ইন্দোনেশিয়ায় কথিত নির্বাচনী জালিয়াতি সংক্রান্ত ‘নোংরা ভোট’ তথ্যচিত্র ভাইরাল

ইউটিউবে ‘নোংরা ভোট’-এর উদ্বোধনী শিরোনামের পর্দাছবি। ন্যায্য ব্যবহার।

ইন্দোনেশিয়ার ১৪ ফেব্রুয়ারি সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগে কথিত নির্বাচনী জালিয়াতির নিয়ে তথ্যচিত্র “নোংরা ভোট” মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথে ভাইরাল হয়ে ওঠে। তথ্যচিত্র পরিচালনা করেন সাংবাদিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সক্রিয় প্রায়শই ইন্দোনেশিয়ার সামাজিক, পরিবেশগত ও রাজনৈতিক সমস্যা সংক্রান্ত  অনুসন্ধানী তথ্যচিত্রের জন্যে পরিচিত কর্মী দান্ধি লাকসোনো

নোংরা ভোট চলচ্চিত্রটি কথিত পদ্ধতিগত, কাঠামোগত ও ব্যাপক নির্বাচনী জালিয়াতির জটিলতার কথা বলে। এটি অনুসারে পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া জুড়ে বর্তমান রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদোর (ডাকনাম জোকোভি) নানা কাজের মধ্যে নির্বাচনী ব্যবস্থাতে কারসাজি, সামাজিক সহায়তা কর্মসূচির কৌশলগত বন্টনের মাধ্যমে ভোটারদের প্রলুব্ধ করা এবং গ্রাম ও সম্প্রদায়ের নেতাদের বল্প্রয়োগ ইন্দোনেশিয়ার গণতন্ত্রের জন্যে হুমকিস্বরূপ।

দ্বিতীয় মেয়াদের শেষের দিকে উইদোদো নতুন একটি রাজনৈতিক রাজবংশ তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যে তিনি করছেন। অস্বীকার করা সত্ত্বেও তার জ্যেষ্ঠ পুত্র সোলো শহরের মেয়র জিব্রান রাকাবুমিং রাকা প্রাক্তন স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডার প্রাবোও সুবিয়ান্তোর উপ-রাষ্ট্রপতি এবং ইন্দোনেশিয়ার দীর্ঘতম শাসক রাষ্ট্রপতি সুহার্তোর প্রাক্তন জামাতা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে ২০২০ সালে নিয়োগ লাভের আগে অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সুবিয়ান্তোকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

উইদোদোর কনিষ্ঠ পুত্র কায়েসাং পেঙ্গারেপকে তরুণ নাগরিকদের লক্ষ্য করা একটি রাজনৈতিক দল ইন্দোনেশীয় সংহতি পার্টির (পিএসআই) নেতা মনোনীত করা হয়। তার দুই ছেলে ছাড়াও উইদোদোর জামাতা ইন্দোনেশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম শহুরে এলাকা মেদানের একজন সিটি মেয়র।

একটি সংবাদ সম্মেলনে সুবিয়ান্তোর প্রচার দল তথ্যচিত্রতে করা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। “চলচ্চিত্রটিতে বলা বেশিরভাগ কথা অপবাদজনক। এটি  খুবই অনুমাননির্ভর ও অবৈজ্ঞানিক একটি ঘৃণামূলক বর্ণনা,” বলেছেন সুবিয়ান্তোর প্রচার দলের সহ-সভাপতি হাবিবুরোখমান।

ইন্দোনেশিয়ার নির্বাচনী সংস্থা (কেপিইউ) অনুসারে ২০ কোটিরও বেশি ইন্দোনেশীয় ১৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি এবং আইনসভা নির্বাচনে ভোটদানে যোগ্য হলেও সেই ভোট এখনো গোনা হচ্ছে; অনানুষ্ঠানিক ফলাফল ও কেন্দ্রের বাইরের জরিপ বড় ব্যবধানে প্রবোও ও জিব্রানের ইঙ্গিত দিয়েছে

প্রাথমিকভাবে নিজ ইউটিউব চ্যানেলে তথ্যচিত্রটি আপলোডের কিছুক্ষণ পরেই ইউটিউবে এটির অনুসন্ধান অপ্রত্যাশিত বাধার সম্মুখীন না হওয়া পর্যন্ত কয়েক দিনে ১.৩ কোটি বারেরও বেশি দেখা হয়েছে। তথ্যচিত্রটির প্রবেশযোগ্যতা নিশ্চিত করতে ইন্দোনেশীয় আইন ও নীতি কেন্দ্র  (পিএসএইচকে) এটি পুনরায় আপলোডের করে। ভিডিওটি পুনরায় আপলোড করার ৪৮ ঘন্টা পরে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮০ লক্ষ দর্শক অর্জন করে। লক্ষ লক্ষ দর্শক ও যথেষ্ট সম্পৃক্ততা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনের সপ্তাহে পিএসএইচকে ইউটিউব চ্যানেলের আপলোডার কেন তথ্যচিত্রটিকে ব্যক্তিগত হিসেবে সেট করেছে তা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি।

ইন্দোনেশিয়া সরকার অনলাইন বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপের প্রবণতা দেখিয়েছে। দেশের নিয়ন্ত্রক কাঠামো, বিশেষ করে এর ইলেক্ট্রনিক তথ্য ও লেনদেন আইনের (ইউইউআইটিই) মাধ্যমে মানহানি, ঘৃণামূলক বক্তব্য এবং ভুল তথ্যসহ বিস্তৃত মানদণ্ডের অধীনে ডিজিটাল বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণ ও কখনো কখনো সীমাবদ্ধ করার ক্ষমতা কর্তৃপক্ষকে দেয়

অপবাদের অভিযোগ

দান্ধি লাকসোনোসহ চলচ্চিত্রটিতে অবদান রাখা নীতি গবেষক জয়নাল আরিফিন মোক্তার, ফেরি আমসারি ও বিভিত্রি সুসান্তির বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অপবাদের অভিযোগ করা হয়েছে।

ইন্দোনেশীয় সান্ত্রি যোগাযোগ ফোরাম (ফকসি) নামে ইসলামিক বোর্ডিং স্কুলের ছাত্রদের (স্থানীয়ভাবে “সান্ত্রি” নামে পরিচিত) একটি সম্প্রদায়ের কাছ থেকে অভিযোগটি এসেছে। ফকসি আপাতদৃষ্টিতে রাজনৈতিক দল পিএসআইয়ের সাথে যুক্ত, যার নেতৃত্বে রয়েছেন রাষ্ট্রপতি উইদোদোর কনিষ্ঠ পুত্র।

“প্রচারণার নিয়ম লঙ্ঘন” উল্লেখ করে স্থান ব্যবস্থাপনা অনুষ্ঠানটি বাতিল করলে জাকার্তায় “নোংরা ভোট”-এর পরিকল্পিত প্রকাশ্য প্রদর্শনীটির বিঘ্ন ঘটে।

অবদমিত না হয়ে কিছু নেটনাগরিক তাদের ব্যক্তিগত ইউটিউব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে একই সাথে প্রদর্শনী দেখা ও মন্তব্য করার সুযোগ সম্পন্ন সক্রিয় প্রকাশ্য প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এই পদক্ষেপটি বাতিল এড়িয়ে ডিজিটাল বিধিনিষেধ সত্ত্বেও নেটদনাগরিকদের চলচ্চিত্রটি দেখার সুযোগ দেয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .