তিন বছর আগের এই দিনে (১৯ জানুয়ারি), তুর্কী-আমেরিকান সাংবাদিক হ্রান্ট ডিংককে, আরোগস সংবাদপত্রের অফিসের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি তুরস্কের রাজধানী ইস্তানবুল থেকে প্রকাশিত এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। যখন তিনি জীবিত ছিল তখন প্রায়শ:ই তাকে উপেক্ষা, ঘৃণা এবং অপছন্দ করা হত। তিনি তুর্কী এবং আর্মেনিয় উভয় পক্ষের জাতীয়তাবাদীরা দ্বারা এসব কুৎসার শিকার হতেন, তার সহনশীলতা ও সামঞ্জস্য বিধানপূর্ণ বার্তার কারণে। ডিংক ছিলেন এক পরিমিত কণ্ঠস্বর এবং শান্তির বার্তা বহনকারী মানুষ। এ কারণে ইয়ানইয়ান তাকে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের সাথে তুলনা করেছে।
[…] তিনি পরিষ্কারভাবে তার অপ্রথাগত বিশ্বাসকে ধারণ করে চলতেন এবং তার জন্য কোন ক্ষমা চাইতেন না। তিনি বুঝছিলেন যে যোগাযোগ ব্যবস্থাই একমাত্র মাধ্যম যার মধ্যে দিয়ে পরস্পরকে উপলব্ধি করা এবং শান্তি আনা সম্ভব। তিনি ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি তীক্ষ্ণভাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন “তুর্কী-আর্মেনিয়ার সম্পর্ক ১৯১৫ সালের সৃষ্ট ঘটনার গভীরতার বাইরে যাচাই করতে হবে”।
তিনি বেশীর ভাগ দেশত্যাগী মানুষের মত ছিলেন না। তিনি তুর্কীদের মাঝে বাস করতেন, নি:শ্বাস নিতেন এবং কাজ করতেন। তিনি ছিলেন এমন একজন মানুষ যিনি দু'টি জাতির বেদনাদায়ক ইতিহাসের মাঝেও জাতি দু'টিকে এক করার চেষ্টা করছিলেন। তিনি ছিলেন এমন একজন মানুষ, যিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে দেশ ছেড়ে যাওয়া আর্মেনিয়রা তুর্কীদের বিরুদ্ধে হৃদয়ের গভীরে যে ঘৃণা রয়েছে তা থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়া উচিত। এর জন্য কখনোই তাদের মানবাধিকার ও সংখ্যালঘু অধিকার ত্যাগ করা উচিত নয়। ডিংকের মতে ঘৃণা এবং হানাহানি চিহ্নিত বৈষম্যের সমর্থক নয়। তার মতে এরা সকল এর লুকানো উদ্দেশ্য থেকে উদ্ভূত হয়।
[…]
[…]এরকম এক যৌথ সংস্কৃতিতে এত বিশাল, উন্নত এক অবদান রাখার জন্য ধন্যবাদ। আপনি, যে নমনীয় নন, মাথা নীচু করেন না, অন্ধত্ব ভর করা এইসব দিক অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম, যার কারণে আমি আর্মেনিয় হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে গর্ব করি, একই সাথে সাংবাদিক হিসেবেও গর্ব করি।
ইতোমধ্যে তুরস্কের সাংবাদিকরা এই বেদনাদায়ক দিনটিকে স্মরণ করছে এবং তাদের কথায় প্রতিফলিত হয়েছে, তার মৃত্যুর উপর গঠিত তদন্ত কমিটি এখন পর্যন্ত কি ভাবে পরিচালিত হয়েছে।
আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি? এই খুনের রহস্যের কি কিনারা হয়েছে, যারা খুনের সাথে জড়িত তাদের কি শাস্তি হয়েছে? একটারও না। কিছুদিন আগে হ্রান্ট ডিংকের আইনজীবী এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এক প্রতিবেদনে তিনি উপসংহার টানেন এভাবে, এই খুনের রহস্য এখন থেকে তিন বছর আগে যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে। কেবল খুনী ওগুন সামসাট জেলে রয়েছে। সকলেই জানে যে কে গোয়েন্দা প্রতিবেদনকে উপেক্ষা করেছিল। এমনকি যদিও প্রথমে তারা এই ঘটনার উপর তদন্ত করেছিল, কিন্তু সকল ব্যক্তির উপর থেকে পুলিশ বাহিনী অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আমরা এই বিষয়ে কি উপসংহার টানতে পারি, অন্য কিছু বাদ দিলেও রাষ্ট্রের নিজস্ব পরিমাপে যাচাই করা বিষয় হিসেবে, কেউ এই ভয়াবহ খুনের ঘটনার বিচার নিশ্চিত করতে পারবে না।
শান্তিতে ঘুমাও হ্রান্ট।
ছবি: হ্রান্ট ডিংক @অননিক ক্রিকোরিয়ান/ ওয়ানওয়ার্ল্ড মাল্টিমিডিয়া-২০০৫