মিয়ানমারের সামরিক সরকারের প্রতিনিধিদেরকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর পর বেশ কয়েকটি সুশীল সমাজ গোষ্ঠী ৩ অক্টোবর ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির সমিতির (আসিয়ান) মধ্যেকার মানবাধিকার সংলাপ থেকে তাদের অংশগ্রহণ প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
ইইউ-আসিয়ান মানবাধিকার সংক্রান্ত নীতি সংলাপ “মানবাধিকার বিষয়ে সাধারণ উদ্বেগ, মূল চ্যালেঞ্জগুলি চিহ্নিত ও ইইউ-আসিয়ান সহযোগিতার একটি কৌশলগত কাঠামো প্রকাশের” আলোচনার জন্যে ২০১৫ সালে চালু উচ্চ-স্তরের একটি দ্বিবার্ষিক অনুষ্ঠান৷ এই বছরের সংলাপে পর্যবেক্ষক হিসেবে প্রথমবারের মতো পূর্ব তিমুরের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য।
একটি যৌথ বিবৃতিতে ২ অক্টোবর বেশ কয়েকটি মানবাধিকার গোষ্ঠী আমন্ত্রণটিকে “লজ্জাজনক” ও “অবোধগম্য” হিসেবে বর্ণনা করে উল্লেখ করেছে ইইউ ইতোপূর্বে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক শাসকগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছে।
“আমরা জান্তাকে বৈধতা দেওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টাকে কঠোরতমভাবে প্রত্যাখ্যান করি,” গোষ্ঠীগুলি বলেছে।
মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) জান্তা প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানোতে হতাশা প্রকাশ করেছে।
মিয়ানমার জান্তা তার নিজের জনগণের প্রতি নৃশংসতা প্রদর্শন করছে, সুশীল সমাজের কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষক ও স্কুল-শিক্ষার্থীদের হত্যা করছে এবং যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে। আমরা মায়ানমারের বৈধ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পরিবর্তে ইইউ-আসিয়ান সুশীল সমাজের ফোরামে জান্তা প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ দেখে হতাশ।
ইইউ ও আসিয়ানের সমালোচনাকারী মিয়ানমারের গোষ্ঠীগুলির মধ্যে চিন মানবাধিকার সংস্থা রয়েছে।
Allowing the junta’s reps to attend EU-ASEAN rights policy dialogue is like letting an accused criminal to serve as a jury member for his own criminal trial. The regional blocs must stop hiding behind ‘technical’ veil to engage the murderous regime at #Myanmar people’s expense. https://t.co/sJ3pjdnv8q
— ChinHumanRightsOrg (@ChinHumanRights) September 30, 2023
জান্তার প্রতিনিধিদের ইইউ-আসিয়ান অধিকার নীতি সংলাপে যোগদানের অনুমতি দেওয়া একজন অভিযুক্ত অপরাধীকে তার নিজের ফৌজদারি বিচারের জন্যে জুরি সদস্য হিসাবে কাজ করতে দেওয়ার মতো। আঞ্চলিক ব্লকগুলিকে অবশ্যই #মিয়ানমারের জনগণ হত্যাকারী শাসকগোষ্ঠীকে ‘কৌশলগত’ পর্দার আড়ালে লুকানো বন্ধ করতে হবে।
ইউরোপীয় সংসদের সহ-সভাপতি হেইদি হতালা জান্তা সমর্থকদের আমন্ত্রণ জানানোর বিষয় জানতে পেরে অবাক হয়েছেন।
It is shocking and unacceptable that EU has accepted participation of the #Myanmar murderous junta in the EU-ASEAN CSOs Forum on Human Rights in Brussels. Clearly only the people’s legitimate representatives #NUG & co should be there. It is not too late to correct the decision. https://t.co/DKzEWCbPKr
— Heidi Hautala (@HeidiHautala) October 2, 2023
ইইউ’র ব্রাসেলসে মানবাধিকার বিষয়ক ইইউ-আসিয়ান সুশীল সমাজের ফোরামে #মিয়ানমারের খুনি জান্তার অংশগ্রহণ স্বীকার করাটা জঘন্য ও অগ্রহণযোগ্য। পরিষ্কারভাবে জনগণের বৈধ প্রতিনিধি #এনইউজি ও তার সঙ্গীদেরই শুধু সেখানে থাকা উচিত। এখনো সিদ্ধান্ত সংশোধনের সময় আছে।
মানবাধিকারের জন্যে আসিয়ান সাংসদবৃন্দ নাগরিক সমাজের গোষ্ঠীগুলির সাথে মিলে ইইউকে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে জান্তাকে আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করতে বলেছে। তারা একটি বিবৃতিতে বলেছে, “আমন্ত্রণটি এনইউজির মতো গণতান্ত্রিক অংশীজনের পরিবর্তে জান্তার সাথে ইইউ’র সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ইঙ্গিত দেয়।”
সংলাপটি বিভিন্ন গোষ্ঠী ও নেতাদের আবেদন সত্ত্বেও দুই মিয়ানমার জান্তা সমর্থক – বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত সোয়ে লিন হান এবং দূতাবাসের রাজনৈতিক উপদেষ্টা খিন মায়ো মায়াতের অংশগ্রহণ চালু রেখেছে।
ফলে ফোরামের সহ-সভাপতিত্ব করতে যাওয়া ফোরাম এশিয়া সংলাপটি ত্যাগ করেছে।
মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে মানুষের মৌলিক স্বাধীনতাকে বিজয়ী করতে গিয়ে আমরা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধী জান্তার সাথে আমাদের অসহযোগ নীতিতে অটল। আমরা মিয়ানমারের জনগণ ও আমাদের মিয়ানমারের সদস্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি। আমরা তাদের জান্তাকে আরো বৈধতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা না দেওয়ার আহ্বানকে সমর্থন করি।
উপরন্তু, এই ধরনের অনুষ্ঠানে জান্তার অনুগত কর্মকর্তাদের নিছক উপস্থিতিও আগত মিয়ানমার ও অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে ফিরে যাওয়া অংশগ্রহণকারী মানবাধিকার কর্মীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
অন্তত ৩০ জন অংশগ্রহণকারী সংলাপটিতে যোগ দিয়েছে। ইইউর মানবাধিকারের বিশেষ প্রতিনিধি এমন গিলমোর জান্তার সংঘটিত নৃশংসতার বিষয়ে কথা বলেছেন।
মিয়ানমারের জান্তা নিরাপত্তা বাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো গণহত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন, যৌন সহিংসতা ও অন্যান্য অপরাধ করেছে। বাকস্বাধীনতা ও সমাবেশের স্বাধীনতা কঠোরভাবে সীমিত। অভ্যুত্থানের পর থেকে জান্তার অদক্ষতা ও দেশের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা জনগণের দুর্ভোগ বাড়িয়ে ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি করেছে।