উজবেকিস্তানে নতুন তথ্যচিত্রে সংস্কারবাদী জাদিদ আন্দোলন উদযাপিত

তথ্যচিত্রে একজন জাদিদ কর্মী, লেখক ও সাংবাদিক মাহমুদখোজা বেহবুদির উপস্থাপনা। নীল সাদা ও সবুজ প্রোডাকশনের ইউটিউব ভিডিও থেকে নেওয়া পর্দাছবি। ন্যায্য ব্যবহার।

আরমন: জাদিদচিলিক তারিক্সি” (স্বপ্ন: জাদিদবাদের ইতিহাস) নামে একটি উজবুক তথ্যচিত্র ২০ নভেম্বর ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছে। প্রযোজনা সংস্থা নীল সাদা ও সবুজ প্রোডাকশন ছবিটিকে উজবুক ও রুশ ভাষায় ছেড়েছে, যার পরবর্তী সংস্করণের নাম “মেখতাতেলি” (স্বপ্নদ্রষ্টাবৃন্দ)।

ইউটিউবে উজবুক তথ্যচিত্র এখানে।

তথ্যচিত্রটি জাদিদবাদ নামে পরিচিত সংস্কার ও আধুনিকতাবাদী আন্দোলনের গল্প বলে। আন্দোলনটি প্রথমে রুশ সাম্রাজ্যের এবং পরে ১৯১৭ সালে অক্টোবর বিপ্লবের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হিসেবে উজবেকিস্তান ও মধ্য এশিয়ার অন্যান্য অংশে ১৯ শতকের শেষ ও ২০ শতকের শুরুর দিকে সক্রিয় ছিল।

এই জাদিদ আন্দোলনের সদস্যরা উসুল-ই জাদিদ (নতুন-পদ্ধতি) স্কুল চালুর মাধ্যমে শিক্ষা সংস্কার বাস্তবায়ন থেকে তাদের নাম অর্জন করে। আরবি বর্ণমালা শেখানোর জন্যে ধ্বনিগত পদ্ধতির ব্যবহার ও পাঠ্যক্রমে ধর্মনিরপেক্ষ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা ছিল এই স্কুলগুলির বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

জাদিদরা শিক্ষাগত, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারকে তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য সভ্যতা ও অগ্রগতি অর্জনের প্রাথমিক উপায় হিসেবে দেখে। শিক্ষিত নারীরা সমাজের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ যুক্তি দেখিয়ে তারা সক্রিয়ভাবে স্কুলে মেয়েদের শিক্ষিত করার পক্ষে ছিল। এই অঞ্চলে রুশ সাম্রাজ্যের হস্তক্ষেপ না করা সামাজিক-সাংস্কৃতিক নীতি জাদিদকে সংস্কারের প্রয়োজনীয় সুযোগ করে দেয়।

জাদিদের মতে শিক্ষাই সংস্কারের একমাত্র ক্ষেত্র নয়। বুখারার ধনী ব্যবসায়ীদের ছেলেদের বিদেশে আধুনিক শিক্ষা লাভের শিশু শিক্ষা বান্ধব সমাজের কারণে তাদের অনেকেই ইস্তাম্বুলে পড়াশোনা করে। সেখানে অধ্যয়নের সময় তরুণ জাদিদদের পাওয়া প্রগতি ও আধুনিকতার ধারণা তাদের নিজ এলাকায় সংস্কারের পক্ষে কথা বলতে বাধ্য করে।

জাদিদরা সাহিত্য ও নাট্যমঞ্চকে ব্যাপক সংস্কারের জন্যে ব্যবহার করতো। সম্ভবত এর সবচেয়ে বিখ্যাত উদাহরণ হলো আবদুরউফ ফিতরাতের “ভারতীয় পর্যটকের কাহিনী” নামের কাজ। প্রথাগত উলামাদের (ধর্মীয় কর্মীদের) দুর্নীতি, ভগ্ন স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা এবং শহরের সামগ্রিক অবক্ষয়ের সমালোচনা করতে লেখক নিজে ভারতের একজন পর্যটকের ছদ্মবেশে বুখারা সফর করেন। অপর একজন বিখ্যাত জাদিদ মাহমুদখোজা বেহবুদি অজ্ঞতার বিপদ নিয়ে উজবুক ভাষায় প্রথম আধুনিক নাটক “পদরকুশ” (পিতৃহত্যা) রচনা করেন।

জাদিদবাদের ইতিহাস উজবেকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মাইলফলকের ইতিহাস। এর সদস্যরা প্রায়শই সাহিত্যের ধারার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন যার প্রধান উদাহরণ উজবুক সাহিত্যে প্রতিষ্ঠিত “উৎকান কুনলার” (পুরনো দিনগুলি) উপন্যাসের মাধ্যমে উজবুক গদ্যের প্রতিষ্ঠাতা বিবেচিত আব্দুল্লা কোদিরি

আবদুল্লা কোদিরির উপন্যাস থেকে নির্মিত “ওতগান কুনলার” চলচ্চিত্রটি এখানে।

তথ্যচিত্রটি জাদিদবাদের বিভিন্ন আত্মীয়, স্থানীয় ও বিদেশী বিশেষজ্ঞ এবং এসব ব্যক্তিত্ব জড়িত ঐতিহাসিক দৃশ্যাবলী পুনঃচিত্রায়নের মাধ্যমে এসব ও অন্যান্য বিখ্যাত জাদিদদের গল্প বলে।

সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ ১৯৩০-এর দশকে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে স্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের শুদ্ধি অভিযান চালালে জাদিদ একটি করুণ পরিণতি বরণ করে। ১৯৩৭ সালে মহা-সন্ত্রাসের সময় নিখিল-তুর্কি হিসেবে প্রতিবিপ্লবী কার্যকলাপের অভিযোগে জাদিদদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই রাজধানী তাসখন্দের আনখোর নদীর তীরে মারা যায়, যেখানে ২০০১ সালে উজবুক সরকার রাজনৈতিক দমন-পীড়নের শিকারদের জাদুঘর তৈরি করে।

বর্তমান রাষ্ট্রপতি শাভকাত মির্জিওয়েভের শাসনামলে জাদিদরা জনসাধারণের কাছে ফিরে আসতে শুরু করে। তিনি ২০২০ সালে”জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় অবদান ও গঠনের জন্যে” আবদুল্লাহ আভলোনি, মাহমুদখোজা বেহবুদি ও মুনাভভারকোরি আবদুরশিদখানভকে “মহান পরিষেবার জন্যে” মরণোত্তর রাষ্ট্রপতির পুরস্কার প্রদান করেন। ডিসেম্বরের ১১ ও ১২ তারিখে উজবেকিস্তান “জাদিদ: জাতীয় পরিচয়, স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রত্বের ধারণা” শীর্ষক একটি সম্মেলনের আয়োজন করে।

সরকার জাদিদের উত্তরাধিকারকে অনুপ্রেরণার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করবে বলে প্রকাশ্য স্থানে তাদের প্রত্যাবর্তন দীর্ঘমেয়াদী হবে মনে হচ্ছে। সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে মির্জিওয়েভের প্রধান উপদেষ্টা সাইদা মির্জিওয়েভা উল্লেখ করেছেন, রাষ্ট্রপতির নীতিতে “জাদিদের ধারণা, স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাগুলি প্রতিফলিত।”

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .