টু শুট এন এলিফেন্ট একটি তথ্যচিত্রের নাম। এটি তৈরি করেছে স্প্যানিশ নাগরিক আলবার্টো এরেস এবং প্যালেস্টাইনের মোহাম্মেদ রুজাইলাহ। এক বছর আগে গাজায় সংঘটিত যুদ্ধের উপর এই চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়েছে। যুদ্ধের সমাপ্তির প্রখম বছর পূর্তি উপলক্ষে এই চলচ্চিত্র মুক্তি দেওয়া। ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে এই চলচ্চিত্রটিকে মুক্তি দেওয়া হয়। সারা বিশ্বে বিশেষভাবে এটিকে প্রদর্শন করা হয়।
হিশাম, মরোক্কোর এক ব্লগার। তিনি বর্তমানে ফ্রান্সে বাস করেন। তিনি তার ব্লগ দি মিররে এই চলচ্চিত্র নিয়ে লিখেছেন:
টু শুট এন এলিফেন্ট একটি তথ্যচিত্র যার নির্মাতা আলবার্টো এরেস এবং মোহাম্মদ রুজাইলাহ। ঠিক এক বছর আগে ইজরায়েল পরিচালিত অপারেশন কাস্টের সময়কার ঘটনা এটি। সে সময় ইজরায়েল অবরুদ্ধ গাজা এলাকার লোকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। ঘটনার সময় চলচ্চিত্রকার দুজন একদল বিদেশীর সাথে অবস্থান করছিল যারা প্যালেস্টাইন রেডক্রিসেন্টের এক এম্বুলেন্সে আটকা পড়ে যায়। ২১ দিন ধরে এই অভিযান চলে। এই আক্রমণ শুরু হয় ২৭ ডিসেম্বরে ২০০৮-এ, তা শেষ হয় ১৮ জানুয়ারি, ২০০৯-এ। সে সময় বিরামহীনভাবে বোমাবর্ষণ চলছিল। শিশু, নারী, বয়স্ক ব্যক্তি, উদ্ধারকর্মী সবার উপর ক্রমাগত গুলিবর্ষণ চলছে- জনসাধারণের বাসস্থান, হাসপাতাল, এম্বুলেন্স, স্কুল, মসজিদ, জাতিসংঘ সদর দপ্তর সব জায়গায় বোমা বর্ষণ করা হয়েছে। এই সব ঘটনায় ১৪০০ ফিলিস্তিনি মারা যায়। প্রায় এর সকলেই ছিল সাধারণ নাগরিক। একই সাথে ১৩ জন ইজরায়েলী সেনা নিহত হয়। এই ঘটনা সমাপ্তির এক বছরপূর্তি উপলক্ষে সারা বিশ্বে এই চলচ্চিত্রটিকে দেখানো হয়।
এই তথ্যচিত্রের শিরোনাম নেওয়া হয়েছে ব্রিটিশ ব্রিটিশ লেখক জর্জ অরওয়েলের লেখনী থেকে। জর্জ অরওয়েলে ব্রিটিশ শাসিত বার্মায় এক পুলিশ কমকর্তা ছিলেন। তিনি সাম্রাজ্যবাদী শাসনের ভয়াবহ দিকটি সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছেন। উপনিবেশে যে সমস্ত খুনের ঘটনা ঘটেছিল, তিনি তার সাথে জড়িয়ে পড়েছিলেন, এ সব অন্যায়ের ক্ষেত্রে যে মানবিক অনুভূতি তৈরি হয়েছিল তা ক্রমাগত এক ঘৃণায় রূপান্তরিত হয়ে পড়ে। আজও সেভাবে সবকিছু চলছে।
বিদেশী যে সমস্ত এক্টিভিস্টকে এই তথ্যচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে তাদের মধ্য রয়েছে ইতালীর নাগরিক ভিট্টরোও এরিওগনি। তিনি গেরিলা রেডিও-তে [ইতালী ভাষায়] ব্লগ করেন। তার সাথে ছিলেন কানাডার ইভা বার্টলেট এবং ব্রিটেনের ইওয়া জেসিউইজিক।
অনলাইনের বিভিন্ন স্থানে এই চলচ্চিত্রটি দেখা যাবে। ইউটিউবে এই চলচ্চিত্রের ভিন্ন ভিন্ন কিছু অংশ দেখা যাবে। এখানে প্রথম পর্বটি রয়েছে:
এই ছবিটিকে সেকেন্ড লাইফেও প্রদর্শীত করা হচ্ছে, এটি থ্রিডি বা তৃতীয় মাত্রার এক জগৎ।
টু শট এন এলিফেন্ট যখন প্যারিসে দেখানো হয়, সেই প্রদর্শনীতে হিশাম উপস্থিত ছিলেন:
এই ছবি যেন মুখে থাপ্পড় মারে। বির্পযস্ত এলাকার যে ছবি প্রদর্শীত হয়, তাতে লোকেরা এক গ্রহণযোগ্য আচরণ করে-হাইতির মত ভূমিকম্প বিপর্যস্ত এলাকার যে সমস্ত ছবি তাতে এই অনুভূতি হয়। কিন্তু আমি ধারণা করি যখন বিপর্যয় মানুষের দ্বারা সৃষ্টি হয়, তখন আবেগ এক নতুন মাত্রা লাভ করে। তখন তাকে বিচার করা যায় না (আদতে তা অবৈধ) এবং বলা যেতে পারে এ ধরনের বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব। উপচে পড়া এক রাগ এবং ন্যায়বিচার না পাওয়া, অসহায়ত্ব, এবং ধাক্কা খাওয়ার অনুভূতি আরো বেশি এর সাথে জড়িয়ে পড়ে এবং যুক্ত করে নেয়। আমি নিজে শঙ্কিত যে এই চলচ্চিত্র মৃত্যু এবং বেদনাকে নগ্নভাবে উপস্থাপন করছে। আমি উদ্বিগ্ন যে এই চলচ্চিত্র বদলে যাওয়া ব্যক্তিদের জন্য সততার বাণী দিয়ে না শেষ করা হয়। এর মধ্য যা রয়েছে তার সকল কিছু বাস্তব, তাকে নতুন করে বৈশিষ্টমণ্ডিত করা হয়নি, তাকে নতুন করে সাজানো হয়নি, এটি চাক্ষুস এক চিত্র। এটা বাস্তবেই ঘটে যখন সাধারণ লোকদের উপর বোমা মারা হয় বা সবাইকে শাস্তি দেওয়া হয়। এই ঘটনা গুয়ারনিকা, ওয়ারশ বা গাজায় একই ভাবে ঘটে। যদিও মানব মর্যাদা রক্ষার খাতিরে আমি এই চলচ্চিত্র নিয়ে খানিকটা দ্বিধা দেখতে পাচ্ছি, যেখানে চলচ্চিত্রের সীমানা লোকজনকে উদ্বিগ্ন করে তোলে এবং মৃতদেহরা এখানে মিথ্যা কথা বলে। আমি এখনো বিশ্বাস করি, যে সমস্ত লোকের এই চলচ্চিত্রায়নের সময় আঘাতের শিকার হয়েছিল, এই চলচ্চিত্র তাদের সম্মান করেছে।
জর্ডানের রাগদাহ বুট্রোস এই চলচ্চিত্রটি দেখার পর টুইট করেছে: