অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশ টুভালু জলবায়ু পরিবর্তনের কঠোর প্রভাব মোকাবেলা করতে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। উভয় সরকারই এটিকে “আশার বাতিঘর” হিসেবে বর্ণনা করলেও কিছু জলবায়ু কর্মী এটিকে “প্রতিরক্ষা চুক্তি” হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
অস্ট্রেলিয়া-টুভালু ফালেপিলি ইউনিয়ন টুভালুর অন্তত ২৮০ জন নাগরিককে প্রতি বছর অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা বা কাজ করার অনুমতি দেবে। টুভালি শব্দ ফালে পিলি’র অর্থ “আপনার প্রতিবেশীর দেখাশোনা করা।”
নিচু প্রবালপ্রাচীরের একটি দেশ টুভালু তার ১১,২০০ জনসংখ্যা নিয়ে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির প্রচণ্ড ঝুঁকিতে রয়েছে।
চুক্তির নথিতে বলা হয়েছে “অস্ট্রেলিয়া টুভালুর নাগরিকদের অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের জন্যে একটি বিশেষ মানব চলাফেরার পথের ব্যবস্থা করবে।” অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং আরো বলেছেন:
‘ফালেপিলি’ প্রতিবেশীদের যত্ন নেওয়া, ভাগাভাগি করা ও পরস্পরের সুরক্ষার দায়িত্ব প্রতিফলিত করে।
ফালেপিলি ইউনিয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে শ্রদ্ধা, এবং আমরা আমাদের জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও মঙ্গল সমর্থনের জন্যে পরস্পরের উপর নির্ভর করবো।
টুভালুর প্রধানমন্ত্রী কাউসিয়া নাতানো জোর দিয়ে বলেছেন “এটি একটি মাইলফলক ছাড়াও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, স্থায়িত্ব ও সমৃদ্ধি নিশ্চিতের আমাদের যৌথ মিশনে একটি বিশাল উল্লম্ফন।
এটি সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকিতে থাকা প্রশান্ত মহাসাগরীয় কোনো দেশের বাসিন্দাদের প্রবেশাধিকার দেওয়া অস্ট্রেলিয়ার প্রথম জলবায়ু-সম্পর্কিত চুক্তি। চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ এক্সে (পূর্বে টুইটার) নিম্নলিখিত পোস্ট করেছেন:
Australia and Tuvalu are family. And today we are elevating our relationship to a more integrated and comprehensive partnership.
Prime Minister Natano and I signed a treaty that will safeguard Tuvalu’s future while respecting sovereignty, to be known as the ‘Falepili Union’. pic.twitter.com/stYYMBPAc4
— Anthony Albanese (@AlboMP) November 10, 2023
অস্ট্রেলিয়া ও টুভালু পরিবার। এবং আজ আমরা আমাদের সম্পর্ককে আরো সমন্বিত ও ব্যাপক অংশীদারিত্বে উন্নীত করছি।
‘ফালেপিলি ইউনিয়ন’ নামে পরিচিত প্রধানমন্ত্রী নাতানো ও আমার স্বাক্ষরিত চুক্তিটি টুভালুর সার্বভৌমত্বকে সম্মানের পাশাপাশি ভবিষ্যতকে রক্ষা করবে।
তবে পরিবেশবাদী কর্মীরা লক্ষ্য করেছে চুক্তিটি জীবাশ্ম জ্বালানী নিঃশেষের বিষয়ে নীরব। টুভালু জলবায়ু কর্ম নেটওয়ার্ক অস্ট্রেলিয়াকে আরো সিদ্ধান্তমূলক প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার জন্যে জলবায়ু সংকটের আবশ্যকতা স্বীকার করে জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা কমাতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য। টুভালুবাসীদের বাসস্থান বা নাগরিকত্বের অধিকার প্রদান একটি সহানুভূতিশীল প্রতিক্রিয়া হলেও তা সমুদ্রপৃষ্ঠের অসহনীয় বৃদ্ধিকে থামায় না।
এক্সের একটি সূত্রে সক্রিয় কর্মী লাভেতানালাগি সেরু লিখেছেন কথাগুলোকে অস্ট্রেলিয়ার দৃঢ় পদক্ষেপসহ সমর্থন করা উচিত:
চুক্তিতে পারিবারিক ভাষা ও অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু নীতির মধ্যে সংযোগ নেই। পরিবারে সমর্থন ও ভাগাভাগির দায়িত্ব প্রত্যাশিত। জলবায়ু নীতিমালা বৈশ্বিক প্রত্যাশার কম হলে কীভাবে সমঝোতা হবে?
জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে বাগাড়ম্বর ও কর্মের মধ্যে ব্যবধান পূরণ করা অস্ট্রেলিয়ার জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপের দেশগুলি বাস্তব ও আসন্ন হুমকির সম্মুখীন বলে এই চুক্তিগুলির শুধু প্রতীকী অঙ্গভঙ্গির পরিবর্তে প্রকৃত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করা উচিত।
গবেষক তাউকিই কিতারা ও ক্যারোল ফারবোটকো একটি সম্পাদকীয়তে লিখেছে, চুক্তিটি “টুভালুবাসী জনগণকে জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রদান করে না।” লেখাটিতে তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছে:
টুভালুর অভিবাসীরা যাতে অস্ট্রেলিয়ায় গৃহহীনতার সমস্যায় না পড়ে তার জন্যে অস্ট্রেলীয় সরকার কী ব্যবস্থা নেবে?
তারা আরো বলেছে চুক্তিটি সম্ভাব্যভাবে টুভালুর সার্বভৌমত্বকে ক্ষুন্ন করবে: “এটি জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার অঙ্গীকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটিকে এড়িয়ে গিয়ে সার্বভৌমত্বকে সম্মানের বিষয়ে যথেষ্ট বাগাড়ম্বর করলেও জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যুতে টুভালুর সার্বভৌমত্বকে বেশ স্পষ্টভাবে নষ্ট করেছে।”
চুক্তিটি অস্ট্রেলিয়াকে টুভালুর ভূখণ্ডে প্রবেশের অনুমতি এবং ছোট দ্বীপের দেশটির সাথে জড়িত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রতিরক্ষা-সম্পর্কিত বিষয়ে ভেটো ক্ষমতা দিয়েছে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় সংবাদদাতা বারবারা ড্রেভার লিখেছেন চুক্তিটিকে “টুভালুতে অস্ট্রেলিয়া প্রতিরক্ষা চুক্তি” বলা উচিত।
একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মতো সাজানো অস্ট্রেলিয়া-টুভালু ফালেপিলি ইউনিয়নের অর্থ এটি উভয় দেশের ক্ষেত্রে কাজ করবে – সত্যিই এটিকে টুভালুতে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা চুক্তি বলা উচিত।
কারণ এটা ঠিক তাই।
কীভাবে এটি টুভালুতে শাসনকে প্রভাবিত করবে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন:
অস্ট্রেলিয়া প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সব বিষয়ে টুভালুকে বেঁধে রেখেছে। অস্ট্রেলিয়ার অনুমোদন ছাড়া টুভালু কোনো অংশীদারিত্বে প্রবেশ করতে বা অন্য কারো সাথে জড়িত হতে পারবে না।
এটি অবকাঠামো পর্যন্ত বিস্তৃত। মনে করুন জাপানের মতো কোনো দেশ টুভালুকে বাইরের দ্বীপগুলির একটিতে একটি ঘাট তৈরি করে দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও অস্ট্রেলিয়াকে এটি অনুমোদন করতে হবে।
3/ Article 4.3: “Tuvalu shall provide Australia rights to access, presence within, and overflight of Tuvalu’s territory, if the activities are necessary for the provision of assistance requested by Tuvalu under this agreement. ” pic.twitter.com/XvuEXq3hoz
— Dr Anna Powles (@AnnaPowles) November 10, 2023
৩/ ধারা ৪.৩: ” এই চুক্তির অধীনে টুভালুকে প্রয়োজনবোধে সহায়তার অনুরোধ করা হলে টুভালু অস্ট্রেলিয়াকে টুভালুর অঞ্চলে প্রবেশ, উপস্থিতি এবং উপর দিয়ে উড়ার অধিকার প্রদান করবে।”
চুক্তিটি দুই দেশের জন্যে একটি মাইলফলক হলেও টুভালুতে আগামী বছরের নির্বাচনে নতুন সরকার নির্বাচিত হলে এটি তখনো প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।