কাজাখস্তান: পাখি, পোল্যান্ডের বেদনাদায়ক ঘটনা এবং শাসন পরিচালনা

এ সপ্তাহে কাজাখস্তানের ব্লগারদের আলোচনায় মনোযোগ তিনটি বিষয়ে কেন্দ্রীভূত ছিল, যার সবকটি ছিল দেশটির সরকারের শাসন কার্যের সমস্যার সাথে গভীর ভাবে সম্পৃক্ত।

পাখিদের হত্যা করা:

কারকাস-ব্রাইড ছিলেন সেই সব ব্যক্তিদের মধ্যে প্রথম যিনি কাজাখস্তান-রুশ সীমান্তে শুল্ক বিভাগে (কাস্টমস) ঘটা এক ঘটনার কথা লিখেন [রুশ ভাষায়]। একজন উজবেক নাগরিক ৭১ টা গোল্ডফিঞ্চ (হলুদ রঙের এক ধরনের ছোট আকারের পাখি) রাশিয়া থেকে উজবেকিস্তানে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছিলেন। তবে আইনানুসারে তাকে পাখিগুলোর শরীরে রোগ জীবাণু রয়েছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য অর্থ প্রদান করার কথা, কিন্তু পরীক্ষার জন্য যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হয়, তা ছিল তার জন্য খুব বেশি। কাজাখস্তানের শুল্ক বিভাগ পাখিগুলোকে জব্দ করে এবং .. এ ক্ষেত্রে অবৈধভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে (কাউন্টারফিট) এই নীতি অনুসারে তাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারে।

পিইয়াইসিএম মন্তব্য করেছেন [রুশ ভাষায়]:

কাজাখস্তানের শুল্ক (কাস্টমস) ও পশুপাখির রোগ (ভেটেরিনারি) নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এক ক্ষুদ্র মনা দৈত্য, যারা তাদের মস্তিষ্কে থাকা ধূসর পদার্থের সামান্য অংশের ব্যবহার করতে পারল না। আমি আমার মেয়ের সাথে বসে এই বিষয়ের উপর এক টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদ দেখছিলাম এবং আমি তার কাছে এই ঘটনাটি ব্যাখ্যা করতে পারলাম না […]। আমি খুব মহান কোন পশু বা পাখি প্রেমী নই, কিন্তু জীবন্ত এই সমস্ত প্রাণীদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে সৃষ্টিশীল কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করা কি খুব কঠিন ছিল?

একই সাথে কোবিমা এই বিস্ময়কর প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন [রুশ ভাষায়]:

যখন কোন জীবন্ত প্রাণীকে ইচ্ছে করে ধ্বংস করে ফেলা হয় (এখানে সেটি মানুষ না প্রাণী, তা কোন বিবেচ্য বিষয় নয়) তখন তাকে এক ধরনের নির্মমতা (ধর্ষকাম) বলে অভিহিত করা হয়। এখানে এখন অনেকটা চিকাটিলোর (আন্দ্রেই চিকাটিলো, রাশিয়ার এক নাগরিক, যে ৫৩ জন নারী ও শিশুকে হত্যা করে) মত মানসিক অবস্থা বিরাজ করছে।

সক্রিয় নৈরাজ্যবাদ

অন্য এক ঘটনায়-কাজাখস্তানের পশ্চিম অংশে (মাংগিস্তু প্রদেশে) ওজেনমুনিয়াগ্যাস কোম্পানীর ১,০০০ কর্মীরা তাদের বেতন কমিয়ে দেবার প্রতিবাদে ধর্মঘট শুরু করেছে। ওজেনমুনিয়াগ্যাস রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কাজমুনিয়াগ্যাস কোম্পানীর একটি অঙ্গসংগঠন। কর্মীরা এই কোম্পানীটিকে জাতীয়করণ, গণ ছাঁটাই বন্ধ এবং বেতন প্রদানের নিশ্চয়তার দাবি জানাচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে বিরোধীদের সাথে প্রশাসনের এক উদ্বিগ্ন কিন্তু সক্রিয় আলোচনার পর, কর্মীদের বেশ কিছু দাবি মেনে নেবার ফলে এর সফল পরিসমাপ্তি ঘটে। এ-স্ট্রেকোজা তার জানা-ওজেন এলাকায় ভ্রমণের কথা লিখছেন, এটি ধর্মঘটের ঠিক কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত [রুশ ভাষায়]:

জানা-ওজেনের সকল হোটেল পুলিশ এবং আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষীদের দ্বারা ভরে আছে […]। তেল নিয়ে কাজ করা লোকেরা বেশ কঠিন মানুষ-তারা কোন শব্দ ছাড়াই শোভাযাত্রায় যায়-দাঁড়িয়ে থাকে, ধূমপান করে, ও সূর্যমুখীর বীজ চিবায়। তারা চায় তাদের সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ছাঁটাই এবং নিজেদের বেতন বৃদ্ধি। পুলিশের দল হোটেলে বসে ছিল এবং ধর্মঘটী এলাকায় তাদের দেখা যায়নি। তাদেরকে কাজে নামানোর জন্য প্রতিবাদকারীদের দু'টি কাজ করার দরকার ছিল, প্রথমত প্রতিবাদ শোভাযাত্রাটিকে বাস স্টেশনের কাছ থেকে সরিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ভবনগুলো যেখানে অবস্থিত সেই স্কোয়ারে নিয়ে যাওয়া। দ্বিতীয়ত রাজনৈতিক দাবিগুলো সামনে নিয়ে আসা। […] কর্তৃপক্ষ তাদের ক্ষুধার্থ অবস্থায় রেখে বশে রাখার চেষ্টা করেছে-কর্মীরা কাজ করছে না, ব্যবস্থাপকেরা শ্রমিকদের ধর্মঘট উঠিয়ে নেবার আহ্বান জানাচ্ছে, কর্মকর্তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

“ কাজাখস্তান এমন একটা দেশ যা সক্রিয় নৈরাজ্যের জন্ম দেয়”, ইজাহানভ এই কথা বলেন এবং গত বছরের যে যুক্তি সেটি ব্যাখ্যা করেন:

একদা এ দেশে যখন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থান ঘটছিল, তখন গৃহঋণ সমস্যা তাদের এই প্রবৃদ্ধিকে ধ্বংস করে ফেলে। এখন লোকজন তাদের সেই ফ্লাটের জন্য ঋণের টাকা পরিশোধ করছে, যা আজও তৈরি হয়নি। বিতরণ পদ্ধতির অর্থনৈতিক নীতি (ডিস্ট্রিবিউটিভ মডেল অফ ইকোনমি- রাষ্ট্র উৎপাদন উপাদান যেমন শ্রম, জমি, বা মূলধনের ভিত্তিতে আয়ের বণ্টন করবে) এখানে কাজ করে গেছে, কিন্তু উদ্যোগটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ- কেউ কিছু চায় না [সৃষ্টিশীল কিছু]। বুদ্ধিমান লোকজন তাদের দক্ষতা প্রয়োগ করতে পারে না। যারা সামান্য সৌভাগ্যবান তারাই সঞ্চয়ের পুরোটাই খেয়ে ফেলে। যাদের কিছুই নেই, তারা কেবল অপেক্ষা করে।

মেগাখুইমিয়াক ঐতিহ্যগতভাবে আরো কঠোর স্পষ্টবাদী [রুশ]:

সমাজে বুদ্ধিমানদের দরকার নেই। আমরা খাঁটি এক ভোক্তা সমাজ তৈরি করেছি।

এই দেশটি পোল্যান্ড নয়

এক সপ্তাহ আগে বিমান দুর্ঘটনায় পোল্যান্ড নামক রাষ্ট্রের অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মৃত্যু কাজাখ ব্লগ জগৎেও প্রতিফলিত হয়েছে-তবে তা হয়েছে কাজাখ দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে:

পোল্যান্ড এখন শোকে এবং বেদনায় আচ্ছন্ন, কিন্তু সেখানে কোন অস্থিরতা নেই। এখানে একটা কাল্পনিক প্রশ্ন রয়েছে-সেখানে যা হয়েছে একই বিষয়টি যদি কাজাখস্তানের নেতাদের বেলায় হত? আমি মনে করি সেক্ষেত্রে ক্ষমতার জন্য লড়াই শুরু হয়ে যেত এবং এর প্রভাব যে কি হত সে সম্বন্ধে ধারণা করা সম্ভব নয়। আমি আশা করি এ রকম বেদনাদায়ক ঘটনা যেন এ দেশে কখনোই না ঘটে। লর্ড-ফেম বলছে [রুশ ভাষায়]

ইহট এ ধরনের কাল্পনিক দৃশ্যাবলি দেখতে পাচ্ছেন স্বাধীনতার অন্তবর্তীকালীন অবস্থার কারণে [রুশ ভাষায়]:

পোলিশ বিমান দুর্ঘটনা আমাদের সঠিকভাবে প্রদর্শন করেছে যে, এমনকি তরুণ এবং উদীয়মান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে কাজাখস্তান প্রজাতন্ত্র খুব কমই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থায়িত্বের ক্ষমতা সংরক্ষণ করে-অন্তত সে রকম এক ঘটনার ক্ষেত্রে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .