হুন সেন থেকে হুন মানেত: কম্বোডিয়ায় বাকস্বাধীনতার উদ্বেগজনক অবস্থা

Cambodian land rights activist

একজন ভূমি অধিকার কর্মী বাস্তুচ্যুত কৃষকদের অধিকার নিয়ে কথা বলায় সরকারি নির্যাতনের পর তার অগ্নিপরীক্ষার বর্ণনা দিয়েছেন। কম্বোডীয় মানবাধিকার কেন্দ্রের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া ছবি। অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

আগস্টে সরকার পরিবর্তন সত্ত্বেও কম্বোডিয়ার মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিস্থিতি ভালো নয়।

প্রায় চার দশক ক্ষমতায় থাকার পর প্রধানমন্ত্রী হুন সেন পদত্যাগ করলে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার পুত্র হুন মানেত স্থলাভিষিক্ত হন।

কর্তৃপক্ষ কেবল প্রযুক্তিগত ইস্যুতে প্রধান বিরোধী দলের নিবন্ধন বাতিল করলে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। জুলাইয়ের নির্বাচনের আগে স্বাধীন গণমাধ্যম, বিরোধীদলীয় কর্মী এবং মানবাধিকার রক্ষকদের বিরুদ্ধেও হামলা তীব্রতর হয়েছে।

সাধারণভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতার অবনতিকে তুলে ধরে কম্বোডীয় মানবাধিকার কেন্দ্রের (সিসিএইচআর) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে সরকার “২০২৩ সালের জুলাইয়ের সাধারণ নির্বাচনের আগে বেড়ে যাওয়া বাক স্বাধীনতা ও সমালোচনামূলক কণ্ঠকে নীরব করার অত্যাধিক পুলিশি দমনাভিযানের উদ্বেগজনক প্রবণতা অব্যাহত রেখেছে।” কেন্দ্রটি রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের ১৬ জন সাংবাদিক ও ১০০ জন মানবাধিকার রক্ষকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ দেখেছে। এছাড়াও এটি গ্লোবাল ভয়েসেসের অংশীদার গণতন্ত্রের কন্ঠস্বরসহ পাঁচটি স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন প্রত্যাহার নথিভুক্ত করেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বাক-স্বাধীনতা দমন আত্ম-সেন্সরের দিকে পরিচালিত করেছে:

শুধু কাজ করার জন্যে সাংবাদিকদের যে ভয়ভীতি, হুমকি ও অপরাধমূলক নিষেধাজ্ঞার সাথে লড়াই করতে হবে বলে অনেক মিডিয়া পেশাদাররা আত্ম-সেন্সর করে ক্ষমতাসীন অভিজাতরা ক্ষুব্ধ হতে পারে এমন তথ্য প্রকাশ এড়িয়ে যায়।

সাংবাদিকরা সাক্ষাৎকারকারীদের বলা দুর্নীতি, জমির সমস্যা, প্রতিবাদ ও সাধারণভাবে রাজনীতির মতো সংবেদনশীল বিষয় প্রতিক্রিয়ার ভয়ে কভার করতে অস্বীকার করতে পারে।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের দায়মুক্তি অবসানের আন্তর্জাতিক দিবস ২ নভেম্বরে প্রকাশিত স্থানীয় সুশীল সমাজ গোষ্ঠীগুলির একটি যৌথ বিবৃতি সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও অধিকারের ক্ষতির গুরুতর পরিণতিগুলি তুলে ধরেছে।

বিশেষ করে মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদক সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করা মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমকে ক্ষুন্ন করে জনসাধারণের তথ্যে প্রবেশাধিকারকে হুমকিতে ফেলে দেয়। এছাড়াও এটি অন্যায়ের জন্যে ক্ষমতাসীনদের দায়বদ্ধ করা কঠিন করে তোলে। কর্তৃপক্ষের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের তদন্ত ও শাস্তি প্রদানে ব্যর্থতা এই ধরনের অপরাধগুলির অনুমোদনের বার্তাই পাঠায়।

বিচারের ভয় ছাড়াই স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলিকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া সিসিএইচআর প্রতিবেদনের সুপারিশগুলির একটি।

স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলিকে সরকারের প্রতিক্রিয়ার ভয় ছাড়াই জনগুরুত্বের সকল বিষয়ে অনুসন্ধান ও প্রতিবেদন করতে দিয়ে গণমাধ্যম বহুত্ববাদ ও বৈচিত্র্যকে উৎসাহিত এবং বিভিন্ন মত ও ধারণাগুলি অবাধে প্রচার ও জনসাধারণের কাছে প্রবেশযোগ্য করে উন্মুক্ত গণমাধ্যম দৃশ্যপট তৈরি করুন।

সরকারের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা ছাড়াও মানবাধিকার প্রচারকদের নীরব করার অভিযোগ রয়েছে।

নভেম্বরে সিসিএইচআর প্রতিবেদন প্রকাশের সময় ভূমি অধিকার কর্মী ফাভ এনহেউং ভাগাভাগি করেছেন কীভাবে তাকে জমি থেকে বাস্তুচ্যুত কৃষকদের সমর্থনের জন্যে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করা হয়েছে।

আমি একটি জমির [বিরোধ] সমাধানের জন্যে নিজে সরকারকে অবহিত করতে গেলে আমার বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ এনে আমকে ৯৯ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার আইন ও শর্তাবলী নীতিগতভাবে প্রয়োগ করা হলে আমি খুশি হবো, তাহলে হয়তো আমাকে কারারুদ্ধ করা হতে হবে না।

হুন মানেতের ক্ষমতারোহণের পর বিভিন্ন অধিকার বিশেষজ্ঞ ও গোষ্ঠী দেশে নাগরিক স্থান ও গণতান্ত্রিক অধিকারের অবক্ষয়ের কথা বলে। কম্বোডিয়ায় মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ভিটিট মু্ন্তারভর্ন বলেছেন “উত্তরাধিকারসূত্রে ক্ষমতারোহণ মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক আইনের শাসনের ক্ষেত্রে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করেছে।”

সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্ষদে জমা দেওয়া একটি বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক সুশীল সমাজ গোষ্ঠীগুলি সরকারের কঠোর নীতির সমালোচনা করেছে:

সরকার গণবিচার ও আইনি ব্যবস্থাসহ বিচার বিভাগীয় হয়রানির মাধ্যমে মানবাধিকার রক্ষাকারী, পরিবেশ ও ভূমি অধিকার রক্ষাকারী, ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী, রাজনৈতিক বিরোধী এবং স্বাধীন গণমাধ্যম ও মিডিয়া কর্মীদের নিয়মতান্ত্রিক ও অবিরাম নিপীড়নের নীতি অব্যাহত রেখেছে।

অক্টোবরে মানবাধিকার নেটওয়ার্ক সিভিকাস তার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, “নাগরিক স্থানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কোন বাস্তব অগ্রগতি হয়নি।”

সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি অসম প্রতিক্রিয়ার একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো শাসক দলের সমালোচনা করার পরে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীকে মানহানি, উস্কানি ও রাজাকে অপমানের অভিযোগে শাস্তি প্রদান। রেডিও মুক্ত এশিয়ার সাথে একটি সাক্ষাৎকারে ক্যাং সরান তার আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন

জনগণ কেন তাদের মত প্রকাশ করতে পারবে না? আমার কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা না থাকলেও আপনি কেন সবসময় এভাবে গ্রেপ্তার ও অভিযোগ ব্যবহার করেন?

নির্বাসিত বিরোধী নেতা স্যাম রেনসি লিখেছেন হুন মানেত সরকারের অধীনে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আশা করা উচিত নয়:

বাস্তবে ক্ষমতার হস্তান্তর না ঘটা কোনো “নতুন শাসনের” অধীনে ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষণ খোঁজা অনর্থক। একদিন প্রমাণিত হবে পিছনে চালকের আসনে তার বাবা না থাকলে হুন মানেত শাসন করতে অক্ষম। যখন হবে, কম্বোডীয়রা গণতান্ত্রিক শাসনে উত্তরণের সুযোগ নিতে মরিয়া হবে।

ক্ষমতারোহণের প্রথম ১০০তম দিনে হুন মানেত বলেছিলেন “স্বৈরাচারী” তকমা তাকে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার মনোযোগ থেকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না।

বিশেষত অনেক নিষ্ঠার সাথে আমাদের জাতির শান্তি অর্জন কঠিন ছিল বলে আমি নতুন সরকারকে জনগণের জন্যে শান্তি বজায় রাখতে অক্ষম বলে দোষারোপ করতে দেবো না।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .