:
স্বীকার করেছেন যে তিনি এ ক্ষেত্রে কি অর্জন হয়েছে সে সম্বন্ধে তেমন কোন ধারণা নেই, তবে তিনি জনগণকে এ ক্ষেত্রে আগামীতে কি ঘটতে যাচ্ছে তাঁর উপর মনোযোগ প্রদান করতে বলেছেন।
@আবদুলআজিজসাকাকফ – এই চুক্তিকে সমর্থন করি- তিনি এখানে নির্দেশ করেছেন:
এই চুক্তিকে সমর্থন করা হোক বা না হোক, এটি আমাদের ঘর, চাকুরী এবং আমাদের অস্তিত্বকে রক্ষা করবে।
@দোরি_ইরয়ানি তিনিও এই চুক্তিকে সমর্থন করেন, তিনি দাবি করেন:
#জিসিসি-এর চুক্তি নিয়ে জানাডি এবং অন্যান্যরা প্রচার মাধ্যমে এক সংগ্রামে অবতীর্ন হয়েছে, যারা চায় জনগণ এই চুক্তি প্রত্যাখান করুক…। তাদেরকে বিশ্বাস করবেন না… সালেহ যখন এই চুক্তি স্বাক্ষর করে, তখনই সে তা ক্ষমতার অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছে। #ইয়েমেন
তবে @রিয়ালস্টিকচ্যানেল নির্দেশ করছেন, এখানে ইয়েমেনের নাগরিকরা আসল বিষয় কোনটি তা খেয়াল করছে না:
#সালেহ #জিসিসির উদ্যোগে তৈরি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, কারণ সে জানে তার শাসন এখনো শেষ হয়ে যায় নি। বিষয়টি ততটা জটিল নয়।#সাপোর্টইয়েমেন
চুক্তি বিরোধী প্রতিবাদ
অনেক ইয়েমেনী তরুণ এই চুক্তিকে প্রত্যাখান করেছে এবং তারা এর বিরুদ্ধে সারা ইয়েমেন জুড়ে বিক্ষোভ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। @ইয়েমেন_আপডেট টুইট করেছে:
যে #জিসিসি চুক্তি সালেহকে বিচারের দায়ভার থেকে মুক্ত করে দেয়, সেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য জেমেপি এবং ইসলাহ-এর বিরুদ্ধে #সানা চেঞ্জ স্কোয়ারে এক শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
যে দিন জিসিসির চুক্তি স্বাক্ষর করা হল, সেদিনই রাজধানী সানায় যখন সালেহ-পন্থীরা চুক্তি বিরোধী বিক্ষোভাকারীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে গুলি করে, সে সময় সমগ্র সানায় এক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এই ভিডিও ধারণকারী নাগরিক নিজেই ভিডিও ধারণ করার শেষ দিকে গুলিবিদ্ধ হয়। (ইউ টিউবে ভিডিও পোস্ট করেছে মিডিয়াসেন্টারসানা):
@ইয়াসরাআলাও একই সাথে টুইট করেছে:
যেদিন #সালেহ # গালফ -এর উদ্যোগে সম্পাদিত শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করল, তার পরের দিনই, সালেজ-এর গুণ্ডা বাহিনী #সানায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমূহের উপর গুলি করে। এই ঘটনায় ৫ জন নিহত এবং ৩০ জনের বেশী নাগরিক নিহত হয়েছে। #ইয়েমেন#ওয়াইএফ
@সামাওয়াদ্দাহ বলছে:
#সানায় অনুষ্ঠিত আজকের এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫ জন নাগরিক নিহত হয়েছে। এটা হচ্ছে #জিসিসি চুক্তির প্রথম অর্জন।#ইয়েমেন
জিসিসি চুক্তির মূল উদ্যোক্তা হচ্ছে সৌদি আরব, যা পরিষ্কার ভাবে দেশটির তরুণ নাগরিকদের চাওয়াকে গুরুত্ব দেয়নি, যে সমস্ত তরুণরা এই বিপ্লবের মূলে অবস্থান করছে; ইয়েমেনকে এই চুক্তি কি প্রদান করবে; এটা কি প্রকৃতপক্ষে ইয়েমেনে সালেহ-এর শাসনকালের ইতি ঘটাবে অথবা এটি আরো অস্বস্তিকর কিছু বিস্ময় লুকিয়ে ফেলবে?
এই প্রবন্ধটি ইয়েমেন গণজাগরণ ২০১১ সম্বন্ধে করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ।