ইন্দোনেশিয়ার ‘অনুদার সাইবার আইন” যেভাবে বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার ক্ষুন্ন করে

Human rights defenders Fatia Maulidiyanti and Haris Azhar

মানবাধিকার সুরক্ষক হারিস আজহার (বামে) ও ফাতিয়া মৌলিদিয়ান্তি সরকারের একজন মন্ত্রীর দায়ের করা মানহানি মামলার মুখোমুখি হচ্ছে। হারিস আজহারের চ্যানেলের ইউটিউব ভিডিও থেকে নেওয়া পর্দাছবি। ন্যায্য ব্যবহার।

জনসাধারণের সাথে যথাযথ পরামর্শ ছাড়া এবং সংশোধনীগুলি আইনের দমনমূলক বিধানগুলি অপসারণের দাবিকে প্রতিফলিত করে না বলে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজ গোষ্ঠীগুলির উদ্বেগের মধ্যেই ইন্দোনেশিয়ার সংসদ ৫ ডিসেম্বর ইলেক্ট্রনিক তথ্য ও লেনদেন (আইটিই) আইন সংশোধন করেছে

ভোক্তা,ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ও বুদ্ধিবৃত্তিক কপিস্বত্ত্ব সুরক্ষার উদ্দেশ্যে ২০০৮ সালে আইটিই আইনটি প্রণীত হলেও বছরের পর বছর ধরে সুশীল সমাজের গোষ্ঠীগুলি বলে আসছে আইনের বিধানগুলি “পরিকল্পিতভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারকে বাধাগ্রস্ত এবং মানবাধিকার প্রচারকদের নীরব করেছে।” সংশোধিত আইনটি পাসের আগে কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো একটি আবেদনে বিভিন্ন গোষ্ঠী আইনটির কুখ্যাত উত্তরাধিকারের সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরেছে।

রাষ্ট্রীয় কুশীলবদের সমালোচকদের নীরব করতে মানহানি ও ঘৃণাত্মক বক্তব্যের ধারাগুলি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আত্ম-সেন্সরের পরিবেশ সৃষ্টি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হ্রাস করেছে, যা সাংবাদিক, নারী ও মানবাধিকার সুরক্ষকদের অনুভূত শীতল প্রভাবগুলির মধ্যে স্পষ্ট।

সাথে সাথেই জনসাধারণ সংসদের বক্তব্য না পেলেও কিছু সংশোধনীতে “জনস্বার্থে অস্থিরতা” সৃষ্টিকারী “মিথ্যা বিবৃতি” প্রচারকে অপরাধী করা অপরাধমূলক মানহানির বিধানটি একটি জনস্বার্থ ছাড় অন্তর্ভুক্ত করে সংশোধন করে মানহানির সর্বোচ্চ সাজা অর্ধেক হ্রাস করে ও অভিযোগ প্রমাণের বোঝা বাড়িয়ে একটি নতুন বিধান অন্তর্ভুক্তির কথা জানানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক জুরি কমিশন সংশোধিত আইনটি বিশ্লেষণ করে “মিথ্যা বিবৃতি” প্রচারের বিরুদ্ধে বিধানটি “অস্পষ্ট, ব্যাপক ও অশুদ্ধ” বলে সতর্ক করেছে। তারা উল্লেখ করেছে “অপরাধমূলক মানহানি ধরে রাখা একটি শীতল প্রভাব বজায় রাখবে” এবং এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের মতো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্যবস্তু করতে অপব্যবহৃত হতে পারে। তারা আরো বলেছে:

সংশোধিত আইনটির অপরাধমূলক বিধানগুলি বৈধ যেকোনো সরকারি উদ্দেশ্যের জন্যে অপ্রয়োজনীয় এবং বিপুল সংখ্যক সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অপরাধী বানানোসহ আরো অনেককে অনলাইনে কথা বলা থেকে বিরত রাখার ঝুঁকি তৈরি করে।

সংশোধিত আইনটি ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে বিরোধী ও স্বাধীন গণমাধ্যমকে হয়রানি করতে ব্যবহৃত হবে বলে ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীন সাংবাদিকদের জোট (এজেআই) উদ্বিগ্ন।

ইন্দোনেশীয় সংসদ মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুন্নকারী সমস্যাযুক্ত ধারা সম্বলিত আইটিই আইনের সংশোধনী পাস করেছে বলে আমরা দুঃখিত। অধিকন্তু, নির্বাচনের আগে আইটিই আইন সংশোধনের ফলে এটি সমালোচকদের নীরব করতে সহজেই অপব্যবহৃত হতে পারে।

এই টুইটটি অপরাধমূলক বিধি সম্পর্কিত আইটিই আইনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি উপস্থাপন করে৷

ইন্দোনেশিয়ার নীতিনির্ধারকেরা জনগণের সাথে অর্থবহর্ণ পরামর্শ ছাড়াই ইলেকট্রনিক তথ্য ও লেনদেন (আইটিই) আইনের সংশোধনের বিষয়ে তাদের আলোচনা গুটিয়ে ফেলেছে। এটি সম্ভবত আরেকটি অনুদার সাইবার আইন হতে চলেছে

জাকার্তা পোস্ট একটি সম্পাদকীয়তে আইটিআই আইনকে একটি “অনুদার সাইবার আইন” হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা সাংবাদিকদের কাজ ছাড়াও মানবাধিকার সুরক্ষকদের ক্ষতি করে।

আমাদের এই সম্পাদকীয়টি লেখার সময় ইউটিউবে একজন জ্যেষ্ঠ্য ক্যাবিনেট মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক মতামত প্রকাশ করায় দুজন মানবাধিকার কর্মী বছরের পর বছর কারাভোগ করছে। তাদের মামলাটি বর্তমান সাইবার আইনটিকে শুধুই সমালোচনামূলক মতামত নীরব করার একটি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের একটি আদর্শ উদাহরণ। আইন থেকে আমাদের এধরনের বিধানগুলি প্রত্যাহার করতে হবে।

সংসদের আলোচনার গোপনীয়তাও সমালোচিত:

নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন সংস্থার সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ খসড়া আইনের আলোচনাকে জনসাধারণের যাচাই-বাছাই থেকে দূরে রাখতে চাওয়া উদ্বেগজনক। আমরা সবাই আমাদের দৈনন্দিন কাজে আরো বেশি ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর নেটনাগরিকে পরিণত হচ্ছি বলে আইনের শাসন তৈরিতে সাইবার স্থানে আমাদের একটি বক্তব্য থাকাটাই শ্রেয়৷

সম্পাদকীয়তে পাপুয়া প্রদেশে ধ্বংসাত্মক খনির কার্যক্রমে কিছু কর্মকর্তার ভূমিকা সম্পর্কে একটি ইউটিউব পোস্টের জন্যে মানহানির অভিযোগে অভিযুক্ত মানবাধিকার সুরক্ষক ফাতিয়া মৌলিদিয়ান্তি ও হারিস আজহারের মামলার উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। সুশীল সমাজের গোষ্ঠীগুলি বলেছে এই মামলাটি কীভাবে আইটিআই আইন ভিন্নমত দমন করার একটি হাতিয়ার হয়ে উঠেছে তা তুলে ধরে

শুধু ক্ষমতার বিরুদ্ধে সত্য কথা বলার, ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা চাওয়ার এবং সরকারের বিরুদ্ধে প্রমাণভিত্তিক সমালোচনা প্রকাশের জন্যে ফাতিয়া ও হারিসদের নিরব করা হচ্ছে। সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রেক্ষাপটে এমন বিচারিক হয়রানি কখনোই ঘটতো না।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .