তানজানিয়ার গণমাধ্যম দৃশ্যপটের একটি সাধারণ চিত্র

তানজানিয়ার প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য উন্নয়ন মন্ত্রী টাইটাস ম্লেঙ্গিয়া ১৩ জুন, ২০১৪ দার এস সালামে আন্তর্জাতিক প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইএলআরআই) তানজানিয়া অফিস খোলার পর তানজানিয়ার সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন। ফ্লিকার থেকে আইএলআরআইয়ের ছবি (সৃজনী সাধারণ অপরির্তনযোগ্য ৪.০ অনুমতি)

পূর্ব আফ্রিকীয় মহাহ্রদ অঞ্চলের একটি দেশ তানজানিয়া রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন উভয় প্রতিষ্ঠান সমন্বিত একটি প্রাণবন্ত ও বৈচিত্র্যময় গণমাধ্যম দৃশ্যপট নিয়ে গর্ব করতে পারে।

অন্তত ৬.৬ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশটিতে বিদ্যমান ১২৬টি কথ্য ভাষা এটিকে পূর্ব আফ্রিকার সবচেয়ে ভাষাগত বৈচিত্র্যময় জাতিতে পরিণত করেছে। তানজানিয়ার জনসংখ্যার অধিকাংশই গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করে। ডেটা রিপোর্টালের উল্লেখ অনুসারে ২০২৩ সালে দেশটির জনসংখ্যার ৩৭ শতাংশ শহরকেন্দ্রে এবং ৬৩ শতাংশ গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে।

আইনত সরকারি কোনো ভাষা না থাকলেও সোয়াহিলি জাতীয় ভাষার মর্যাদা রাখে। বৈদেশিক বাণিজ্য, কূটনীতি ও উচ্চ আদালতে ইংরেজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এটি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা দানের মাধ্যম। এছাড়াও ভারত মহাসাগরস্থিত এর দ্বীপপুঞ্জ জাঞ্জিবারের কথ্য ভাষা আরবি।

তানজানিয়ায় গণমাধ্যম প্রকাশনা ও সম্প্রচার প্রাথমিকভাবে সোয়াহিলি ও ইংরেজিতে চলে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিভিন্ন অনলাইন ও ছাপা সংবাদপত্র, রেডিও কেন্দ্র, টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ও সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে পৌঁছায়। এগুলো তানজানিয়া যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ করে।

অন্তত ৪৫ শতাংশ জনগণ দৈনিক সংবাদের প্রাথমিক উৎস হিসেবে ১৮৩টি রেডিও কেন্দ্রের উপর নির্ভর করে যা তানজানিয়ার  সবচেয়ে প্রভাবশালী ও ব্যাপকভাবে গৃহীত গণমাধ্যম মঞ্চ।

তানজানিয়ায় আনুমানিক ২২৯টি সংবাদপত্র, ২২টি ব্লগ ও অনলাইন সংবাদ সাইট রয়েছে। প্রাচীন ও বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইংরেজি ভাষার সংবাদপত্র দৈনিক সংবাদের সোয়াহিলি প্রতিপক্ষ হাবারি লিওসিটিজেননিপাশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সংবাদপত্র হলেও প্রথমটি ইংরেজিতে এবং নিপাশে সোয়াহিলিতে কভারেজ প্রদান করে।

হাবারি লিও ৫,২১,০০০-এরও বেশি অনুসারী নিয়ে ডিজিটাল দৃশ্যপটে নেতৃত্ব দেয়। সিটিজেন, নিপাশে ও দৈনিক সংবাদের অনুসারীর সংখ্যা যথাক্রমে ৪,৪৬,০০০২,৩৭,০০০ এবং ২,৫০০। এক্সে (আগের টুইটার), ৩,০৫,০০০ অনুসারী নিয়ে সিটিজেন নিপাশে (২,০৫,১০০ অনুসারী) হাবারি লিও (১,৬৬,১০০ অনুসারী) এবং দৈনিক সংবাদকে (৯২,৮০০ অনুসারী) ছাড়িয়ে গেছে। ইনস্টাগ্রামে যেখানে হাবারি লিও’র ৩,১৩,০০০-এরও বেশি অনুসরণকারী রয়েছে সেখানে নিপাশে, সিটিজেন ও দৈনিক সংবাদের অনুসরণকারী যথাক্রমে ১,৩৭,০০০, ৪১,৩০০ এবং ১৪,৪০০। ইউটিউবে শুধু হাবারি লিও ১০ লক্ষেরও বেশি অনুসরণকারী সংগ্রহ করেছে।

তানজানিয়া সম্প্রচার কর্পোরেশন (টিবিসি) তানজানিয়ার একমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিভিশন কেন্দ্র। মোট ৪৩টি টিভি কেন্দ্রের বেশিরভাগই ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিগত মালিকানাধীন টেলিভিশন কেন্দ্র আয়ো টিভিগ্লোবাল টিভি অনলাইনের ইউটিউবে যথাক্রমে ৪৯.১ লক্ষ এবং ৪৬.৬ লক্ষ গ্রাহক রয়েছে। এছাড়াও টিবিসি’র ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব এবং এক্সে যথাক্রমে ১০ লক্ষ, ৩,৬৭,০০০ এবং ১,১১,৩০০ অনুসরণকারী রয়েছে। টিভি কেন্দ্রগুলিতে বেশিরভাগ তথ্য সোয়াহিলি ভাষায় সম্প্রচার করা হয়। অন্যান্য ব্যক্তিগত মালিকানাধীন টিভি কেন্দ্রগুলির মধ্যে রয়েছে স্টার টিভি, টিভি১ এবং টিভিজেড

বৈশ্বিক মঞ্চে তানজানিয়া ভয়েস অব আমেরিকা, কনভার্সেশন, ইন্ডিপেনডেন্ট, ওকেআফ্রিকা, আল জাজিরা, ফ্রান্স ২৪, রেডিও ফ্রান্স আন্তর্জাতিক, গার্ডিয়ান, আফ্রিকা্সংবাদ এবং বিবিসি আফ্রিকাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সংবাদ কভারেজ পায়।

ডেটারিপোর্টালের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনু্সারে, তানজানিয়ায় ইন্টারনেটের প্রবেশ ২০২৩ সালে ছিল ৩১.৬ শতাংশ, যা বছরের শুরুতে জনসংখ্যার প্রায় ৬৮.৪ শতাংশ আওতার বাইরে থাকা বোঝায়। মোট জনসংখ্যার মাত্র ৭.৪ শতাংশ সক্রিয়ভাবে সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহার করে। সবচেয়ে ব্যাপক ব্যবহৃত মঞ্চ ফেসবুকের ব্যবহারকারী ৩৮ লক্ষ এবং ইনস্টাগ্রামের ২৪.৫ লক্ষ।

তাদের পরেই রয়েছে লিঙ্কডিন (১১ লক্ষ), ফেসবুক মেসেঞ্জার (১০.৯ লক্ষ) এবং টুইটার (৫,৯৪,৮০০)।

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে তানজানিয়ার সীমান্তবিহীন প্রতিবেদকের (আরএসএফ) ড্যানিয়েল ওমিন্ডে ওকোথ যেমন উল্লেখ করেছেন বিশ্ব প্রেস স্বাধীনতা সূচকে ২০১৬ সালে রেকর্ড ৫৩ স্থান হ্রাস পায়। সীমান্তবিহীন প্রতিবেদক ২০২৩ সালে তানজানিয়াকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪৩তম স্থান দেয়, যা আগের বছরের ছিল ১২৩তম।

এছাড়াও সীমান্তবিহীন প্রতিবেদক উল্লেখ করেছে তানজানিয়ায় অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান হয় রাজনীতিবিদদের মালিকানাধীন অথবা তাদের প্রভাবে সম্পাদকীয় স্বাধীনতার সাথে আপস করে পক্ষপাতদুষ্ট কভারেজ পরিচালনা করে।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় ২০১৫ সালে সরকার ধারাবাহিকভাবে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত, বিশেষ করে নিরাপত্তা বা উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয় সম্পর্কিত তথ্যে প্রবেশে বাধা দেয়।

তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জন পম্বে মাগুফুলির ২০২১ সালের মার্চ মাসে মৃত্যুর পর উপ-রাষ্ট্রপতি সামিয়া সুলুহু হাসান মাগুফুলির মেয়াদের বাকি চার বছর পূর্ণ করার জন্যে শপথ নেন। মাগুফুলির সরকারের বিরুদ্ধে আইনের মাধ্যমে সমাবেশ সীমাবদ্ধ, সংবাদপত্র স্থগিত করা এবং গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে হুমকির মাধ্যমে বিরোধীদের দমনের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও, রাষ্ট্রপতিকে সাইবার হুমকির জন্যে কিছু নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হলে সাংবিধানিক স্বাধীনতা দমনের জন্যে তানজানিয়ার বিশপ সরকারের সমালোচনা করেন

ক্ষমতারোহণ শুরুতে গণমাধ্যম আইন ও বিধি-বিধান সংস্কারের বিষয়ে সামিয়া সুলুহু হাসানের প্রশাসন প্রাথমিকভাবে আলোচনার জন্যে উন্মুক্ততা দেখিয়ে আশা জাগালেও এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি বাস্তবায়িত হয়নি।

উল্লিখিত চ্যালেঞ্জগুলি সাংবাদিকতার নীতিমালা সমুন্নত রেখে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতা বান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার জন্যে সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .