জান্তা বাহিনীর হাতে তার পিতামাতা নিহতের এক বছর পর মিয়ানমারের কর্মী সান মিন পাইং ইউটিউবে একটি গান প্রকাশ করেন। তার ফেসবুক পোস্টে তার গান ও ন্যায়বিচারের দাবি ভাইরাল হয়, যা সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে অব্যাহত প্রতিরোধ ও অনলাইন বাধাদানের প্রতিফলন।
সামরিক বাহিনী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখল করার সাথে সাথে তা গণতন্ত্রপন্থী শক্তির তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে। জান্তাকে চ্যালেঞ্জ করা নিখিল বার্মা ছাত্র ইউনিয়ন ফেডারেশনের সদস্য হিসেবে সান মিন পেইং আইন অমান্য আন্দোলনে অংশ নিয়ে গ্রেপ্তার হন। নির্বাসিত বর্মি গণমাধ্যম গোষ্ঠী ইরাবতীর একটি প্রতিবেদন অনুসারে তিনি ইয়াঙ্গুনের তিনটি জিজ্ঞাসাবাদ কেন্দ্র ও চারটি থানায় এক বছর কাটান। গ্রেপ্তারের সময় তার বয়স মাত্র ১৭ বছর হওয়ায় তাকে একটি কিশোর কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়।
অন্য ১৩ জন তরুণ বন্দীর সাথে ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ তিনি পালিয়ে গেলেও ২৯ সেপ্টেম্বর কর্তৃপক্ষ তার পিতামাতাকে তাদের বাড়ির ভিতরে হত্যা করে।
হত্যার এক বছর পর সান মিন পেইং তার ফেসবুক পৃষ্ঠায় পিতামাতাকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি গান লেখার কথা পোস্ট করেন। ইরাবতী পোস্টটির একটি অংশ অনুবাদ করেছে:
আমি এখনো মানসিক আঘাতে ভুগছি। তবুও আমি চলছি। কখন মারা যাবো না জানলেও, আমি স্থায়ী এমন একটি শিল্প সৃষ্টি করতে চাই যা বিপ্লব সফল হওয়ার আগে আমি মারা গেলেও যেন আমার পিতামাতার ন্যায়বিচার দাবি করে। তাই এই গানটি তৈরি করেছি।
ইরাবতীর সাথে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন তিনি জান্তার বর্বরতার শিকার অন্যান্যদের ন্যায়বিচারের জন্যে লড়াই চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করতে চেয়েছেন।
আমি কখনো তাদের ঋণ পরিশোধ করতে পারবো না। পিতামাতার জন্যে এটাই আমার প্রথম কিছু করা। নিপীড়নের প্রতিটি কর্মের কাছে মাথা নত করলে আমরা এই জীবনে আর দাঁড়াতে পারবো না। আশা করি আমার গানটি ফ্যাসিবাদী সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ভবিষ্যতে বিচারের দাবি উত্থাপনে উৎসাহিত করবে।
মিয়ানমারে মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূতের একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে গত দুই বছরে জান্তা বাহিনী ৪,০০০ বেসামরিক মানুষকে হত্যা, ৭৫,০০০ বেসামরিক বাড়িঘর ও অবকাঠামো ধ্বংস এবং ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে ১.৫ কোটি মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ফেলেছে।
গানটির শিরোনাম “সূর্যাস্তের আগেই সূর্য ডুবে যাওয়ার দিন।” ইউটিউবে আপলোড করা গানের ভিডিওটি পিতামাতার মৃত্যুতে শিল্পীর যন্ত্রণা ও অপরাধবোধকে চিত্রিত করেছে।
পিতা-মাতার মৃত্যুর পরেও তিনি গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে যুক্ত রয়েছেন। তিনি তার গানে প্রতিরোধের ফলে তার কী হতে পারে সে সম্পর্কে অনুমান করেছেন।
সান মিন পেইংয়ের র্যাপ গানটি জান্তা স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ‘বসন্ত বিপ্লব’-এ যোগদানকারী তরুণ রাজনৈতিক কর্মী ও শিল্পীদের ব্যবহৃত প্রতিরোধের সৃজনশীল রূপের উদাহরণ। প্রতিরোধের অন্যান্য রূপগুলিতে প্রতিরোধের পদ্ধতি হিসেবে নাগরিকরা তাদের পোশাক ও একই দিনে ব্যবসা বন্ধ করে বাড়ির ভিতরে অবস্থান করে “নীরব ধর্মঘট” এর মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থী বার্তাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। অক্টোবরে ২০২১-এ এক দল র্যাপ শিল্পী জান্তা-বিরোধী একটি গানের অ্যালবাম প্রকাশ করে।
ইউটিউবে সান মিন পাইংয়ের গানটি শুনুন এবং দেখুন: