কিরগিজস্তানে ভাষাগত একটি নতুন আইন নিয়ে রুশ কূটনীতিকদের প্রতিক্রিয়া ঔপনিবেশিক অতীত ফিরিয়ে এনেছে

রাজধানী বিশকেকের অনুষ্ঠানে কিরগিজস্তানের পতাকা উত্তোলনের প্রক্রিয়া চলছে। বিজন কেজিজেড ইউটিউব চ্যানেল থেকে নেওয়া পর্দাছবি। ন্যায্য ব্যবহার।

কিরগিজস্তানের রাষ্ট্রপতি সাদির জাপারভ ১৭ জুলাই রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কিত সাংবিধানিক আইনে স্বাক্ষর করেন। সংসদ ৩১ মে আইনটি গ্রহণের সময় এর সভাপতি “ঐতিহাসিক আইন” দিয়ে তার সহকর্মীদের অভিনন্দন জানান। লক্ষ্য হলো সংবিধানের ১৩ অনুচ্ছেদ বাস্তবায়ন করা, যা অনুসারে কিরগিজ হলো রাষ্ট্রভাষা, এবং এর ব্যবহারের পদ্ধতি সাংবিধানিক আইন দ্বারা নির্ধারিত। নতুন আইনটি কিরগিজ ভাষার ব্যবহার, রাষ্ট্রভাষা নীতির বাস্তবায়ন ও এর উন্নয়নের শর্ত তৈরি করতে রাষ্ট্রীয় সংগঠন, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলির বাধ্যবাধকতাগুলির জন্যে আইনি ভিত্তি স্থাপন করেছে।

কার্যত এটি রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সরকার সংস্থা ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগের জন্যে একটি কাজের ভাষা বানিয়ে কিরগিজ ভাষার ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। এখন সরকারি কর্মচারী, সাংসদ, শিক্ষক, বিচারক, প্রসিকিউটর, আইনজীবী, চিকিৎসাকর্মী এবং অন্যান্য দলের রাষ্ট্রভাষা জানা বাধ্যতামূলক। ভৌগলিক নাম, শিক্ষাগত ও বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে কিরগিজ ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক। এছাড়াও বেসরকারি কেন্দ্রসহ টেলিভিশন ও রেডিও সংস্থাগুলিকে তাদের অনুষ্ঠানের কমপক্ষে ৬০ শতাংশ কিরগিজ ভাষায় সম্প্রচার করতে হবে।

তবে ভাষাগত কারণ ছাড়াও নতুন আইনটি শিরোনাম হয়েছে। এটি গ্রহণের পরপরই ২ জুন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন “বর্তমান আকারে এটি কিরগিজ ভাষা বলতে না পারা প্রজাতন্ত্রের নাগরিকদের জন্যে কিছু অসুবিধা তৈরি করতে পারে।” তিনি আরো বলেন রাশিয়া আশা করে কিরগিজস্তান “কিরগিজ ভাষার বিকাশ এবং রুশ ভাষার সমর্থন ও প্রচার উভয় লক্ষ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ভাষা নীতি অনুসরণ করবে।” রুশ কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ এখানেই থেমে থাকেনি।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ২৪ জুলাই উল্লেখ করেছেন এই আইন নিয়ে প্রথম আলোচনা প্রকাশিত হলে রুশ কর্তৃপক্ষ তাদের কিরগিজ সহকর্মীদের “এটি সম্পূর্ণরূপে গণতান্ত্রিক নয়” বলে সতর্ক করেছিল। তিনি বেসামরিক কর্মচারী ও অন্যান্য শ্রেণীর নাগরিকদের কিরগিজ জানার প্রয়োজনীয়তাকে অগণতান্ত্রিক বলে মনে করেন। জাপারভ দ্রুত এই দাবি খণ্ডন করে বলেন ল্যাভরভ “আপাতদৃষ্টিতে আইনটি পড়েননি” এবং আইনটি “রুশ ভাষার প্রতি বৈষম্য করে না।”

জাপারভ কিরগিজস্তানে বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুশ ভাষার সুরক্ষার বিষয়ে তার মূল্যায়নে সঠিক। এটি এমন কয়েকটি দেশের একটি যার সংবিধান রুশকে সরকারি মর্যাদার নিশ্চয়তা দিয়ে একটি ঔপনিবেশিক অতীত ও সোভিয়েত উত্তরাধিকারের একটি চিহ্ন হিসেবে জনজীবন ও সরকারি কাঠামোতে এর ব্যাপক ব্যবহারের সুযোগ দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ১৯৯১ সালে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে রুশ ভাষাকে পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহারের অনুমতি দিয়েই কিরগিজস্তান কিরগিজ ভাষার উন্নয়ন, মর্যাদা পুনরুদ্ধার ও এর ব্যাপক ব্যবহারকে উদ্দীপিত করতে কাজ করছে।

সোভিয়েত ভাষা নীতিমালা কিরগিজ ভাষার উন্নয়ন ও মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করে এটিকে মূলত গার্হস্থ্য ও লোককাহিনীতে ব্যবহারের একটি “নিম্ন” ভাষাতে পরিণত করে। বিজ্ঞান, শিল্প, শাসন ও সাহিত্যের জন্যে স্থানীয় অভিজাতরা “উচ্চ” রুশ ভাষা ব্যবহার করত। পেরেস্ত্রোইকার সময়ে শুধু ১৯৮৯ সালে কিরগিজকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯৮৯ সাল নাগাদ কিরগিজস্তানের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ রুশ ভাষায় কথা বললেও ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ৫০ শতাংশে নেমে আসে। স্বাধীনতার পর থেকে দেশটি রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত জাতীয় কমিশন প্রতিষ্ঠা করে কিরগিজ ভাষা উন্নয়নে তিনটি জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

কিরগিজ ভাষা জাতীয় পরিচয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি কিরগিজ জনগণের একটি পৃথক জাতিগোষ্ঠী ও কিরগিজস্তান একটি জাতি হিসেবে টিকে থাকার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ঔপনিবেশিক অতীত থেকে দূরে সরে যেতে, এর অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উদযাপন করতে এবং অস্তিত্ব সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধার করতে এর আরো উন্নয়ন প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে নতুন আইনটি সঠিক দিকের একটি পদক্ষেপ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .