
পেক্সেলের মাধ্যমে পাওয়া কটনব্রো স্টুডিওর ছবি। একটি পেক্সেল লাইসেন্সের অধীনে ব্যবহৃত।
নেপালিদের মধ্যে সামাজিক বিভেদ ঘটানোর অভিযোগে ১৩ নভেম্বর, ২০২৩ নেপালি সরকার চীনা সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চ টিকটকের উপর একটি বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে অধিকার গোষ্ঠী ও সুশীল সমাজ এই নিষেধাজ্ঞাকে অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক অভিহিত করেছে।
কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন নেপালে জনপ্রিয়তা অর্জন করা টিকটক মঞ্চটি ঘৃণাত্মক বক্তব্য এবং অসহিষ্ণুতাকে উৎসাহিত করেছিল বলে দাবি করা হয়। নেপালের যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী রেখা শর্মার মতে, টিকটক “আমাদের সামাজিক সম্প্রীতি, পারিবারিক কাঠামো এবং পারিবারিক সম্পর্ক” ব্যাহত করছে। নেপালি সরকার আপত্তিকর বিষয়বস্তুর বিষয়ে টিকটকের কাছে একাধিকবার জানালেও কোনো সাড়া না পেয়ে নেপাল একটি বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ফলে ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও পাকিস্তানের সাথে টিকটক নিষিদ্ধকারী দেশগুলোর দলভূক্ত হয়েছে।
নেপালে টিকটকের উত্থান
নেপালের ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সাড়ে তিন কোটি জনসংখ্যার মধ্যে দেড় কোটির ও বেশী ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, যাদের মধ্যে ১ কোটি ২৬ লাখ সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারকারী। সবচেয়ে জনপ্রিয় মঞ্চ ফেসবুকের রয়েছে ১ কোটি ১৮ লাখ কোটি ব্যবহারকারী।
বেইজিং ভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানি বাইটড্যান্স ২০১৮ সালের আগস্টে চালু ভিডিও-কেন্দ্রিক মঞ্চ টিকটক ব্যবহারকারীদের পছন্দ অনুসারে সংক্ষিপ্ত ভিডিও বিষয়বস্তু অপ্টিমাইজ ও প্রদর্শন করতে পারার জন্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সমালোচকদের যুক্তি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অ্যালগরিদম ব্যবহার করা এটি আসক্তিমূলক ও অনৈতিক। বিশ্বব্যাপী ১২১.৮ কোটি ব্যবহারকারী নিয়ে সকল সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চের মধ্যে টিকটকের অবস্থান ৬ষ্ঠ।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অসাধারণ প্রবৃদ্ধির ফলে টিকটক বিষয়বস্তু স্রষ্টা, প্রভাবক ও ব্যবসার জন্যে একটি গতিশীল স্থান হয়ে উঠেছে। নেপালে টিকটক ব্যবহারকারীদের কোনো আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান না থাকায় বিশেষজ্ঞরা ২০২২ সালের হিসেবে প্রায় ২২ লক্ষ অনুমান করেছে। শেয়ারকাস্ট ইনিশিয়েটিভ নেপালের ২০২২ সালের একটি সমীক্ষা ৫,৫৮২ জন উত্তরদাতা থেকে জেনেছে নমুনা গোষ্ঠীর ৫০ শতাংশ টিকটক ব্যবহার করেছে।
সামাজিক গণমাধ্যমের উপর আরো নিয়ন্ত্রণ
নেপাল ৯ নভেম্বর, ২০২৩-এ প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সামাজিক গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে একটি ১৫-দফা নিয়মের সামাজিক নেটওয়ার্কিং ২০২৩-এর অপারেশন সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রবর্তন করেছে। এই নির্দেশনায় সরকার আন্তর্জাতিক সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চগুলি নেপালে একটি লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করে তিন মাসের মধ্যে একজন ফোকাল ব্যক্তি নিয়োগ বাধ্যতামূলক করেছে। উপরন্তু এই মঞ্চগুলিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধন করতে হবে, সঙ্গতি বিধান না করলে দেশে নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি রয়েছে।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে তাদের অনলাইন কার্যক্রমের জন্যে জনগণের হয়রানিও বেড়েছে। এই বছরের জুলাই মাসে নেপালের কোশি প্রদেশের ঝাপা জেলা থেকে এক ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নিয়ে অশালীন টিকটক ভিডিও তৈরি ও প্রকাশের জন্যে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়াও ইউনিফর্ম পরে টিকটক ভিডিও তৈরি করায় জুলাই মাসে ২০০ জনেরও বেশি পুলিশ কর্মীকে শাস্তি দেওয়া হয়। তবে সরকারের তাৎক্ষণিক উদ্বেগ কথিতভাবে নেপালে হিন্দু রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পক্ষে মূলধারার দলগুলির বিরুদ্ধে টিকটকে একটি অপবাদমূলক প্রচারণা শুরু করা প্রাক্তন বিরোধী দলের সদস্য ও ব্যবসায়ী দূর্গা প্রসাদকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে।
নেপালে জাতীয় দণ্ডবিধি ২০১৭ এবং মানহানি ও অপবাদ আইন ২০১৬সহ অনলাইন মানহানি, অপবাদ ও দুর্নামের জন্যে আইনি ব্যবস্থা রয়েছে যেখানে বেশিরভাগ অভিযুক্ত ব্যক্তি ইলেকট্রনিক লেনদেন আইন ২০০৮ এর ৪৭ ধারায় অভিযুক্ত হয়।
এই বছরের আগস্টে সরকার নির্দিষ্ট সাইবার অপরাধ ও উদ্ভুত হুমকি মোকাবেলায় একটি নতুন জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা নীতি চালু করেছে। নির্দেশিকাটি সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারকারীদের জন্যে নিষেধাজ্ঞার একটি তালিকার রূপরেখা দেয়, যার মধ্যে ঘৃণামূলক বক্তব্য ছড়ানো বা অন্যদের মানহানি/অসম্মান করা শব্দাবলী, অডিও, ভিডিও বা চিত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এটি ভুয়া ব্যবহারকারীর পরিচয় তৈরি করাকেও নিষিদ্ধ করে বিভিন্ন ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করেছে, যাকে কেউ কেউ ইলেকট্রনিক লেনদেন আইন (ইটিএ) ২০০৮ বা নতুন সাইবার নিরাপত্তা নীতির বিপরীত বলে সমালোচনা করেছে। অনেকেই এই নির্দেশনা ও টিকটক নিষেধাজ্ঞাকে নেপালে সামাজিক গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করার সরকারি উদ্যোগের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখে।
ব্যাপক সমালোচনা
নেপালে এই নিষেধাজ্ঞা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। নেপালি কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক গগন থাপা এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কার্যকর করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন।
নেপালি অনলাইন প্রতিষ্ঠান নেপাল দৃষ্টিকোন পোস্ট করেছে:
Nepal government's decision to ban #TikTok draws widespread criticism. Politicians including general secretaries Gagan Thapa and Bishwa Prakash Sharma of ruling Nepali Congress party, civil society members have fiercely criticised the decision. Some have welcomed it. https://t.co/egkROgd3Ii
— Nepal Drishtikon (@NepalDrishtikon) November 13, 2023
নেপাল সরকারের #টিকটক নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ক্ষমতাসীন নেপালি কংগ্রেস পার্টির সাধারণ সম্পাদক গগন থাপা ও বিশ্ব প্রকাশ শর্মাসহ বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের সদস্যরা যেমন এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে, তেমনি কেউ কেউ একে স্বাগত জানিয়েছে।
নেপালি নাগরিক সমাজ সংস্থা স্বাধীনতা_ফোরাম বিভিন্ন ব্যক্তি ও সুশীল সমাজ সংস্থা স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে, যাতে বলা হয়েছে এই নিষেধাজ্ঞাটি নাগরিকদের অনলাইন কথোপকথনে জড়িত হতে ও বৈশ্বিক ডিজিটাল সম্প্রদায়ে অংশগ্রহণ করতে বাধা দেয়। তাদের যুক্তিতে বিদ্যমান সাংবিধানিক আইনগুলি কার্যকরভাবে বিতর্কিত সামাজিক গণমাধ্যম বিষয়বস্তু থেকে উদ্ভূত সমস্যাগুলির সমাধান করতে পারে এবং বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞাটি নেপালের সংবিধানের ১৭(২)(ক) ধারায় বিধৃত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সাংবিধানিক নিশ্চয়তা লঙ্ঘন করে৷
আন্তর্জাতিক অধিকার-কেন্দ্রিক সংস্থা এখনি_প্রবেশাধিকার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে:
Opaque ban orders are not acceptable!
The Government of Nepal must lift its recent ban on TikTok + develop democratic frameworks for platform accountability.
Our message here is clear: https://t.co/LcKvqQvQw8#TikTokBan
— Access Now (@accessnow) November 17, 2023
অস্বচ্ছ নিষেধাজ্ঞা গ্রহণযোগ্য নয়!
নেপাল সরকারকে অবশ্যই টিকটকের উপর থেকে সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে + মঞ্চটির জবাবদিহিতার জন্যে গণতান্ত্রিক কাঠামোর বিকশিত করতে হবে।
এখানে আমাদের বার্তা পরিষ্কার:
সাংবিধানিক আইন বিশেষজ্ঞ বিপিন অধিকারী এক্সে (আগের টুইটার) পোস্ট করেছেন:
Ti Tok has faced many bans and attempted bans in the United States and some other countries due to national security concerns and its ownership by the Chinese Company ByeteDance. We don't have to feel the same as the Constitution of Nepal does not allow it.https://t.co/fI7qT4GLgT
— Bipin Adhikari 🌺🇳🇵 (@BipinLAW) November 14, 2023
টিকটক জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ ও চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্সের মালিকানার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য কিছু দেশে অনেক নিষেধাজ্ঞা বা নিষেধাজ্ঞা প্রচেষ্টার সম্মুখীন হয়েছে। নেপালের সংবিধান এটির অনুমতি দেয় না বলে আমাদেরও একইরকম ভাবার দরকার নেই।
ব্যবহারকারী পরাক্রম রানা বলেছেন:
The ban on TikTok in Nepal raises concern, especially considering its impact on small business owners heavily reliant on the platform for organic marketing. As a content creator active across various platforms, I recognize its importance,
— Parakram Rana (@ParakramRana) November 20, 2023
বিশেষ করে জৈব বিপণনের জন্যে মঞ্চের উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল ছোট ছোট ব্যবসার মালিকদের উপর এর প্রভাব বিবেচনায় নেপালে টিকটকের উপর নিষেধাজ্ঞা উদ্বেগ বাড়িয়েছে। বিভিন্ন মঞ্চে সক্রিয় একজন বিষয়বস্তু নির্মাতা হিসেবে আমি এর গুরুত্ব স্বীকার করি,
ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহকারীদের উদ্ধৃত করে কাঠমুন্ডু_পোস্ট সম্ভবত নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ভিপিএন অ্যাপস ইনস্টলের কারণেটিকটক নিষেধাজ্ঞার পরে সপ্তাহে ইন্টারনেট ব্যবহারে ২০ শতাংশ বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে। তবে নেপাল যোগাযোগ কর্তৃপক্ষ (এনটিএ) আইএসপিগুলিকে ভিপিএন ও ডিএনএস অ্যাপগুলি অবরোধের নির্দেশ দিয়ে টিকটক নিষেধাজ্ঞা জোরদার করছে।