বাহরাইন: শাসক এবং বিরোধীদের মধ্যে জাতীয় আলোচনা শুরু

এই প্রবন্ধটি বাহরাইন প্রতিবাদ বিক্ষোভ ২০১১-এর উপর করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ

যখন থেকে বাহরাইনের ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১-এর বিক্ষোভ শুরু হয়, তখন থেকে বিরোধী দল এবং শাসকের জাতীয় আলোচনায় বসার কথা মাঝে মাঝে আলোচিত হচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ একদল মানুষের মধ্যে অনেকে যে কোন ধরনের আলোচনার কথা বাতিল করেছে এবং তার বিষয়টিকে অর্থহীন বলে মনে করেছে এবং তারা বলছে যে এটি তাদের উদ্দেশ্য এবং দাবীর কোনটাই পুরণ করবে না।

লম্বা সময় ধরে অপেক্ষায় থাকা এই জাতীয় আলোচনা, অবশেষে শনিবার,২ জুলাই-শুরু হয়। ধর্মনিরপেক্ষ ওয়াদ এবং শিয়াদের রাজনৈতিক দল ওয়েফাক, তাদের অনেক সদস্যকে সামরিক আদালতে কারাদণ্ড প্রদান করার পরেও, এই আলোচোনায় অংশ গ্রহণ করেছে।

সামাজিক প্রচার মাধ্যমে-এই ঘটনার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া

যখন এই আলোচনার বিষয়ে কথা হচ্ছে, তখন বাহরাইনের টুইটার ব্যবহারকারীরা এই আলোচনায় যারা অংশ নিচ্ছে প্রধানত তাদের উপর, যে ভাবে এই আলোচনার সময়টিতে বিরোধী দলের প্রতি যে ধরনের আচরণ প্রকাশ করা হয়েছে, তাদের প্রতিক্রিয়া, এবং ১৪ ফেব্রুয়ারির পর থেকে যে ৪০০ জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে (সম্প্রতি যাদের অনেককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে), তাদের ঘটনার উপর মনোযোগ প্রদান করেছে। এ ছাড়াও, বিক্ষোভের কারণে যে সমস্ত প্রতিবাদকারী চাকুরি হারিয়েছে, তাদেরকে আর কাজে ফেরত নেওয়া হয়নি।

বাহরাইনের অন্যতম টুইটার ব্যাবহাকারী আবু সাবের (@মোওয়েন) সেই সব ব্যক্তিদের নিয়ে লিখেছে যারা তাদের চাকুরি হারিয়েছে। তিনি বলছেন:

@মোওয়েন : একদিকে বাহরাইন দাবী করছে যে জাতীয় আলোচনা শুরু হয়েছে, এদিকে সে সময়টাতেও কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং কাজ থেকে ছাঁটাই করা হচ্ছে।

আরেকজন টুইটার ব্যবহারকারী যার ডাক নাম ওবিজ,(@বা৭রাইনিয়াওয়াফতে৫য়াআর) সে তার টুইটারে অবতার (প্রোফাইলের ছবি) হিসেবে দেশটির বাদশাহ-এর ছবি দিয়ে রেখেছে, সে শিয়াপন্থী বিরোধী ওয়েফাক নামক দলটিকে আক্রমণ করেছে, সে লিখেছে:

“@বা৭রাইনিয়াওয়াফতে৫য়াআর : ওয়েফাক জাতীয় আলোচনায় আংশ নিচ্ছে এই উদ্দেশ্যে যে, তারা এর থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেবে, তারা সংস্কার চায় না। এখন আমরা তাদের সকল খেলা জানি।

অনলাইন বাহরাইন (@অনলাইন বাহরাইন), হচ্ছে বাহরাইনে নিউজের টুইটার একাউন্ট, তারাও ওয়েফাকের প্রতি সমালোচনা মুখর। তারা বলছে:

@অনলাইনবাহারাইন: ওয়েফাক দলকে গিয়ে করো বলা উচিত যেন তারা প্রচার মাধ্যমে এই আলোচনার সমালোচনা বন্ধ করে, কারণ যত তারা এই কাজটি করবে, ততই তাদের এই আলোচনায় অংশগ্রহণের বিষয়টি হাস্যকর হয়ে উঠবে।

অন্যদিকে, ওয়েফাক (@ওয়েফাকসাইটি) [আরবী ভাষায়] নিজে তাঁর টুইটার একাউন্টের মাধ্যমে জাতীয় আলোচনা সম্বন্ধে দলের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছে, তাদের নেতা আলি সালমান-এর একটি উদ্ধৃতি দিয়ে তাঁর বলছে:

الأمين العام الشيخ علي سلمان:اثناء الحوار من حق أن الناس أن تعتصم وتتظاهر، وإن لم ينجح الحوار سنعود للشارع


@ওয়েফাকসোসাইটি
: সাধারণ সম্পাদক শেখ আলি সালমান: আলোচনার সময়ও নাগরিকদের অধিকার রয়েছে ধর্মঘটে যাবার এবং বিক্ষোভ করার, যদি এই আলোচনা ফলপ্রসু না হয়, তাহলে আমরা আবার রাস্তায় ফিরে যাব।

কারগারে বন্দী অন্যতম বিরোধী নেতা আবদুলহাদি আল-খোয়াজা-এর কন্যা মরিয়াম আল-খোয়াজা (@মারিয়ামাআলখোয়াজা), জনগণকে সতর্ক করে দিয়েছে, যেন বিরোধীরা নিজেদের মধ্যে তর্ক এবং লড়াইয়ে লিপ্ত না হয়, সে লিখেছে:

@মারিয়ামাআলখোয়াজা: বাহরাইন, দয়া করে আমাদের স্মরণ রাখা উচিত যে আমাদের দুঃখ-দুর্দশা একে অন্যের কারণে নয়, তা সুন্নি বা শিয়া যারাই হোক না কেন, আপনারা জাতীয় আলোচনার পক্ষে হোন অথবা না হোন, তারা জেনে রাখুন, এর কারণ আমাদের শাসকেরা।

মারিয়ামের বড় বোন জয়নাব (@এ্যাংরিয়ারাবিয়া), জাতীয় আলোচনা এবং কেন সে তা প্রত্যাখ্যান করেছে, তা নিয়ে বেশ কিছু টুইট করেছে। জয়নাবের পিতা স্বামী এবং চাচা সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এক মাস আগে সে এর জন্য অনশন ধর্মঘট করেছিল।

@এ্যাংরিজয়নাব : এটা কোন আলোচনা নয়, একজন বাদশাহ আমাদেরকে তাঁর খেলা দেখাচ্ছে, এমনকি এটা যাতে দেখতে একটা নিরপেক্ষ খেলা বলে মনে হয়, তিনি তার চেষ্টাও করছেন না।

সে এর সাথে যোগ করেছে:

@এ্যাংরিয়ারাবিয়া : বাহরাইনের যে ভবিষ্যৎ আমরা চাই, তাতে বিচারের সময় করা যাদের উপর ওইসব অত্যাচার করা হয়েছে, তাদের যুক্ত করতে হবে, এই আলোচনায় তাদেরকে কোন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

ওম হায়দারি নামের এক বাহরাইনী মহিলাও (@ফ্রি_বাহরাইন১) এই আলোচনার সমালোচনা করেছে:

@ফ্রি_বাহরাইন১: বাহরাইন সরকারের চালাকি হচ্ছে, এক দিকে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করা এবং অন্যদিকে প্রতিটি বিরোধী দলের বিরুদ্ধে খুনের অনুশীলন চালানো!

এছাড়াও ভদ্রমহিলা লিখেছে:

@ফ্রি-বাহরাইন১: এমন এক শান্ত পরিবেশে জাতীয় আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে হবে, যেখানে এই সময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালাবে !

আল-ওয়াসাত নামক সংবাদপত্রের প্রতিষ্ঠাতা মানসুর আলজামরি (@মানসুর_আলমজামরি)। বিক্ষোভের সময় অন্য আরো কিছু সাংবাদিকের সাথে তাকেও বানিয়ে সংবাদ প্রকাশের অভিযোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তিনি এই আলোচনায় নিয়ে বিগত তিন দিন তার লেখা টুইট করেছে। সেখানে তিনি অন্য অনেক বিষয়ের সাথে নীচের বিষয়টি উল্লেখ করেছে:

الأجندة التي وزعت على الحوار الوطني ااختفت منها اي إشارة الى موضوع التمييز، ولكن اغفال هذا السرطان يعني موتا بطيئا للجسد البحريني

@মানসুর_আলমজামরি : আজকের জাতীয় আলোচনায় যে সব বিষয়বস্তু ছিল, তার মধ্যে কোথাও বৈষম্য নামক বিষয়টি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই দুরারোগ্য ব্যাধিকে উপেক্ষা করা মানে ধীরে ধীরে বাহরাইনের মৃত্যু ঘটা।

আবু আহমেদ (@সাফিবিএইচ) এখানে সাহায্য করার চেষ্টা করছে:

@সাফিবিএইচ: জাতীয় আলোচনায় যোগ দেওয়া নিয়ে আমাদের আশঙ্কা দূর করতে হবে, আমরা আমাদের দৃঢ়তার উপর নির্ভর করব, এর ফলাফল কি ঘটবে তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত হব না, কারণ আমাদের ক্ষমতা রয়েছে, আমরা পরিবর্তন আনতে পারি।

খালিদ মাহমুদ(@খালিদ০৯০১) আশাবাদী এবং সে আলোচনার উপর আস্থা রেখেছে, সে লিখেছে:

@খালিদ০৯০১: বাহরাইনের জাতীয় আলোচনা হচ্ছে একটি সমস্যা উপশমের প্রচেষ্টা যা আমাদের অতীতের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করবে।

এই প্রবন্ধটি বাহরাইন প্রতিবাদ বিক্ষোভ ২০১১-এর উপর করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ

বাহরাইনের পতাকার থাম্বনেইল ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী এবিসিডিজেড২০০০-এর (সিসি বাই-এনসি-এসএ ২.০)।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .