কেনিয়া কেন নারীহত্যা বৃদ্ধির নিয়ে লড়াই করছে?

শনিবার, ২৭ জানুয়ারি, নারী ও নারীবাদীরা কেনিয়ার নারীহত্যার প্রতিবেদন বৃদ্ধির প্রতিবাদে ও জবাবদিহিতার দাবিতে অনলাইনে ও রাস্তায় সমাবেশ করেছে

পূর্বআফ্রিকীয় অনুসারে, ‘নারীহত্যার বিরুদ্ধে নারীবাদী মিছিল’ নামে দেশব্যাপী বিক্ষোভটি নাইরোবি, মোম্বাসা, কিসুমু, নাকুরু, এলডোরেট, হোমাবে, তুরকানা, কিলিফি, মাচাকোস, কিসি ও নয়েরি এই ১১টি কাউন্টিতে অনুষ্ঠিত হয়, যাতে ১০,০০০ জনেরও বেশি অংশ নিয়েছে

যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনু্সারে, নারীহত্যা নথিভুক্তির একটি বেসরকারি সংস্থা ফেমিসাইড কাউন্ট কেনিয়া গত পাঁচ বছরের সর্বোচ্চ ১৫২টি ঘটনা নথিভূক্ত করেছে। অনুসন্ধানী মঞ্চ আফ্রিকা আনসেন্সরড ও আফ্রিকা ডেটা হাবের অনুমান অনুসারে ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ৫০০ কেনীয় নারীকে হত্যা করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে কেনিয়ার বর্তমান ৫.৫ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার ৫০ শতাংশেরও বেশি নারী, যেখানে নারীহত্যার বৃদ্ধি ভীতি সৃষ্টি করেছে।

রিতা ওয়াইনিস্টারলেট ওয়াহুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মতো সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। #কেনিয়ায়নারীহত্যাথামাও এবং #কেনিয়ায়পুরোবন্ধের মতো সামাজিক গণমাধ্যমে হ্যাশট্যাগ তৈরি হয়েছে।

গার্ডিয়ান ২০২২ সালের একটি সমীক্ষা তুলে ধরেছে যা কেনিয়ার প্রতি তিনজনে একজন নারীর শারীরিক সহিংসতার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে; অন্যদিকে পূর্বআফ্রিকা জানিয়েছে জাতিসংঘের নারী সমীক্ষা অনুসারে আফ্রিকায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ২০,০০০ ভুক্তভোগী নারী ঘনিষ্ট-সঙ্গী ও পরিবার-সম্পর্কিত হত্যাকাণ্ড রেকর্ড করেছে।

কেনিয়ার সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে নারী ও মেয়েদের অধিকার সুরক্ষিত এবং তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্যে শাস্তির রূপরেখা দণ্ডবিধিতে রয়েছে। কেনিয়ার পুলিশ একটি বিশেষ লিঙ্গ ডেস্ক পরিচালনা করে, আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুসারে যা লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান করে। এছাড়াও  লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা মোকাবেলার লক্ষ্যে কেনিয়া গৃহীত চুক্তিগুলির মধ্যে নারীর বিরুদ্ধে সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত জাতিসংঘের কনভেনশন (সিডঅ) এবং মানব ও জন অধিকার সংক্রান্ত চার্টার রয়েছে।

লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে শক্তিশালী আইন ও নীতিমালা সত্ত্বেও, সক্রিয় কর্মীদের যুক্তিতে অকার্যকর সরকারি নীতিমালা এবং ধীর ও দুর্নীতিগ্রস্ত বিচার ব্যবস্থার কারণে অনেক অপরাধী শাস্তির বাইরে থেকে যাচ্ছে, একটি পোস্টে যেমনটি  জোর দিয়ে বলেছেন একজন এক্স (আগের টুইটারে) ব্যবহারকারী:

এছাড়াও কথোপকথনের একটি নিবন্ধ কেনিয়াতে যৌন সহিংসতার সমস্যার পিছনে যেসব স্থায়ী কারণের উপর জোর দিয়েছে, তার মধ্যে সামাজিক মনোভাব, গণমাধ্যমের ভুল ধারণা এবং স্বাস্থ্য ও আইনি চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

প্রবন্ধটিতে যেমন ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতায় অবদান রাখা কেনীয় সমাজে লিঙ্গের ভূমিকা ও প্রত্যাশা, যুবকদের যৌন আক্রমণাত্মক হতে উৎসাহিত করা একটি নারীবিদ্বেষী সংস্কৃতি গড়ে তোলার পাশাপাশি মেয়েদের সতীত্বের আদর্শ মেনে চলার প্রত্যাশার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

ধর্ষণ সম্পর্কে প্রচলিত কল্পিত কাহিনী প্রায়শই ভূক্তভোগীকে দোষারোপ করে অপরাধীকে অব্যাহতি দেওয়ার ফলে খুনিদের জবাবদিহিতার অভাব এবং বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কেনিয়াতে ধর্ষণের শিকাররা অবিশ্বাস, দোষারোপ এবং সমর্থন ও ন্যায়বিচার পেতে বিলম্বের মতো বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হয়।

কথোপকথনের নিবন্ধে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, এই সমস্যাগুলি সমাধানের জন্যে আইনি সংস্কার, সরকারে নারীদের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি এবং স্কুলগুলিতে যৌনতা, সহিংসতা ও অধিকার বিষয়ক ব্যাপক শিক্ষার প্রয়োজন।

কথোপকথন নিবন্ধটিতে সংবেদনশীল প্রতিবেদনের মাধ্যমে বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের আরো ভোগান্তি রোধে গণমাধ্যম প্রশিক্ষণের গুরুত্বকেও তুলে ধরা হয়েছে।

এছাড়াও এটি নির্দেশ করে কেনিয়াতে ধর্ষণ থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের প্রায়ই চিকিৎসা যত্ন ও পুলিশি সহায়তা পেতে বিলম্ব অপরাধের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ পাওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। এতে প্রশিক্ষণের অভাব, দুর্নীতি এবং বিনামূল্যে প্রদত্ত করা পরিষেবাগুলির জন্যে ফি আরোপের মতো কারণগুলিকে দায়ী করা হয়েছে।

বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় কেনিয়ার রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা হ্যারিয়েট চিগাই ১৯ জানুয়ারি সাম্প্রতিক নারীহত্যার ঘটনার নিন্দা করেছেন; কেনিয়ার অপরাধ তদন্তের পরিচালক মোহাম্মদ আমিন নারীহত্যা মামলার তদন্ত ত্বরান্বিত করতে একটি বিশেষ ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছেন। তবে সক্রিয় কর্মীদের যুক্তিতে নতুন ইউনিট গঠন একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও তা অপর্যাপ্ত। তারা নারীহত্যার সমস্যা কার্যকরভাবে মোকাবেলার জন্যে পুলিশ বাহিনী ও সংসদের মধ্যে মনোভাবের পরিবর্তনসহ ব্যাপক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .