মিয়ানমারের সাংবাদিকরা কেন্দ্রীয় গণতন্ত্র গড়ে তুলতে কীভাবে সাহায্য করবে

Sai-Maung

শান হেরাল্ড সংবাদ এজেন্সির প্রধান সম্পাদক সাই মুয়াং। সূত্র: ইরাবতী

মূলত মিয়ানমারের স্বাধীন সংবাদ ওয়েবসাইট ইরাবতীতে প্রকাশিত একটি নিবন্ধের এই সম্পাদিত সংস্করণটি একটি বিষয়বস্তু ভাগাভাগি চুক্তির অংশ হিসেবে গ্লোবাল ভয়েসেসে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে।

মিয়ানমারে ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে “ভুয়া খবর” বিস্তার ব্যাপক হয়ে উঠেছে। স্বাধীন গণমাধ্যম গ্রুপগুলি দৈনিক সম্প্রচার ও সাংবাদিকতা সম্পর্কে সম্প্রদায়ের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে “ভুয়া খবরের” বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

শান রাজ্য ৩৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে কভার করে আসা শান হেরাল্ড সংবাদ এজেন্সি জনগণকে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলার আহ্বান জানিয়েছে।

ইরাবতী মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় গণতন্ত্রে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে স্বাধীন গণমাধ্যমের ভূমিকা সম্পর্কে শান হেরাল্ড এজেন্সির প্রধান সম্পাদক সাই মুয়াংয়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন জান্তা ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর হুমকি সত্ত্বেও শান হেরাল্ড সংবাদ সংগ্রহে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ইরাবতী: আপনি কোন অসুবিধাগুলি বোধ করছেন?

সাই মুয়াং: প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি থেইন সেইন ২০১৩ সালে রাজনৈতিক সংস্কারের কারণে [কয়েক বছর ধরে স্বাধীন গণমাধ্যমের উপর দমনাভিযানের পরে] সবাইকে ফিরে আসার আমন্ত্রণ জানালে আমরা ইয়াঙ্গুনে সংবাদের জন্যে তাউংগিতে আমাদের অফিস স্থাপনের জন্যে শান হেরাল্ড এজেন্সি নিবন্ধিত করি।

শান জাতীয় দিবসে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমরা শান জনগণের সমর্থনে তাউংগিতে একটি অফিস নির্মাণ শুরু করার পরিকল্পনা করলেও অভ্যুত্থানের ঐ মাসেই কারণে তা ভেস্তে যায়।

স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারায় আমাদের মাসিক পত্রিকা বন্ধ করে আমরা সাংবাদিকদের সীমান্তে ফিরিয়ে নিয়ে গেছি। আমাদের কর্মীরা ৫০৫ ও ৬৬(ঘ) ধারায় অভিযোগের সম্মুখীন হলে আমাদের কাজের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ হয়েছে। এমনকি “সামরিক পর্ষদ” বা “সামরিক” শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করাটাও সমস্যার।

আমরা দাতা ছাড়াই স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকলেও এখন আমরা দাতাদের উপর নির্ভর করি। বেশিরভাগ বড় শহরে ভিত্তিক কিছু দাতা বৃহত্তর গণমাধ্যম গোষ্ঠীগুলিকে বেশি সমর্থন করে। রাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যমের সমর্থন দুর্বল।

আমরা জাতীয় কভারেজ না থাকা একটি শান গণমাধ্যম গ্রুপ – এমন একটি ভুল ধারণা থাকলেও, আসলে আমরা শান রাজ্য-ভিত্তিক একটি জাতীয় গণমাধ্যম গ্রুপ।

অভ্যুত্থানের পর থেকে ভ্রমণের রেকর্ড করে তথ্য সংগ্রহ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন আমাদের কোনো ট্রেস ছাড়াই কাজ করতে হয়, আমাদের সাংবাদিকরা এই চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি।

আরেকটি অসুবিধা হলো রাজনৈতিক দল ও কর্তৃপক্ষের কিছু উৎস আমাদের তথ্য দিতে চাইলেও প্রায়শই তারা নাম প্রকাশ করতে, তাদের মুখ দেখাতে বা তাদের কণ্ঠস্বর ব্যবহার করতে চায় না।

শান হেরাল্ড আমাদের ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য ও সংস্কৃতিকেও সংরক্ষণ করে। শান ভাষায় প্রকাশ না করলে আমাদের ভাষাগত রেফারেন্সের জন্যে খুব বেশি উপাদান থাকতো না।

আমরা শান ভাষায় প্রতিদিনের ঘটনা রেকর্ড করি। কঠিন হলেও আমরা থামবো না। এই কাজে আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটা বন্ধ করা যাবে না। আমরা শান রাজ্যে ও দেশের অন্যত্র ঘটমান ঘটনাগুলি শান, বর্মি ও ইংরেজিতে নথিবদ্ধ করি।

“ভুয়া খবর” ছড়িয়ে পড়ার সময়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ বেশিরভাগ শান জনগণ অত্যন্ত সহযোগী এবং কোনো গোপন উদ্দেশ্য ছাড়াই সৎভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করে। তবে সাধারণ শান জনসাধারণের সঠিক তথ্য ও “ভুয়া খবর”-এর মধ্যে পার্থক্য করতে কষ্ট হয়।

তাই সাংবাদিকতা সম্পর্কে শান জনগণকে শিক্ষিত করাও আমাদের একটি মিশন।

দেশব্যাপী সংঘাতে জান্তার সাথে ছাড়াও শান রাজ্যের অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির  সৃষ্ট বিরোধ আমাদের কাজকে আরো জটিল করেছে। এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আমাদের সাংবাদিকতা কাজের জন্যে চরম চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।

আমরা অতীতের কেন্দ্রীয়ভাবে-চালিত শান রাজ্যের মতো একসাথে সহাবস্থান করলে আমাদের পক্ষে কাজ করা আদর্শ হবে। বর্তমানে বিরোধিতা অনেক বেশি।

ইরাবতী: আপনার কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা কী?

সাই মুয়াং: উৎসাহী তরুণরা কোনো অর্থ না নিয়েই সক্রিয়ভাবে অবদান রাখে। আমরা আমাদের বেতন ও খরচ মেটানোর চেষ্টা করি। এটি আমাদের উদ্দেশ্যের জন্যে সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধদের একত্রিত হওয়ার মতো একটি জায়গা।

আমাদের বেশিরভাগ কর্মী ২৫ বছরের কম। যাদের বয়স ২৫ থেকে ৫০, তারা সংখ্যালঘু।

শ্রোতারা এখন প্রধানত ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী। আমাদের তরুণ শ্রোতারা বড় হয়েছে। এই পরিবর্তনের জন্যে ঐতিহ্যগত ও সমসাময়িক উভয় পছন্দকে পূরণ করা একটি ভারসাম্যপূর্ণ উপস্থাপনা প্রয়োজন।

ইরাবতী: আপনি কীভাবে ভবিষ্যত কল্পনা করেন?

সাই মুয়াং: শান জনগণ প্রায়ই দাবি করে “রাজনীতি আমাদের চিন্তা করে না।” পেট্রোল ও বাজারের পণ্যের দাম বৃদ্ধি বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে জড়িত। এটি এই সংযোগ সম্পর্কে প্রমাণ দেখানোর এবং বিশেষ করে তরুণদেরকে শিক্ষিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়।

তাই তরুণদের সঙ্কটের সাথে তাল মিলিয়ে চলা এবং সংবাদ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যে আমরা ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে প্রতিবারে ১০-১৫ জন অংশগ্রহণকারী নিয়ে ক্রমাগত ১০ বারের বেশি নাগরিক সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। গত বছর আইন অমান্য আন্দোলনের অনেক বেশি শিক্ষার্থী আমাদের দলে যোগ দেয়।

খবরের বোধগম্যতা বাড়াতে আমরা তরুণদের একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্যে প্রশিক্ষণের দিকে মনোনিবেশ করেছি। একটি শান প্রবাদ অনুসারে, “মারা যাওয়ার আগে বাঘের আরেকটি বাঘ জন্ম দিয়ে যাওয়া দরকার।”

পরিস্থিতির উন্নতি হলে আমাদের তাউংগিতে শান জনগণের সাথে একত্রিত হয়ে অধ্যয়নে ইচ্ছুকদের শান ইতিহাস ও সাধারণ জ্ঞানের জন্যে একটি গণমাধ্যম স্কুল, গবেষণা কেন্দ্র ও গবেষণা কেন্দ্র সম্বলিত একটি শান গণমাধ্যম গ্রুপ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।

একারণেই আমরা শান মানুষের জন্যে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছি। আমরাও আমাদের প্রতিদিনের সাংবাদিকতার কাজ করে সেই মিশনটি পূরণ করতে পারবো বলে আশা করি।

ইরাবতী: গণমাধ্যমটি কীভাবে একটি কেন্দ্রীয় প্রজাতন্ত্র তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে?

সাই মুয়াং: এই অবদানের কেন্দ্রবিন্দু হলো সঠিক তথ্যে জনগণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। “ভুয়া খবর”-এর ব্যাপক বিস্তার সংবাদের উৎসের উপর আস্থাকে দুর্বল করে এবং পারস্পরিক অবিশ্বাস বাড়ায়।

শান হেরাল্ডের বয়স ৩৩ বছর। এটি আমাদের বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছে গণমাধ্যমের কাজ একটি কেন্দ্রীয় গণতন্ত্র সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

গণমাধ্যমকে চতুর্থ ক্ষেত্র বলা হয়। এই অনুভূতি আমাদের সম্পাদক ইউ সেন কিয়ের সাথে অনুরণিত হয়, যিনি বলেছেন, “আমাদের দেশে আরো ভাল সাংবাদিক থাকলে গণতন্ত্র তাড়াতাড়ি আসবে।”

এই বিশ্বাস জনপ্রিয় এবং আমরা বিশ্বাসও করি গণমাধ্যমের কাজ অন্যায় মোকাবিলায় একটি শক্তি হতে পারে।

দেশ ও বিশ্বকে নিপীড়ন চিহ্নিত ও উন্মোচন করে কী ঘটছে তা জানাতে গণমাধ্যম ব্যবহার করতে জনগণ ও গণমাধ্যমের মধ্যে সহযোগিতা অত্যাবশ্যক।

ইরাবতী: শান হেরাল্ড কীভাবে অভ্যুত্থান-পরবর্তী নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের সাথে খাপ খাইয়েছে?

সাই মুয়াং: আমরা সহিংস সংবাদ প্রকাশের কারণে সাংবাদিকদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি স্বীকার করি। তারা প্রতিদিন রক্তপাত দেখতে ও হিংসাত্মক খবর শুনতে হয়।

সংবাদকক্ষের সভার আগে আমাদের একটি সম্মিলিত ধর্মনিরপেক্ষ ১০-মিনিটের ধ্যানের অধিবেশন রয়েছে। এর উদ্দেশ্য সাংবাদিকদের মন পরিষ্কার করা, তাদের মানসিক সুস্থতায় সাহায্য করা।

এটাকে ধ্যান বলুন বা শ্বাস-প্রশ্বাসে মনোযোগ বলুন। আমরা আঘাতমূলক অভিজ্ঞতা ও চিন্তাভাবনা নির্মূল করার লক্ষ্যে প্রতিদিন এটি করি। আমরা আমাদের মানসিক সুস্থতার জন্যে এটি করি এবং প্রশিক্ষণের জন্যে বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানাই।

আরেকটি পদ্ধতি হলো ব্যবহারিক হওয়া। আমাদের প্রতি শান জনসমর্থন আছে।

তাদের আমরা নাগরিক সাংবাদিক বলি। তাদের রক্ষা করার বিষয়ে আমরা একটি নিরাপত্তা নীতির খসড়া তৈরি করছি। এটা এখনো শেষ হয়নি। সাধারণ জ্ঞান ব্যবহার করা বর্তমান নিরাপত্তা চর্চা হলেও বাস্তব ও সুনির্দিষ্ট নীতির লক্ষ্যে একটি কাজ চলছে। আমরা দ্রুত এটি চূড়ান্ত করার চেষ্টা করছি।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .