এই নিবন্ধটি মূলত গ্লোবাল ভয়েসেস দক্ষিণ ককেশাস ও আজারবাইজান ইন্টারনেট পর্যবেক্ষকের (এআইডাব্লিউ) জন্যে তুরস্কের সম্পাদক আরজু গেবুলায়েভা লিখেছেন। লেখকের অনুমতি নিয়ে এখানে পুনঃপ্রকাশ করা হয়েছে।
এই সপ্তাহে অন্তত তিনজন আজারবাইজানীয় সাংবাদিক ও সম্পাদক গ্লোবাল ভয়েসেসের বিষয়বস্তু অংশীদার আবজাস মিডিয়ার সেভিঙ্ক ভ্যাগিফগিজি ও উলভি হাসানলি এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়ের লেখক ও গ্লোবাল ভয়েসেসের প্রদায়ক সাংবাদিক মোহম্মদ কেকালভকে পুলিশ আটক করেছে।
সহকর্মীদের মতে পুলিশ ২০ নভেম্বর সকালে আবজাস মিডিয়ার পরিচালক উলভি হাসানলিকে বিমানবন্দরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আটক করে। আবজাস মিডিয়া মনে করে যে হাসানলির গ্রেপ্তার মঞ্চের সরকারের মধ্যে দুর্নীতিকে প্রকাশ করা সাম্প্রতিক তদন্তের সাথে সম্পর্কিত।
হাসানলির আইনজীবী জিবেদে সাদিঘোভা মেদান টিভিকে বলেছেন হাসানলির বিরুদ্ধে চোরাচালানের অভিযোগ আনা হয়েছে। আবজাস মিডিয়ার মতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়ের লেখক ও গ্লোবাল ভয়েসেসের প্রদায়ক মোহম্মদ কেকালভকেও ২০ নভেম্বর আটক করা হয়। তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সাদা পোশাকের পুলিশ কর্মকর্তারা তার বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। এই নিবন্ধটির প্রকাশনা পর্যন্ত, কেকালভের সাথে কেউ যোগাযোগ করতে পারেনি ও তার অবস্থান অজানা।
স্বাধীন মেদান টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে একই দিনে পরবর্তীতে ইস্তাম্বুল থেকে একটি ফ্লাইটে বাকু যাওয়ার পথে আবজাস মিডিয়ার প্রধান সম্পাদক সেভিঙ্ক ভ্যাগিফগিজিকেও বিমানবন্দরে আটক করা হয়।
ভ্যাগিফগিজির সাথে একই ফ্লাইটে থাকা বেশ কয়েকজন আজারবাইজানি কর্মী মেদান টিভিকে বলেছে বিমানটি আজারবাইজানে অবতরণের পরে তাকে আটক করা হয়। ফ্লাইটে উঠার আগে তিনি বিমানবন্দরে মেদান টিভির সাথে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন তিনি নিশ্চিত হাসানলির গ্রেপ্তার কারাবাখের ব্যবসায়িক শাসক পরিবারের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের ঘিরে দুর্নীতির বিষয়ে আবজাস মিডিয়ার অনুসন্ধানী কাজের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
পুলিশ হাসানলির বাড়ি ও আবজাস মিডিয়া কার্যালয় দুটোই তল্লাশি করেছে। পরবর্তীতে পুলিশ নগদ ৪০,০০০ ইউরো আবিষ্কারের দাবি করেছে। হাসানলি টাকার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। পুলিশই তাদের তল্লাশির সময় নগদ টাকা লাগিয়েছে এমন সন্দেহ করছে আবজাস মিডিয়া ও স্থানীয় কর্মীরা। এদিকে সাদিঘোভা ভাগিফগিজির বাড়িতেও তল্লাশির খবর নিশ্চিত করেছেন। তবে সেখানে পুলিশ কিছুই পায়নি। আইনজীবী জানিয়েছেন, হাসানলিকে পুলিশ মারধর করেছে।
আবজাস মিডিয়া হাসানলির একটি অডিও রেকর্ডিংও প্রকাশ করেছে যাতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে:
আমি আমার অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে ট্যাক্সিতে উঠতে যাওয়ার সময় ট্যাক্সির সামনে একটি গাড়িতে মুখোশ পরা একদল লোক এসে হাজির। তারা আমার নাম ধরে ডাকার পর ঠিক কখন আমাকে আঘাত করা হয় তা আমি মনে করতে পারছি না। তারা আমাকে সেখান থেকে থানায় নিয়ে আসে। আমরা তর্ক শুরু করলে দুজন অফিসার আমাকে মারে। এরপর শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ।
তারা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল কেন আমরা [আবজাস] কারাবাখ নিয়ে না লিখে দুর্নীতি নিয়ে লিখেছি। তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করে, ‘এবিষয়ে লিখতে কি অন্য কোনো সমস্যা ছিল। [পুলিশের পাওয়া দাবি করা] টাকা সেখানে লাগানো ছিল, এটা স্পষ্ট। কারণ তাদের কথিত খুঁজে পাওয়ার স্থানটি এমনকি কোনো কক্ষের ভিতরেও নয়, অফিসের হলওয়েতে [স্পষ্টভাবে কেউ এটি সেখানে ফেলে রেখেছে।]
আবজাস মিডিয়া তাদের ফেসবুক পৃষ্ঠায় ভাগাভাগি করা একটি বিবৃতিতে বলেছে, ” আবজাস মিডিয়া হিসেবে আমরা আপনাকে জানাচ্ছি যে হাসানলির আটক, তার বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি বেআইনি। ঘটমান সবকিছু সরাসরি [হাসানলির] সাংবাদিকতার সাথে সম্পর্কিত। আমরা অবিলম্বে হাসানলির মুক্তি দাবি করছি।”
হাসানলিকে অতি সম্প্রতি বাকুতে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে নারীবাদী কর্মীদের সংগঠিত একটি স্বতস্ফূর্ত জটলার চিত্রগ্রহণের সময় মার্কিন দূতাবাসে আটক করা হয়৷ তার এক মাস আগে জুন মাসে হাসানলিকে পুলিশের সরিয়ে দিতে বলা একটি ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পোস্টটিতে হাসানলি রাজধানীর বাইরে একটি পরিবেশগত বিক্ষোভ কভার করতে গিয়ে সাংবাদিকদের আটককারী দুই পুলিশ কর্মকর্তার ছবি ভাগাভাগি করেছিলেন।
আবসাজ মিডিয়া ২০১৬ সাল থেকে অসংখ্য পরিষেবা অস্বীকার (ডিডস) আক্রমণের অর্থাৎ সাইটে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার অবরোধের লক্ষ্যবস্তু করা হয়। ওয়েবসাইটটি ২০১৭ সালে অভ্যন্তরীণভাবে অবরুদ্ধ করা হলে ওয়েবসাইট ম্যানেজাররা ওয়েবসাইটের এক্সটেনশন পরিবর্তনে বাধ্য হয়। এপ্রিল ২০২০-এ ওয়েবসাইটটি হ্যাকের ফলে প্রকাশিত নিবন্ধগুলি এক মাসের মূল্য ক্ষতিগ্রস্ত এবং কিছু নিবন্ধের শিরোনাম পরিবর্তিত হয়। আবার ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মঞ্চটি লক্ষ্যবস্তু করা হয়।
বিভিন্ন মানবাধিকার পর্যবেক্ষক ও সরকার আটকদের উপর গুরুত্ব দিয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে “যথেষ্ট উদ্বেগ” থাকার কথা বলেছে এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম গোষ্ঠী তাদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে।