
আন্তোয়ানেত লাতুফ – পর্দাছবি: টিইডিএক্স ইউটিউব ভিডিও ‘বিপ্রতীপ বৈষম্য? যার অস্তিত্ব নেই…কিন্তু ‘লোক দেখানো নিয়োগ’ আছে’ অক্টোবর ২০২২। ন্যায্য ব্যবহার।
অস্ট্রেলীয় সম্প্রচার কর্পোরেশন (এবিসি) গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি পোস্ট ভাগাভাগি করায় ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩ লেবাননের অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক আন্তোয়ানেত লাতুফকে বরখাস্ত করার পরে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ইনস্টাগ্রামে মানবাধিকার পর্যবেক্ষক (এইচআরডব্লিউ) ভিডিও পুনরায় পোস্ট করে সামাজিক গণমাধ্যম নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগে স্বল্প-মেয়াদী রেডিও হোস্ট হিসেবে হঠাৎ করে তার চাকুরি বাতিল করা হয়।
লাতুফ মন্তব্যে আরো বলেন: “এইচআরডব্লিউ যুদ্ধের একটি হাতিয়ার হিসেবে অনাহারের প্রতিবেদন করছে।” এবিসি তার সিদ্ধান্তের ন্যায্যতা দিয়ে বলেছে “তিনি বিতর্কিত বিষয় সামাজিক গণমাধ্যমে পোস্ট না করার নির্দেশনা মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছেন বা অস্বীকার করেছেন।” অথচ এবিসি নিজেই টিভি সংবাদে এইচআরডব্লিউ-এর দাবিটি কভার করেছে।
সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত কর্পোরেশনটি জাতীয় সম্প্রচারকারী, যার আইন প্রদত্ত স্বাধীনতা রয়েছে। এর বোর্ড ও সভাপতিকে সরকার নিযুক্ত করে।
পরবর্তীতে এবিসি সাংবাদিক নুর হায়দার গাজা সংঘাতের সম্প্রচারকারীর কভারেজ ও সাংস্কৃতিকভাবে ভিন্ন কর্মীদের আচরণের কারণে পদত্যাগ করেন। তিনি এক্সে (পূর্বের টুইটারে) পোস্ট করেছেন:
Does this mean all ABC employees can’t share info from @hrw?
What if it’s about the treatment of Uyghurs in China or protestors in Iran?
Does this rule exist exclusively for findings that are critical of Israel?
Did this directive apply only to @antoinette_news and why? https://t.co/vqsb3ocW82
— Nour Haydar (@NourHaydar) January 16, 2024
এর মানে কি সকল এবিসি কর্মী @ এইচআরডব্লিউ থেকে তথ্য ভাগাভাগি করতে পারবে না?
চীনের উইঘুর বা ইরানের বিক্ষোভকারীদের সাথে আচরণের বিষয়ে হলে?
এই নিয়ম কি শুধু ইসরায়েলের সমালোচনামূলক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?
এই নির্দেশনা কি শুধু @আন্তোয়ানেত_সংবাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তাহলে কেন?
হায়দারেরও লেবাননের ইতিহাস রয়েছে।
মাস্তোদন ব্যবহারকারী মিলেনিয়ালজিরো সামাজিক গণমাধ্যমের অনেক লোককে নিয়ে একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন:
কেউ কি মনে করে ইসরায়েলকে সমর্থন করে সামাজিক গণমাধ্যমে একটি বার্তা পোস্ট করার জন্যে কোনো এবিসি প্রতিবেদককে বরখাস্ত করা হবে?
আর্টেমিস তার প্রতিক্রিয়ায় আরো বলেছে:
আমি আসলে এই কয়েক মাস পর্যন্ত (এবং দীর্ঘকাল ধরে) বুঝতে পারিনি যে ইসরায়েল সম্পর্কে খারাপ কথা বলা কতোটা অস্বস্তির। একটি নির্দিষ্ট দেশের সরকারের সমালোচনাকারী সবাইকে বরখাস্ত করার প্রচারণা চালানোতে স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের কিছু নেই।
এবিসির সাংবাদিকরা ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে। তাদের ইউনিয়ন এমইএএ (গণমাধ্যম, বিনোদন ও শিল্পকলা জোট) লাতুফকে শক্ত সমর্থন দিয়েছে:
The decision to sack Antoinette Lattouf from her role as an ABC radio presenter over sharing a social media post from a reputable human rights organisation is incredibly disturbing. Read the full statement: https://t.co/B1IAkQkl3W #MEAAmedia pic.twitter.com/a2Xt7wyft3
— MEAA (@withMEAA) December 21, 2023
স্বনামধন্য মানবাধিকার সংস্থার একটি সামাজিক গণমাধ্যম পোস্ট ভাগাভাগি করার জন্যে এবিসি রেডিও উপস্থাপকের ভূমিকা থেকে আন্তোয়ানেত লাতুফকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তটি অবিশ্বাস্যভাবে বিরক্তিকর। সম্পূর্ণ বিবৃতিটি পড়ুন
অভিযোগ রয়েছে এবিসি ব্যবস্থাপনা ইসরায়েলের জন্যে আইনজীবী নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গোষ্ঠীর মাধ্যমে ইসরায়েলপন্থী তদবিরকারীদের প্রচারণায় প্রভাবিত হয়েছে।
আন্তোয়ানেত ন্যায্য কর্মসংস্থান কমিশনের কাছে একটি বেআইনি বরখাস্তের মামলা করলেও লাতুফ ও এবিসির মধ্যে মধ্যস্থতা আলোচনা সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে. লাতুফ এক্সে একটি ভিডিও প্রতিক্রিয়া পোস্ট করেছেন। তিনি তার বরখাস্তের সাথে বাকস্বাধীনতার প্রশ্ন ছাড়াও বর্ণবাদ জড়িত থাকার কথা বলেছেন:
Some words following my Fair Work Commission conciliation with the ABC today.
This is such an important case because it is not just about me.#NoFearNoFavour pic.twitter.com/gDqlH89CkI— Antoinette Lattouf (@antoinette_news) January 18, 2024
ন্যায্য কর্মসংস্থান কমিশনের মাধ্যমে এবিসি’র সাথে আমার আজকের আলোচনার পর কিছু বলার আছে।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা কারণ এটি শুধু আমার (একার) ব্যাপার নয়। #নয়ভয়_নয়পক্ষপাতিত্ব
মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা উন্নীতকরণ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ্য ফেলো ডেনিস মুলার কথোপকথনে কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন:
একটি হলো সামাজিক গণমাধ্যমে পোস্ট করা সংবাদের বিষয়গুলি নিয়ে সংবাদ কর্মীদের মোকাবেলা করার সমস্যা। আরেকটি হলো বহিরাগত আক্রমণ থেকে সাংবাদিক ও উপস্থাপকদের রক্ষা করার মেরুদণ্ড আছে কিনা। তৃতীয়টি হলো সংগঠনটি সাংস্কৃতিকভাবে বিভিন্ন পটভূমির কর্মীদের সম্মান ও সমর্থন করতে সক্ষম কিনা।
প্রবীণ অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক ও টিভি সংবাদ উপস্থাপক মেরি কোস্টাকিডিস জননীতি ওয়েবসাইট পার্লস অ্যান্ড ইরিটেশনস-এ কঠোর ভাষায় কথা বলেছেন:
লাতুফের ঘটনাটি দেখায় মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে পশ্চিমা নেতাদের শ্বেতাঙ্গ ঔপনিবেশিক আধিপত্যবাদী মনোভাবের একই মাত্রা কীভাবে গণসম্প্রচারের নেতৃত্বে ঢুকে গিয়ে বন্ধন তৈরি করেছে।
… গণমাধ্যমে একটি একতরফা আখ্যান জনসাধারণের মধ্যে অজ্ঞতা তৈরি করে আমাদের নেতাদেরকে ইসরায়েলের জন্যে প্রশ্নাতীত সমর্থন বজায় রাখতে সক্ষম করে, শব্দ ছাড়াও সরবরাহ ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এবং সম্ভবত সশস্ত্র বাহিনীর মতো করে। আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে হস্তক্ষেপ ও প্রশ্ন করার চেষ্টা গণতন্ত্রবিরোধী।
এবিসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড অ্যান্ডারসন সমস্ত কর্মীদের একটি ইমেল পাঠিয়ে লাতুফের দাবি ও বহিরাগত চাপের কোনো প্রভাব অস্বীকার করেছেন।
ন্যায্য কর্মসংস্থান কমিশনের মধ্যস্থতার সময় এবিসি জাতিগত বা রাজনৈতিক মতামত তার চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তের অংশ থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
তার আইনি খরচ যোগানো গোফান্ডমি তহবিল সংগ্রহকারীসহ কয়েকটি অনলাইন আবেদন এবিসিকে লাতুফের পুনঃনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে৷
গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদন অনুসারে সর্বশেষ পরিবর্তন হিসেবে এবিসি এখন লাতুফকে বরখাস্ত না করার দাবি করছে:
এবিসি তার ব্যাখ্যায় লিখেছে (লাতুফ) উপস্থাপনার স্বল্প সময়ের মধ্যে কার বিতর্কিত বিষয়গুলি সামাজিক গণমাধ্যমে পোস্ট না করার নির্দেশনা মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছেন বা অস্বীকার করেছেন বলে সিডনির সকালের নৈমিত্তিক উপস্থাপক হিসেবে লাতুফকে তার পাঁচটি শিফটের শেষ দুটি সম্পাদনের “অপ্রয়োজনীয়তা”র সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
এক্সে লাতুফ তার কথামতে মিষ্টিকথার এই ব্যবহারকে উপহাস করে বলেছেন:
“If I wasn’t sacked what was it? I’m keen to hear all the creative euphemisms that will be used to try and explain this backflip to me, ABC staff and Australians who are very concerned about their public broadcaster. Was I unshackled? Liberated? Untied?”
— Antoinette Lattouf (@antoinette_news) January 22, 2024
“আমাকে বরখাস্ত না করা হলে এটা কী? আমার উপর এই ব্যাকফ্লিপটি ব্যাখ্যা করার জন্যে এসব সৃজনশীল মিষ্টি শব্দগুচ্ছ শুনতে খুব আগ্রহী আমি এবং এবিসি কর্মী ও তাদের সরকারি সম্প্রচারক নিয়ে সম্পর্কে খুব উদ্বিগ্ন অস্ট্রেলীয়রা। আমি কি বন্ধনহীন, মুক্ত, বা খোলা ছিলাম?”
এবিসি সাংবাদিকদের একটি সভা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড অ্যান্ডারসনের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে অনাস্থা প্রস্তাব পাস করেছে। সিদ্ধান্তে অন্তর্ভুক্ত:
কর্মী ও জনগণের আস্থা ফিরে পেতে জ্যেষ্ঠ্য ব্যবস্থাপনার হস্তক্ষেপ প্রয়োজন:
১. ভয় বা পক্ষপাত ছাড়া সাংবাদিকতাকে সমর্থন।
২. সমালোচনা ও আক্রমণের সম্মুখীন কর্মীদের সমর্থনের একটি সাংস্কৃতিকভাবে অবহিত প্রক্রিয়া তৈরি করতে ইউনিয়নগুলির সাথে সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করা।
৩. নিরাপত্তার অভাব ও বৈষম্যের শিকার অ-শ্বেতাঙ্গ সাংবাদিকদের বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ।
৪. একটি পরিচ্ছন্ন ও ন্যায্য সামাজিক গণমাধ্যম নীতি তৈরি করতে ইউনিয়নগুলির সাথে কাজ করা।
৫. অভিযোগের বিষয় সাংবাদিকদের অবহিত ও সমর্থনের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ অভিযোগ প্রক্রিয়া বজায় রাখা।
মিডিয়াউইক অনুসারে এবিসি বৈশ্বিক বিষয়ক সম্পাদক জন লিয়ন্স এই পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিয়ে কথা বলেছেন। লিয়ন্স এবিসি’র জন্যে গাজা সংঘর্ষের বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রতিবেদন করছেন।
ডেভিড অ্যান্ডারসন তাদের উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করতে আগামী সপ্তাহে কর্মীদের সাথে দেখা করতে সম্মত হয়েছেন।
এদিকে পথচারী টিভি, হোয়াটসঅ্যাপ গোষ্ঠী জিউইশ-এ লাতুফের বিরুদ্ধে আরেকটি সমন্বিত তদবির অভিযানের দাবি করেছে। অস্ট্রেলীয় সৃজনশীল ও শিক্ষাবিদ, অস্ট্রেলীয় গবেষক ও সাংবাদিক ক্লেয়ার কনেলি পোস্ট করেছেন:
‘Screenshots show a coordinated letter campaign that encouraged the group’s 628 members to complain to Buttrose, ABC Managing Director David Anderson and Federal Communications Minister Michelle Rowland over the ABC’s hiring of Lattouf.’ pic.twitter.com/hSj831HGKQ
— Claire Connelly (@_ClaireConnelly) January 22, 2024
“পর্দাছবিগুলি একটি সমন্বিত চিঠি প্রচার দেখায় যা গোষ্ঠীর ৬২৮ সদস্যকে বাতরোস, এবিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড অ্যান্ডারসন ও কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রী মিশেল রোল্যান্ডের কাছে এবিসির লাতুফকে নিয়োগের বিষয়ে অভিযোগ করতে উৎসাহিত করেছিল।”
এবিসি বোর্ডের একটি জরুরী সভা ২৩ জানুয়ারি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের উপর আস্থার সর্বসম্মত ভোট পাস করে।
এখনো বিরোধ চললেও ব্যঙ্গাত্মক ওয়েবসাইট শোভেল এটি হালকাভাবেই নিয়েছে:
এবিসি বলেছে সনদ মেনে সাংবাদিক আন্তোয়ানেত লাতুফের চাকরির অবসান ঘটালেও তারা তাকে বরখাস্ত করেনি।
“গল্পের উভয় দিক সরবরাহ করা আমাদের দায়িত্ব,” এবিসির একজন মুখপাত্র বলেছেন। “সুতরাং কেউ কেউ বলতেই পারে যে মিজ লাতুফকে বরখাস্ত করা হয়েছে, অন্যরা বলবে তাকে অন্য সুযোগগুলি পাওয়ার জন্যে মুক্ত করা হয়েছে। কেউ বলবে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, অন্যরা বলবে চুক্তি-মুক্ত করা হয়েছে। সব মতামতই শুনতে হবে।